হরিদ্বার। ছবি: সংগৃহীত।
সে অনেকদিন আগের কথা। প্রায় পয়তাল্লিশ বছর আগে হবে। পরিযায়ী হওয়ার স্বাধীনতা পাওয়ার আগে। বড়দের দলে নিয়েছিল আমায়। সেই প্রথম রাতের ট্রেনে চড়া। গন্তব্য কোনও দুর্গম জায়গা নয়। হরিদ্বার ও হৃষিকেশ। তবে আমার দলটি বেশ অন্যরকম। ৮ জন শিক্ষিকা। বিভিন্ন বয়সের। সবাই অবিবাহিতা। এখন এমন দল অন্যরকম মনে না হলেও পয়তাল্লিশ বছর আগে ব্যাপারটা বেশ আলদাই মনে হতো অনেকের।
ট্রেনে থাকা দু’ রাত। আমার চোখে তখন—”সকলই নবীন সকলই বিমল”। সবই অবাক লাগছে। পুজো স্পেশাল ট্রেন। এই ট্রেনের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কের কারও কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। পরে অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অধিকাংশ সময়ই সাধারণ ট্রেনের ফাঁক ফোকরে চালানো হয় বলে এই ট্রেন দেরি করে। সেই যাত্রায় ও তার অন্যথা হয়নি। নির্দিষ্ট সময় থেকে প্রায় ৯ ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি হরিদ্বার পৌঁছল। সে সময় বেড়ানোর এত ভিড় ছিল না বলে আগে হোটেল বুকিংয়ের বিশেষ প্রয়োজন হতো না। মোটামুটি জায়গা মিলতো। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। এত রাত ৯ জন মহিলা কোথায় হোটেল খুঁজবো? হরিদ্বারে ভোলাগিরি আশ্রম সর্বজনবিদিত। আশ্রমের নিশ্চিত আশ্রয়ে থাকাই ঠিক হল আমাদের।
ট্রেনে থাকা দু’ রাত। আমার চোখে তখন—”সকলই নবীন সকলই বিমল”। সবই অবাক লাগছে। পুজো স্পেশাল ট্রেন। এই ট্রেনের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কের কারও কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। পরে অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অধিকাংশ সময়ই সাধারণ ট্রেনের ফাঁক ফোকরে চালানো হয় বলে এই ট্রেন দেরি করে। সেই যাত্রায় ও তার অন্যথা হয়নি। নির্দিষ্ট সময় থেকে প্রায় ৯ ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি হরিদ্বার পৌঁছল। সে সময় বেড়ানোর এত ভিড় ছিল না বলে আগে হোটেল বুকিংয়ের বিশেষ প্রয়োজন হতো না। মোটামুটি জায়গা মিলতো। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। এত রাত ৯ জন মহিলা কোথায় হোটেল খুঁজবো? হরিদ্বারে ভোলাগিরি আশ্রম সর্বজনবিদিত। আশ্রমের নিশ্চিত আশ্রয়ে থাকাই ঠিক হল আমাদের।
ট্রেনে সহযাত্রীরা একই রকম বিপন্ন। অনেকেই চললেন ভোলাগিরি আশ্রমে। সদর দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে আশ্রমের। এতগুলো লোকের হাঁকডাকে এক সাদা লম্বা দাঁড়িওয়ালা সাধুবাবা দরজা খুললেন। সমস্যা শুনে কতগুলো ফাঁকা ঘরের দরজা খুলে বসতে বললেন। আমরা ৯ জন একটা ঘরে বসলাম কতৃপক্ষের ঘর বন্টনের অপেক্ষায়। শ্রান্ত ও ক্ষুধার্ত সবাই। সঙ্গে আনা খাবার দাবার শেষ। এতরাতে খাবার না খেলেও চলবে। ভালো একটু শোবার জায়গা পেলেই হল।
