সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


 

মুক্তির তারিখ: ০৩/০৯/১৯৫৪

 

প্রেক্ষাগৃহ: উত্তরা,পূরবী ও উজ্জ্বলা

 

উত্তম অভিনীত চরিত্রের নাম: কিরিটী

উত্তম কুমারের ব্যক্তিগত জীবনে যাই ওঠা পড়া থাকুক না কেন এ ছবি বাংলা ছবির ইতিহাসে বসন্তের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। সুচিত্রা সেন নামে যে নায়িকা এ ছবিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন তার জীবনেও এ ছবি ছিল উল্লেখযোগ্য।

এ ছবি শুধু উত্তম কুমারকেই ভরিয়ে দেয়নি, পূর্ণতা দিয়েছিল সুচিত্রা সেনের ফিল্মি কেরিয়ারকেও। সুতরাং অগ্নিপরীক্ষা সিনেমার জনপ্রিয়তা সুচিত্রা সেনের জীবনেও দরকার ছিল, না হলে আর কতদিন যে উত্তম-সুচিত্রা নামক ম্যাজিক দেখতে অপেক্ষা করতে হতো তা, কেউ জানে না।

এ জুটির ষষ্ঠ ছবি ছিল অগ্নিপরীক্ষা। এর আগের পাঁচটা ছবিতে যে মানে তাঁরা অভিনয় করেছেন সেগুলো যদি শৈশবের প্রতীক হয়, তাহলে এ ছবিতে তাঁদের আত্মপ্রকাশ যৌবনের প্রতীক।

পরিচালকের তরফে অগ্রদূত গোষ্ঠীর কাছেও এ ছবিটা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটা ফল ছিল কারণ এমপি প্রোডাকশনের কর্ণধার মুরলীধর চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম পছন্দ ছিল বিকাশ রায় এবং অনুভা গুপ্ত।
কিন্তু পরিচালক বিভূতি লাহার জেদের কাছে হার মানতে হল প্রযোজক সংস্থাকে। এতদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাওয়া উত্তম সুচিত্রাকেই বিভূতিবাবু, নিজের নতুন ছবি অগ্নিপরীক্ষার জন্য মনোনীত করলেন। শুরু থেকেই বেশ কয়েক দিন শুটিংয়ে উত্থান পতনের পর দু’ জনের অভিনয় এমন একটা মানে পৌঁছেছিল, যা দেখে তৎকালীন পরিচালক এবং অন্যান্য কলাকুশলীরা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছিলেন এ ছবি দর্শকের মনোরঞ্জন করবেই।

শুধু গানের কথা নিয়ে গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের সঙ্গে ২২ বার পরিচালক কাটাকুটি খেলা করেছিলেন। যেটা সে সময় বেশ একটা সাড়া জাগানো ঘটনা। মনে রাখতে হবে উত্তম বা সুচিত্রা তখনও রোম্যান্টিক জুটি হিসেবে পাকাপাকি আসন পাননি। কিন্তু পরিচালকের কাছে এই ছবিটা ছিল একটা চ্যালেঞ্জের মতো। আশাপূর্ণা দেবীর কাহিনী অবলম্বনে একটি নারী চরিত্রের ওঠাপড়াকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সমাজের চেহারাকে হাজির করা চাট্টিখানি কথা ছিল না।

এখন প্রায় ৭০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা যখন ছবিটি দেখতে বসি, তখন অনেক প্রশংসা করি। কিন্তু ছবিটির ফ্রেম ধরে ধরে আলোচনা করলে দেখতে পাওয়া যাবে পথের পাঁচালী মুক্তি পাবার আগের বছর এই ছবির প্রতিটি নির্মাণপর্বে, অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছিল। সে বছরের গড়পড়তা অন্যান্য ছবিগুলির মান সে কথাই বলে।
উত্তম কুমার তার আত্মজীবনীতে এ বছরের অন্যান্য ছবিগুলো নিয়ে যেমন লিখেছেন ‘অগ্নিপরীক্ষা’ নিয়ে সে ধরনের বিশেষ কিছু লেখেননি, কারণ উনিও জানতেন অন্যান্য ছবিগুলোতে যে মানের অভিনয় করেছিলেন এ ছবিটিতেও সেমানের অভিনয়ই করেছেন। কিন্তু ছবিটির প্রকৌশলী ভূমিকা অন্য ছবি থেকে আলাদা করে দিয়েছিল।

আমার এত কথা বলার উদ্দেশ্য হল, ১৯৫৪ সালের প্রেক্ষিতে যদি উত্তম কুমারের বারোটা ছবি নিয়েই আলোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে প্রত্যেকটা ছবিতে উত্তমবাবু নিজেকে সংশোধন করছেন নতুন নতুন কিছু সংযোজন করেছেন।

