ছুটি মানেই একচ্ছুট্টে অজানা অচেনার পারে কয়েকটা দিনের জন্য হারিয়ে যাওয়া। রোজনামচার একঘেয়েমি ভুলে অন্য কোথাও অন্য কোনওখানে হারিয়ে গিয়ে বেড়িয়ে পড়ার মজাটা যে একেবারেই আলাদা, তা নতুনভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না। ছুটির স্বাদকে পুরোপুরি উপভোগ করবার জন্য আমি আপনি-সহ সমস্ত মানুষই চেনা জানার গণ্ডির বাইরে বেড়িয়ে পড়াকে অভ্যাস করে ফেলেছি। বেশ কিছুদিন আগেও ছুটিতে বেড়াতে যাওয়াটা ছিল কিছু মুষ্টিমেয় স্বচ্ছল পরিবারের বিষয় কিংবা রোমাঞ্চকর অভিযানে অভিযাত্রীদের বিষয়। তখন বেড়ানোটাই অন্যরকম ছিল। তারপর আস্তে আস্তে বিষয়টা যখন পর্যটনের রূপ নিল, তখন ভ্রমণ ইচ্ছুক মানেই যেমন পর্যটক হয়ে উঠলেন। আবার বেড়ানোটা ধীরে ধীরে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠের অভ্যাসে পরিণতি পেল, তখন কিন্তু ছুটি উপভোগ করতে যাওয়াকে ভ্রমণ পর্যটন যে ভাবেই ব্যাখ্যা করুন না কেন তা সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বে সাম্প্রতিকতম অভ্যাস ও পরম্পরা, সে সম্পর্কে সন্দেহের কোনও অবকাশ থাকতে পারে না।
কিন্তু বেড়ানো মানে কী? শুধু বিলাসী অবসর কাটানো? বেড়ানো মানে কী? প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, পারস্পরিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক পরম্পরা সেগুলোকে দেখা না কি নান্দনিক ঐতিহ্যের অনুসন্ধান, অনুভব, উপভোগ? আবার কখনও কখনও ছুটিতে বেড়াতে যাওয়াটা সামাজিক মর্যাদার প্রতীক কী? সুতরাং, বেড়াতে যাবার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং অন্যদিকগুলিকে বিচার করে এটা বলা যায় প্রাকৃতজনের চলমান সংস্কৃতি তথা চারু কারুকলার ঐতিহ্যের অনুসন্ধান সাধারণভাবে বেড়ানো। আবার বেড়াবার ঠিকানা হিসেবে নির্বাচনে অঞ্চল বিশেষে কখনও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, কখনও সৌন্দর্য, কখনও ইতিহাস, কখনও বা সংস্কৃতি পরম্পরা এগুলোকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
অনেকেই বেড়াতে গিয়ে হয়তো আঞ্চলিক ঐতিহ্যকে ভালো ভাবে ভোগই করেন না। আমরা চলে যাই সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলে, ঘুরি-ফিরি মাছের সন্ধানে—বাঘ দেখতে পেলাম কি না? কিন্তু আমরা কি কখনও সেই গ্রামটার খোঁজে যাই, যে গ্রামটা ‘বিধবাদের গ্রাম’ নামে পরিচিত? আচ্ছা আমরা নদীর তটে ঘুরে বেড়াই। অমুক নদী, তমুক নদী, অমুক বাঁধ, তমুক বাঁধ—আচ্ছা একবারও কি খুঁজি সেই বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে কত মানুষের জমি চলে গিয়েছে। কত মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন। কিংবা একটি বাঁধ তৈরি করার ফলে একটি শহর যে গোটা জলের তলায় চলে গিয়েছে, যা আমাদের এই ভারতবর্ষেই আছে তার খোঁজ আমরা কখনও রাখি। অতএব, তাজমহল থেকে পিরামিড, প্যারিস টাওয়ার থেকে লাদাখের বৌদ্ধগুম্ফা, মক্কা-মদিনা আমরা ছুটে বেড়াই দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। পর্যটনের সঙ্গে তাই ঐতিহ্য যুক্ত হয়ে যায়। পর্যটনের সঙ্গে ঐতিহ্যের নিবিড়তা পরম্পরা যুক্ত হয়ে যায়।
