ওই দূরে গুহা।
এ পথে জওয়ানেরা প্রতি মুহূর্তে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। অবশেষে এসে পৌঁছেছি সুদীর্ঘ তুষারলিঙ্গের সামনে। অনাবিষ্কৃত যে গুহার দ্বার খুলে গিয়েছিল কাশ্মিরী মেষপালকের হাতে, যে গুহায় বসে ধ্যান করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, যে গুহার স্বপ্ন দেখেছি কত রাতে, আজ পৌঁছেছি সে গুহায়। যাত্রাপথের সমস্ত ক্লান্তি মুছে গিয়ে মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি জাগে। পুজোর সামগ্রী তুলে দিই পূজারীর হাতে। আজ কিছু চাওয়ার নেই। দেওয়ারই বা কি থাকতে পারে! সে ক্ষমতা কোথায়?
গুহার কাছে তাঁবুর ভিড়।
আজ শুধু অসীমের কাছে আনত হওয়ার দিন। ডানদিকে অমরনাথের প্রায় ৬ ফুট উঁচু তুষার লিঙ্গ। গুরু পূর্ণিমা থেকে শ্রাবণী পূর্ণিমা তিথি অবধি একমাস অমরনাথ লিঙ্গে পূজা হয়। বছরের বাকি সময় এই এলাকা এতটাই বরফে ঢাকা থাকে, যে সাধারণ মানুষ এ পথে যেতে পারে না। প্রকৃতির সে এক অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি। তবে যত মানুষের ভিড় বাড়ে এ পথে, তত উষ্ণতায় বরফ গলতে থাকে, শিবলিঙ্গের উচ্চতা কমতে থাকে।
তাই অমরনাথের যাত্রাপথ খোলার ঘোষণা হলেই এ পথে গেলে ভালো হয়। গুহার উচ্চতা আনুমানিক ১৫০ ফুটের বেশি। এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের ব্যাস প্রায় ১০০ ফুট। বাঁদিকে আরও তিনটি তুষার মূর্তি, পূজারী জানালেন— পার্বতী, গণেশ ও কার্তিক। গুহার ছাদের ভিতরের দিক অসমান। শুনেছি এখানে অনেক পায়রা অথবা শুকপাখি বাস করে। তাদের দেখা না পেলে নাকি অমরনাথ যাত্রা সফল হয় না। এই সেই পাখি বোধহয়, যে অমর হয়েছিল, সে রয়ে গেছে এই গুহাতেই।
একটু জিরিয়ে নেওয়া।
এসব সত্য নাকি মিথ্যা, তা জানা নেই। তবে গুহার মুখে বরফজলে ভেজা সিঁড়ির মুখে তীব্র ঠাণ্ডায় শয়ে শয়ে লোকের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে এ সব কাহিনি শুনতে আর ভাবতে ভালোই লাগছে। এ যাত্রায় পাখির দর্শন পেয়েছি। গুহার ওপর থেকে টপটপ করে জল এসে পড়ে মাথায়। এবার ফেরার পালা। অমরনাথ সম্বন্ধে পৌরাণিক কোনও প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে প্রসিদ্ধ লেখক শিবশঙ্কর ভারতী তাঁর ভ্রমণ ও সাধুসঙ্গ নামের গ্রন্থে বলেছেন, মহালিঙ্গেশ্বর তন্ত্রে উল্লিখিত কাশ্মীরের প্রসিদ্ধ শিবলিঙ্গ কপিলেশ্বর। তাঁর অনুমান, প্রাচীন কপিলেশ্বরই আজকের অমরনাথ।
গুহা থেকে নামার পথে বাঁদিকে সাধুদের আস্তানা চোখে পড়ে। ধুনি জ্বালিয়ে তাঁরা অমরনাথের স্তুতি করছেন। যে সব সাধু ভিক্ষাপাত্র নিয়ে বসে আছেন, তৃপ্ত যাত্রীরা দুহাত ভরে দান করছেন। ফেরার পথে ১৪ কিমি হেঁটে বালতাল পৌঁছতে হবে। বালতালের পথ অত্যন্ত সংকীর্ণ ও রুক্ষ। ভীষণ ধুলো এ পথে। ক্লান্ত দেহকে বয়ে নিয়ে চলি কোনপ্রকারে। বালতালে পৌঁছাতে সে কি রাজকীয় অভ্যর্থনা স্বেচ্ছাসেবকদের। নানারকম খাবার প্লেটে সাজিয়ে তারা অপেক্ষারত। কেউ আবার প্রণাম করতেও উদ্যত। তারা মনে করে তীর্থ করে ফিরে আসা যাত্রী অতি পুণ্যবান। সুতরাং তাদের প্রণাম করলেও পুণ্য মেলে। কোনওক্রমে তাদের হাত থেকে রেহাই পাই।
বালতালের পথে।
আজ একটা গোটা তাঁবু আমাদের। দুই পা ফুলে ঢোল। সঙ্গে প্রবল ব্যথা। সঙ্গে যে ওষুধ আছে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন গাড়ি করে শ্রীনগর ফেরার পালা। শ্রীনগরে তিনদিন ছিলাম। তাহের ভাইয়ের হোটেলে। তাহের ভাইয়ের দেওয়া ওষুধেই আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠি। এ যাত্রা কাশ্মীর ভ্রমণের বিবরণ দেব না। মহাগুনাস পাসের তীব্র সূর্যের আলোয় আমাদের মুখের চামড়া পুড়ে গিয়েছে। আবার স্বাভাবিক হতে হয়তো কিছুদিন লাগবে। তিনদিন শ্রীনগরে থেকে ঘোরার পর এবার ফেরার পালা।
যাত্রা শেষ : বালতাল হয়ে সোনমার্গের পথে।
ফেরার ট্রেন জম্মু থেকে, হিমগিরি এক্সপ্রেস। ট্রেন যথারীতি ৮ ঘণ্টা লেট। হাওড়া স্টেশনে ঢোকার আগে দাঁড়িয়ে গেল ট্রেন। প্রায় এক ঘণ্টা কেটে গেল। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় খবর পেলাম বাঙালবাবুর ব্রিজ ভেঙে একটা বাস লাইনে পড়ে গিয়েছে। সুতরাং ট্রেন কখন যাবে তার ঠিক নেই। অনেকে ট্রেন থেকে নেমে লাইন ধরে হাঁটছে, স্টেশনের দিকে। আমরা ওদিকে গেলাম না। ডানদিকের পাঁচিল টপকাতে পারলে পৌঁছে যাব টিকিয়াপাড়া, বাড়ির কাছাকাছি। সেই মতো টপকালাম পাঁচিল। এটা জানা ছিল না যে, পাঁচিলের অন্যদিকে একটা ভাগাড়…
অ্যাডভেঞ্চার আর পিছু ছাড়ল না!! —শেষ
ছবি: লেখিকা
অ্যাডভেঞ্চার আর পিছু ছাড়ল না!! —শেষ
ছবি: লেখিকা
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com