প্রেক্ষাগৃহ: উত্তরা, পূরবী ও উজ্জ্বলা
এ ছবির আলোচনা যেখানে যতরকম ভাবে হয়েছে সব জায়গাতেই একটা পরিচিত শিরোনাম উত্তম কুমারের প্রথম হিট ছবি।
অথচ ‘কামনা’, নায়ক হিসাবে উত্তমের প্রথম ছবি সেকথা সবাই বেমালুম ভুলে থাকতে নিরাপদ বোধ করেছেন। কারণ, বাণিজ্যের দিক দিয়ে ছবিটি চূড়ান্তভাবে অসফল। আসলে আমাদের দেশে শিল্পকর্মের মান নির্ণয় হয় সেটি কতটা বাণিজ্যিক মেদ জমিয়েছে তার ওপর। ‘বসু পরিবার’ ছবিটির মূল সম্পদ নির্মল দে নামক একজন এলিট ক্লাস পরিচালকের ফ্রেম ধরে ধরে ট্রিটমেন্ট।
ছবির কাহিনি, গতানুগতিক পারিবারিক উত্থান পতনের ঘনঘটা। নির্মাণ পর্বে নির্মলবাবুকে নিয়েও এমপি প্রোডাকশনে যথেষ্ট টানাপোড়েন চলেছে। কলকাতার ফিল্ম জগতের সঙ্গে একরকম বীতশ্রদ্ধ হয়েই নির্মলবাবু স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। সেখান থেকে জরুরি তলব করে মুরলীধরবাবু তাঁকে নিয়ে এলেন কলকাতায়। নিতান্তই অনিচ্ছাভরে আসা নির্মলবাবুকে সসম্মানে বসিয়ে মুরলীধরবাবু শোনালেন একটা জাপানি ছোটগল্প।
নির্মলবাবু মনোযোগ সহকারে গল্পটা শুনলেন। গল্প শুনিয়ে মুরলীধরবাবু বললেন, ধরুন এ গল্পটা ডেভেলপ করে একটা সিনারিও বানাতে হবে। যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি।
মুরলীধরবাবুর ইঙ্গিত বোঝার পর নির্মলবাবু দিন দশেক পর চিত্রনাট্যের ফাইল নিয়ে হাজির হলেন এমপি স্টুডিয়োতে। মুরলীধরবাবু চিত্রনাট্যের খসড়া শুনে ভীষণ খুশি। বললেন, এবার ছবি শুরু করুন। তবে তার আগে কাস্টিং ঠিক করে নিন। সেই সঙ্গে তিনি আরও বললেন, আমাদের প্রোডাকশন হাউসে উত্তম কুমার মাইনে করা আর্টিস্ট, আপনি তাঁকে দেখতে পারেন।
এবার আসরে এলেন মুরলীধর চট্টোপাধ্যায়, বিমল ঘোষ ও স্বয়ং পরিচালক নির্মল দে। সকলের আলোচনায় শেষ পর্যন্ত নায়ক মনোনীত হলেন অভি ভট্টাচার্য। একটা বিকল্প ব্যোবস্থাও রাখা হল। অভি ভট্টাচার্যকে না পাওয়া গেলে আহ্বান জানানো হবে অসিতবরণকে। বম্বেতে অভি ভট্টাচার্যের কাছে আর্জেন্ট টেলিগ্রাম গেল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেবই টেলিগ্রাম ফিরে আসায় বোঝা গেল নির্দিষ্ট ঠিকানায় শিল্পী নেই। যথা সময়ে নির্মলবাবুরা হাজির হলেন অসিতবরণের কাছে। তিনি অনেকগুলো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে রাজি হতে পারলেন না।
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৭: হারিয়ে যাওয়ার আগে এ এক বিফল মৃত—‘সঞ্জিবনী’ [০৮/০২/১৯৫২]
গল্প: পরশ
বাইরে দূরেঃ অস্ট্রিয়ার ক্রিস্টাল দুনিয়া— সোয়ার্ভস্কি
এমন সময় নির্মলবাবু নিরুপায় হয়ে উত্তম তথা অরুণকে ডেকে পাঠালেন। উত্তমের চোখে মুখে আর্তের দিনলিপি। সুযোগ দিন—বলতেও দ্বিধাবোধ।
উত্তমের সঙ্গে কথা বলে নির্মলবাবুর চোখেমুখে খুশির রেশ। শেষ পর্যন্ত অনুগ্রহ করে এমপি-র স্টাফ আর্টিস্ট উত্তমকেই ছবির কর্তৃপক্ষ নায়ক হিসাবে সুযোগ দিলেন। নির্দিষ্ট দিনে নির্মলবাবু, উত্তমকে কাছে ডেকে ‘বসু পরিবার’-এর সুখেনকে মনে বসিয়ে দিলেন। ‘বসু পরিবার’-র সুখেন উত্তমের ধ্যা নজ্ঞান হয়ে দাঁড়াল।
