‘দ্বীপের রানি’ জিউলিয়া মানকা।
জীবন বড়ই বিচিত্র। কখন যে কাকে কোন খাতে বয়ে নিয়ে যায়, তা মনে হয় স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ বলতে পারেন না! তাই বলা যায়, চক্রবত পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুঃখানি চ…। আজ আপনাদের ইতালির জিউলিয়া মানকার জীবনের কথা শোনাবো। ইতালির টাসকানির বাসিন্দা জিউলিয়া। তিনি একাই কয়েক দিনের জন্য পিয়ানোসা দ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
ছুটির মেজাজে পিয়ানোসা দ্বীপে কয়েকটা দিন নিজের সঙ্গে একান্তে কাটাতে চেয়েছিলেন। আর সেই বেড়ানোর জায়গাতে গিয়েই এক মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে ফেললেন নিজেকে। সেই জায়গা তাঁর মনে এতটাই স্থান গ্রহণ করে নিল যে, তিনি সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কথা মাথা থেকেই জীবনের মতো বার করে দিলেন। তার পর থেকে সেখানেই পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন। এই পিয়ানোসাকে সবাই ভূতুড়ে দ্বীপ নামেও চেনে। জানলে আশ্চর্য হবেন, জিউলিয়াই ওই দ্বীপের একমাত্র মহিলা, অর্থাৎ সেখানে আর কোনও মহিলা বাসিন্দা নেই!
ছুটির মেজাজে পিয়ানোসা দ্বীপে কয়েকটা দিন নিজের সঙ্গে একান্তে কাটাতে চেয়েছিলেন। আর সেই বেড়ানোর জায়গাতে গিয়েই এক মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে ফেললেন নিজেকে। সেই জায়গা তাঁর মনে এতটাই স্থান গ্রহণ করে নিল যে, তিনি সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কথা মাথা থেকেই জীবনের মতো বার করে দিলেন। তার পর থেকে সেখানেই পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন। এই পিয়ানোসাকে সবাই ভূতুড়ে দ্বীপ নামেও চেনে। জানলে আশ্চর্য হবেন, জিউলিয়াই ওই দ্বীপের একমাত্র মহিলা, অর্থাৎ সেখানে আর কোনও মহিলা বাসিন্দা নেই!
সেটা ২০১১ সাল। সে বছর নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর জন্য পিয়ানোসাকে বেছে নিয়েছিলেন জিউলিয়া। পিয়ানোসা দ্বীপে অতীতে ইতালির বন্দিদের রাখা হত। ওই দ্বীপে একটাই মাত্র হোটেল রয়েছে। যার নাম ‘হোটেল মিলেনা’। ২০১১ সালে পিয়ানোসা গিয়ে ওই হোটেলেই উঠেছিলেন জিউলিয়া। ওই হোটেলের কর্মীরা কেউ সাধারণ নাগরিক নন। সবাই কোনও না কোনও অপরাধে শাস্তি পেয়েছেন। এক কথায় এঁরা সবাই দাগি অপরাধী। জেলের ওই আসামিরাই হোটেলের ভালোমন্দ সব কিছুর দেখভাল করেন।
সাধারণত বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর প্রচেষ্টাতেই ওই হোটেলে আসামিদের নানা দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি চলে তাঁদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাজ। বেড়াতে গিয়ে এই দাগি আসামিদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন জিউলিয়া। এখানে জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার জন্য পাঠানো হয় ওই অপরাধীদের। এই ভাবনাটাই আকৃষ্ট করেছিল জিউলিয়াকে। আর তারপরই সেখানে পাকাপাকি ভাবে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।
