নেতাজি। ছবি: সংগৃহীত।
বাবা জানকিনাথের কাছে অভিযোগ আসছিল অনেকদিন থেকেই। তিনি অত্যন্ত বিশ্বাস করে বাড়ির বুড়ি কাজের লোক মানোদার ওপর ছেলেকে মানুষ করার দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছিলেন। নিশ্চিন্তে তার ছেলের সমস্ত ভার তার উপর সঁপে দিয়েছিলেন। কিন্তু এমন কিছু খবর পাচ্ছিলেন, যাতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন— এ বার একটু নিজে থেকে খোঁজখবর নিতেই হবে। তা না হলে ছেলেটা হয়তো আর মানুষই হবে না। কারণ, ছেলে সম্পর্কে নানা অভিযোগ শুনে তিনি বিস্মিত হয়ে পড়ছিলেন। তাছাড়া পুত্র সুভাষের ওপরেও কি তাঁর কম বিশ্বাস ছিল! সে যে খারাপ পথে কোনওদিনও যেতে পারে, তা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। এতে তিনি হতাশই হয়ে পড়েন। কারণ, তাঁর নিজের কাছে তো এত সময় নেই যে ছেলে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, তার খবর নেবার।
তবুও পরিকল্পনা করেই তিনি একদিন খবর নিলেন। তিনি যা দেখলেন এবং শুনলেন তাতে তিনি আশ্চর্যই হলেন। ছুটির দিন আসলেই সুভাষ নাকি বাড়িতে থাকে না। কাক-পক্ষী ডাকার আগেই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সারাদিন আর তাকে বাড়িতে দেখতে পাওয়া যায় না। সন্ধেবেলায় কখন যে সে বাড়ি ঢোকে, তা মানোদা ছাড়া আর কেউ টেরও পেত না।
তবুও পরিকল্পনা করেই তিনি একদিন খবর নিলেন। তিনি যা দেখলেন এবং শুনলেন তাতে তিনি আশ্চর্যই হলেন। ছুটির দিন আসলেই সুভাষ নাকি বাড়িতে থাকে না। কাক-পক্ষী ডাকার আগেই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সারাদিন আর তাকে বাড়িতে দেখতে পাওয়া যায় না। সন্ধেবেলায় কখন যে সে বাড়ি ঢোকে, তা মানোদা ছাড়া আর কেউ টেরও পেত না।
জানকিনাথ তাঁর স্ত্রীকে বললেন, আমার তো সময়ই হয় না, তুমি তো একটু খোঁজখবর নিতে পারো সুভাষের। প্রভাবতী দেবী স্থির করলেন, এ বার থেকে ছেলের দিকে তিনি কড়া নজর রাখবেন। তাই একদিন সন্তর্পণে তিনি ছেলের জন্য ওত পেতে রইলেন।
সন্ধেরও বেশ কিছুক্ষণ পরে সুভাষ চুপিচুপি মানোদার ঘরে ঢুকে পড়ল। ঢোকবার আগে কেউ তাকে দেখছে কিনা, সেটা সে সরেজমিনে দেখে নিল। প্রভাবতী দেবীও কিছুক্ষণ আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর চুপি চুপি এগিয়ে এলেন মানোদার ঘরের দিকে। তিনি যা দেখলেন, তাতে তো তাঁর চক্ষু চড়ক গাছ! সুভাষের পায়ের অনেকখানি জায়গা কেটে গিয়েছে। মানুদা জায়গাটা কাপড় দিয়ে মুছে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বলছে, খোকাবাবু তোমার এই পাগলামি আর কতদিন চলবে? মা জানতে পারলে কি বলবেন বলো তো? সুভাষ তাকে আদর করে বলছে, না না, তুমি কখনও মাকে এ সব কথা বলো না। মা কিন্তু সব জেনে গেলে খুব রাগ করবেন।
সেদিন রাতেই জানকিনাথ প্রভাবতী দেবীকে বললেন, শোনো ছেলেকে এ বার শাসন করো। সে পড়াশুনা না করে সারাদিন টইটই করে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরের দিন ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেরোবার সময় জানকিনাথ ছেলেকে ধরলেন। জিজ্ঞেস করলেন, পড়াশোনা বাদ দিয়ে এই ভোরবেলায় তুমি কোথায় যাচ্ছ? প্রথমটা ঘাবড়ে গেলেও ছোট্ট সুভাষ দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল, ভয়ানক অসুখ হচ্ছে চারদিকে বাবা। এ কথা শুনে জানকিনাথ বিস্মিত হয়ে বললেন তাতে তোমার কী? সুভাষের জবাব, এখানে সেবা করার মানুষের বড়ই অভাব। বাবা আমি স্বেচ্ছাসেবক হয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রোগীদের সেবা করছি।
