বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


সবুজঘেরা পাহাড়

আলো ফোটেনি তখনও। চলেছি স্টেডিয়ামের পথে। আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। বহুদিনের ইচ্ছা ফলপ্রসূ হওয়ার অপেক্ষায়। অমরনাথ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি অনেক। তাই চলছে পুরোদমে। অমরনাথের পথ সারাবছর খোলা থাকে না। মাস দু’য়েকের জন্য খোলে এ পথ। আর এইসময় এ পথে বহু তীর্থযাত্রীর সমাগম হয়। শুধু দর্শনের জন্য কখনও বা এ পথের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ভারত তথা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ এসে জড়ো হন। যাত্রাপথ সরকারিভাবে খোলার দিনকয়েকের মধ্যে যেতে পারলে পথঘাট পরিচ্ছন্ন থাকে। ফলে পথের সৌন্দর্য আরও বেশি করে উপভোগ করা যায়। তবে এ কথাও ঠিক যে যাত্রার দিন খুব বেশি আগে ঘোষণা করা হয় না। ফলত, কিছুটা আন্দাজের বশেই টিকিট কাটতে হয়। তেমন ভাবেই জুন মাসের শেষ সপ্তাহে টিকিট কাটা হল। রওনা হওয়ার বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই নিয়ম করে শরীরচর্চা চলেছে আর চলেছে রুটিনমাফিক খাওয়াদাওয়া। তিনদিন দুর্গম পথে হাঁটতে হবে আর তার জন্য এইসব প্রস্তুতি জরুরি। যাওয়ার আগের কয়েকটা দিন তীব্র ব্যস্ততায় কাটল। এত দূরের পথ। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছগাছ করা, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ব্যাঙ্ক থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করা ইত্যাদি কাজ সারতে সারতেই কখন যেন নির্দিষ্ট দিন এসে উপস্থিত হল।

এর মধ্যেই কলেজের ইন্টারভিউ এর চিঠি এসে পৌঁছল বাড়িতে। চিঠি খুলে দেখা গেল ঠিক যে দিন আমাদের অমরনাথ গুহায় পৌঁছনোর কথা, সেদিনই ইন্টারভিউ। জীবনে এক একটা এমন অদ্ভুত মুহূর্ত হয়তো সকলের জীবনেই আসে, যেদিন দুইয়ের এককে বেছে নিতে হয়। সেদিন কিন্তু অমরনাথের দুর্গম পথে যাত্রাই হয়তো ভবিতব্য ছিল। বড়দের বললেই অনিবার্যভাবে বাধা আসবেই। তাই এই বিষয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে রওনা দিলাম নির্দিষ্ট দিনে।

হিমগিরি এক্সপ্রেসে দীর্ঘযাত্রা। আরএসি-র টিকিটে একপেশে বার্থে বসে থেকেও বিহারের নাছোড় নিত্যযাত্রী, উত্তরপ্রদেশের জম্পেশ চাওয়ালা, পাঞ্জাবের রকমারি খাবার খেতে খেতে যাওয়া পরিবারের নেমে যাওয়া দেখতে দেখতে এতটা পথ যেন চোখের পলক ফেলা মাত্রই পেরিয়ে এলাম। শেষে দেখা গেল ট্রেনে আমরা গুটিকতক যাত্রীই পড়ে রয়েছি যাদের সবার গন্তব্য জম্মু তাওয়াই। এতক্ষণে খেয়াল পড়ল ঘড়ির দিকে। ট্রেন চলছে ৭ ঘণ্টা দেরিতে। রাত্রি আটটায় জম্মু এসে পৌঁছলাম। প্রতি বছর শীতকালে আমাদের পাড়ায় শাল বিক্রি করতে আসেন তাহের ভাই। তাহের ভাইয়ের সাহায্যে জম্মু আর কাশ্মীরে হোটেলের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। জম্মুতে আমাদের হোটেল ছিল গুমাটে। না, এবারে জম্মু ঘুরে দেখবার কোনও পরিকল্পনা নেই। বরং লক্ষ্য অনেক দূরের পথে।
পরদিন ভোরে তৈরি হয়ে হোটেলের বাইরে এসে দেখি সেখানে ছোটবড় নানা গাড়ির মেলা। কেউ হাঁকছে পহেলগাম পহেলগাম বলে। কেউ আবার শ্রীনগর যাওয়ার যাত্রীর খোঁজ করছে। গুমাট থেকে যাত্রীরা সম্পূর্ণ গাড়ি ভাড়া করে পছন্দের গন্তব্যে যেতে পারেন অথবা শেয়ারেও যেতে পারেন। একটা টাটাসুমোতে পছন্দের সিট বুক করে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যে হরেক ভাষাভাষির যাত্রীতে ভরে উঠল গাড়ি। শুরু হল যাত্রা।

সুন্দরী লিডার

জম্মু থেকে পহেলগাম ২৩৯ কিমি দীর্ঘপথে যাত্রা। ভাবতেই শিহরণ জাগছে যে আর কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছে যাব সেই স্বপ্নের রাজ্যে। পাহাড়ি পথে চলতে চলতে একসময় পৌঁছে গেলাম পাটনি টপ। ছবির মতো সুন্দর। সেখানে পাইন আর দেবদারু গাছের ফাঁক দিয়ে পিরপাঞ্জালের বরফঢাকা চূড়া উঁকি দিয়ে যায়। উধমপুর জেলার পাহাড়চূড়ায় এই ছোট্ট জায়গাটি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের। অনেকেই সময়সংক্ষেপ করার জন্য বিমানপথে শ্রীনগর পৌঁছে যান। তাঁদের কাছে অনুরোধ, অন্তত একবার এ পথে জম্মু থেকে শ্রীনগর বা পহেলগাম যান। এত সুন্দর এবং এত বৈচিত্র্য এ পথে যে চোখ ফেরানো যায় না।

পাহাড়ী পথের চড়াই উতরাই আর চারপাশের প্রকৃতির সঙ্গে কখনও যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। যাত্রীদের মধ্যে কেউ ঘুমোচ্ছে, কেউ বা গল্পে মত্ত। মৃদু গানের আওয়াজ ভেসে আসছে গাড়ির মিউজিক সিস্টেম থেকে। পথের পাশের ধাবায় দুপুরবেলায় আহারাদি সেরে নেওয়া গেল। খাওয়ার শুরুতে গরমভাতে দেশি ঘি আর শেষপাতে আনারদানার চাটনি বেশ লোভনীয়। পরে খেয়াল করে দেখলাম, এ অঞ্চলে প্রচুর ডালিমগাছ। তাই ডালিম বা আনারের চাটনির প্রচলন রয়েছে।

খাওয়াদাওয়ার শেষে আবার রওনা দিলাম। এরপরেই নাকি পথে বিখ্যাত বানিহাল জওহর টানেল পড়বে যা এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথ!—চলবে
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content