চন্দনবাড়ি আর বালতাল থেকে আসা পথ মিশেছে একসঙ্গে।
কত ধরনের যে যাত্রী এ পথে। দেহাতি বধূ সিন্থেটিকের শাড়ি পড়ে, রঙচটা শাল জড়িয়ে বোঁচকা মাথায় নিয়ে, হাওয়াই চটি পরে চলেছেন। পাহাড়ে হাঁটতে গেলে বিশেষ ধরণের পোশাক বা জুতো ব্যবহার করতে হয় কিন্তু সেসব নিয়ম এদের ক্ষেত্রে খাটে না। ছোট্ট পাঁচ বছরের ছেলেটাকে বাবা পিঠে করে নিয়ে চলেছেন। দুটো লোক এরই মধ্যে নানান রকম আলোচনা করতে করতে পথ চলেছে। তাদের আলোচনার মুখ্য বিষয় হল, সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা। এমন অপার্থিব দুরূহ পথও তাঁদের বিষয় আলোচনা থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি।
পঞ্চতরণী।
এর মধ্যেই চোখে পড়ল সেই দীর্ঘদেহী সুদর্শন যুবকটির দিকে। ‘ভোলে ভোলে’ বলতে বলতে এগিয়ে চলেছে সে খালি পায়ে নির্বিকার ভাবেই। এও কি সম্ভব! আমরা তীব্র ঠাণ্ডায় তুষার রাজ্যে শীতবস্ত্রে আপাদমস্তক আবৃত হয়েও কাতর। আর এই যুবকের শরীরের বোধ বুঝি আর নেই, লক্ষ্যে সে অবিচল। সাধকই বটে!
পথের শোভা।
মাথার ওপর গনগনে সূর্য। বরফের মধ্যে সূর্যের প্রতিফলন খুব ক্ষতিকারক, তাই এ পথে সানগ্লাস অবশ্যসঙ্গী। আর লাঠি তো সঙ্গে রয়েইছে, অন্ধের লাঠির মতো, সবসময়ের সহায়। এরপর ক্রমশ উতরাই পথ। ধীরে ধীরে এসে পৌঁছই পোশপথরী। একটু বিশ্রাম নিয়ে এগিয়ে চলি পঞ্চতরণীর দিকে। চারদিকে তুষারশুভ্র পর্বত, সামনে সবুজ গালিচা পাতা প্রান্তর। মাঝখান দিয়ে স্রোতস্বিনী বয়ে চলেছে। ভীমা, ভগবতী, সরস্বতী, বর্গশিখা ও ঢাকা বয়ে চলেছে নিজের ছন্দে। এরা সবাই গিয়ে অমরগঙ্গার স্রোতে নিজেদের সমর্পণ করে। সেই অবতরণের পথও মনোরম।
এই সেই অমরগঙ্গা যার জলধারায় স্নান সেরে হাজার হাজার পর্যটক অমরনাথ গুহায় তুষারলিঙ্গে অর্ঘ্য নিবেদন করে। পঞ্চতরণী পৌঁছে দেখি আমাদের পিট্টুওয়ালা বহু আগেই সেখানে পৌঁছে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। যখন চন্দনবাড়িতে তার হাতে মালপত্র তুলে দিচ্ছিলাম, এটা মনে হয়েছিল, সব তো দিয়ে দিলাম, যদি কিছু হয়! যদি চুরি করে নেয়। কাশ্মীরের মুসলমান, অপূর্ব সুন্দর, নারীপুরুষ নির্বিশেষে, খুব গরীব। কিন্তু চুরি ইত্যাদির চিন্তা বুঝি আমরা সমতলের মানুষেরাই করি। তাঁরা ভাবতেও পারেন না।
পিট্টুওয়ালার কাছ থেকে মালপত্র নিয়ে আমরা চললাম রাতের আশ্রয়ের সন্ধানে। আজ রাত্তিরটাও তাঁবুতেই কাটবে। আগামীকাল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। মোট ২৬ কিমি পথ হেঁটে এসেছি আমরা। আর ৬ কিমি হাঁটলেই পৌঁছে যাব লক্ষ্যে।
