প্রেক্ষাগৃহ: উত্তরা, পূরবী ও উজ্জ্বলা
‘মর্যাদা’ এবং ‘ওরে যাত্রী’ চূড়ান্তভাবে ফ্লপ করে উত্তম কুমার নামক দীপটিকে এক দমকা হাওয়া দিয়েছিল সত্য কিন্তু ছবি দুটো শ্যুটিংয়ের সময় অরুণ তথা উত্তম-র জীবনে একটা মোড় ঘোরানো ঘটনা ঘটিয়েছিল যা, পরবর্তীকালে মহীরুহের চারাগাছ বলা যেতে পারে।
তখনকার দিনে এমপি প্রোডাকশনসের স্টাফ আর্টিষ্ট হওয়া বেশ প্রেস্টিজিয়াস ব্যাপার ছিল। মুম্বইয়ের ফিল্মিস্তান, বম্বে টকিজ বা হালের এসভিএফ (শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস)-র মতো। এমপি প্রোডাকশনসের ম্যানেজার বিমলবাবু সরাসরি ডেকে পাঠালেন অরুণকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেকক্ষণ জরিপ করে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি আমাদের কোম্পানিতে যুক্ত হতে ইচ্ছুক?’
তখনকার দিনে এমপি প্রোডাকশনসের স্টাফ আর্টিষ্ট হওয়া বেশ প্রেস্টিজিয়াস ব্যাপার ছিল। মুম্বইয়ের ফিল্মিস্তান, বম্বে টকিজ বা হালের এসভিএফ (শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস)-র মতো। এমপি প্রোডাকশনসের ম্যানেজার বিমলবাবু সরাসরি ডেকে পাঠালেন অরুণকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেকক্ষণ জরিপ করে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি আমাদের কোম্পানিতে যুক্ত হতে ইচ্ছুক?’
মনে রাখতে হবে। যে সময় অরুণকে নাম পরিবর্তন করে ‘মর্যাদা’-ছবিতে প্রবেশের সুযোগ পেতে হয়েছে ঠিক তার পাশাপাশি এমপি প্রোডাকশনে মাস মাইনেতে কাজের সুযোগ নতুন চাকরি পাওয়ার আনন্দ তাও আবার ফিল্ম লাইনে। যে পাহাড়ী সান্যাল একসময়ে ভীমসেন যোশী-র মতো শিল্পীর আশ্রয়দাতা ছিলেন তিনিই এ মণি কাঞ্চন যোগের হোতা ছিলেন। সেকথা অবশ্য বিমলবাবু স্বীকার করেছেন, ‘পাহাড়ীর কাছে তোমার কথা অনেকবার শুনেছি।’
শিল্পী জীবনের ঈপ্সিত জগতে কার্যত বেকার অবস্থা দিনের পর দিন হজম করে নিঃসঙ্গ উত্তমের কাছে এ সুযোগ হাতছাড়া করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। নিজের ঠিকানার ঠিকাদারি তখনই সার্থক হয়ে ওঠে যখন সাকসেস পায়ে পায়ে জড়ায়। তবুও প্রতীক্ষায় ভর করে বিমলবাবুকে অরুণ ঠিকানা দিয়ে এল। মাঝে মর্যাদা-র ব্যর্থতা তাঁকে ভাবতে বাধ্য করেছিল ফিল্মে আর অরুণ বা উত্তমকে কেউ সুযোগ দেবেন না। মোট কথা নিতে চাইবেন না।
শিল্পী জীবনের ঈপ্সিত জগতে কার্যত বেকার অবস্থা দিনের পর দিন হজম করে নিঃসঙ্গ উত্তমের কাছে এ সুযোগ হাতছাড়া করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। নিজের ঠিকানার ঠিকাদারি তখনই সার্থক হয়ে ওঠে যখন সাকসেস পায়ে পায়ে জড়ায়। তবুও প্রতীক্ষায় ভর করে বিমলবাবুকে অরুণ ঠিকানা দিয়ে এল। মাঝে মর্যাদা-র ব্যর্থতা তাঁকে ভাবতে বাধ্য করেছিল ফিল্মে আর অরুণ বা উত্তমকে কেউ সুযোগ দেবেন না। মোট কথা নিতে চাইবেন না।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সর্বক্ষণ নিজেকে প্রশ্ন চলে গোলমালটা কোথায় হচ্ছে, কেন ক্যামেরা তাকে আপন করে নিচ্ছে না! হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে উত্থানের হদিশ যেন দেখা গেল। অফিস ফেরত অরুণ একটা চিঠি পেলেন। প্রেরক এমপি-র কর্ণধার মুরলীধর চট্টোপাধ্যায়।
মুরলীধরবাবু স্বয়ং চিঠি দেবেন এমন বিশ্বাসের জন্ম হবার কোনও সুযোগই তো সে কোথাও রেখে আসেনি।
