বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


বেড়ানোর মূলে বাঙালির ‘দীপুদা’ (দীঘা-পুরী-দার্জিলিং) সিনড্রোম ব্যাপক ‘ট্রোলড’ হলেও আপন বেগে পাগলপারা ঝোঁক ফুরোয় কই?
তাই সপ্তাহান্তে দিন তিনেকের ছুটি জমলেই, দেখা যায় ‘চলো, মন বোঁচকা তোলো’— বলে এর যেকোনও একটাতে বাঙালি চলেছে ঘুরতে!
এই দীপুদা নামের স্যান্ড-উইচের মোক্ষম পুরটি হল— পুরী, যেখানে বছরের যে কোনও মরশুমে নিশ্চিন্তে পৌঁছে যাওয়াটাই দস্তুর। হ্যাঁ, পুরীর কোনও ‘অব সিজন’ নেই!
দুটিতে-জুটিতে হোক কিংবা আন্ডা-বাচ্চা-ঠাম্মা-দিদিমাযোগে হোক বা পিসতুতো ননদের সইয়ের মায়ের বকুলফুলের ভাগ্নে জামাইয়ের সঙ্গে গ্রুপবাজি মিলিয়েই হোক, পুরীর আকর্ষণ সবেতেই এক ও অদ্বিতীয়। বিশেষকথা, মধ্যবিত্ত বাঙালির বেড়ানোর ম্যাপে পুরীই হল একমাত্র রেল স্টেশন, যেখানে কোনও ওভারব্রিজ নেই। ফলে চলাফেরার কষ্ট সামলে এ স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেই সোজা প্ল্যাটফর্মের বাইরে আসা যায়, মাঝখানে কোনও নাক উঁচু সিঁড়ির দাপট সহ্য না করে।
আর বাইরের হাওয়ায় একবার পৌঁছতে পারলেই সব নাক লবণের গন্ধ খোঁজে নির্ভুল বাঁয়ে মুড় জপে!
অতঃপর অটো কিংবা টৌটোয় চেপে সমুদ্দুউউউউউর…!
জঙ্গল-পাহাড়ের আগে-পরে চিরদিনের উন্মাদনা, আহা!
আরও পড়ুন:

বাইরে দূরে: ‘আমার এ পথ…’

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪০: রবীন্দ্রনাথকে দারোয়ান ভেবে দৌড়ে পালিয়েছিল চোর

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

যোগা-প্রাণায়াম: বাহু ও পিঠে বেশ ফ্যাট জমছে? ছিপছিপে থাকতে নিয়মিত যোগাভ্যাস করুন

যদিও চুলে রুপোর তার ঝিলিকোনও লোকজন ‘আমাদের সময়ে’ — পুরী কত্ত ফাঁকা আর সুন্দর ছিল বলে দাবড়ে দেন ঈষৎ অর্বাচীনের মাতামাতিকে তবু নিত্য উচ্ছ্বাসে ভাঁটা পড়ে কই?
সমুদ্রের পাশাপাশিই জগন্নাথদেবের কিংবদন্তি মন্দির-সহ আরও নানা ছোটবড় ‘সাইট-সিইং’ আর কাছাকাছির উদয়গিরি-ধৌলিগিরি-নন্দনকানন-কোনারকের সূর্য মন্দিরের ঘুরঘুরান্তি চলতেই থাকে। কিন্তু ‘দীপুদা’ মন্তরের মজা হল এই, এত সবের পরেও ‘আসছে বছর আবার হবে’ জিগির তুলেই ঘরে ফেরার দল ট্রেনে ওঠে!
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই ফুরোয় না তার যাওয়া আসার পালা। তবুও মনে মনে কি কোথাও ফোটে না নতুন চোখের ইচ্ছেকুসুম? মনে হয় না কি, বড় তরফের ওই ‘আমাদের সময়ে’-র গুমোর একবার তো ভাঙি?
হয়তো সেই ইচ্ছেই খুঁজে পায় চিরচেনা পুরীর বুকেই আধোচেনা কোনও নতুন সূর্যোদয়ের ঠিকানা।
আর সেই ভাবেই পায়ে পায়ে এসে পৌঁছয় স্বর্গদ্বার তথা কেনাকাটার পীঠস্থানের থেকে একটু দূরে বিচ্ছিন্ন এক একলা সমুদ্রের মুখোমুখি।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১১: ভাগ্যের ফেরে হাস্যকর ‘লাখ টাকা’ [১০/০৭/১৯৫৩]

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৩: খালেবিলে, ধানখেতে, পুকুরে, নদীতে ঘুরে বেড়ানো ‘ম্যাজিশিয়ান’ জেব্রা ফিশ ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়ে নতুন দিশা দেখাবে

ছোটদের যত্নে: কোন সময় গর্ভধারণ করলে সুসন্তান লাভ সম্ভব? নব দম্পতির মা হওয়ার আগের প্রস্তুতির পরামর্শে ডাক্তারবাবু

ইংলিশ টিংলিশ: সবাই যদি বলে ‘very beautiful’, তুমি বলে দ্যাখো ‘ravishing’ বা ‘magnificent’!

জায়গাটি ‘মোহনা’। ধাউদিয়া (স্থানীয় মাছচাষীদের মুখে ‘মংলা’) নামের নিস্তরঙ্গ এক উদাসীন নদী যেখানে এসে মিশেছে উত্তাল সমুদ্রের বুকে। হ্যাঁ, এই সেই চল্লিশ বছরের পারে দেখা নিজের ছন্দের পুরী সমুদ্দুর। কোনও পশারী নেই, নেই জনোচ্ছ্বাসের তুমুলধ্বনি যাতে সমুদ্রের নিজের কথাগুলি চাপা পড়ে যাবে। কেবল লাবণ্যময় তরঙ্গভঙ্গ আর কাঁকড়া দৌড়োনো কুমারী বেলাভূমি। সকালের তরুণ সূর্য কিংবা বিকেলের প্রৌঢ় দিনমণির সঙ্গে একান্তে দেখাসাক্ষাতের এ এক শর্তহীন সৈকত এখনও।
ইচ্ছে করলেই অটো /টোটো/ রিক্সায় করে চলে আসা যায় লাইটহাউসের থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমের এই জনবিরল স্থানে। নিউ মেরিন ড্রাইভের ভুবনেশ্বর যাওয়ার নতুন হাইওয়ের পাশে নেমে সৈকত বরাবর কিছুটা হাঁটলেই এই নদী-সমুদ্রের সঙ্গম।
যেতে চাইলে বলি—
পুরী হোটেলের কাছাকাছি থেকে যাতায়াত বাবদ ভাড়া পড়বে আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা।
সকাল আর সন্ধেতেই ভালো এই ধু ধু সমুদ্রের জায়গাটি কারণ রোদ্দুর মাথায় বেশিক্ষণ থাকা যায় না।
শেষমেষ—
বাড়ি ফিরে দিব্য বলা যাবে, কিছুই হারায়নি এখনও, কেবল খুঁজে নিতে জানতে হয়!

ছবি ও ভিডিয়ো ক্লিক: লেখক

Skip to content