এ ছবির মূল জোর, অবশ্যই সংলাপ। মূলত উত্তম সুচিত্রা এ ছবি থেকেই সুপারহিট জুটি হয়ে উঠলেন তার পিছনে অবশ্যই রয়েছে সংলাপের অমর প্রভাব। বাণিজ্যিক সিনেমার সংলাপ আসলে কি হওয়া উচিত, কেউ যদি এই নিয়ে কোন গবেষণা করতে চান তাকে “অগ্নিপরীক্ষা” ছবিটিকে কয়েকবার দেখতে অনুরোধ করব। স্মার্ট সাবালক সংলাপ। জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

এটা বোধহয় আশাপূর্ণা দেবীর মূল উপন্যাসের মধ্যেই ছিল। তবে উপন্যাস থেকে সিনেমায় আনতে গিয়ে অনিবার্যভাবে যে পরিবর্তনগুলো প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে সেগুলো, সবই রয়েছে এ ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে। আসলে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিটি একটা টেক্সট, যেটাকে নিখুঁতভাবে পাঠ করতে পারলে বাণিজ্যিক সিনেমার অনেক কিছু শেখা যায়। উত্তম-সুচিত্রা জুটির ছবিটি প্রথম সুপার ডুপার হিট কারণ কুড়িবারেরও বেশি ছবিটি পূনর্মুক্তি পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অনেক সিনেমা বিশেষজ্ঞকে বলতে শুনেছি, ‘অগ্নিপরীক্ষা’ সুপারহিট করার প্রধান স্তম্ভ চারজন উত্তম, সুচিত্রা, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং গৌরী প্রসন্ন মজুমদার। কথাটা আংশিক সত্য। কারণ, ‘অগ্নিপরীক্ষা’-র মূল ভিত, উত্তম-সুচিত্রার অভিনয় আর সঙ্গীতের উপর দাঁড়িয়ে নেই, বরং বলা যায় এ ছবির মূল জোর, তার চিত্রনাট্য সংলাপের গঠনগত ভিত্তির উপর। মূল গল্পটারও একটা জোর ছিল। ছবির শুরু থেকেই যে পরিবেশটা তৈরি করা হয় সেখানে লক্ষ্য করা গিয়েছে পাহাড়ে কুয়াশাতে পথ হারিয়ে নায়ক কিরিটী হঠাৎ থমকে যায়। কে যেন গান গাইছে। কাছে গিয়ে গায়িকার সঙ্গে আলাপ হয় তাপসীরূপী সুচিত্রার সঙ্গে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২০: মেলা থেকে ফিরে ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৯: গুরুদেবের দেওয়া গুরুদায়িত্ব

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩২: শোকের আঁধারে আকাশ কালো—অযোধ্যায়

এ দৃশ্যটুকুকে সযত্নে সাজিয়েছেন পরিচালক। পর্বে পর্বে কৌতুহলটা রেখেছেন যেটা, বাণিজ্যিক সিনেমার আসল জাদুকাটি। প্রেমে নিয়ে আসার জন্যেও পরিবেশ আর সংলাপকে কীভাবে কাজে লাগানো হয়েছে, আর এ প্রেমের ঘনিষ্ঠতার জন্য উত্তম বা সুচিত্রাকে কখনওই খুব একটা শারীরিক অভিনয় করতে হয়।

উত্তমের চোখের ভাষা ও সুচিত্রার হাসিকে এ ছবিতে খুবই সুচারুভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মূল সাসপেন্স রয়েছে এর পরের চিত্রনাট্যেএ। নাটক নিয়ে যাঁরা ভাবতে চান তাঁরাও সযত্নে এ জায়গাটা লক্ষ্য করতে পারবেন। পাহাড় থেকে ফিরে উত্তম যখন সুচিত্রাদের বাড়ি যায় তখন সে আবিষ্কার করে সুচিত্রা হল আসলে তাঁর স্ত্রী। ছোটবেলায় তাঁর সঙ্গেই উত্তমের বিয়ে হয়েছিল।

কৈশোর বিবাহের এই ভাবনাকে খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করা হয়েছে ছবিতে। অগ্নিপরীক্ষার টেক্সট এর মধ্যেই একটা সারস্বত অভিযান আছে যার হাত ধরে গীতিকার, সুরকার, পরিচালক অভিনেতা-অভিনেত্রী, সহ অভিনেতা সকলেই খুঁজে পেয়েছে একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার মাধ্যম।