প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর সেই দাঁড়িওয়ালা বাবা খাতা বগলে করে এলেন। আমাদের পরিচয় পেয়ে তো ভয়ানক অবাক হলেন। ৯ জন মহিলা কলকাতা থেকে এসেছি, সঙ্গে কোনও পুরুষ নেই—এমন আশ্চর্য কথা তিনি কোনওদিন শোনেননি। ভয়ানক রেগে গেলেন। সবাই শিক্ষিকা—বয়স্ক মানুষ এ সব ব্যাপার তাঁর ভাবনাতেই নেই। আমাদের সব যুক্তি, অনুরোধ বৃথা হল শুধু মহিলারা এসেছি এই অপরাধে। সবশেষে তার বিশেষ নিদানটি আমার কানে এখনও ধ্বনিত হয়। “৯ জন মাইয়ালোক আইসেন। আইজ ক্যান। পাঁচ বছর পরে আইলেও থাকতে দিমু না।”
প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর সেই দাঁড়িওয়ালা বাবা খাতা বগলে করে এলেন। আমাদের পরিচয় পেয়ে তো ভয়ানক অবাক হলেন। ৯ জন মহিলা কলকাতা থেকে এসেছি, সঙ্গে কোনও পুরুষ নেই—এমন আশ্চর্য কথা তিনি কোনওদিন শোনেননি। ভয়ানক রেগে গেলেন। সবাই শিক্ষিকা—বয়স্ক মানুষ এ সব ব্যাপার তাঁর ভাবনাতেই নেই। আমাদের সব যুক্তি, অনুরোধ বৃথা হল শুধু মহিলারা এসেছি এই অপরাধে। সবশেষে তার বিশেষ নিদানটি আমার কানে এখনও ধ্বনিত হয়। “৯ জন মাইয়ালোক আইসেন। আইজ ক্যান। পাঁচ বছর পরে আইলেও থাকতে দিমু না।”
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১৭: অশিক্ষিত বা মূর্খ-ব্যক্তি রাজসেবক হলে সর্বত্রই সবার আগে তাকে সম্মান করতে হয়
মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-১: ভিতরকুঠি টেরাকোটা শিবমন্দির এক অনন্যসাধারণ কোচ স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ
কোনওরকমে ওই ঘরে বসে বাকি রাত টুকু কাটালাম। সক্কাল হতে মালপত্র নিয়ে হোটেলের সন্ধানে বেরোলাম। হর কি পিয়ারী ঘাটের পথে। দু’ ধারে দোকানপাটের মধ্যদিয়ে সরু গলি। দোকানগুলোর মাঝেই রাস্তার একদিকে একটা লজ। নাম দয়াবন্তী ভবন। অত সকালে ম্যানেজার ওঠেননি। দারোয়ান ম্যানেজারের ঘরের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করতে লাগলো। ঘরের দরজা খোলাই ছিল। উঁকি দিয়ে দেখি ম্যানেজার রাতে প্রচুর পান করে অর্ধেক শরীর খাটে, আর বাকি অর্ধেক মেঝেতে রেখে প্রায় বেহুঁশ। ভয় করতে লাগলো দেখে। ডাকাডাকিতে হুঁশ ফিরল। উঠে বাইরে এলেন। দীর্ঘদেহী অবাঙালি। এতজন মহিলা দেখে এবং তাঁরা সব শিক্ষিকা জেনে অতিসম্ভ্রমে হাত জোড় করলেন। তারপর ঘর দেখাতে নিয়ে গেলেন। বারবার করজোড়ে আশ্বস্ত করলেন যে, আমাদের কোনও অসুবিধে হবে না।
সত্যিই তাই। নেশাগ্রস্ত মানুষ সম্মন্ধে যে ধারণা ছিল, তা ওই ম্যানেজারের ব্যবহারে পাল্টে গেল। যে ক’দিন ওই লজে ছিলাম, এতো সম্মান ও যত্ন পেয়েছি যে, আশ্রমের আমাদের নিরাশ্রয় করার দুঃখ ভুলে গেলাম। আশ্রমের কাছে প্রত্যাশিত আশ্রয় পেলাম না, আর অপ্রত্যাশিত ভালো ব্যবহার পেলাম এক মাতাল ম্যানেজারের কাছ থেকে। প্রথাগত ধারণা ধাক্কা খেল অনেকদিন আগেই।
