ঘুরিষার রঘুনাথ মন্দির ও গোপাল মন্দির।
সর্বপ্রাচীন টেরাকোটা শিল্পের আঙ্গিকে পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতের রূপচিত্র দেখতে হলে অবশ্যই ঘুড়িষায় যেতে হবে৷ ঘুড়িষা বীরভূমের ইলামবাজার ব্লক ও থানার অন্তর্গত। বোলপুর থেকে টোটোতে, গাড়িতে বা জাম্বুনি বাসস্ট্যান্ড থেকে উঠে ঘুড়িষা আমবাগান স্টপেজে নামতে হবে। আমরা সরাসরি গাড়িতে গিয়েছিলাম।
ঘুড়িষার ভট্টাচাৰ্যপাড়ায় বাংলার সর্বপ্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরটি লক্ষিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রঘুনাথ ভট্টাচাৰ্য। উঁচু বেদির ওপর চারচালা রঘুনাথ মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণ করেন ভট্টাচাৰ্য পরিবার। ওই বাড়ির একজন মাঝবয়েসি গৃহবধূ সদস্যার সঙ্গে কথা হয় আমার। তাঁর থেকে জানতে পারি বর্গি আক্রমণকালে (১৭৪২-১৭৫২) মন্দিরের স্বর্ণনির্মিত রামের মূর্তি অপহৃত হয়। পরবর্তীকালে মন্দিরে শিবলিঙ্গ স্থাপিত হয়।
মন্দিরের পেছনে একটি শ্বেতপাথরের প্রতিষ্ঠা ফলকও আছে। সম্ভবত শিবের প্রতিষ্ঠার সময় স্থাপিত হয়।
মন্দিরের পূর্ব দিকের দরজার খিলানের ওপর বৃষারূঢ় শিব, কালী, ছিন্নমস্তা প্রভৃতি দেবদেবীর টেরাকোটার প্রতিকৃতি উল্লেখ্য। এখানে একটি মিথুন মূর্তিও দৃষ্ট হয়৷ উত্তরদিকের প্রবেশ পথের খিলানের ওপর রামায়ণের যুদ্ধের দৃশ্যাবলি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবেই। শিল্পীর রামায়ণ, মহাভারত সম্পর্কে জ্ঞান প্রতিফলিত হয় এই সব প্রতিকৃতিতে।
গর্ভগৃহের দুটি দরজা—একটি পূর্ব দিকে এবং একটি উত্তর দিকে। দুটির মধ্যে পূর্ব দিকের দরজাটি খোলা ছিল। ভেতরে মাঝারি আকারের নিত্য পূজিত শিবলিঙ্গ সহজেই চোখে পড়বে।
এবার মন্দির গাত্রে পৌরাণিক প্রতিকৃতির প্রসঙ্গে আসি। পূর্ব দিকের মন্দির গাত্রে রাবণ, রাম, কালী, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কূর্মাবতার, বরাহ অবতার, নৃসিংহ, ত্রিবিক্রম, বলরাম, মনসা, বৃষারূঢ় শিব-পার্বতী, মহালক্ষ্মী, দুর্গার অপূর্ব প্রতিকৃতির প্রাচীনত্ব অনুমান করা যায়।
ঘুড়িষার ভট্টাচাৰ্যপাড়ায় বাংলার সর্বপ্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরটি লক্ষিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রঘুনাথ ভট্টাচাৰ্য। উঁচু বেদির ওপর চারচালা রঘুনাথ মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণ করেন ভট্টাচাৰ্য পরিবার। ওই বাড়ির একজন মাঝবয়েসি গৃহবধূ সদস্যার সঙ্গে কথা হয় আমার। তাঁর থেকে জানতে পারি বর্গি আক্রমণকালে (১৭৪২-১৭৫২) মন্দিরের স্বর্ণনির্মিত রামের মূর্তি অপহৃত হয়। পরবর্তীকালে মন্দিরে শিবলিঙ্গ স্থাপিত হয়।
মন্দিরের পেছনে একটি শ্বেতপাথরের প্রতিষ্ঠা ফলকও আছে। সম্ভবত শিবের প্রতিষ্ঠার সময় স্থাপিত হয়।
মন্দিরের পূর্ব দিকের দরজার খিলানের ওপর বৃষারূঢ় শিব, কালী, ছিন্নমস্তা প্রভৃতি দেবদেবীর টেরাকোটার প্রতিকৃতি উল্লেখ্য। এখানে একটি মিথুন মূর্তিও দৃষ্ট হয়৷ উত্তরদিকের প্রবেশ পথের খিলানের ওপর রামায়ণের যুদ্ধের দৃশ্যাবলি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবেই। শিল্পীর রামায়ণ, মহাভারত সম্পর্কে জ্ঞান প্রতিফলিত হয় এই সব প্রতিকৃতিতে।
