মুক্তির তারিখ: ২৮/০৬/১৯৫৬
প্রেক্ষাগৃহ: উত্তরা, পূরবী ও উজ্জ্বলা
পরিচালনা: অগ্রদূত
উত্তম অভিনীত চরিত্রের নাম: কুশল
অগ্রদূত-এর পরিচালনায় এ বছরের প্রথম ছবি। ‘অগ্নিপরীক্ষা’-র পর থেকে প্রায় টানা দশ বছরের কাছাকাছি অগ্রদূত প্রতিবছর একটা বা দুটো করে ছবি যে নির্মাণ করেছেন তার প্রত্যেকটাতেই বেশিরভাগ সময় উত্তম কুমার। সহনায়িকা হিসাবে সুচিত্রা সেন এবং তারও পরবর্তীকালে উত্তম সুপ্রিয়া চৌধুরী সুযোগ পেয়েছেন।
আলোচ্য ‘ত্রিযামা’ ছবিতে মূল কুশীলব কুশল আর নবলা। কুশল চায় নিজের চেষ্টায় বড়ও হতে। নবলাও তাই। মোটামুটি সব কিছু ঠিকঠাক। নিজের পায়ে দাঁড়ালেই বিয়েটা হবে। গোল বাঁধে দু’ জনের মাঝে স্বরূপা-কে নিয়ে। কুশলদের বাড়িতে তার যাতায়াত ছিল আগেই, কিন্তু কখনও বলেনি যে সে কুশলকে ভালোবাসে। কুশলের বাবা-মার ইচ্ছে বিয়েটা স্বরূপার সঙ্গেই হোক। কিন্তু কুশল তা চায় না। আঘাত পেয়ে স্বরূপা ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত কুশলের স্বপ্ন সফল হয়নি। একদিন দেখা গেল কুশলকে অগ্রাহ্য করে নবলা সম্পর্ক পাতায় বিলেত ফেরত দেবী রায়ের সঙ্গে। মনঃকষ্টে কুশল পা বাড়ায় অন্ধকার জগতে। তাকে ফিরিয়ে আনতে ফিরে আসে স্বরূপা। বলে, ‘আমাকে ঘৃণা করতে ভালো লাগে কোরো, নিজেকে ঘৃণা কোরো না।’
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৩: কোন কাননের ফুল ‘শ্যামলী’
মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-১: ভিতরকুঠি টেরাকোটা শিবমন্দির এক অনন্যসাধারণ কোচ স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ
এরকম একটা কাহিনিকে ভিত্তি করে অগ্রদূত পরিচালক গোষ্ঠী নির্মাণ করেছিলেন উত্তম- সুচিত্রার অন্য মানের ছবি ‘ত্রিযামা’। ছবির কাহিনিকার হিসাবে সুবোধ ঘোষ চিত্রনাট্য রচনার সময়েও হাত লাগিয়েছিলেন। অগ্রদূত গোষ্ঠীর সে সময় বাঁধাধরা চিত্রনাট্যকার ছিলেন নিতাই ভট্টাচার্য। এ ছবিতেও তার অন্যথা হয়নি।
সুবোধ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
আমাদের আলোচ্য ছবির মূল আকর্ষণ ছিল, ত্রিকোণ প্রেমের দৃষ্টিতে উত্তম-সুচিত্রার মূল্যায়ন। এর আগে ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘অনুপমা’ প্রভৃতি ছবিতে অগ্রদূত গোষ্ঠীর তুরুপের তাস ছিল কাহিনির নিটোল বুনন। এখানে উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন সবাইকেই দাঁড়াতে হয়েছে অন্যরকম একটি প্রেক্ষিতের মুখোমুখি। দু’ জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরিতে মূখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে সহ-নায়িকা অনুভা গুপ্তা।
আরও পড়ুন:
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১: একটু শুরুর কথা হলে ক্ষতি কী…
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৩: দো লাফজো কি হ্যায়… অমিতাভ-জিনাতের লিপ, পঞ্চমের সুর আর আশার কণ্ঠ, মনে পড়ছে?
১৯৫৬ সালে অনুভা-র আবেদন বাংলা ছবির বুকে অন্যরকম। সে সময়ে ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবিতে অনুভাকে উত্তম কুমারের প্রতি সহ-নায়িকা হিসাবে মেনে নেওয়া দর্শকদের কাছে বেশ অসন্তোষের কারণ ছিল। আর এই সুযোগটাতেই সুচিত্রা সেনকে অত্যন্ত সময়োপযোগী করে উপস্থাপন করে ছবির বাণিজ্যিক মূল্য অনেক অংশে বাড়িয়ে তুলতেন।
এ কৌশলী বিচারের প্রধান রূপকার শুরু হয় ত্রিযামা ছবি থেকে। ছবির সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন নচিকেতা ঘোষ এবং প্রথাগতভাবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গান এ ছবির অন্য সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে ছবিটিতে একটাই দুর্ভাগ্যের রেখা দেখা দিয়েছিল। প্রথম রিলিজে ছবিটি সেরকম মার্কেট করতে পারিনি। কারণ আর কিছুদিনের মধ্যেই অগ্রগামী গোষ্ঠীর “শিল্পী” ছবি এসে সমস্ত হিসেব-নিকেশ ওলট পালট করে দেয়। কিন্তু ত্রিযামা ছবিটি পুনর্মুক্তিতে মানুষের মনে ভালো জায়গা করে নেয়।—চলবে।
তবে ছবিটিতে একটাই দুর্ভাগ্যের রেখা দেখা দিয়েছিল। প্রথম রিলিজে ছবিটি সেরকম মার্কেট করতে পারিনি। কারণ আর কিছুদিনের মধ্যেই অগ্রগামী গোষ্ঠীর “শিল্পী” ছবি এসে সমস্ত হিসেব-নিকেশ ওলট পালট করে দেয়। কিন্তু ত্রিযামা ছবিটি পুনর্মুক্তিতে মানুষের মনে ভালো জায়গা করে নেয়।—চলবে।
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।