মাউন্ট টিটলিস। ছবি: সংগৃহীত।
এ বারের যাত্রা সুইজারল্যান্ড। এঙ্গেলবার্গ এর পাহাড় চূড়ো মাউন্ট টিটলিস। এখানে যে হোটেলটিতে ছিলাম সেটি একটু অন্যরকম। পাহাড়ের গায়ে হোটেল। নীচে একটি টানেল দিয়ে খানিকটা হেঁটে তারপর লিফটে করে পৌঁছে যাওয়া যায় হোটেলের দরজায়। ঘরের মস্ত বড় বড় কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যায় উল্টো দিকের পাহাড়। কাঠের সাবেকি আসবাবপত্র। খাবার ঘরে নাচ গান চলছে। পর্যটকরা যে কেউ তাতে অংশ নিতে পারেও, নিচ্ছেও। হোটেলের লোকেদের আন্তরিকতায় এক উষ্ণতার আমেজ।
সকালে গেলাম ‘কেবল কার’ স্টেশনে। পাহাড়ের পাদদেশে। পৃথিবীর প্রথম রিভলভিং কেবল কার এখানে। এক একটা কার-এ প্রায় জনা দশেক লোক বসতে পারে। নিচ থেকে একদম ওপরে বরফে মোড়া পাহাড় চুড়োয় নিয়ে যায়। কার-এর কাঁচের ঘেরাটোপ থেকে নিচে গাছপালার সবুজ সাম্রাজ্য থেকে সাদা বরফের রাজ্যে উত্তরণ অপূর্ব লাগলো। ওপরে স্টেশনে নামলাম। চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ। তারই মাঝে একখানা বাড়ি। বাইরের ঠান্ডা থেকে একটু উষ্ণতার আয়োজন। সেখানে কফি মিলছে। আর গরম বসার বেঞ্চ। বাইরে রেলিং ধরে বরফের মধ্যে হেঁটে এলাম। বাড়িটারও বিভিন্ন জায়গায় বরফ আটকে আছে। মনে হয় চেনা পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও এসেছি।
এর পরদিন ছিল আরেক চমক। ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু রেলস্টেশন। জুংফ্রাউ। দু’ পাশে জমাট বাঁধা বরফের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে উঠছে রেলগাড়ি। মাঝে কিছু টানেল রয়েছে। দু’ দিকের কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যায় সাদা বিস্তীর্ণ বরফের অঞ্চল। যেন একটি ছবি। এক হাসিখুশি গার্ড সবাইকে স্বাগত জানালেন এবং সুইস চকলেট দিলেন প্রত্যেককে। এমন দুর্গম রাস্তায় কারিগরি শিল্পের এক অসাধারণ নিদর্শন এ রেলপথ। শুনলাম এ পথ তৈরি করতে বলি হয়েছেন অনেক শ্রমিক। মনে বিস্ময় জাগছিল দু’ পাশে বরফ কিন্তু রেল লাইনে বরফ নেই। মানুষের কি অসাধ্য সাধন।
সকালে গেলাম ‘কেবল কার’ স্টেশনে। পাহাড়ের পাদদেশে। পৃথিবীর প্রথম রিভলভিং কেবল কার এখানে। এক একটা কার-এ প্রায় জনা দশেক লোক বসতে পারে। নিচ থেকে একদম ওপরে বরফে মোড়া পাহাড় চুড়োয় নিয়ে যায়। কার-এর কাঁচের ঘেরাটোপ থেকে নিচে গাছপালার সবুজ সাম্রাজ্য থেকে সাদা বরফের রাজ্যে উত্তরণ অপূর্ব লাগলো। ওপরে স্টেশনে নামলাম। চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ। তারই মাঝে একখানা বাড়ি। বাইরের ঠান্ডা থেকে একটু উষ্ণতার আয়োজন। সেখানে কফি মিলছে। আর গরম বসার বেঞ্চ। বাইরে রেলিং ধরে বরফের মধ্যে হেঁটে এলাম। বাড়িটারও বিভিন্ন জায়গায় বরফ আটকে আছে। মনে হয় চেনা পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও এসেছি।