গর্ভগৃহের দুটি দরজা—একটি পূর্ব দিকে এবং একটি উত্তর দিকে। দুটির মধ্যে পূর্ব দিকের দরজাটি খোলা ছিল। ভেতরে মাঝারি আকারের নিত্য পূজিত শিবলিঙ্গ সহজেই চোখে পড়বে।
এবার মন্দির গাত্রে পৌরাণিক প্রতিকৃতির প্রসঙ্গে আসি। পূর্ব দিকের মন্দির গাত্রে রাবণ, রাম, কালী, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কূর্মাবতার, বরাহ অবতার, নৃসিংহ, ত্রিবিক্রম, বলরাম, মনসা, বৃষারূঢ় শিব-পার্বতী, মহালক্ষ্মী, দুর্গার অপূর্ব প্রতিকৃতির প্রাচীনত্ব অনুমান করা যায়।
রঘুনাথ মন্দিরে কালী, সরস্বতী ও মহালক্ষ্মীর খোদাই করা মূর্তি।
উত্তর দিকের মন্দির গাত্রে বস্ত্রহরণ, নবনারীকুঞ্জর, রাসমণ্ডল, গজেন্দ্রমোক্ষ, দুর্গা, অনন্তশায়ী বিষ্ণু, কালীয়দমনরত কৃষ্ণ ও গোচরণে কৃষ্ণের প্রতিকৃতি এক অসাধারণ শৈল্পিক মাত্রায় উৎকীর্ণ হয়েছে।
দু-একটি পৌরাণিক কাহিনি অবতারণ প্রসঙ্গে ‘নবনারীকুঞ্জর’-এর কথা বলতে হয়। ‘নবনারীকুঞ্জর’ বাংলার টেরাকোটা শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক নিদর্শন।
এই নিদর্শন সম্পর্কে সাধারণ মানুষজন সেভাবে অবহিত নন, তবে দেশ বিদেশের গবেষকরা এই নিদর্শনের অনেক রকম নাম ও তত্ত্বর সন্ধান দিয়েছেন। নয় জন গোপী মিলে একটি হস্তীর রূপ ধারণ করেছে এবং এই হস্তীর ওপর শ্রীকৃষ্ণের অবস্থান—এভাবেই স্থাপত্যে লক্ষিত হয়। ওড়িশার পাতা চিত্রে (Pata Paintings) এরূপ নিদর্শন ‘গজরস’ নামে প্রথম উল্লিখিত হয়েছিল।
অনেকে একে ‘কন্দর্প হস্তী’ও বলেন। বিদেশি গবেষক জর্জ মাইকেল কৃষ্ণলীলা বর্ণনা প্রসঙ্গে গোপীগণ একত্রে হস্তী রূপ ধারণ করেছে—এ কথা উল্লেখ করে বলেছেন বাংলার টেরাকোটা মন্দিরের দেওয়াল গাত্রে ও স্তম্ভগাত্রে এই নিদর্শন লক্ষিত হয়।
বৈষ্ণব শাস্ত্রে, রাসলীলা বর্ণনায় এরকম হস্তীরূপের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়। বিষ্ণুপুরের শ্যামরায় মন্দিরে ও মদনমোহন মন্দিরে ‘নবনারীকুঞ্জর’-এর নিদর্শনটি বিশেষভাবে চোখে পড়ে।
এরপর ভাগবত পুরাণের ‘গজেন্দ্রমোক্ষ’-র কাহিনিটি বিশেষ উল্লেখ্য। এই কাহিনি অনুসারে ভগবান বিষ্ণু গজেন্দ্র নামক এক হস্তীকে মকর অর্থাৎ কুমিরের কামড় থেকে রক্ষা করতে মর্তলোকে অবতীর্ণ হন।
ভগবান বিষ্ণুর সাহায্য নিয়ে গজেন্দ্র মোক্ষলাভ করে অর্থাৎ জন্মমৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুর কাছে গমন করে। এই পৌরাণিক কাহিনির তাৎপর্য হল গজেন্দ্র রূপ মানুষ যতক্ষণ না বিষ্ণুর চরণে নিজেকে সমর্পণ করে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাঁক মিশ্রিত সংসার রূপ জলে বাসনারূপ পাপে আবদ্ধ হয়ে থাকে।
দু-একটি পৌরাণিক কাহিনি অবতারণ প্রসঙ্গে ‘নবনারীকুঞ্জর’-এর কথা বলতে হয়। ‘নবনারীকুঞ্জর’ বাংলার টেরাকোটা শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক নিদর্শন।
এই নিদর্শন সম্পর্কে সাধারণ মানুষজন সেভাবে অবহিত নন, তবে দেশ বিদেশের গবেষকরা এই নিদর্শনের অনেক রকম নাম ও তত্ত্বর সন্ধান দিয়েছেন। নয় জন গোপী মিলে একটি হস্তীর রূপ ধারণ করেছে এবং এই হস্তীর ওপর শ্রীকৃষ্ণের অবস্থান—এভাবেই স্থাপত্যে লক্ষিত হয়। ওড়িশার পাতা চিত্রে (Pata Paintings) এরূপ নিদর্শন ‘গজরস’ নামে প্রথম উল্লিখিত হয়েছিল।