অনেকেই বেড়াতে গিয়ে হয়তো আঞ্চলিক ঐতিহ্যকে ভালো ভাবে ভোগই করেন না। আমরা চলে যাই সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলে, ঘুরি-ফিরি মাছের সন্ধানে—বাঘ দেখতে পেলাম কি না? কিন্তু আমরা কি কখনও সেই গ্রামটার খোঁজে যাই, যে গ্রামটা ‘বিধবাদের গ্রাম’ নামে পরিচিত? আচ্ছা আমরা নদীর তটে ঘুরে বেড়াই। অমুক নদী, তমুক নদী, অমুক বাঁধ, তমুক বাঁধ—আচ্ছা একবারও কি খুঁজি সেই বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে কত মানুষের জমি চলে গিয়েছে। কত মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন। কিংবা একটি বাঁধ তৈরি করার ফলে একটি শহর যে গোটা জলের তলায় চলে গিয়েছে, যা আমাদের এই ভারতবর্ষেই আছে তার খোঁজ আমরা কখনও রাখি। অতএব, তাজমহল থেকে পিরামিড, প্যারিস টাওয়ার থেকে লাদাখের বৌদ্ধগুম্ফা, মক্কা-মদিনা আমরা ছুটে বেড়াই দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। পর্যটনের সঙ্গে তাই ঐতিহ্য যুক্ত হয়ে যায়। পর্যটনের সঙ্গে ঐতিহ্যের নিবিড়তা পরম্পরা যুক্ত হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-১: চলার পথে খানিক ভণিতা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৬: ছোটদের, একান্তই ছোটদের ‘ভাই-বোন সমিতি’
আজকের বিশ্ব-পর্যটন বাজারে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ পর্যটনও চলে এসেছে। প্যাকেজ অথবা মোড়কের গায়ে ব্র্যান্ড নামের মোড়কের আড়ালে পর্যটনও এখন পসরায় পরিণত হয়েছে, পণ্যের পসরা। এ সব বাদ দিয়ে যদি সত্যি ঘুরতে যাওয়া যায়, যদি তাজমহল আর আগ্রার কেল্লা দেখে মুঘল ‘হেরিটেজ ট্যুর’ উপভোগ শেষ করে পাশের সেই ফিরোজাবাদের গ্রামটিতে চলে যাওয়া যায়, যেখানে এখনও বসবাস করছে তাজমহলের নির্মাতার বংশধরেরা। যাঁদের এখনও কাজ করতে দেওয়া হয় না শাহজাহানের পরম্পরা মেনে। ভারত সরকার থেকে তাঁরা তাঁদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের অর্থ পান। তার খোঁজটা করতে পারা যায় না কি? চাঁদনী রাতে তাজমহল, দুপুর রোদে তাজমহল, তাজমহলের সানসেট সেটাই কি শুধু আগ্রা? অর্থাৎ প্যাকেজ পরিবেশনা উদ্দেশ্য, সেটাই শুধু ভ্রমণ নয়।
আরও পড়ুন:
ডায়েট ফটাফট: নিয়ম করে খান আমন্ড? ভালো থাকবে হার্ট, এড়ানো যাবে রিঙ্কল! এর বহুমুখী পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা আছে কি?
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১: স্নানের আগে রোজ সর্ষের তেল মাখেন?