সত্যিই তাই। নেশাগ্রস্ত মানুষ সম্মন্ধে যে ধারণা ছিল, তা ওই ম্যানেজারের ব্যবহারে পাল্টে গেল। যে ক’দিন ওই লজে ছিলাম, এতো সম্মান ও যত্ন পেয়েছি যে, আশ্রমের আমাদের নিরাশ্রয় করার দুঃখ ভুলে গেলাম। আশ্রমের কাছে প্রত্যাশিত আশ্রয় পেলাম না, আর অপ্রত্যাশিত ভালো ব্যবহার পেলাম এক মাতাল ম্যানেজারের কাছ থেকে। প্রথাগত ধারণা ধাক্কা খেল অনেকদিন আগেই।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫: চন্দ্রমণির বধূবরণ
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৩১: মানুষ, যৌনতা এবং দেবোত্তমদের রূপকথা
জিনিসপত্র রেখে হর কি পিয়ারী ঘাটে গেলাম। শিকল ধরে পুণ্যার্থীদের স্নানের ভিড়। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের জোর করে বরফঠান্ডা জলে চুবিয়ে পুণ্য অর্জনের প্রচেষ্টা। বাচ্চাগুলো পরিত্রাহি চিৎকার জুড়েছে। গলির মাথায় ছোট ছোট দোকানে মস্ত বড় বারকোষে মোহনভোগ, পুরী, গজা। ঘিয়ের গন্ধে ম ম করছে বাতাস। মাটির ভাঁড়ে করে ঘন দুধ, রাবড়ি, দই বিক্রি হচ্ছে। একসঙ্গে এতরকম খাবারের সম্ভার আগে কখনও দেখিনি। আমরা চা এবং নিমকি খেলাম।
সামনেই মনসা পাহাড়। ওপরে মন্দির। এখন ওখানে সহজে পৌঁছনোর জন্য রোপওয়ে আছে। তখন হেঁটেই উঠতে হতো। অতি উৎসাহে সবাই হেঁটেই উঠলাম। ওপর থেকে চমৎকার লাগলো নিচের শহর, নদী, মন্দির সব। দূরে দেখা যায় নীলগঙ্গা, তার পাশে চন্ডীপাহাড়। মনসা পাহাড়ের চেয়ে বড়। সন্ধেবেলা সবাই হর কি পিয়ারী ঘাটের আরতি দেখতে গেলাম। ঘাটের সিঁড়িতে বসে রইলাম আগের থেকে। ওখানকার আরতির দৃশ্য যেন ছবির মতো। ‘ওম জয় জগদীশ হরে’ গান বেজে উঠলো। শুরু হল ঘণ্টাধ্বনি। কাসর, শঙ্খ সব বেজে উঠলো। মস্ত বড় বড় প্রদীপ নিয়ে ঘাটের সব মন্দির থেকে একসঙ্গে সব পুরোহিত বেরিয়ে এলেন।
সামনেই মনসা পাহাড়। ওপরে মন্দির। এখন ওখানে সহজে পৌঁছনোর জন্য রোপওয়ে আছে। তখন হেঁটেই উঠতে হতো। অতি উৎসাহে সবাই হেঁটেই উঠলাম। ওপর থেকে চমৎকার লাগলো নিচের শহর, নদী, মন্দির সব। দূরে দেখা যায় নীলগঙ্গা, তার পাশে চন্ডীপাহাড়। মনসা পাহাড়ের চেয়ে বড়। সন্ধেবেলা সবাই হর কি পিয়ারী ঘাটের আরতি দেখতে গেলাম। ঘাটের সিঁড়িতে বসে রইলাম আগের থেকে। ওখানকার আরতির দৃশ্য যেন ছবির মতো। ‘ওম জয় জগদীশ হরে’ গান বেজে উঠলো। শুরু হল ঘণ্টাধ্বনি। কাসর, শঙ্খ সব বেজে উঠলো। মস্ত বড় বড় প্রদীপ নিয়ে ঘাটের সব মন্দির থেকে একসঙ্গে সব পুরোহিত বেরিয়ে এলেন।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮: সুন্দরবনের নিশ্চিহ্ন প্রাণী
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৪: রাজ পরিবারের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক ও ব্রাহ্মবাদ
একসঙ্গে শুরু হল গঙ্গা মাইয়ার আরতি। দর্শনার্থীরা পাতার ভেলায় প্রদীপ ভাসাতে লাগলেন। সব মিলে এক সম্মোহনের ছবি। এক অপার্থিব জগৎ সৃষ্টি হল। তার সাক্ষী রইলাম আমি। পরে আরও বার দু’য়েক হরিদ্বার গিয়েছি। কিন্তু ওই ঘাটে এখন এতো ভিড় যে সেই অপার্থিব দৃশ্য হারিয়ে গিয়েছে। চারদিকে জনসমুদ্র আর কলতান। আরতির সময়ের সেই সম্মোহনকারী পরিবেশ খুঁজে পাইনি।