অনেকে একে ‘কন্দর্প হস্তী’ও বলেন। বিদেশি গবেষক জর্জ মাইকেল কৃষ্ণলীলা বর্ণনা প্রসঙ্গে গোপীগণ একত্রে হস্তী রূপ ধারণ করেছে—এ কথা উল্লেখ করে বলেছেন বাংলার টেরাকোটা মন্দিরের দেওয়াল গাত্রে ও স্তম্ভগাত্রে এই নিদর্শন লক্ষিত হয়।
বৈষ্ণব শাস্ত্রে, রাসলীলা বর্ণনায় এরকম হস্তীরূপের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়। বিষ্ণুপুরের শ্যামরায় মন্দিরে ও মদনমোহন মন্দিরে ‘নবনারীকুঞ্জর’-এর নিদর্শনটি বিশেষভাবে চোখে পড়ে।
এরপর ভাগবত পুরাণের ‘গজেন্দ্রমোক্ষ’-র কাহিনিটি বিশেষ উল্লেখ্য। এই কাহিনি অনুসারে ভগবান বিষ্ণু গজেন্দ্র নামক এক হস্তীকে মকর অর্থাৎ কুমিরের কামড় থেকে রক্ষা করতে মর্তলোকে অবতীর্ণ হন।
ভগবান বিষ্ণুর সাহায্য নিয়ে গজেন্দ্র মোক্ষলাভ করে অর্থাৎ জন্মমৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুর কাছে গমন করে। এই পৌরাণিক কাহিনির তাৎপর্য হল গজেন্দ্র রূপ মানুষ যতক্ষণ না বিষ্ণুর চরণে নিজেকে সমর্পণ করে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাঁক মিশ্রিত সংসার রূপ জলে বাসনারূপ পাপে আবদ্ধ হয়ে থাকে।
গোপাল মন্দিরে ত্রিপুরা সুন্দরীর অনিন্দ্য মূর্তি।
উক্ত কাহিনিটি রাজা পরীক্ষিতের অনুরোধে শূক পাখি রাজাকে বর্ণনা করে। গজেন্দ্র বিষ্ণুর যে স্তুতি করে, সেই স্তুতি গজেন্দ্র স্তুতি নামে খ্যাত।
ঘুড়িষার অপর আকর্ষণ হল গোপাল মন্দির। মন্দিরটি ওই গ্রামের বেনেপাড়ায় ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে ক্ষেত্রনাথ দত্ত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই নবরত্ন মন্দিরটি। গোপাল মন্দিরের পূর্বমুখে তিনটে খিলান। মন্দিরের সম্মুখবর্তী দেওয়ালে অনন্যসাধারণ টেরাকোটার স্থাপত্য বিশেষ লক্ষণীয়। মন্দিরের প্রবেশপথের ওপরে বাঁদিকের ছোট ছোট কুলুঙ্গিতে গণেশ জননী ও নানান ভঙ্গিমার নারী পুরুষ মূর্তির সুন্দর শৈলী চোখে পড়ে। এছাড়া দেওয়ালের মধ্যভাগে সংকীর্তনরত শ্রীচৈতন্য ও নিত্যানন্দ মহাপ্রভু, তার নীচে রাইরাজা ও দক্ষিণদিকে ত্রিপুরাসুন্দরীর অনিন্দ্যসুন্দর মূর্তিটি আকর্ষণীয়।
ত্রিপুরাসুন্দরী বা ষোড়শী হলেন দশমহাবিদ্যার অন্যতম। ষোড়শীতন্ত্রে ষোড়শী রূপটি ষোড়শ প্রকার কামনার প্রতীক। ষোড়শীতন্ত্রে ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’কে ‘শিবের নয়নজ্যোতি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কৃষ্ণবর্ণা ও শিবোপরি উপবিষ্টা। ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরার নাম ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’র নাম থেকে করা হয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’র পাঁচটি স্তবগান সংকলন করেছেন।
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ মতে দেবী ললিতা ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’র আদি পরাশক্তি। কামদেবের ভস্ম থেকে জাত ভণ্ডাসুর নামে অসুর নিধনের জন্য তাঁর আবির্ভাব। যুগে যুগে অশুভ শক্তি বিনাশের জন্যই মাতৃরূপী মহাশক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। যেখানে সতীর অঙ্গুলি পতিত হয়, সেখানে দেবী পার্বতীর ললিতার ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’রূপে আবির্ভাব ঘটে।