সাধারণত বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর প্রচেষ্টাতেই ওই হোটেলে আসামিদের নানা দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি চলে তাঁদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাজ। বেড়াতে গিয়ে এই দাগি আসামিদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন জিউলিয়া। এখানে জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার জন্য পাঠানো হয় ওই অপরাধীদের। এই ভাবনাটাই আকৃষ্ট করেছিল জিউলিয়াকে। আর তারপরই সেখানে পাকাপাকি ভাবে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
অজানার সন্ধানে: এক লিটার পেট্রলে গাড়ি ছুটবে ১০০ কিমি! যুগান্তকারী যন্ত্র আবিষ্কার করেও রহস্যজনক ভাবে উধাও হন বিজ্ঞানী ওগলে
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪: শুভ পরিণয়বেলা
দেখতে দেখতে ১২ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। ওই পিয়ানোসা আর ‘হোটেল মিলেনা এখন জিউলিয়ার সংসার। দ্বীপে যে দু’জন স্থায়ী বাসিন্দা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন জিউলিয়া। সেই হোটেলেরই ম্যানেজার। জিউলিয়া যখন অতিথি হিসাবে ওই হোটেলে এসেছিলেন, সেই সময় যিনি এই হোটেলের ম্যানেজার ছিলেন তিনি তখন তাঁকে জানান যে, হোটেল পরিচালনা করতে গিয়ে বেশ অর্থের অভাব অনুভব করতে হয়। ফলে অর্থাভাবে যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। অর্থাভাবে যদি সত্যিই হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে ওই আসামিদের আর এই হোটেল থেকে নিজেদের সংশোধনের সুযোগ মিলবে না। ফলে তাঁদের আবার জেলে ফেরত যেতে হবে।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৯: যে তোরে পাগল বলে তারে তুই বলিস নে কিছু
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭: সুন্দরবনের লুপ্ত রাষ্ট্র গঙ্গারিডি
এই হোটেলের দৌলতে সমাজে মূলস্রোতে ফেরার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরা, তা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে এক লহমায়। আর এই কঠিন বাস্তবটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল জিউলিয়ার মনকে। অতীতে ‘ট্যুরিস্ট এজেন্ট’ হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে জিউলিয়ার। তাঁর কথায়, ‘‘হোটেল ম্যানেজারের কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল, আমাকে চুপ করে বসে থাকলে হবে না। এদের জন্য কিছু একটা অবশ্যই আমাকে করতে হবে। তা না হলে তাঁরা (আসামি) আবার জেলের ছোট্ট কুঠুরিতে দিন কাটাবেন।’’
এর পরই ইতালির টাসকানির বাসিন্দা জিউলিয়া ওই দ্বীপে পাকাপাকি ভাবে থাকার জন্য মনস্থির করে ফেলেন। পরে ওই হোটেলেরই ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্বভারও গ্রহণ করেন তিনি। প্রথম দিকে কোনও পারিশ্রমিকও নিতেন না। তাঁর সুপরিচালনাতেই হোটেলের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হয়েছে।
এর পরই ইতালির টাসকানির বাসিন্দা জিউলিয়া ওই দ্বীপে পাকাপাকি ভাবে থাকার জন্য মনস্থির করে ফেলেন। পরে ওই হোটেলেরই ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্বভারও গ্রহণ করেন তিনি। প্রথম দিকে কোনও পারিশ্রমিকও নিতেন না। তাঁর সুপরিচালনাতেই হোটেলের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হয়েছে।
