ছবি প্রতীকী। সংগৃহীত।
দোলপূর্ণিমা বা দোলযাত্রা, সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও বৈচিত্রময় উৎসব। যখন বৈশাখের অবসান ঘটে, ঠিক সেই সময় পড়ে থাকা গাছের শুকনো পাতা, ডালপালা সবই একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার এই উৎসবের মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে। এক কথায় বলা যায়, দোল আমাদের ঋতুচক্রের মধ্যে এক আনন্দের উৎসব।
বাংলা ও ওড়িশা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই উত্সব মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। উত্তরভারতে এই দোলযাত্রা উৎসব ‘হোলি’ নামে পরিচিত। ফাল্গুন মাসের পূ্র্ণিমা তিথিতে প্রতিবছর দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর পিছনে অন্য কাহিনিও রয়েছে। এই দোল উত্সবকে শান্তিনিকেতনে বসন্তোত্সবও বলা হয়। এই উৎসবে মেতে ওঠে ছোট থেকে বড় সবাই। রং খেলার পর মিষ্টি মুখ করে এই আনন্দের অবসান ঘটে। দেশের বাইরেও এই উৎসবে অংশ নেন বিদেশিরা। দোল পূর্ণিমা দিন হোলির রঙে সবাই নিজেদের রাঙ্গিয়ে তুলে সব দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
বাংলা ও ওড়িশা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই উত্সব মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। উত্তরভারতে এই দোলযাত্রা উৎসব ‘হোলি’ নামে পরিচিত। ফাল্গুন মাসের পূ্র্ণিমা তিথিতে প্রতিবছর দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর পিছনে অন্য কাহিনিও রয়েছে। এই দোল উত্সবকে শান্তিনিকেতনে বসন্তোত্সবও বলা হয়। এই উৎসবে মেতে ওঠে ছোট থেকে বড় সবাই। রং খেলার পর মিষ্টি মুখ করে এই আনন্দের অবসান ঘটে। দেশের বাইরেও এই উৎসবে অংশ নেন বিদেশিরা। দোল পূর্ণিমা দিন হোলির রঙে সবাই নিজেদের রাঙ্গিয়ে তুলে সব দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
দোল বা হোলির অর্থ আপাতদৃষ্টিতে এক হলেও, দুটিই কিন্তু একেবারে ভিন্ন অনুষ্ঠান। দোল ও হোলি এক দিনে অনুষ্ঠিত হয় না। দোল যাত্রা বা বসন্তোত্সব একান্তই বাঙালিদের রঙিন এক আনন্দের উত্সব। আর হোলি অবাঙালিদের উৎসব। বাঙালিরা দোলযাত্রাকে বসন্তের আগমনী সুচনা উত্সব হিসেবেও মনে করা হয়।
বৈষ্ণবদের মতে, দোল পূর্ণিমার দিন শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধা ও অন্য গোপীদের সঙ্গে আবির নিয়ে রং খেলেছিলেন। সেখান থেকেই শুরু দোলযাত্রার। ১৪৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, দোল পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মগ্রহণ করেন বাংলায়। তাঁর জন্ম উপলক্ষে এই মহোত্সব পালিত হয় বাংলায়। তাই এই তিথিকে গৌরপূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে। তবে শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা গোপীদের সঙ্গে রং খেলার অনুষ্ঠানই এই দোলযাত্রার মূল বিষয়বস্তু। শ্রীকৃষ্ণের লীলা কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা জানা না গেলেও বিভিন্ন পুরাণ ও গ্রন্থে সেই মধুর ও রঙিন কাহিনির নানারকম উল্লেখ রয়েছে।
বৈষ্ণবদের মতে, দোল পূর্ণিমার দিন শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধা ও অন্য গোপীদের সঙ্গে আবির নিয়ে রং খেলেছিলেন। সেখান থেকেই শুরু দোলযাত্রার। ১৪৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, দোল পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মগ্রহণ করেন বাংলায়। তাঁর জন্ম উপলক্ষে এই মহোত্সব পালিত হয় বাংলায়। তাই এই তিথিকে গৌরপূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে। তবে শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা গোপীদের সঙ্গে রং খেলার অনুষ্ঠানই এই দোলযাত্রার মূল বিষয়বস্তু। শ্রীকৃষ্ণের লীলা কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা জানা না গেলেও বিভিন্ন পুরাণ ও গ্রন্থে সেই মধুর ও রঙিন কাহিনির নানারকম উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন:
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১০: সাধনা যে সত্যের আশ্রয় পাওয়ার তরে…
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১: শচীন ও মীরা দেব বর্মনের ঘর আলো করে এল এক ‘দেব শিশু’