সেই প্রথম শুনেছিলাম দাদা বৌদির হোটেল। কি সুন্দর খাবার। কত যত্ন। এখন দাদা বৌদি নামের হোটেল সর্বত্র দেখা যায়। ঘাটের পথে দেখলাম পুণ্যার্থীরা গোমাতাকে খাওয়াচ্ছে। রুটি, ফল এ সব। অলিতে গলিতে বিরাট চেহারার গরু শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে।
হরিদ্বারে প্রথম টাঙ্গায় চড়া। টাঙ্গায় চড়ে গেলাম। কনখল। অতি প্রাচীন মন্দির। দক্ষ রাজার যজ্ঞের স্থান। তাই পীঠও বটে। মন্দিরের বাঁধানো চত্ত্বরে পিপুল ও অশ্বত্থ গাছ একসঙ্গে। চারপাশে বেদি করা। পুণ্যার্থীরা ঢিল বেঁধে মনবাসনা জানিয়েছে গাছে। সবচেয়ে ভালো লাগলো মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্টগঙ্গা। মন্দিরের পাঁচিলের পাসে গেট। সেখান দিয়ে বেরোলে সিঁড়ি নেমে গিয়েছে গঙ্গায়। গঙ্গার ধারে মন্দিরের ঘণ্টা, স্তোত্র, মানুষের কলতান সবই ক্ষীণ। শান্ত, সুন্দর প্রকৃতি। আর ঠান্ডা জল ছোট্ট গঙ্গার।
দক্ষ রাজার মন্দিরের আগে আছে আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম। সেটি আরও নিরিবিলি। পরিচ্ছন্ন। মন শান্ত হয়ে যায় ভিতরের পরিবেশে। সন্ধে হয়ে আসছে। তাই লজ অভিমুখে রওনা হলাম। দীপাবলি সামনে। পথে দু’ ধারে সারিবদ্ধ দোকান। আর মাথার ওপর ছোট ছোট আলোর সামিয়ানা। কি সুন্দর আলোক সজ্জায় সেজে উঠেছে চারদিক।
সেই প্রথম শুনেছিলাম দাদা বৌদির হোটেল। কি সুন্দর খাবার। কত যত্ন। এখন দাদা বৌদি নামের হোটেল সর্বত্র দেখা যায়। ঘাটের পথে দেখলাম পুণ্যার্থীরা গোমাতাকে খাওয়াচ্ছে। রুটি, ফল এ সব। অলিতে গলিতে বিরাট চেহারার গরু শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে।
হরিদ্বারে প্রথম টাঙ্গায় চড়া। টাঙ্গায় চড়ে গেলাম। কনখল। অতি প্রাচীন মন্দির। দক্ষ রাজার যজ্ঞের স্থান। তাই পীঠও বটে। মন্দিরের বাঁধানো চত্ত্বরে পিপুল ও অশ্বত্থ গাছ একসঙ্গে। চারপাশে বেদি করা। পুণ্যার্থীরা ঢিল বেঁধে মনবাসনা জানিয়েছে গাছে। সবচেয়ে ভালো লাগলো মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্টগঙ্গা। মন্দিরের পাঁচিলের পাসে গেট। সেখান দিয়ে বেরোলে সিঁড়ি নেমে গিয়েছে গঙ্গায়। গঙ্গার ধারে মন্দিরের ঘণ্টা, স্তোত্র, মানুষের কলতান সবই ক্ষীণ। শান্ত, সুন্দর প্রকৃতি। আর ঠান্ডা জল ছোট্ট গঙ্গার।
দক্ষ রাজার মন্দিরের আগে আছে আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম। সেটি আরও নিরিবিলি। পরিচ্ছন্ন। মন শান্ত হয়ে যায় ভিতরের পরিবেশে। সন্ধে হয়ে আসছে। তাই লজ অভিমুখে রওনা হলাম। দীপাবলি সামনে। পথে দু’ ধারে সারিবদ্ধ দোকান। আর মাথার ওপর ছোট ছোট আলোর সামিয়ানা। কি সুন্দর আলোক সজ্জায় সেজে উঠেছে চারদিক।