এর পরদিন ছিল আরেক চমক। ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু রেলস্টেশন। জুংফ্রাউ। দু’ পাশে জমাট বাঁধা বরফের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে উঠছে রেলগাড়ি। মাঝে কিছু টানেল রয়েছে। দু’ দিকের কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যায় সাদা বিস্তীর্ণ বরফের অঞ্চল। যেন একটি ছবি। এক হাসিখুশি গার্ড সবাইকে স্বাগত জানালেন এবং সুইস চকলেট দিলেন প্রত্যেককে। এমন দুর্গম রাস্তায় কারিগরি শিল্পের এক অসাধারণ নিদর্শন এ রেলপথ। শুনলাম এ পথ তৈরি করতে বলি হয়েছেন অনেক শ্রমিক। মনে বিস্ময় জাগছিল দু’ পাশে বরফ কিন্তু রেল লাইনে বরফ নেই। মানুষের কি অসাধ্য সাধন।
সুইজারল্যান্ডে পর জার্মানি। ব্ল্যাক ফরেস্টের পাশ দিয়ে বাস পৌঁছল রাইন জলপ্রপাতে। অন্যান্য জলপ্রপাতের তুলনায় এর উচ্চতা কম। তাই জলোচ্ছ্বাসও খুব ভয়ানক নয়। ধাপে ধাপে নেমে আসা জল এক অপার সৌন্দর্য রচনা করেছে। সহজেই পায়ে হেঁটে এর একদম কাছে চলে যাওয়া যায়। রাইন ইউরোপের সুন্দর জলপ্রপাত গুলোর মধ্যে অন্যতম। কাছেই কুককো ক্লক (cuckoo clock) এর একটা মিউজিয়ামে গেলাম। কি সুন্দর সুন্দর কতরকমের ঘড়ি। ঘড়ির ভেতর থেকে ছোট্ট ছোট্ট পাখি দরজা খুলে এসে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সময় জানান দিচ্ছে। প্রতিটাই বিভিন্নভাবে সুন্দর। এ ছাড়া আছে সুন্দর সুন্দর পুতুলের সম্ভার।
এ বার গেলাম ইন্সব্রুক। এখানে আছে স্বরভস্কির ক্রিস্টাল ওয়ার্ল্ড। একটা সবুজ সুন্দর ছোট্ট পাহাড়ের গুহা। চারদিকে সবুজ বাগান। গুহার বাইরে একটা ছোট্ট লেক। তার জল আসছে গুহামুখে এক মস্ত রাক্ষসের মুখ থেকে। ভেতরে ঢুকে এক চমকদার জগত। বিরাট এক শোরুম। নানা রকমের ক্রিস্টালের গহনা। চারদিক থেকে তাদের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। চোখ ধাঁধানো আলোর বাহার। যেন এক ম্যাজিক ওয়ার্ল্ড। অল্পস্বল্প কেনাকাটা হল।
রত্নভান্ডার থেকে গেলাম আরেক আশ্চর্য জিনিস দেখতে। গোল্ডেন রুফ সত্যিকারের সোনার ছাদ। রূপকথা নয়। খোলা রাস্তার ধারে। আমাদের তো চোখ ছানাবড়া। আমরা যে জিনিস সাবধানে লকারে রাখি সে জিনিস খোলা রাস্তায়!
এ বার গেলাম ইন্সব্রুক। এখানে আছে স্বরভস্কির ক্রিস্টাল ওয়ার্ল্ড। একটা সবুজ সুন্দর ছোট্ট পাহাড়ের গুহা। চারদিকে সবুজ বাগান। গুহার বাইরে একটা ছোট্ট লেক। তার জল আসছে গুহামুখে এক মস্ত রাক্ষসের মুখ থেকে। ভেতরে ঢুকে এক চমকদার জগত। বিরাট এক শোরুম। নানা রকমের ক্রিস্টালের গহনা। চারদিক থেকে তাদের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। চোখ ধাঁধানো আলোর বাহার। যেন এক ম্যাজিক ওয়ার্ল্ড। অল্পস্বল্প কেনাকাটা হল।
রত্নভান্ডার থেকে গেলাম আরেক আশ্চর্য জিনিস দেখতে। গোল্ডেন রুফ সত্যিকারের সোনার ছাদ। রূপকথা নয়। খোলা রাস্তার ধারে। আমাদের তো চোখ ছানাবড়া। আমরা যে জিনিস সাবধানে লকারে রাখি সে জিনিস খোলা রাস্তায়!