আবার জানা যায়, বসন্ত পূর্ণিমার দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, কেশি নামে একজন অসুরকে বধ করেছিলেন। কেশি একজন ভয়ঙ্কার অত্যাচারী এবং নিষ্ঠুর ছিলেন। অত্যাচারী অসুরকে দমনের জন্য এবং অপশক্তিকে ধ্বংস করতে এই দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে।
হিন্দু পুরাণে প্রায় দু’ হাজার বছর আগে, ইন্দ্রদ্যুম্ন গোকুলে হোলি খেলার আরম্ভ করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে ইতিহাস বলছে, প্রাচীন ভারতে ইন্দ্রদ্যুম্নের নামে বহুজন ছিলেন। তাই এই নিয়ে নানা বিতর্কও রয়েছে।
আবার এও জানা যায়, হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ খুব ধার্মিক এবং বিষ্ণুভক্ত ছিলেন। তাই তাকে হত্যা করা সহজ কোনও কাজ ছিল না। কোনওভাবেই তাকে হত্যা করা যাচ্ছিল না। তখন তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপুর তার ছেলেকে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা আগুনে কোনও দিন ক্ষতি হবে না এই বর পেয়েছিল। তাই প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হোলিকা সিদ্ধান্ত নেয় সে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে সে আগুনে ঝাঁপ দেয়।
হিন্দু পুরাণে প্রায় দু’ হাজার বছর আগে, ইন্দ্রদ্যুম্ন গোকুলে হোলি খেলার আরম্ভ করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে ইতিহাস বলছে, প্রাচীন ভারতে ইন্দ্রদ্যুম্নের নামে বহুজন ছিলেন। তাই এই নিয়ে নানা বিতর্কও রয়েছে।
আবার এও জানা যায়, হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ খুব ধার্মিক এবং বিষ্ণুভক্ত ছিলেন। তাই তাকে হত্যা করা সহজ কোনও কাজ ছিল না। কোনওভাবেই তাকে হত্যা করা যাচ্ছিল না। তখন তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপুর তার ছেলেকে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা আগুনে কোনও দিন ক্ষতি হবে না এই বর পেয়েছিল। তাই প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হোলিকা সিদ্ধান্ত নেয় সে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে সে আগুনে ঝাঁপ দেয়।
আরও পড়ুন:
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৯: মন্দির হয়ে বৌদ্ধবিহার
স্বাদে-আহ্লাদে: ম্যাগি ভালোবাসেন? এই রেসিপি ট্রাই করে দেখেছেন?
কিন্তু হোলিকার বর পাওয়া সত্ত্বেও সেদিন শেষরক্ষা করা যায়নি। প্রহ্লাদের মাথায় ছিল তো বিষ্ণুর আশীর্বাদ। তাই শত চেষ্টা করেও তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপুর তার ছেলেকে মারতে সক্ষম হয়নি। তিনি অবলীলায় বেঁচে যান। কিন্তু আগুনে ভস্ম হয়ে যায় হোলিকা। সে তার বরের অপব্যবহার করায় আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার সময় সেই প্রভাব নষ্ট হয়ে যায় এবং পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই দিনটিতেই পালন করা হয় হোলি বা দোল উৎসব।
হোলিকার এই কাহিনি চাঁচর বা হোলিকা দহন নামে অনেক জায়গায় পরিচিত, যা দোলের আগের দিন পালন করা হয়। অথবা অনেকে একে নেড়াপোড়া বলে থাকে। নেড়াপোড়ার দিন শুকনো ডালপালা, গাছের শুকনো পাতা দিয়ে বুড়ির ঘর করা হয়। হোলিকার উদ্দেশ্যে সেই ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হোলিকাদহন উৎসব পালন করা হয়। অনেকে আবার হোলিকার উদ্দেশ্যে মাটির পুতুল বানিয়ে ওই শুকনো ডালপালার ঘরে রেখে পুড়িয়ে দেয়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ওই দিনটি মানুষ নানা ভাবে পালন করে থাকে। পরের দিন পালন করা হয় দোল উৎসব।
হোলিকার এই কাহিনি চাঁচর বা হোলিকা দহন নামে অনেক জায়গায় পরিচিত, যা দোলের আগের দিন পালন করা হয়। অথবা অনেকে একে নেড়াপোড়া বলে থাকে। নেড়াপোড়ার দিন শুকনো ডালপালা, গাছের শুকনো পাতা দিয়ে বুড়ির ঘর করা হয়। হোলিকার উদ্দেশ্যে সেই ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হোলিকাদহন উৎসব পালন করা হয়। অনেকে আবার হোলিকার উদ্দেশ্যে মাটির পুতুল বানিয়ে ওই শুকনো ডালপালার ঘরে রেখে পুড়িয়ে দেয়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ওই দিনটি মানুষ নানা ভাবে পালন করে থাকে। পরের দিন পালন করা হয় দোল উৎসব।
আরও পড়ুন:
দশভুজা: এগারো রকমের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তাঁর ঝুলিতে, একাত্তরেও তিনি গেয়ে চলেছেন জীবনের জয়গান
ইংলিশ টিংলিশ: তোমরা কি জানো cakewalk বা icing on the cake —এই idiom গুলোর মানে কি?
