মঙ্গলবার ৪ মার্চ, ২০২৫


আমাদের অদম্য উৎসাহ, আশপাশে নাম-না-জানা সব বিশাল বিশাল উঁচু উঁচু গাছ। সবটাই ছায়া ঘেরা। সুয্যিমামাকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছিল আমাদের ছোঁয়ার জন্য। ক্রমে অরণ্য গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে শুরু করল, গাছের উচ্চতা বাড়তে লাগল, পথ আরও দুর্গম। আবিলো চলেছে সবার সামনে৷ তার হাতে একটা বড় ছোরার মতো ধারালো অস্ত্র। তার এককোপেই সে কেটে ফেলতে পারছিল পথরোধকারী আগাছা আর সরু গাছের ডালগুলো। আর আমরা চলেছিলাম তাকে অনুসরণ করে। আর সবার পিছনে বাদিয়া, সে খেয়াল রাখছিল সবকিছু পেছন থেকে, সঙ্গে বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল খাবার এবং কিছু জলের বোতল।

অরণ্যের পথে।

সব কিছু ঠিকই চলছিল দ্বিতীয় বিরতি অব্দি। গোল বাঁধল যখন দেখা গেল আমাদের পরিকল্পিত রাস্তায় প্রায় মাইলখানেক জুড়ে বড় বড় গাছ পড়ে গেছে বাজ পড়ে এবং ঝড়ে। সম্ভবত ২-৩ মাস আগে এখানে যে বিরাট ঝড় হয়েছিল তারই ফল। আবিলো আর বাদিয়া আবার বসল মানচিত্র নিয়ে বিকল্প রাস্তার আলোচনায় আর আমরা বসলাম প্রমাদ গুনতে। ওরই মধ্যে আমি একবার জিজ্ঞাসা করলাম এই গাছপালার মধ্যে দিয়েই কি হাঁটা যায় না? উত্তরে বাদিয়া বলল এত গাছ পড়ে থাকলে তলার রাস্তা তারা ভালোভাবে দেখতে পাবে না। সেখানে জন্তু জানোয়ার সাপখোপ সবই থাকতে পারে। তাদের মধ্যে দু-একজন হঠাৎ বেরিয়ে আসতেই পারে আর আক্রমণ করতেই পারে। যত বেশিদিন ধরে এমন পড়ে থাকবে গাছগুলো, এসব বিপদের সম্ভাবনা তত বেশি। আমি আর কথা বাড়ালাম না। এত শখের প্রাণটা যেচে খোয়ানোর কী দরকার। বুঝলাম যে সুয্যিমামা আমাদের খেয়াল না রাখতে পারলেও তাঁর বন্ধু যমরাজকে পাঠিয়ে দিয়েছেন আমাদের খেয়াল রাখার জন্য।
অগত্যা… কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি, ফাবিয়ানো, আর ফ্রানজি, এ-ওর দিকে একবার করে চেয়ে বসে পড়লাম আবিলো আর বাদিয়ার সঙ্গেই। ১৫-২০ মিনিট ধরে আলোচনার পর জানা গেল যে অন্য পথ আছে কিন্তু তাতে আর বেশ কিছু ঘণ্টা বেশি লাগবে। আবারও ওই একই কথা। কী যে রাস্তা খুঁজে বের করছে তারা, তার কোনও ধারণাই নেই। আরে রাস্তাই নেই; তাতে কী যে খুঁজবে আর কী যে বের করবে, তা ওরাই জানে। সে যা-ই হোক, এখন আমাদের পথপ্রদর্শক, ঈশ্বর, পরমেশ্বর, দেবদূত, গার্ডিয়ান এঞ্জেল, যা-ই বলা যায়—সবই ওই দুই আদিবাসী, আবিলো আর বাদিয়া। আমরা শুধুই তাদের অনুসরণ করে হাঁটছি এবং হাঁটব। মনে পড়ে গেল প্রবোধ সান্যালের ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ প্রবন্ধটার কথা। অনেক ছোটবেলায় পড়া। পংক্তিগুলো হুবহু মনে নেই। তবে নিজের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে লিখতে গেলে অনেকটা এইরকম দাঁড়ায়: ‘পথ দুর্গম। বেশ তো; চলো হাঁটি।’… ‘রাস্তা চিনি না। দরকার নেই; চলো হাঁটি।’… ‘ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাতে কী? চলো হাঁটি।’… ‘খিদে পেয়েছে। কিছু যায় আসে না; চলো হাঁটি।’… ‘তেষ্টা লেগেছে। পরোয়া নেই। চলো হাঁটি।’… ‘বাঁচব কি আদৌ? চিন্তা করে লাভ নেই ; চলো হাঁটি।’ —চলবে

অরণ্যের পথে. এখানে অরণ্য প্রায় তৃণভূমির মতো।

ছবি সৌজন্য: লেখক

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম : এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল : samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content