আরও পড়ুন:
পরিযায়ী মন: ইউরোপের দেশে দেশে: ব্রাসেলসের প্রাসাদ অবিশ্বাস্য এক স্থাপত্যের নজির
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া
এরপরের গন্তব্য ইতালি। পিসার হেলানো টাওয়ার দিয়ে শুরু হল ইতালি ভ্রমণ। মস্ত এই টাওয়ারটি ঘণ্টা বাজানোর জন্য তৈরি হয়েছিল। তৈরির সময় থেকেই এটি হেলে আছে। কিন্তু অনেক ঝড় ঝাপটা দুর্যোগ সত্বেও একই ভাবে রয়েছে এটি। এ কারণেই টাওয়ারটি দ্রষ্টব্য। এর পাশে একটি ক্যাথেড্রাল। প্রচুর জনসমাগম এখানে। তা সত্বেও পারিপার্শ্বিক অঞ্চল বেশ পরিচ্ছন্ন। বাইরে অনেক দোকানপাট। বাংলায় কথা বলছে দোকানদাররা। ‘ও দাদা, আসুন, ও দিদি, আসুন,’…বিদেশে দোকানদারদের মুখে নিজের ভাষা শুনে খুব আনন্দ হল। জানলাম দোকানদাররা বেশিরভাগই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের লোক। কিছু মানুষ সারা শরীরে রং মেখে স্ট্যাচু সেজে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ধারে। খুব কাছে গেলে ও ধন্দ লাগে সত্যি স্ট্যাচু না মানুষ বুঝতে।
ফ্লোরেন্স পৌঁছলাম এর পর। ইতালির নবজাগরণের আঁতুর ঘর। স্থাপত্য ও সৌধের অপূর্ব সমারোহ এখানে। একটি খোলা আকাশের নিচে স্থাপত্যের মিউজিয়াম আছে। বইয়ের পাতায় বহুবার দেখা মূর্তিগুলো চোখের সামনে দেখে মনে শিহরণ জাগে। মস্ত বাঁধানো চত্বর। চারদিকে দোকান। ওখানে একে বলে পিয়াজ্জা। এখান থেকে গেলাম রোম। প্রথমে ট্রেভি ফাউন্টেন। শহরের মধ্যেই রাস্তার ধারে এক ফোয়ারা। সবাই ফোয়ারার জমা জলে পয়সা ফেলছে। আমাদের দেশে গঙ্গা পারাপারে অনেককে দেখেছি লঞ্চ থেকে জলে পয়সা ফেলতে। এখানে প্রচলিত বিশ্বাস যে ফোয়ারার জলে যে পয়সা ফেলবে সে আবার এখানে আসবে। ফোয়ারাটি স্থাপত্য হিসেবে খুব সুন্দর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নেই।
এরপর গেলাম কোলোজিয়াম। এতবড় ও এত প্রাচীন অ্যাম্ফিথিয়েটার পৃথিবীর আর কোথাও দাঁড়িয়ে নেই। এখানে ও বেশ কিছু অংশ ভাঙা। সবচেয়ে মজার কথা হল যে ওদেশের কিছু লোক গ্ল্যাডিয়েটর সেজে তরোয়াল হাতে আশেপাশে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। পয়সার বিনিময়ে ওদের ছবি তোলা যায়। রোমে একদিন সারাদিনের জন্য বেরোলাম ভ্যাটিকান সিটি দেখতে। কারাগারের মতো উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ভেতরটা একটা শহরই বটে। ঢোকার মুখে নিরাপত্তার প্রচণ্ড কড়াকড়ি। এয়ারপোর্টের চেয়েও বেশি মনে হল। ভ্যাটিকান সিটির বাইরে বেশ কিছু ভিখারি দেখেছি।
আমার ধারণা ছিল এত স্বচ্ছলতার ছাপ চারদিকে ওখানে পথে ঘাটে ভিখারি থাকবে না। ভ্যাটিকান সিটির ভিতরে পোপের বাসস্থান ও ক্যাথলিক চার্চগুলোর সদর দফতর। পোপের অবশ্য যখন তখন দর্শন মেলে না। ভেতরে বাসিলিকা চার্চটি একটি আশ্চর্য দর্শনীয় পীঠ। লম্বা টানা ঘরের ওপরের সিলিং থেকে শুরু করে দেওয়াল ভর্তি অসাধারণ সব কারুকার্য। অপূর্ব সব মূর্তি ও ছবি। অসাধারণ অটুট তার রং। বাইবেলের নানা গল্প, ছবি সব মূর্ত হয়ে উঠেছে চারদিকে। আর আছে মাইকেলেঞ্জেলোর মাদার পিয়েটা। মৃত যিশুকে কোলে নিয়ে মা। অবিশ্বাস্য এক মূর্তি। চোখ ফেরানো যায় না। কোনও শব্দই বর্ণনার জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা সারাদিন ওখানে কাটালাম।