মুরলীধরবাবু স্বয়ং চিঠি দেবেন এমন বিশ্বাসের জন্ম হবার কোনও সুযোগই তো সে কোথাও রেখে আসেনি।
যাহোক উচ্ছ্বাসে ভর দিয়ে চিঠি পড়া হল। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে ধর্মতলার অফিসে উনি দেখা করতে বলেছেন। তৎক্ষণাৎ চিঠির নির্দেশ মেনে নিয়ে অফিস যাওয়ার নাম করে সোজা হাজির মুরলীধরবাবর কাছে।
সামান্য কিছু বাক্যবিনিময়ের পর মুরলীধরবাবু অরুণকে তিন বছরের অঙ্গীকারে মাস মাইনের স্টাফ আর্টিষ্ট হিসাবে গ্রহণ করলেন। চুক্তিপত্রে সইসাবুদ হওয়ার আগে জানানো হল অভিনয়ের পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা নেবেন প্রখ্যাত নট তথা প্রথিতযশা অভিনয়শিক্ষক সন্তোষ সিংহ। ব্যাপারটা অরুণকে খুবই উৎসাহিত করল। কিছুদিন পর এমপি-র কর্তৃপক্ষ সন্তোষবাবুর কাছে জানতে চাইলেন নায়ক হিসাবে তাঁকে চলবে কিনা।
সন্তোষবাবুর সুস্থ মতামতে অরুণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে মাস মাইনের কথাটা চূড়ান্ত হয়ে গেল। প্রথম বছর চারশো, দ্বিতীয় বছর ছ’শো আর তৃতীয় বছর সাতশো।
সামান্য কিছু বাক্যবিনিময়ের পর মুরলীধরবাবু অরুণকে তিন বছরের অঙ্গীকারে মাস মাইনের স্টাফ আর্টিষ্ট হিসাবে গ্রহণ করলেন। চুক্তিপত্রে সইসাবুদ হওয়ার আগে জানানো হল অভিনয়ের পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা নেবেন প্রখ্যাত নট তথা প্রথিতযশা অভিনয়শিক্ষক সন্তোষ সিংহ। ব্যাপারটা অরুণকে খুবই উৎসাহিত করল। কিছুদিন পর এমপি-র কর্তৃপক্ষ সন্তোষবাবুর কাছে জানতে চাইলেন নায়ক হিসাবে তাঁকে চলবে কিনা।
সন্তোষবাবুর সুস্থ মতামতে অরুণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে মাস মাইনের কথাটা চূড়ান্ত হয়ে গেল। প্রথম বছর চারশো, দ্বিতীয় বছর ছ’শো আর তৃতীয় বছর সাতশো।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪: ধীরে চলো ‘ওরে যাত্রী’ [০২/০২/১৯৫১]
নাট্যকথা: রোদ্দুর ও অমলকান্তি/৪
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৬: শারদীয় সংখ্যায় লিখে পাওয়া অর্থ বন্যাপীড়িত মানুষের কল্যাণে
ছোটদের যত্নে: বাচ্চা খেতেই চায় না? কী করে খিদে বাড়াবেন? কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন? জানুন শিশু বিশেষজ্ঞের মতামত
সেই সময়ে এমপি কর্তৃপক্ষ ‘সহযাত্রী’ নামে একটা ছবি তৈরি করবেন বলে মনস্থির করেছেন। ভিতরে ভিতরে অরুণ ওই ছবির নায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন। হঠাৎ খবর হল নায়ক হিসাবে ওই ছবির মনোনয়ন পাচ্ছেন অসিতবরণ। শুনে অরুণের মনের অবস্থা আর তৃষ্ণার্ত পথিকের সামনে সাগর শুকিয়ে যাবার দশা প্রায় একই।
অরুণ তখন আর পাঁচজনের মতো গড়পড়তা মাস মাইনের আর্টিষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যদিকে, এঁদের সঙ্গে এমনভাবে চুক্তিবদ্ধ যে বাইরের কোনও ছবিতে কাজের উপায়ও নেই। সুতরাং চুপ করে ভিতরে ভিতরে গুমরে থাকা ছাড়া আর কোনও পথই খোলা ছিল না অরুণের। আবার বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। খবর হল অসিতবরণ পরপর অনেকগুলি ছবিতে ব্যস্ত থাকায় জানিয়েছেন ‘সহযাত্রী’ ছবিতে কাজ করতে পারবেন না।
