বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


কাশীর এই জ্ঞানবাপী যে কত প্রাচীন তা বলা মুশকিল। কেউ কেউ বলেন যে, এই জ্ঞানবাপী আসলে শিবের জলময় মূর্তি। এই কুয়োর কাছেই রয়েছে বিশ্বনাথের নতুন মন্দির। মন্দিরের বাইরে বোধহয় বছরের যেকোনও সময়েই নিরবচ্ছিন্ন দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। তবে সোমবার অথবা বিশেষ তিথিতে যেমন শ্রাবণমাস অথবা শিবরাত্রিতে বহু জনসমাগম হয়। মন্দিরের বাইরে পাণ্ডাদের ভিড়। তবে এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল বাবার দর্শন অথবা স্পর্শ করবার জন্য পাণ্ডার সাহায্যের প্রয়োজন হয় না।

পুজোর উপকরণ মন্দিরের বাইরে থেকে সংগ্রহ করে গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারলেই ইচ্ছাপূরণ হওয়া সম্ভব। মন্দিরে বিশেষভাবে পুজো দিতে চাইলে তার জন্যও পৃথক বন্দোবস্ত রয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহের কাছে মন্দির চত্বরেই রয়েছে মন্দির কমিটির অফিস। অফিসের বাইরে দেওয়ালে বিভিন্ন দিনের পুজো কিংবা অভিষেকের জন্য কত মূল্য ধার্য করা হয়েছে তা লেখা রয়েছে। যে ব্যক্তি ওই বিশেষ পুজোর জন্য কাউন্টারে টাকা জমা করবে, সেদিনের পুজোর পরে সেই ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার প্রসাদ পাবেন।
বিশ্বনাথের পুজো ভোগের পর মন্দির চত্বরের একটি নির্দিষ্ট ঘরে কাশীর সাধু সম্প্রদায় প্রথম প্রসাদ পান। যে ব্যক্তি বিশেষ অর্থের বিনিময়ে পুজো দেন, তিনি সেই সাধুদের ভোজন দক্ষিণা দিয়ে তাঁর ভোগপ্রদান এবং সাধুভোজন এর কাজ সমাধা করতে পারেন। তবে এই দক্ষিণাদান আবশ্যিক নয়। মন্দিরে ভোর থেকে রাত অবধি পাঁচবার আরতি হয়। ভোর তিনটে থেকে চারটে অবধি মঙ্গলারতির সময়। আর শয়নারতি হয় রাত সাড়ে দশটা থেকে এগারোটা অবধি। সেবার কাশির শুনশান পথে শয়নারতি দেখবার উদ্দেশ্যে মন্দিরের গর্ভগৃহে উপস্থিত হয়েছিলাম।
আরও পড়ুন:

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৩: বাবা বিশ্বনাথের দরবারে

পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১: একটি ক্লান্তিকর বাসযাত্রা এবং…

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৬: প্রকৃতি নিয়ে পর্যটন

মন্দিরে সাধারণ দর্শনার্থীদের সংখ্যা খুব কম ছিল। ছিল কিছু স্থানীয় লোকজন। চারপাশ নিঝুম। হঠাত্ ডমরু বেজে উঠল। পুজোরী-সহ স্থানীয় লোকজনেরা একসঙ্গে গেয়ে উঠল মহাদেবের স্তোত্ররাজি। গম গম করে উঠল চারপাশ। প্রধান পুরোহিত তখন একমনে নানান ফুল দিয়ে শিবলিঙ্গের শৃঙ্গারে ব্যস্ত। অপূর্ব সে শৃঙ্গার খুব কাছ থেকে প্রাণভরে দেখলাম। সারাদিনে কতবার দিনের বিভিন্ন সময়ে এসেছি। কিন্তু এ যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দৃশ্য। আরতি, শৃঙ্গার, গান আর সবশেষে গালবাদ্য একসময়ে শেষ হল। বাবা বাবা এই বলে ডেকে সকলে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করল। এরপর সকলকে পায়েস পরিবেশন করা হল। অপূর্ব সে পায়েসের স্বাদ আজও মুখে যেন লেগে রয়েছে। এক অদ্ভুত ভালোলাগা নিয়ে মন্দির থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। বিশ্বনাথের শয়নারতি দেখতে পরে অন্যসময়েও গিয়েছিলাম। ততদিনে ভিড় অনেক বেড়েছে। কে গর্ভগৃহে আগে পৌঁছাবে, সে নিয়ে রীতিমতো ঠেলাঠেলি।
আরও পড়ুন:

স্বাদে-আহ্লাদে: খুদের টিফিনে কী দেবেন ভেবেই মাথায় হাত? ঝটপট বানিয়ে ফেলুন মুগ ডালের চিল্লা!