পিট্টুওয়ালার কাছ থেকে মালপত্র নিয়ে আমরা চললাম রাতের আশ্রয়ের সন্ধানে। আজ রাত্তিরটাও তাঁবুতেই কাটবে। আগামীকাল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। মোট ২৬ কিমি পথ হেঁটে এসেছি আমরা। আর ৬ কিমি হাঁটলেই পৌঁছে যাব লক্ষ্যে।
পঞ্চতরণী।
পঞ্চতরণীর পর পথ বেশ চড়াই। ৬ কিমিতে ২০০০ ফুট উঠতে হবে। অনেকেই ঘোড়ায় চড়ে এগিয়ে চলে। ৩ কিমি যাওয়ার পর বাঁদিক থেকে আর একটা পথ এসে আমাদের পথে মেলে। এটি হল বালতালের পথ। এ পথেও বহু যাত্রীর ভিড়। সকলে চলেছে সেই এক পথে। আর মাত্র তিন কিমি পথ বাকি।
বালতাল আর চন্দনবাড়ি থেকে আসা পথ যেখানে মিলেছে, তাকে সঙ্গম বলে উল্লেখ করছে স্থানীয় লোকজন। সঙ্গম থেকে সকলে চলেছি উতরাই পথে। এ পর্যন্ত চারটি গ্লেসিয়ার অতিক্রম করে এসেছি। এখনকার চলার পথ বরফের চাদরে ঢাকা। ডান দিকে তীব্র বেগে বয়ে চলেছে অমরগঙ্গা। কঠিন বরফে ঢাকা পথে চলেছে হাজার হাজার মানুষ, ঘোড়া। অনেকেই অমরগঙ্গার বরফগলা জলে স্নান করছেন। এঁদের ভক্তি ও বিশ্বাস কোনও মাপকাঠিতে বিচার্য নয়। নমস্য এঁরা। বরফের ওপরেই তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে যাত্রীদের থাকার জন্য।
বালতাল আর চন্দনবাড়ি থেকে আসা পথ যেখানে মিলেছে, তাকে সঙ্গম বলে উল্লেখ করছে স্থানীয় লোকজন। সঙ্গম থেকে সকলে চলেছি উতরাই পথে। এ পর্যন্ত চারটি গ্লেসিয়ার অতিক্রম করে এসেছি। এখনকার চলার পথ বরফের চাদরে ঢাকা। ডান দিকে তীব্র বেগে বয়ে চলেছে অমরগঙ্গা। কঠিন বরফে ঢাকা পথে চলেছে হাজার হাজার মানুষ, ঘোড়া। অনেকেই অমরগঙ্গার বরফগলা জলে স্নান করছেন। এঁদের ভক্তি ও বিশ্বাস কোনও মাপকাঠিতে বিচার্য নয়। নমস্য এঁরা। বরফের ওপরেই তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে যাত্রীদের থাকার জন্য।
হিমবাহ গলা জল।
লঙ্গরখানাও রয়েছে এখানে। গুহা মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি কানে আসছে। এগিয়ে চলেছি আমরা। দু’পাশে অস্থায়ী দোকানে পশরা সাজিয়ে বসে স্থানীয় মানুষ। এরা অধিকাংশই মুসলমান। বেলপাতা, নারকেল, পাহাড়ী ফুল, হরিতকী, লাল চেলি আরও কত কি!
ক্রমে মন্দিরের কাছে এসে পড়ি। দূরে ওপরে দেখা যায় অমরনাথ গুহা (১৩,৫০০ ফুট)। প্রায় ২০০ বরফের সিঁড়ি। গুহায় ঢোকার মুখে ক্যামেরা, ব্যাগ জমা রাখতে হয়। তাঁর দর্শনে যেতে হলে শূন্য হাতে কেবল অর্ঘ্য সাজিয়ে যাওয়ার নিয়ম। ধীরে ধীরে পথ চলি। —চলবে
ছবি: লেখিকা
ক্রমে মন্দিরের কাছে এসে পড়ি। দূরে ওপরে দেখা যায় অমরনাথ গুহা (১৩,৫০০ ফুট)। প্রায় ২০০ বরফের সিঁড়ি। গুহায় ঢোকার মুখে ক্যামেরা, ব্যাগ জমা রাখতে হয়। তাঁর দর্শনে যেতে হলে শূন্য হাতে কেবল অর্ঘ্য সাজিয়ে যাওয়ার নিয়ম। ধীরে ধীরে পথ চলি। —চলবে
ছবি: লেখিকা
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com