ততদিনে ক্যাবমেরা, লাইট, চরিত্রের রূপায়ন সবই উত্তমের প্রাত্যনহিক জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। উত্তম, রাস্তায় হাঁটছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, দোকান বাজার করছেন —সবেতেই অবচেতন মনে সুখেন হাজির হচ্ছে।
উত্তম, শয়নে স্বপনে নিজেকে সুখেন ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছেন না।
ছবিটি সর্বাঙ্গসুন্দর করার কোনও ত্রুটিই রাখেননি নির্মাতারা। এমপি প্রোডাকশনসেরও সে সময় দারুণ প্রতাপ। পাঁচ বছর আগে বছরে একটা করে ছবি নির্মাণ হলেও ১৯৫১, ১৯৫২ সালে বছরে চার চারখানা করে ছবি তৈরি হচ্ছিল। প্রতিটি ছবিতেই পরিচালক পাল্টে পাল্টে প্রোডাকশন হাউস নতুনত্ব এনেছেন। সংগীত পরিচালক, শিল্প নির্দেশনা সমস্ত বিভাগেই ‘বসু পরিবার’ চমক আনতে চেষ্টা করেছিল। ছবির আঙ্গিক সাফল্যচ পেতেই শুরু হল অন্যা ন্যদ বিভাগের তৎপরতা।
সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-৩: বাংলাদেশ শিশু একাডেমি— শিশুদের আনন্দ ভুবন
ছোটদের যত্নে: বাজির আগুন থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন খুদেদের, কী কী নিয়ম মানতেই হবে জেনে নিন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৮: মেয়ের জন্য হেমন্তবালা কবির পরা জোব্বা নিয়েছিলেন
প্রথমত: কাহিনির সম্মানে রচিত সংলাপের বুনন, ছবিটাতে দর্শকদের মজিয়ে রাখছিল। আরও উপরি পাওনা ছিল, ব্যতক্তি উত্তমের নিজের জীবনে ঘটা সংগ্রামের প্রতিফলন যেন ছবিটার ফ্রেমে ফ্রেমে ছড়িয়ে ছিল।
কর্তব্যিপরায়ণ বাড়ির বড় ছেলে হিসাবে সুখেন ছিল ব্যাক্তি অরুণেরই সেলসেলুলয়েডি সংস্করণ। ফলে খোলা মনে উত্তম নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। ছবির ফলাফলেই ছিল তার সুদ-আসল।
দ্বিতীয়ত: ছবির আরও একটা উৎকর্ষ দিক হল, নায়িকার ভূমিকায় সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের বলিষ্ঠ অভিনয়। সদ্যম ‘পাশের বাড়ি’তে বিগ হিট দিয়ে সাবিত্রীর খ্যাণতিও তখন তুঙ্গে। দর্শক এটা ভেবে হলে যাননি যে, উত্তম কুমারের একটাও ফিল্ম হিট করেনি। চলো সবাই মিলে দেখে ছবিটা হিট করি। বসু পরিবারের নেপথ্যঙ আঙ্গিকটা এমনভাবে বাঁধা হয়েছিল যে উত্তম কুমার ছাড়াও ছবি হিট দিত।
তবে আমার নিরপেক্ষ অভিমত, যতই উত্তম কুমার বিশ্বাস করুণ ‘ক্যা মেরার সামনে বাড়াবাড়ি চলে না’। তিনিও কিন্তু ‘বসু পরিবার’-এ বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন। সর্বোপরি সংগ্রামী সুখেনকে বড় ক্লান্ত লেগেছে। ক্লান্তির সঙ্গে চরিত্রের চাহিদা অনুযায়ী চিন্তাগ্রস্তরূপেও ধরা দিয়েছেন। তারপর সংলাপ উচ্চারণে একটা তাড়াহুড়ো ভাব। মোটামুটি এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠলে ‘বসু পরিবার’ একটা গোছানো পরিপাটি ছবি।