অপরাধীদের সঙ্গে।
এখন ওই হোটেলে রয়েছেন এক জন কারারক্ষী। সেই সঙ্গে রয়েছেন ১০ জন পুরুষ। তাঁরা প্রত্যেকেই অপরাধী। হোটেলের যাবতীয় কাজকর্ম তাঁরাই করে থাকেন। তাঁদের সঙ্গেই থাকেন জিউলিয়া। ওই অপরাধীদের মধ্যে কেউ রান্নাঘর সামলান। আবার কেউ হোটেলের বাগানের তদারকি করেন। কারও উপর আবার খাবার পরিবেশনের ভার রয়েছে। কেউ আবার ঘরদোর সাফাইয়ের কাজ করেন। এই কাজের জন্য তাঁরা যথাযোগ্য পারিশ্রমিকও পান। হোটেলে রয়েছে ১১টি ঘর। সাজানো রয়েছে কাঠের আসবাবপত্র।
আরও পড়ুন:
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৩: কোচবিহার ও রাজ পরিবার— নানা ধর্ম ও মানুষের মিশ্রণ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৮: বাবা, ‘পিতা নোহসি’ বলো — এই কথাটি ঘুরেফিরেই কবির কানে বেজে উঠত
হোটেলের ঘর থেকে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য খুব ভালো ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। আসলে দ্বীপটার অবস্থান এমন যে মনে হয় যেন প্রকৃতি তাঁর সমস্ত রূপরস ঢেলে সাজিয়েছে তাকে। হোটেলের দিগন্ত বিস্তৃত পাইন গাছের সারি। সামনে সমুদ্র। হোটেলের বাইরে রয়েছে বিশাল খোলা প্রাঙ্গণ। যেখানে বসার সুব্যবস্থাও রয়েছে। হোটেলে অতিথিদের জন্য রয়েছে রেস্তরাঁ, পানশালাও। অনেকেই ছুটি কাটাতে ওই দ্বীপে ঘুরতে যান। আর একমাত্র আস্তানা হিসাবে ওঠেন ওই হোটেলে।
পিয়ানোসাকে ভূতুড়ে দ্বীপও বলা হয়ে থাকে।
অনেকে আবার জন্মদিন বা বিয়েবাড়ির পার্টিরও আয়োজন এখানে। জিউলিয়াকে ‘পিয়ানোসার রানি’ও বলে ডাকা হয়। হোটেল সামলানোর পাশাপাশি দ্বীপে আসামিদের জন্য যে পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে, তার ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন তিনি।
আসামিদের সঙ্গে থাকতে ভয় করে না? জিউলিয়ার জবাব, ‘‘অনেকেই আমাকে পাগল বলে। তাঁরা ভাবে আমি পাগল বলেই এমন কাজ করছি। কিন্তু আমি এখানে নিজেকে খুবই সুরক্ষিত মনে করি। এখানে থাকতে কখনওই আমার ভয় করেনি, দুশ্চিন্তাও হয়নি।’’ নিজের এই কাজের জন্য গর্ব অনুভব করেন জিউলিয়া।
তাঁর কাজ নিয়ে প্রথমে ভয় পেত জিউলিয়ার কন্যা। তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। পরে দ্বীপ ঘুরে আসার পর সে-ও তাঁর মায়ের জন্য যারপরনাই খুশি। আর তাই তো জিউলিয়া বলেছেন, ‘‘খুবই ভাগ্যবতী আমি।’’
আসামিদের সঙ্গে থাকতে ভয় করে না? জিউলিয়ার জবাব, ‘‘অনেকেই আমাকে পাগল বলে। তাঁরা ভাবে আমি পাগল বলেই এমন কাজ করছি। কিন্তু আমি এখানে নিজেকে খুবই সুরক্ষিত মনে করি। এখানে থাকতে কখনওই আমার ভয় করেনি, দুশ্চিন্তাও হয়নি।’’ নিজের এই কাজের জন্য গর্ব অনুভব করেন জিউলিয়া।
তাঁর কাজ নিয়ে প্রথমে ভয় পেত জিউলিয়ার কন্যা। তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। পরে দ্বীপ ঘুরে আসার পর সে-ও তাঁর মায়ের জন্য যারপরনাই খুশি। আর তাই তো জিউলিয়া বলেছেন, ‘‘খুবই ভাগ্যবতী আমি।’’
* অজানার সন্ধানে (Unknown story): ড. সঞ্চিতা কুণ্ডু (Sanchita Kundu) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, হুগলি মহসিন কলেজ।