ছবিটির প্রাথমিক কথাবার্তার পর এবার আমরা চেষ্টা করব প্রত্যেকটি পর্ব নিয়ে আলোচনা করার। আগেই বলেছি, উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন নিজেরা স্বতন্ত্রভাবে ছবির ক্ষেত্রে যখন বেড়ে উঠছিলেন ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবি ছিল তাদের দু’ জনেরই একটা যুগ্ম অভিযান যেখানে তাঁরা নিজেদেরকেই ভাঙ্গাগড়ার মাধ্যমে গড়ে তুলতে অনেকটা সফল হয়েছিলেন। কারণ, এর পর থেকেই দেখব, একের পর হিট ছবি এই ফর্মুলাতে শুরু হয়ে যায়।

ছবির কাহিনী নিয়ে কোনও দ্বিমত হবে না। আশাপূর্ণা দেবীর গল্পের যে মান আমাদের মধ্যে আছে তার চূড়ান্ত ফল আমরা দেখেছি এ ছবির পরতে পরতে। দেশভাগ অনন্তর বাংলাদেশের পারিবারিক গঠন কীভাবে চলছিল এ ছবির প্রতিটা কোষে কোষে তার রিপিটেশন দেখা যায়।
জমিদারি প্রথা তার শহুরে আভিজাত্য, জমিদার বাড়ির অভ্যন্তরে বড়দের প্রতি ছোটদের মনোভাব এবং উচ্চবিত্তের সংসারী মানসিক টানাপোড়েন কীভাবে একটা নারীর আদর্শকে গড়ে তুলতে পারে বা ভেঙ্গে দিতে পারে তার একটা মাপকাঠি তৈরি করেছিল এ ছবি।

এ ছবির অভ্যন্তরে অনেক মণি মানিক্য শুধু উত্তম-সুচিত্রার পরস্পরের প্রতি তাকানো নয়, তাঁদের প্রত্যেকটা কথোপকথনের মাধ্যমে ফুটে উঠেছিল নির্মাতাদের একটা সুচিন্তিত মনোভাব।
গানের জগতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তাঁর প্রথম মাইলস্টোন কিন্তু অগ্নিপরীক্ষা ছবি।

চিত্রজগতের মাধ্যমে তার সুললিত রাগাশ্রয়ী কন্ঠ, মানুষের কাছে পৌঁছনার যে একটা বড় রাস্তা পেয়ে যায় এ ছবিতে। এ ছবিতে তাকে ব্যবহার ঠিকঠাক না করা হলে পরবর্তীকালে সুচিত্রা-সন্ধ্যা নামক জুটি তৈরি সেটাও কিন্তু হতো না।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-২: এই প্রথম বার মনে হল জীবন কঠিন হতে চলেছে, তাই মনে মনে প্রস্তুত হতে শুরু করলাম

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৩: বাবা বিশ্বনাথের দরবারে

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৩: সবুজের নেশায় অভয়ারণ্য

প্রেক্ষিতের দিকে তাকালে আমাদের মনে রাখতে হবে, বম্বেতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যতই হেমন্ত কুমার নাম নিয়ে সফল হোন না কেন, বাংলায় কিন্তু উত্তম কুমারের কণ্ঠে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সে ধরনের সাড়া জাগানো গান তখনও তৈরি হয়নি।

কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পায়ের তলার মাটি শক্ত করে দিল এ ছবির গান। এরপরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে সংগ্রাম পর্বে আর ফিরতে হয়নি। কারণ, ক্যামেরার সামনে সুচিত্রা সেন যতবারই গানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন নির্মাতাদের ততবারই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কথাই মনে পড়েছে।

অগ্রদূত গোষ্ঠী এর পরবর্তীকালে প্রত্যেক বছরই একটা বা দুটো করে উত্তমকুমারকে নিয়ে সিনেমা করেছেন। এখানেও লক্ষ্য করার বিষয় সুচিত্রা সেন যতদিন হিট দিয়েছেন ততদিন উত্তমবাবুর পাশে সুচিত্রা সেনকে অগ্রদূত গোষ্ঠী ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তার পরবর্তীকালেও সুপ্রিয়া চৌধুরী, সন্ধ্যা রায়, অপর্ণা সেন মাধবী মুখোপাধ্যায় এদের সকলকে ব্যবহার করেছেন।
আমার বলার উদ্দেশ্য, উত্তম কুমার যে আগামী দিনে মহীরূহ হয়ে উঠতে চলেছেন। সেটা অগ্রদূত গোষ্ঠী টের পেয়ে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি সে সময়ের তরুণীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা সুচিত্রা সেনকে ব্যবহার তাঁরা খুব সুচারু ভাবে করেছিলেন।