সন্ধেরও বেশ কিছুক্ষণ পরে সুভাষ চুপিচুপি মানোদার ঘরে ঢুকে পড়ল। ঢোকবার আগে কেউ তাকে দেখছে কিনা, সেটা সে সরেজমিনে দেখে নিল। প্রভাবতী দেবীও কিছুক্ষণ আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর চুপি চুপি এগিয়ে এলেন মানোদার ঘরের দিকে। তিনি যা দেখলেন, তাতে তো তাঁর চক্ষু চড়ক গাছ! সুভাষের পায়ের অনেকখানি জায়গা কেটে গিয়েছে। মানুদা জায়গাটা কাপড় দিয়ে মুছে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বলছে, খোকাবাবু তোমার এই পাগলামি আর কতদিন চলবে? মা জানতে পারলে কি বলবেন বলো তো? সুভাষ তাকে আদর করে বলছে, না না, তুমি কখনও মাকে এ সব কথা বলো না। মা কিন্তু সব জেনে গেলে খুব রাগ করবেন।
সেদিন রাতেই জানকিনাথ প্রভাবতী দেবীকে বললেন, শোনো ছেলেকে এ বার শাসন করো। সে পড়াশুনা না করে সারাদিন টইটই করে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরের দিন ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেরোবার সময় জানকিনাথ ছেলেকে ধরলেন। জিজ্ঞেস করলেন, পড়াশোনা বাদ দিয়ে এই ভোরবেলায় তুমি কোথায় যাচ্ছ? প্রথমটা ঘাবড়ে গেলেও ছোট্ট সুভাষ দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল, ভয়ানক অসুখ হচ্ছে চারদিকে বাবা। এ কথা শুনে জানকিনাথ বিস্মিত হয়ে বললেন তাতে তোমার কী? সুভাষের জবাব, এখানে সেবা করার মানুষের বড়ই অভাব। বাবা আমি স্বেচ্ছাসেবক হয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রোগীদের সেবা করছি।
আরও পড়ুন:
নাবালক বয়সে হ্যাক নাসার ওয়েবসাইট, মাত্র ২৪-এই রহস্যমৃত্যু! কে এই জোনাথন?
সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৯: নিরুপমা দেবী— তাঁকে নিয়েই গল্প হোক!
স্তম্ভিত হলেন জানকিনাথ ছেলের কথা শুনে। মনে মনে খুশি হলেও তা প্রকাশ করলেন না। গম্ভীর মুখে বললেন, সামনে না তোমার পরীক্ষা? ওসব করার এখন কোনও প্রয়োজন নেই। আজ থেকে তুমি আর বাড়ির বাইরে বেরোবে না।
সুভাষ পিতার আদেশ অমান্য করল না বটে। কিন্তু অভিমানে আহত হয়ে ঘরের দরজায় খিল দিয়ে সটান পড়ার বই নিয়ে বসলো। কিন্তু দেশের কাজে যাঁর নিয়োজিত প্রাণ তার কি পড়ায় মন বসে? মন তার ছুটে গেল সেখানে, যেখানে তার বন্ধুরা একত্রিত হয়ে প্রতিদিন স্বামী বিবেকানন্দের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সংকল্প করে সমাজসেবার। তারপর নিজেদেরকে সমর্পণ করে রোগীর ও আর্তের সেবায়। তাই সুভাষের মন বাড়িতে ছটফট করতে লাগলো। তার ঘরেও ছিল স্বামী বিবেকানন্দের ছবি। একটি চেয়ারের ওপর সেই ছবিটি সাজিয়ে তার সামনে তিনি প্রতিদিন ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে দিতেন। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আজীবন তিনি ব্রহ্মচারী থাকবেন। দশের এবং দেশের সেবায় জীবন উৎসর্গ করবেন।
সুভাষ পিতার আদেশ অমান্য করল না বটে। কিন্তু অভিমানে আহত হয়ে ঘরের দরজায় খিল দিয়ে সটান পড়ার বই নিয়ে বসলো। কিন্তু দেশের কাজে যাঁর নিয়োজিত প্রাণ তার কি পড়ায় মন বসে? মন তার ছুটে গেল সেখানে, যেখানে তার বন্ধুরা একত্রিত হয়ে প্রতিদিন স্বামী বিবেকানন্দের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সংকল্প করে সমাজসেবার। তারপর নিজেদেরকে সমর্পণ করে রোগীর ও আর্তের সেবায়। তাই সুভাষের মন বাড়িতে ছটফট করতে লাগলো। তার ঘরেও ছিল স্বামী বিবেকানন্দের ছবি। একটি চেয়ারের ওপর সেই ছবিটি সাজিয়ে তার সামনে তিনি প্রতিদিন ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে দিতেন। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আজীবন তিনি ব্রহ্মচারী থাকবেন। দশের এবং দেশের সেবায় জীবন উৎসর্গ করবেন।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩২: ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোয় গঙ্গাসাগর মেলা
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৭: তার লাগি পথ চেয়ে আছি পথেই যে জন ভাসায়
প্রভাবতী দেবী জানলার ফাঁক দিয়ে আড়ালে সেই দৃশ্য দেখেছিলেন। আনন্দে তাঁর মন প্রাণ ভরে উঠেছিল। তিনি তো রত্নগর্ভা। তাঁর এই ছেলে তো সাধারণ ছেলে নয়, এ তো দেশের-দশের জন্য নিবেদিত প্রাণ!