ফ্লোরেন্স পৌঁছলাম এর পর। ইতালির নবজাগরণের আঁতুর ঘর। স্থাপত্য ও সৌধের অপূর্ব সমারোহ এখানে। একটি খোলা আকাশের নিচে স্থাপত্যের মিউজিয়াম আছে। বইয়ের পাতায় বহুবার দেখা মূর্তিগুলো চোখের সামনে দেখে মনে শিহরণ জাগে। মস্ত বাঁধানো চত্বর। চারদিকে দোকান। ওখানে একে বলে পিয়াজ্জা। এখান থেকে গেলাম রোম। প্রথমে ট্রেভি ফাউন্টেন। শহরের মধ্যেই রাস্তার ধারে এক ফোয়ারা। সবাই ফোয়ারার জমা জলে পয়সা ফেলছে। আমাদের দেশে গঙ্গা পারাপারে অনেককে দেখেছি লঞ্চ থেকে জলে পয়সা ফেলতে। এখানে প্রচলিত বিশ্বাস যে ফোয়ারার জলে যে পয়সা ফেলবে সে আবার এখানে আসবে। ফোয়ারাটি স্থাপত্য হিসেবে খুব সুন্দর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নেই।
এরপর গেলাম কোলোজিয়াম। এতবড় ও এত প্রাচীন অ্যাম্ফিথিয়েটার পৃথিবীর আর কোথাও দাঁড়িয়ে নেই। এখানে ও বেশ কিছু অংশ ভাঙা। সবচেয়ে মজার কথা হল যে ওদেশের কিছু লোক গ্ল্যাডিয়েটর সেজে তরোয়াল হাতে আশেপাশে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। পয়সার বিনিময়ে ওদের ছবি তোলা যায়। রোমে একদিন সারাদিনের জন্য বেরোলাম ভ্যাটিকান সিটি দেখতে। কারাগারের মতো উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ভেতরটা একটা শহরই বটে। ঢোকার মুখে নিরাপত্তার প্রচণ্ড কড়াকড়ি। এয়ারপোর্টের চেয়েও বেশি মনে হল। ভ্যাটিকান সিটির বাইরে বেশ কিছু ভিখারি দেখেছি।
আমার ধারণা ছিল এত স্বচ্ছলতার ছাপ চারদিকে ওখানে পথে ঘাটে ভিখারি থাকবে না। ভ্যাটিকান সিটির ভিতরে পোপের বাসস্থান ও ক্যাথলিক চার্চগুলোর সদর দফতর। পোপের অবশ্য যখন তখন দর্শন মেলে না। ভেতরে বাসিলিকা চার্চটি একটি আশ্চর্য দর্শনীয় পীঠ। লম্বা টানা ঘরের ওপরের সিলিং থেকে শুরু করে দেওয়াল ভর্তি অসাধারণ সব কারুকার্য। অপূর্ব সব মূর্তি ও ছবি। অসাধারণ অটুট তার রং। বাইবেলের নানা গল্প, ছবি সব মূর্ত হয়ে উঠেছে চারদিকে। আর আছে মাইকেলেঞ্জেলোর মাদার পিয়েটা। মৃত যিশুকে কোলে নিয়ে মা। অবিশ্বাস্য এক মূর্তি। চোখ ফেরানো যায় না। কোনও শব্দই বর্ণনার জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা সারাদিন ওখানে কাটালাম।
রাইন জলপ্রপাত। ছবি: সংগৃহীত।