হৃষীকেশ। ছবি: সংগৃহীত।
এরপর একদিন গেলাম হৃষিকেশ। হরিদ্বার থেকে ট্রেনে। খুব কম সময়ের পথ। স্টেশনে নেমে গেলাম লছমনঝুলা। মোটা মোটা দড়ির তৈরি ঝুলা। গঙ্গার ওপর। উঠলে ঝুলা নড়ে ওঠে। ভয় লাগছিল। নিচে স্রোতস্বিনী নদী। সাবধানে পার হলাম। পাহাড়ের কোলে ছোট্ট শহর হৃষিকেশ। রাস্তার দু’ ধারে বসে আছেন অনেক সাধু ও বাটি নিয়ে সব ভিখিরি। কিছুদূর গিয়ে কালি কমলিয়ালি আশ্রম ও ধর্মশালা। লাল রঙের সব বাড়িগুলো। মাঝখানে বাঁধানো চত্বরে ঘুরলাম। মন্দির দেখলাম। আশ্রম দেখে নদীর ধারে এলাম। একটা বড় ভোজনালয়। কি সুন্দর নিরামিষ খাওয়া। খাবার খেয়ে গঙ্গার বাঁধানো ঘাটের সিঁড়িতে বসলাম। এ ঘাটটা বেশ জমজমাট। লোকজনের ভিড়।
ফেরার পথে লছমনঝুলার আগে একটা মস্ত বহুতল বাড়ি। প্রতিটি তলায় ঘোরানো বারান্দা। গীতা ভবন। এক একটি তলায় এক এক রকম দর্শনীয় জিনিস। জাদুঘর বলা যায়। অনেকগুলো তলা। সবটায় ওঠা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ওপর থেকে অতুলনীয় দৃশ্য। একদিকে পাহাড়। তার কোলে ছোট্ট জনপদ। তাকে ঘিরে বহমান নদী। যেন একটি জীবন্ত ক্যালেন্ডার এর ছবি।
আমাদের হরিদ্বার হৃষিকেশে থাকার দিন শেষ হয়ে এল। হরিদ্বার ও হৃষিকেশ এখনকার ভাষায় কোনও ‘অফ বিট’ জায়গা নয়। অধিকাংশ মানুষেরই এক বা একাধিকবার যাওয়া। মন্দির নগরী হরিদ্বার, কত মন্দির দেখলাম। কত দেখা বাকি রইল। মন্দিরের মূর্তিগুলো একই রকম পাথরে গড়া। সাদা ধবধবে। টানাটানা কালো চোখ। অলংকারে সজ্জিত। মুখে প্রসন্ন হাসি। এরপর আরও বার দু’ এক হরিদ্বার গিয়েছি। কিন্তু প্রথমবারের স্মৃতি এমন অটুট যে, তার ওপর অন্যরা ছাপ ফেলতে পারেনি। সে কি শুরুর দিনের আশ্রয় বিপর্যয়ের জন্য? জানি না।
ফেরার পথে লছমনঝুলার আগে একটা মস্ত বহুতল বাড়ি। প্রতিটি তলায় ঘোরানো বারান্দা। গীতা ভবন। এক একটি তলায় এক এক রকম দর্শনীয় জিনিস। জাদুঘর বলা যায়। অনেকগুলো তলা। সবটায় ওঠা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ওপর থেকে অতুলনীয় দৃশ্য। একদিকে পাহাড়। তার কোলে ছোট্ট জনপদ। তাকে ঘিরে বহমান নদী। যেন একটি জীবন্ত ক্যালেন্ডার এর ছবি।
আমাদের হরিদ্বার হৃষিকেশে থাকার দিন শেষ হয়ে এল। হরিদ্বার ও হৃষিকেশ এখনকার ভাষায় কোনও ‘অফ বিট’ জায়গা নয়। অধিকাংশ মানুষেরই এক বা একাধিকবার যাওয়া। মন্দির নগরী হরিদ্বার, কত মন্দির দেখলাম। কত দেখা বাকি রইল। মন্দিরের মূর্তিগুলো একই রকম পাথরে গড়া। সাদা ধবধবে। টানাটানা কালো চোখ। অলংকারে সজ্জিত। মুখে প্রসন্ন হাসি। এরপর আরও বার দু’ এক হরিদ্বার গিয়েছি। কিন্তু প্রথমবারের স্মৃতি এমন অটুট যে, তার ওপর অন্যরা ছাপ ফেলতে পারেনি। সে কি শুরুর দিনের আশ্রয় বিপর্যয়ের জন্য? জানি না।
* পরিযায়ী মন (Travelholic): ড. দুর্গা ঘোষাল (Durga Ghoshal), প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, গভর্নমেন্ট কলেজ।