চলতে চলতে তাই পথের শেষে কী আছে সেটা দেখাই পর্যটনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। অন্তত আমার কাছে তাই। একটি জায়গায় পৌঁছনোর পর সেখান থেকে পথচলা শুরু করে আবার ফেরার পথে ট্রেন কিংবা প্লেন ধরার আগে পর্যন্ত প্রতিটা মুহূর্ত তাই আমার কাছে অন্য দেখা অন্য চেনা। যে আকাশটা আমি রোজ কলকাতায় দেখি, সেই আকাশটাই বাইরে গেলে মনে হয় কত নীল, কত উঁচুতে, কত মেঘের ভেলা। দৃষ্টি, দৃষ্টি দিয়েই তো আমরা বুঝতে পারি কী দেখব, কী দেখা গেল, কী দেখা হল। রবিঠাকুরের মতো কাব্যিক ভাষায় বলি, আমি তো কান দিয়ে শুনি না মন দিয়ে শুনি। সেই মন দিয়ে আমার দেখা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতেই কলম ধরা।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৯: দেখতে দেখতে ‘সদানন্দের মেলা’
স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে চিকেন কারি আর ভালো লাগছে না? বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো বানিয়ে ফেলুন মুর্গ মালাই হান্ডি
লিখব না শুধু কিছু ছবি যেন মনের মধ্যে আঁকা ছিল, সেগুলোই আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এই পর্যায়ে প্রথম শুরু ছত্তিসগড় দিয়ে। পাহাড়, নদী, অরণ্যমুখর এই ছত্তিস তথা ছত্রিশটি দুর্গের এই দেশ। প্রাকৃতিক প্রাচুর্যের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এমন যুগলবন্দির খোঁজে অবশ্য বেশি দূরের পথ পাড়ি দিতে হয় না, মিলে যায় আমাদের ভাবনার নাগালের খুব কাছেই। মধ্যপ্রদেশের পূর্ব দিকে প্রায় তার শরীরের সঙ্গে মিশে থাকা এক লক্ষ ছত্রিশ হাজার চৌত্রিশ বর্গকিলোমিটারের বনপাহাড়ি এই দেশকে ঘিরে তাই আমার ভাবনা শুরু। ইতিহাসের কোশল, দক্ষিণ কোশল বা মহাকোশল নিয়ে আজকের ছত্তিসগড় ভারত ভূখণ্ডের একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র রাজ্য।
এখানকার মিঠে বাতাস, ভেজা কালো মাটির টানে, গাছ-গাছালি, বন্যপ্রাণী অরণ্যানীর ভিড়ে পাহাড়িয়া বাঁশির সুর আমাদের মন কেড়ে নেয়। প্রকৃতির দরাজ দাক্ষিণ্যে ঋতুবদলের তালে তালে ছত্তিসগড় সেজে ওঠে তার নিজের খেয়ালে। রঙ ধরে শরীরে, পাতার ফাঁকে দোল খেয়ে যায় পাগলা হাওয়ার দলবল, গহীন বন মুখরতা পায় বন্যদের নিঃশব্দ চলাফেরায়, চাঁদনী রাতের মায়ায় ছত্তিসগড়ী যুবতীর নিটোল দেহবল্লরী এ সব নিয়ে ছত্তিসগড় আমাদের কাছে হয়ে ওঠে রপকথার রাজ্য। ছত্তিসগড়ের বুকে ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ, মানুষের ক্রম অগ্রগতির ইতিহাস, অন্যধরনের আরন্যক পরিবেশ নেশা ধরায় পর্যটককে।—চলবে
এখানকার মিঠে বাতাস, ভেজা কালো মাটির টানে, গাছ-গাছালি, বন্যপ্রাণী অরণ্যানীর ভিড়ে পাহাড়িয়া বাঁশির সুর আমাদের মন কেড়ে নেয়। প্রকৃতির দরাজ দাক্ষিণ্যে ঋতুবদলের তালে তালে ছত্তিসগড় সেজে ওঠে তার নিজের খেয়ালে। রঙ ধরে শরীরে, পাতার ফাঁকে দোল খেয়ে যায় পাগলা হাওয়ার দলবল, গহীন বন মুখরতা পায় বন্যদের নিঃশব্দ চলাফেরায়, চাঁদনী রাতের মায়ায় ছত্তিসগড়ী যুবতীর নিটোল দেহবল্লরী এ সব নিয়ে ছত্তিসগড় আমাদের কাছে হয়ে ওঠে রপকথার রাজ্য। ছত্তিসগড়ের বুকে ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ, মানুষের ক্রম অগ্রগতির ইতিহাস, অন্যধরনের আরন্যক পরিবেশ নেশা ধরায় পর্যটককে।—চলবে
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.co
* চেনা দেশ অচেনা পথ (Travel Offbeat): লেখক— অর্পিতা ভট্টাচার্য (Arpita Bhattacharya), অধ্যাপিকা, বাংলা বিভাগ, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। শৈলীবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমান আগ্রহ ও কাজ ভ্রমণ-সাহিত্য, ইকো-ট্যুরিজম, কালচার ট্যুরিজম, স্মৃতিকথা নিয়ে। এছাড়াও মুক্তগদ্য চর্চা ভালো লাগার জায়গা। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থ এবং ৫০ টিরও বেশি প্রবন্ধ। সম্পাদনা করেছেন একটি বই এবং ধারাবাহিক সম্পাদনা করেন রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টারের জার্নাল।