‘ত্রিপুরাসুন্দরী’ সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনি পাওয়া যায়। অন্য একটি মতে বলা হয় একবার শিব পার্বতীকে কৃষ্ণবর্ণ বলায় দেবী তাঁর প্রতি রুষ্ট হন ও কৈলাস ত্যাগ পরে তপস্যার মাধ্যমে তিনি তাঁর নিজের শ্বেতবর্ণ ফিরে পান। ত্রিলোকের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হওয়ার জন্য দেবী পার্বতীর নাম হয় ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’।
ঘুড়িষার অপর আকর্ষণ হল গোপাল মন্দির। মন্দিরটি ওই গ্রামের বেনেপাড়ায় ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে ক্ষেত্রনাথ দত্ত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই নবরত্ন মন্দিরটি। গোপাল মন্দিরের পূর্বমুখে তিনটে খিলান। মন্দিরের সম্মুখবর্তী দেওয়ালে অনন্যসাধারণ টেরাকোটার স্থাপত্য বিশেষ লক্ষণীয়। মন্দিরের প্রবেশপথের ওপরে বাঁদিকের ছোট ছোট কুলুঙ্গিতে গণেশ জননী ও নানান ভঙ্গিমার নারী পুরুষ মূর্তির সুন্দর শৈলী চোখে পড়ে। এছাড়া দেওয়ালের মধ্যভাগে সংকীর্তনরত শ্রীচৈতন্য ও নিত্যানন্দ মহাপ্রভু, তার নীচে রাইরাজা ও দক্ষিণদিকে ত্রিপুরাসুন্দরীর অনিন্দ্যসুন্দর মূর্তিটি আকর্ষণীয়।
ত্রিপুরাসুন্দরী বা ষোড়শী হলেন দশমহাবিদ্যার অন্যতম। ষোড়শীতন্ত্রে ষোড়শী রূপটি ষোড়শ প্রকার কামনার প্রতীক। ষোড়শীতন্ত্রে ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’কে ‘শিবের নয়নজ্যোতি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কৃষ্ণবর্ণা ও শিবোপরি উপবিষ্টা। ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরার নাম ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’র নাম থেকে করা হয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’র পাঁচটি স্তবগান সংকলন করেছেন।
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ মতে দেবী ললিতা ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’র আদি পরাশক্তি। কামদেবের ভস্ম থেকে জাত ভণ্ডাসুর নামে অসুর নিধনের জন্য তাঁর আবির্ভাব। যুগে যুগে অশুভ শক্তি বিনাশের জন্যই মাতৃরূপী মহাশক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। যেখানে সতীর অঙ্গুলি পতিত হয়, সেখানে দেবী পার্বতীর ললিতার ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’রূপে আবির্ভাব ঘটে।
‘ত্রিপুরাসুন্দরী’ সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনি পাওয়া যায়। অন্য একটি মতে বলা হয় একবার শিব পার্বতীকে কৃষ্ণবর্ণ বলায় দেবী তাঁর প্রতি রুষ্ট হন ও কৈলাস ত্যাগ পরে তপস্যার মাধ্যমে তিনি তাঁর নিজের শ্বেতবর্ণ ফিরে পান। ত্রিলোকের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হওয়ার জন্য দেবী পার্বতীর নাম হয় ‘ত্রিপুরাসুন্দরী’।
মনসা মঙ্গল কাব্যের প্রভাব মন্দির স্তম্ভের টেরাকোটার স্থাপত্যে। চাঁদ সদাগরের বাণিজ্য তরীর কিছু প্রতিকৃতি উৎকীর্ণ হয়েছে।