হেলদি ডায়েট: কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন? সুস্থ থাকতে কোন ১০টি ফল খাবেন?

মাধুরী দীক্ষিতের রেশমের মতো চুলের রহস্য কি? সেই তেল কিন্তু বাড়িতেই বানাতে পারেন

কাশী বছরের এমনি সময়ে একরকম কিন্তু উত্সবের সময় তার ছবি সম্পূর্ণ অন্যরকম। বিশেষ করে শিবরাত্রির এখানকার জাঁকজমক শোভাযাত্রা দেখবার মতো হয়। এ সময় পথের ধারে দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতেই কোথা থেকে যে সময় চলে যায়! দূর দূরান্তর থেকে আগের দিন রাত থেকে লোকজন কাশীতে এসে উপস্থিত হয়। রাত ভোর থাকতে লাইন পড়ে বিশ্বনাথ মহাদেবকে পুজো দেওয়ার জন্য। পথের ধারে ধুতরো ফুল, আকন্দ ফুল, বেলমালা দেদার বিকোয়। পথের ধারে ভাণ্ডারা বসে। দর্শনার্থীদের খাদ্য পানীয় বিতরণ করে পুণ্য অর্জন করে অনেকে।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৬: উত্তম কাছে এসে বললেন, “তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি সাবু, এ বার আমায় মাফ করে দে”

ছোটদের যত্নে: হঠাৎই জ্বর, মুখে-হাতে ঘা হচ্ছে শিশুদের! কষ্টকর হলেও ভয়ের কিছু নেই, জেনে নিন কোন রোগের উপসর্গ এগুলি

দশভুজা: সুন্দরবনের অনেক শিশুর শিক্ষার অধিকার রক্ষায় ব্রতী এই শিক্ষিকা

বরুণা আর অসি নদীর সঙ্গমস্থলে সাততীর্থের অন্যতম এই বারাণসী। বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম এই বারাণসী শহরের পত্তন করেন সুহোত্রের ছেলে কাশ্য। কাশ্যের নাম অনুসারেই এই শহরের নাম কাশী। গঙ্গানদী এখানে অর্ধচন্দ্রের মতো বাঁক নিয়েছে। গঙ্গাতীরে প্রায় একশটির কাছাকাছি ঘাট রয়েছে। গঙ্গাবক্ষে নৌকাপথে অথবা পদব্রজে বর্ষাকাল বাদ দিয়ে অন্য সময়ে এই ঘাট ধরে হাঁটা অত্যন্ত মনোরম।
আরও পড়ুন:

স্বাদে-গন্ধে: সামনেই জন্মদিন? বিশেষ দিনের ভূরিভোজে বানিয়ে ফেলুন কাশ্মীরি পদ মটন রোগান জোস!

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫১: বিয়েশাদির ঠাকুরবাড়ি

ছোটদের যত্নে: শিশুদের মানসিক চাপমুক্ত করে পড়াশোনায় মনোযোগী করবেন কীভাবে? রইল শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

বরুণা আর অসি নদীর সঙ্গমস্থলে সাততীর্থের অন্যতম এই বারাণসী। বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম এই বারাণসী শহরের পত্তন করেন সুহোত্রের ছেলে কাশ্য। কাশ্যের নাম অনুসারেই এই শহরের নাম কাশী। গঙ্গানদী এখানে অর্ধচন্দ্রের মতো বাঁক নিয়েছে। গঙ্গাতীরে প্রায় একশটির কাছাকাছি ঘাট রয়েছে। গঙ্গাবক্ষে নৌকাপথে অথবা পদব্রজে বর্ষাকাল বাদ দিয়ে অন্য সময়ে এই ঘাট ধরে হাঁটা অত্যন্ত মনোরম।
* জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে (Jyotirlinga – Travel) : ড. অদিতি ভট্টাচার্য (Aditi Bhattacharya) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।

Skip to content