পরের গন্তব্য ভেনিস। সুন্দরী ভেনিস। অনেকগুলো দ্বীপ একসঙ্গে হয়ে সুন্দর একটি বন্দর শহর। ছোট ছোট লঞ্চে ওখানে পৌঁছে গেলাম। নেমেই দেখি ভেনিস সুন্দরীরা সাদা লম্বা ফ্রিল দেয়া পোশাক পরে জাপানি পাখা হাতে পরীর মতো দাঁড়িয়ে। পর্যটকরা তাদের সঙ্গে ছবি তুলছে। বড় বড় পুরোনো বাড়ির সারি। মাঝখান দিয়ে সরু সরু ক্যানাল। তাতে গন্ডোলা চলছে। আমাদের দেশের শালতি র মতো। সরু নৌকো। দু’ ধারে সুন্দর ঢেউ খেলানো কাজ। যেন ময়ূরপঙ্খী। পর্যটকরা ভাড়া করছে। ভাড়া বেশ চড়া। একদিকের বাড়ির সারি থেকে অপর দিকে একটা ব্রিজ রয়েছে। ওপর তলা দিয়ে। তার নাম ব্রিজ অফ সাই (sigh)। জেলখানা থেকে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের ওখান দিয়ে নেবার সময় তারা পিছন ফিরে তাকাত। নিজেদের কৃতকার্যের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলত। তাই এমন নাম ব্রিজটির। ভেনিস এক প্রাণোচ্ছল শহর। রাস্তায় রাস্তায় পাব। খাওয়া দাওয়া, হুল্লোড়, ছবি তোলা। ভেনিসের কাঁচের জিনিস খুব বিখ্যাত। ফিনফিনে পাতলা কাঁচের বানানো জিনিস দেখলাম একটা ফ্যাক্টরিতে। কীভাবে গলানো কাঁচকে নানারকম আকার দেয়া হয় দেখালো।
ভেনিস জলপথ নির্ভর শহর। বিভিন্ন বাড়ির নিজস্ব নৌকো আছে। মনে পড়ল আমাদের কেরালার ব্যাকওয়াটার এর কথা। একই রকম জলপথ নির্ভর শহর দুটোই। কিন্তু কেরালার সবুজ প্রকৃতি নির্ভর পরিবেশ ভেনিসে নেই। ভেনিস মানুষের বানানো শহর। আর কেরালার ব্যাকওয়াটারে আছে প্রকৃতির স্নিগ্ধ পরশ।
এ বারে ফেরার পালা। আমাদের ফেরাটা একটু অন্যরকম। দলের সঙ্গে কলকাতায় ফেরা নয়। মিউনিখ এয়ারপোর্ট থেকে দলের সবাই চলে যাবে কলকাতা, আর আমরা যাব ছেলের কাছে ডাবলিন। সেই মতোই কথা হয়েছে প্রথম থেকে। টিকিটও করে দিয়েছে আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট। মিউনিখে অলিম্পিকের মাঠ দেখলাম। তারপর এয়ারপোর্টে দলের থেকে বিদায় নেবার পালা। কলকাতার ফ্লাইটে জন্য একটা গেট আর আমাদের আলাদা। কলকাতার জন্য নির্ধারিত গেটে এসে আমরা দু’জন বিচ্ছিন্ন হলাম দল থেকে। আমাদের গেট একটু এগিয়ে। মস্ত এয়ারপোর্ট।
ভেনিস জলপথ নির্ভর শহর। বিভিন্ন বাড়ির নিজস্ব নৌকো আছে। মনে পড়ল আমাদের কেরালার ব্যাকওয়াটার এর কথা। একই রকম জলপথ নির্ভর শহর দুটোই। কিন্তু কেরালার সবুজ প্রকৃতি নির্ভর পরিবেশ ভেনিসে নেই। ভেনিস মানুষের বানানো শহর। আর কেরালার ব্যাকওয়াটারে আছে প্রকৃতির স্নিগ্ধ পরশ।
এ বারে ফেরার পালা। আমাদের ফেরাটা একটু অন্যরকম। দলের সঙ্গে কলকাতায় ফেরা নয়। মিউনিখ এয়ারপোর্ট থেকে দলের সবাই চলে যাবে কলকাতা, আর আমরা যাব ছেলের কাছে ডাবলিন। সেই মতোই কথা হয়েছে প্রথম থেকে। টিকিটও করে দিয়েছে আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট। মিউনিখে অলিম্পিকের মাঠ দেখলাম। তারপর এয়ারপোর্টে দলের থেকে বিদায় নেবার পালা। কলকাতার ফ্লাইটে জন্য একটা গেট আর আমাদের আলাদা। কলকাতার জন্য নির্ধারিত গেটে এসে আমরা দু’জন বিচ্ছিন্ন হলাম দল থেকে। আমাদের গেট একটু এগিয়ে। মস্ত এয়ারপোর্ট।
আরও পড়ুন:
যত মত, তত পথ, পর্ব-৩: আদর্শ শিক্ষক শ্রীরামকৃষ্ণ
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৫: টনিক খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো?