দেওয়াল গাত্রের ডানদিকে দক্ষিণা কালীর প্রতিকৃতি। মন্দিরের গর্ভগৃহে আছে লক্ষ্মী জনার্দন (শালগ্রাম শিলা) ও নিত্য পূজিত গোপাল মূর্তি।
খুব বিস্তারিতভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় মন্দিরের দেওয়াল গাত্রের কুলুঙ্গিসমূহে ছোট আকারে দশাবতার, দশমহাবিদ্যার প্রতিকৃতিগুলো ভীষণ সুন্দরভাবে উৎকীর্ণ। এখানে ইউরোপীয় বেশভূষার নারীপুরুষের প্রতিকৃতির দ্বারা তৎকালীন ইংরেজশাসন প্রতিফলিত হয়েছে। মন্দিরের তিনটি স্তম্ভের নীচের দিকের প্রতিকৃতিতে মনসামঙ্গল কাব্যের প্রভাব স্পষ্ট। চাঁদসদাগরের বাণিজ্যতরীর কাহিনিটি লক্ষিত হয়।
ঘুড়িষার দুটি মন্দিরের টেরাকোটা প্রতিকৃতিগুলোতে তৎকালীন শিল্পীরা চমৎকারভাবে পুরাণ, ইতিহাস, মহাভারত, রামায়ণ ও তৎকালীন জীবনচিত্রর সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। দুটি মন্দিরের সময়কাল ও শৈলী ভিন্ন হলেও বাংলার টেরাকোটা স্থাপত্যের ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
প্রতিকৃতিগুলোর অনবদ্য শৈল্পিক মাত্রা পর্যটক ও গবেষকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। দুটি মন্দিরই পারিবারিক দায়িত্বে সংরক্ষিত এবং এখনও অনেকটাই অক্ষত আছে এটাই ভালো লাগে! গ্রামবাংলার মন্দিরে তৎকালীন শিল্পীদের শিল্পবোধ, জীবনবোধ, ইতিহাস চেতনা ও পুরাণ চেতনা একাকার হয়ে যাওয়ার নিদর্শন বিস্মিত করে, যা দেখতে গিয়েছিলাম তার অনেকখানি-ই পেয়েছি—এরকম মন ভরানো অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম বোলপুর। চোখে লেগে রইল প্রাচীন শিল্পময়তার রেশ!
ছবি সৌজন্য: লেখক
খুব বিস্তারিতভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় মন্দিরের দেওয়াল গাত্রের কুলুঙ্গিসমূহে ছোট আকারে দশাবতার, দশমহাবিদ্যার প্রতিকৃতিগুলো ভীষণ সুন্দরভাবে উৎকীর্ণ। এখানে ইউরোপীয় বেশভূষার নারীপুরুষের প্রতিকৃতির দ্বারা তৎকালীন ইংরেজশাসন প্রতিফলিত হয়েছে। মন্দিরের তিনটি স্তম্ভের নীচের দিকের প্রতিকৃতিতে মনসামঙ্গল কাব্যের প্রভাব স্পষ্ট। চাঁদসদাগরের বাণিজ্যতরীর কাহিনিটি লক্ষিত হয়।
ঘুড়িষার দুটি মন্দিরের টেরাকোটা প্রতিকৃতিগুলোতে তৎকালীন শিল্পীরা চমৎকারভাবে পুরাণ, ইতিহাস, মহাভারত, রামায়ণ ও তৎকালীন জীবনচিত্রর সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। দুটি মন্দিরের সময়কাল ও শৈলী ভিন্ন হলেও বাংলার টেরাকোটা স্থাপত্যের ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
প্রতিকৃতিগুলোর অনবদ্য শৈল্পিক মাত্রা পর্যটক ও গবেষকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। দুটি মন্দিরই পারিবারিক দায়িত্বে সংরক্ষিত এবং এখনও অনেকটাই অক্ষত আছে এটাই ভালো লাগে! গ্রামবাংলার মন্দিরে তৎকালীন শিল্পীদের শিল্পবোধ, জীবনবোধ, ইতিহাস চেতনা ও পুরাণ চেতনা একাকার হয়ে যাওয়ার নিদর্শন বিস্মিত করে, যা দেখতে গিয়েছিলাম তার অনেকখানি-ই পেয়েছি—এরকম মন ভরানো অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম বোলপুর। চোখে লেগে রইল প্রাচীন শিল্পময়তার রেশ!
ছবি সৌজন্য: লেখক
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম : এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল : samayupdatesin.writeus@gmail.com