চিত্রনাট্য সংগীতের পর এবার যে অংশটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ক্যামেরার ব্যবহার। ছবিতে ক্যামেরা কীভাবে একটা অংশকে বন্দি করছে সেটাও চিত্রমোদী দর্শকদের অনেকটা হলে নিয়ে যায়।

ছবির বাণিজ্যিক দিকটাকে যদি মাথায় রাখতে হয় ক্যামেরাম্যানের একটা বড় ভূমিকা থাকে বৈকি। অজয় কর নিজে একজন চিত্র গ্রাহক ছিলেন বলে তিনি নিজে যে ছবিগুলো পরিচালনা করেছেন সহকারীদের সঙ্গে ক্যামেরার মূল দৃশ্যায়নে তিনি নিজে দাঁড়িয়েছেন এবং পরিকল্পনা করেছেন। তার কারণ তিনি বুঝতেন যে, ক্যামেরার মাধ্যমেই কিন্তু স্টোরি টেলিং-টা দর্শকের মনে গেঁথে দিতে হবে। অর্থাৎ ছবিতে ক্যামেরার ভাষাটাকে দর্শক যদি পছন্দ করে ফেলেন তাহলে অন্যান্য অংশগুলো যদি দুর্বল থাকেও সেগুলো চাপা পড়ে যাবে।
আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: একটুতেই নখ ভেঙে যায়? নখের স্বাস্থ্যের জন্য এই সব খাবার পাতে রাখতেই হবে

ষাট পেরিয়ে, পর্ব-২৩: শীত হোক বয়স্কদের জন্যও উপভোগ্য/১

শীতকালে শ্বাসকষ্ট বাড়ে? হার্ট ও কিডনির যত্ন নেবেন কীভাবে? চনমনে থাকতে জেনে নিন ডাক্তারবাবুর জরুরি পরামর্শ

১৯৫৪ সালে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাকে যেভাবে অগ্রদূত গোষ্ঠী ব্যবহার করে অগ্নিপরীক্ষা ছবিটিকে একটা মাত্রায় নিয়ে গেছেন সেটা সত্যিই প্রশংসারযোগ্য এবং উত্তমবাবু খুব ভালো ক্যামেরা ব্যবহার করতে জানতেন বলেই, এই ছবির প্রত্যেকটা ফ্রেমে সংযত অভিনয় দিয়ে মন কেড়ে নিয়েছেন।

তরুণ কুমার তার আত্মজীবনীতে এক জায়গায় বলেছেন ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিটির নির্মাণ পর্বে সুচিত্রা সেনের ঠাকুমার ভূমিকায় অভিনয় করা সুপ্রভা দেবী নাকি উত্তমকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তোমার হাসিটা এত সুন্দর, তুমি ছবিতে ব্যবহার করো না কেন, দেখবে মানুষ এটা খুব নেবেন ও পছন্দ করবেন।

উত্তমবাবু এই পরীক্ষা-নিরীক্ষাটা এই ছবির মাধ্যমেই শুরু করেছিলেন। সব সময় মনের মধ্যে আশঙ্কার মেঘ জমিয়ে রাখা ছাড়াও যেখানে সময় পেয়েছেন, সম্ভব হয়েছে বা সুযোগ পেয়েছেন এ ছবিতে নিজের স্বর্গীয় হাসিকে ব্যবহার করা চেষ্টা করেছেন।
সবশেষে বলতে হয় ছবিটির প্রচার পর্ব। এ ছবিটির প্রচার পর্বেও নির্মাতারা একটা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। সারা শহরে ‘প্রণয়ের নতুন আবেদন’ এ শিরোনামে ‘অগ্নিপরীক্ষা’-র প্রচার পর্ব চলেছিল অর্থাৎ একটা ভালো ছবি যে আসছে এবং দর্শকদের মধ্যে তার একটা প্রস্তুতিপর্ব তৈরি করা যে বড় কাজ সেটা, নির্মাতারা বুঝতে পেরেছিলেন।

কাকতালীয়ভাবে আর একটা কথা না বললে এ ছবির কথা শেষ করা যাবে না, উত্তম কুমারের জন্মদিন ৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৬। এই ছবির মুক্তি দিনও ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৪। অর্থাৎ উত্তম কুমারের নবজন্ম অভিনয় জগতে হয়েছিল ৩ সেপ্টেম্বর যেদিন ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল।

যেদিন ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল সেদিন নিজের স্ত্রী গৌরী দেবীকে নিয়ে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে সারারাত শহরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহের সামনে উত্তম কুমার ঘুরে ছিলেন। আর ছবিটা দেখে গৌরী দেবী বলেছিলেন এবার তোমার সামনে ওঠার পালা। আর পিছনে তাকাতে হবে না। এই ছবি সুপারহিট করবেই।—চলবে
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।

Skip to content