আমাদের জন্য নির্ধারিত গেটে এসে ওপরে বোর্ডের লেখা দেখে মাথায় বজ্রপাত। আমাদের নির্দিষ্ট ফ্লাইটটি বাতিল দেখাচ্ছে। কাউন্টারে জিজ্ঞেস করলাম। বললো ওই এয়ারলাইন্সের সেদিন ধর্মঘট। পূর্ব নির্ধারিত। সবাইকে জানানো হয়েছে। আমাদের মুশকিল হল টিকিট আমরা কাটিনি। কেটেছে আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট। নিশ্চয়ই তাদের জানানো হয়েছে। শুনেছিলাম ট্রাভেল এজেন্টরা এমন দায়িত্ব হীনতার কাজ করে। আমরা এ জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
আমাদের বেড়ানো শেষ। হাতে টাকা-পয়সাও প্রায় শেষ। বিদেশ বিভুঁই। কোথায় যাব। কাকে বলব। কী করব। হাজার উৎকণ্ঠায় দিশেহারা আমি। তখন হোয়াটসঅ্যাপ কলের এত চল ছিল না। আর আমাদের মোবাইলে তার উপায়ও নেই। কোনও কল করতে গেলেই অনেক পয়সা লাগবে। ছেলেকে কল করে তাড়াতাড়ি আমাদের সমস্যার কথা বললাম। এয়ারপোর্টের মধ্যে একটা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে মেল করলাম। কলকাতায় ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেল না। টিকিট রিপ্লেস করে একমাত্র তারাই নতুন টিকিট কাটতে পারবে। এ সময়ে ছেলেই সব দায়িত্ব নিয়ে ডাবলিন থেকে কলকাতায় যোগাযোগ করে (পরে বলেছে প্রায় ১০-১৫ বার কল এবং বেশ কয়েকটা মেল করেছিল) পরদিনের টিকিটের ব্যবস্থা করল। সকাল ৯টা থেকে এ নিয়ে ছোটাছুটি করে অবশেষে বিকেল ৩টেয় টিকিট এল। মেলে। আমাদের খিদেয়, উৎকণ্ঠায় ভেঙে পড়ার উপক্রম। পরদিন সকাল ১১টায় ফ্লাইট। এ বারে এতক্ষণ কোথায় থাকবো? পয়সাকড়ি যেটুকু ছিল তাও প্রায় তলানিতে।
আমাদের বেড়ানো শেষ। হাতে টাকা-পয়সাও প্রায় শেষ। বিদেশ বিভুঁই। কোথায় যাব। কাকে বলব। কী করব। হাজার উৎকণ্ঠায় দিশেহারা আমি। তখন হোয়াটসঅ্যাপ কলের এত চল ছিল না। আর আমাদের মোবাইলে তার উপায়ও নেই। কোনও কল করতে গেলেই অনেক পয়সা লাগবে। ছেলেকে কল করে তাড়াতাড়ি আমাদের সমস্যার কথা বললাম। এয়ারপোর্টের মধ্যে একটা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে মেল করলাম। কলকাতায় ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেল না। টিকিট রিপ্লেস করে একমাত্র তারাই নতুন টিকিট কাটতে পারবে। এ সময়ে ছেলেই সব দায়িত্ব নিয়ে ডাবলিন থেকে কলকাতায় যোগাযোগ করে (পরে বলেছে প্রায় ১০-১৫ বার কল এবং বেশ কয়েকটা মেল করেছিল) পরদিনের টিকিটের ব্যবস্থা করল। সকাল ৯টা থেকে এ নিয়ে ছোটাছুটি করে অবশেষে বিকেল ৩টেয় টিকিট এল। মেলে। আমাদের খিদেয়, উৎকণ্ঠায় ভেঙে পড়ার উপক্রম। পরদিন সকাল ১১টায় ফ্লাইট। এ বারে এতক্ষণ কোথায় থাকবো? পয়সাকড়ি যেটুকু ছিল তাও প্রায় তলানিতে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭২: রবীন্দ্রনাথ প্রয়োজনে কঠোর হতেও পারতেন