হোলিকা দহনে আবার অনেক জায়গায় ভক্তরা নরসিংহের পুজো করে থাকেন। কয়েকটি পবিত্র স্তোত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রহ্লাদের মাহাত্ম্য স্মরণ করা হয়। ভাদ্র তীর্থের সাধারণতা অনুসারে হোলিকা দহন মুহুর্তের শুভ সময় নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত সূর্যাস্তের পরই প্রদোষ কালের মুহুর্ত শুরু হয়। প্রদোষ কালের সময় জেনে নিয়ে পূর্ণিমা তিথি চলাকালীন সেই সন্ধ্যায় হোলিকা দহন করা হয়। হিন্দুধর্মের অনেক ঐতিহ্যেই হোলি উৎসবে প্রহ্লাদকে বাঁচাতে বিষ্ণুর দ্বারা হোলিকা বধকে উদযাপন করা হয়।
আবির ও রং খেলা হলেও আশ্চর্যের বিষয়, দোল ও হোলি একই দিনে পালিত হয় না! মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলো যদি আমরা লক্ষ্য করি, আমরা দেখতে পাবো— এর অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের রঙে মেতে ওঠার উৎসব। এই রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে হোলির যে অতি বৈষ্ণবীয় আচার তা নিয়ে বিভিন্ন যুগে নানা প্রশ্ন ওঠে।
আবির ও রং খেলা হলেও আশ্চর্যের বিষয়, দোল ও হোলি একই দিনে পালিত হয় না! মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলো যদি আমরা লক্ষ্য করি, আমরা দেখতে পাবো— এর অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের রঙে মেতে ওঠার উৎসব। এই রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে হোলির যে অতি বৈষ্ণবীয় আচার তা নিয়ে বিভিন্ন যুগে নানা প্রশ্ন ওঠে।
আরও পড়ুন:
ডায়াবিটিস বাগে আনতে কোন প্রোটিন খেতেই হবে, আর কী কী এড়াতেই হবে?
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৫: সুন্দরবনের মাছ বৈচিত্র্যের ক্ষতিকারক প্রজাতি হল ক্রোকোডাইল ফিশ
কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের মতে, দোল হল বর্ষ বরণের উৎসব। নূতন বৎসরের প্রথম দিনের প্রাতঃ সূর্যের যে রক্তিম আভা, দোলের লাল আবির হচ্ছে তারই প্রতীক।
আমরা সাধারণত দেখি যে, পৃথিবী যখন পাপে ভারাক্রান্ত তখন ঈশ্বর সেই ভার লাঘব করতে আবির্ভূত হন অবতাররূপে। পৃথিবী এমন অন্যায় ভারে ভারাক্রান্ত। তাই মানুষের মধ্যে প্রয়োজন শুভবোধ, প্রতিবাদী শক্তি, সংগ্রাম ও সত্যের প্রতি সমর্পণ। ধর্মীয় গণ্ডীর বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে হোলি উৎসবের এই মহান আদর্শ আমাদের পাপে নিমজ্জিত ধরণীকে পরশ পাথরে সত্য করে তুলুক। অন্যায়কে পরাজিত করার আনন্দের বারতা সকলের মন ছুঁয়ে দিক। রঙিন করে দিক দিক-বিদিক। মহান পুরুষের আবির্ভবে সকলের মন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠুক।
তাই আমরা আশায় বুক বেঁধে উদার কণ্ঠে অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের সুরে সুর মিলিয়ে হোলির রং আমাদের মর্মে লাগুক এই কামনায় আমরা যেন সমস্বরে গেয়ে উঠি—’আমায় পরশ করে প্রাণ সুধায় ভরে, তুমি যাও যে সরে…’
আমরা সাধারণত দেখি যে, পৃথিবী যখন পাপে ভারাক্রান্ত তখন ঈশ্বর সেই ভার লাঘব করতে আবির্ভূত হন অবতাররূপে। পৃথিবী এমন অন্যায় ভারে ভারাক্রান্ত। তাই মানুষের মধ্যে প্রয়োজন শুভবোধ, প্রতিবাদী শক্তি, সংগ্রাম ও সত্যের প্রতি সমর্পণ। ধর্মীয় গণ্ডীর বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে হোলি উৎসবের এই মহান আদর্শ আমাদের পাপে নিমজ্জিত ধরণীকে পরশ পাথরে সত্য করে তুলুক। অন্যায়কে পরাজিত করার আনন্দের বারতা সকলের মন ছুঁয়ে দিক। রঙিন করে দিক দিক-বিদিক। মহান পুরুষের আবির্ভবে সকলের মন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠুক।
তাই আমরা আশায় বুক বেঁধে উদার কণ্ঠে অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের সুরে সুর মিলিয়ে হোলির রং আমাদের মর্মে লাগুক এই কামনায় আমরা যেন সমস্বরে গেয়ে উঠি—’আমায় পরশ করে প্রাণ সুধায় ভরে, তুমি যাও যে সরে…’
* অজানার সন্ধানে (Unknown story): সঞ্চিতা কুণ্ডু (Sanchita Kundu) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, হুগলি মহসিন কলেজ।