অরুণের মনটা নিতান্তই স্বার্থপরের মতো উদ্বেলিত হয়ে উঠল। ভাগ্যদেবতার প্রসন্নতায় কর্তৃপক্ষ অরুণ তথা উত্তমকেই নায়ক হিসাবে মনোনীত করলেন। ‘সহযাত্রী’ ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অগ্রদূত গোষ্ঠী। নায়িকা হিসাবে রমা তথা সুচিত্রা সেন চিন্তা ভাবনায় থাকলেও কাহিনীকার প্রতিভা বসু-র পছন্দকে সম্মান দিতে ভারতী দেবী-কে সুযোগ পেলেন। মনে রাখতে হবে কেরিয়ারের শুরুতে উত্তম কুমারের যেমন ফিল্ম জগতে পরিচিতি ছিল ‘এফএমজি’ (ফ্লপ মাষ্টার জেনারেল) তেমনই সুচিত্রা সেন-র নাম ছিল ‘মাকাল ফল’। এ ছবিতেই অরুণের অরূপকুমার, উত্তম চ্যাটার্জী নাম ঘুচে নবনামে ভূষিত হলেন ‘উত্তম কুমার’। ভূষিত করলেন স্বনামধন্য বিমল ঘোষ।
আরও পড়ুন:
ত্বকের পরিচর্যায়: ত্বক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে? যত্নে কী কী করবেন? জেনে নিন ত্বক বিশেষজ্ঞের জরুরি পরামর্শ
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১০: গঙ্গা এলেন মর্ত্যে, হলেন ভাগীরথী
যোগা-প্রাণায়াম: কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন? প্রাণায়ামে হবে শ্বাসকষ্টের উপশম, জেনে নিন কীভাবে করবেন
দিদিমার হাতের লোভনীয় গোকুল পিঠে খুব মনে পড়ে? এ বার নিজেই বানিয়ে ফেলুন, রইল রেসিপি
যথাসময়ে ‘সহযাত্রী’-ছবির কাজ শেষ হল। একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে উত্তমবাবু কাজ করলেও ভাগ্যের বিড়ম্বনাকে খণ্ডন করতে পারলেন না। তৎকালীন সময়ে ভারতী দেবীর মতো হেভিওয়েট নায়িকা থাকলেও সিনেমার ভাষায় ছবিটি চূড়ান্তভাবে ফ্লপ করল। উত্তরা, পূরবী ও উজ্জ্বলা-র চেনে ছবিটি কোনও সাড়া জাগাতে পারল না।
প্রশ্ন উঠবে সে সময়ের উত্তম কি কোনওভাবেই হিট দিতে পারবেন না?
উত্তরটা খুব জটিল।
প্রথমত: উত্তম কুমার আজন্ম এমন একজন ডেডিকেটেড ফিল্ম আর্টিস্ট যিনি সেন্ট পার্সেন্ট ইনভলভমেন্ট ছাড়া ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ হতে পারতেন না। চাকরি, অভিনয়, সংগ্রাম তার চূড়ান্ত একাগ্রতাকে তছনছ করে দিত।
প্রশ্ন উঠবে সে সময়ের উত্তম কি কোনওভাবেই হিট দিতে পারবেন না?
উত্তরটা খুব জটিল।
প্রথমত: উত্তম কুমার আজন্ম এমন একজন ডেডিকেটেড ফিল্ম আর্টিস্ট যিনি সেন্ট পার্সেন্ট ইনভলভমেন্ট ছাড়া ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ হতে পারতেন না। চাকরি, অভিনয়, সংগ্রাম তার চূড়ান্ত একাগ্রতাকে তছনছ করে দিত।
দ্বিতীয়ত: নায়িকা বিভ্রাট। বয়সে বড় নায়িকার সঙ্গে রোমান্স জমানো বড্ড বেমানান লাগত। সেখানে অগ্রদূত গোষ্ঠীর মেধাও প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে যায়।
তৃতীয়ত: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার যাঁরা উত্তমবাবুকে নেপথ্যে থেকে তারকা বানিয়েছিলেন সেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার তাঁরাও তখন সংগ্রামের ময়দানে।
এভাবে হাজার চাঁদের হাটে সহযাত্রী এক সপ্তাহের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ল সঙ্গে সঙ্গে উত্তম কুমারের কেরিয়ার। —চলবে
তৃতীয়ত: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার যাঁরা উত্তমবাবুকে নেপথ্যে থেকে তারকা বানিয়েছিলেন সেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার তাঁরাও তখন সংগ্রামের ময়দানে।
এভাবে হাজার চাঁদের হাটে সহযাত্রী এক সপ্তাহের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ল সঙ্গে সঙ্গে উত্তম কুমারের কেরিয়ার। —চলবে
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।