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৪: আমার মন বলে চাই চাই
বিভিন্ন জনকে জিগ্যেস করে জানলাম এয়ারপোর্টের মধ্যে একটি চ্যাপেল আছে। তারা বিপদে পড়লে মানুষকে থাকতে দেয়। সেটি খুঁজে বার করলাম। একটা প্রেয়ার রুম। একটা ছোট্ট অফস। তালা বন্ধ করে এক জার্মান সাহেব চলে যাবার মুখে। তাকে আমাদের অবস্থা বললাম। উনি অত্যন্ত সহৃদয়। বললেন একটা ঘর আছে। খুলে দিচ্ছি। আপনারা থাকুন। শিগগির আপনার সঙ্গী ও মালপত্র নিয়ে আসুন। আমি যেন মরুভূমিতে এক মরুদ্যান পেলাম। হাত ধরে ধন্যবাদ জানালাম। ঘরটি চমৎকার। একটি দোতলা শোবার খাট। বাথরুম। খাবার জল। সব আছে। শুধু একটি অসুবিধে। ঘরের বাইরে দিয়ে চাবি দেবার ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ দু’জন একসঙ্গে ঘরে মালপত্র রেখে বেরোতে পারব না।সে মুহূর্তে এটা কোনও সমস্যাই নয়। আমরা সামান্য খাবার কিনে এনে খেলাম। আমার কিছুতেই স্বস্তি হচ্ছিল না। ঘুম আসছিল না। যতক্ষণ না ডাবলিনের ফ্লাইট এ উঠি মনের ভয় দূর হচ্ছিল না। আতঙ্কে কাটালাম সারারাত।
ভ্যাটিকান সিটি। ছবি: সংগৃহীত।
পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট ছাড়ল। চ্যাপেলটি তে থাকা ফ্রি ছিল। আমরা আমাদের শেষ সম্বল যা ছিল ওদের ডোনেশন বক্সে দিলাম। সাহেবকে ধন্যবাদ জানালাম। ওদের কমেন্ট বুকে অনেক ভালো কথা, কৃতজ্ঞতার কথা লিখলাম। এখানে থাকাটা আমাদের প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে বলতে গেলে।
ট্রাভেল এজেন্টের প্রতি প্রচুর রাগ, বিদ্বেষ নিয়ে অনেক রকম অভিযোগ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম। দু’ একটা চিঠি চাপাটি ছাড়া কিছু করা হয়ে ওঠেনি। সময়ের দূরত্ব এর স্বাভাবিক কারণ।
ট্রাভেল এজেন্টের প্রতি প্রচুর রাগ, বিদ্বেষ নিয়ে অনেক রকম অভিযোগ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম। দু’ একটা চিঠি চাপাটি ছাড়া কিছু করা হয়ে ওঠেনি। সময়ের দূরত্ব এর স্বাভাবিক কারণ।
* পরিযায়ী মন (Travelholic): ড. দুর্গা ঘোষাল (Durga Ghoshal), প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, গভর্নমেন্ট কলেজ।