এই জননেতা সুভাষচন্দ্রের জীবন কাহিনি রূপকথার মতোই রঙিন এবং রোমাঞ্চকর। নেতাজির আগে পৃথিবীর অন্য কোনও রাষ্ট্র নেতা সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এতোখানি শ্রদ্ধা ও বিস্ময় অর্জন করেছেন—এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে আজাদ হিন্দ ফৌসের সর্বাধিনায়ক হওয়া পর্যন্ত তাঁর এই দীর্ঘ কর্মব্যস্ত জীবন সারা পৃথিবীর মানুষকে বিস্মিত করে দিয়েছিল। তাঁর জীবনের অলৌকিক কাহিনি স্তম্ভিত করেছিল পৃথিবীবাসীকে। নেতাজির নেতৃত্ব দেওয়ার নির্ভুল ক্ষমতা ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁকে নেতার আসনে বসাতে দ্বিধাবোধ করেনি। ত্যাগ, সংযম ও কঠোর সাধনার মধ্যে দিয়ে তিনি ছোটবেলা নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছিলেন।
এই জননেতা সুভাষচন্দ্রের জীবন কাহিনি রূপকথার মতোই রঙিন এবং রোমাঞ্চকর। নেতাজির আগে পৃথিবীর অন্য কোনও রাষ্ট্র নেতা সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এতোখানি শ্রদ্ধা ও বিস্ময় অর্জন করেছেন—এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে আজাদ হিন্দ ফৌসের সর্বাধিনায়ক হওয়া পর্যন্ত তাঁর এই দীর্ঘ কর্মব্যস্ত জীবন সারা পৃথিবীর মানুষকে বিস্মিত করে দিয়েছিল। তাঁর জীবনের অলৌকিক কাহিনি স্তম্ভিত করেছিল পৃথিবীবাসীকে। নেতাজির নেতৃত্ব দেওয়ার নির্ভুল ক্ষমতা ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁকে নেতার আসনে বসাতে দ্বিধাবোধ করেনি। ত্যাগ, সংযম ও কঠোর সাধনার মধ্যে দিয়ে তিনি ছোটবেলা নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছিলেন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৬: যুগান্তরেও সম্মানিতা হন সীতা, তাঁর বনবাস গমনের সিদ্ধান্তে কী তার কোনও প্রভাব আছে?
ডায়াবিটিস বাগে আনতে কোন প্রোটিন খেতেই হবে, আর কী কী এড়াতেই হবে?
নেতাজি তাঁর সারা জীবন দেশমাতৃকার সাধনায় উৎসর্গ করেছিলেন। ছাত্র জীবনে প্রেসিডেন্সি কলেজে সাহেবের ঔদ্ধত্য এবং হীনসত্তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। তার ফলে ইংরেজদের ভারতীয়দের ওপর ছুঁয়ে দেওয়া খারাপ উক্তিগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার যুবসমাজের কাছে তিনি ছিলেন এক নির্ভীক নেতা। সুভাষচন্দ্র ছিলেন অন্যায়ের ও অসত্যের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে দেশমাতৃকার চরণে উৎসর্গীকৃত এক প্রাণ। তাই ইর্ষনীয় আইসিএস পদে চাকরির পেয়েও নিজেকে তিনি কুক্ষিগত করে রাখেননি। অবহেলায় সেই পদ প্রত্যাখ্যান করেন স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের নেতৃত্বে সুভাষচন্দ্রের বহু বীরত্বময় সংগ্রামের জন্য সমগ্র ভারত আজও তার চরণে শ্রদ্ধাবনত। বিশেষ করে ১৯৩১ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালীন সুভাষচন্দ্রের আইন অমান্য আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। নেতাজির দুঃসাহসিক জীবন কাহিনি প্রত্যেক যুবক-যুবতীর কাছে আজও অনুপ্রেরণা। তাঁর বাণী—যদি কখনও মাথা নত করতে হয়, বীরের মতো মাথা নত করবে।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের নেতৃত্বে সুভাষচন্দ্রের বহু বীরত্বময় সংগ্রামের জন্য সমগ্র ভারত আজও তার চরণে শ্রদ্ধাবনত। বিশেষ করে ১৯৩১ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালীন সুভাষচন্দ্রের আইন অমান্য আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। নেতাজির দুঃসাহসিক জীবন কাহিনি প্রত্যেক যুবক-যুবতীর কাছে আজও অনুপ্রেরণা। তাঁর বাণী—যদি কখনও মাথা নত করতে হয়, বীরের মতো মাথা নত করবে।
* অজানার সন্ধানে (Unknown story): ড. সঞ্চিতা কুণ্ডু (Sanchita Kundu) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, হুগলি মহসিন কলেজ।