কোনো এক প্রজাতির সারস
রারেনবাক ফিরে এসে আবার দেখা হয়ে গেল সকলের সঙ্গে। অবশ্য আমাদের এই নতুন দলটির প্রত্যেকেই উঠেছেন সামনাসামনি কোনও বড় হোটেলে। কাজেই যে সবাই সবাইকে বিদায় জানিয়ে আমরা আবার ঘুরতে লাগলাম শহরে। আমি যেখানেই যাই সেখানকার খাবার চেখে দেখি অবশ্যই। কাজেই পরের গোটা দিনটা কাটালাম রাস্তার ধরে কিছু ছোট ছোট রেস্তোরাঁতে।
আমাজনের উপকণ্ঠে হলেও এখানে তেমন কোনও বিশেষ খাবারের ঘরানা চোখে পড়ল না। নদীর উপকণ্ঠে হওয়ার কারণে রারেনবাক অঞ্চলে আমাদের বাঙালিদের মতো মাছ খাওয়ার চল আছে। কিছু কিছু জিনিস একটু অন্যরকম। যেমন কিছু দোকানে পিরানহা মাছের ফিস-এন-চিপ্স পাওয়া যায় যেখানে কিনা বেনি নদী থেকে ধরা টাটকা পিরানহা ভেজে দেওয়া হয় আলুভাজার সঙ্গে। অবশ্যই জোগানের আধিক্যের জন্য এবং কিছুটা পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য ওই বিশেষ পদটি বানানো হয়েছে। যদিও ভেজে ফেলার পরে খেতে এমন কিছু আলাদা নয়। এছাড়া আছে পিকে মাচু। বিভিন্ন রকমের মাংস, ডিম, এবং আলু; একটার ওপর আরেকটার স্তর। বেশ খেতে। অনেক জায়গাতেই খাবারের সঙ্গে পাওয়া যায় আসাউর, বাঙালি আচার। তেলের মধ্যে কিছু সবজি এবং লংকা দিয়ে জমিয়ে রাখা হয় আমাদের আচারের মতোই। কথাটা শুনতেও অনেকটা একই রকম। কিছু বাড়িতে লুচির প্রচলনও আছে। যদিও একটু বড় মাপের লেচিগুলো কিন্তু খেতে অবিকল লুচির মতোই। কে বলতে পারে হয়তো কোনও এক ‘শঙ্কর’ এখানে এসে মিলে গিয়েছিল এদেরই সঙ্গে আর সেখান থেকেই এসব খাবার বঙ্গভূমি থেকে আমাজনের এই উপকণ্ঠে থাকা মানুষের থালাতেও জায়গা করে নিয়েছে।
আমাজনের উপকণ্ঠে হলেও এখানে তেমন কোনও বিশেষ খাবারের ঘরানা চোখে পড়ল না। নদীর উপকণ্ঠে হওয়ার কারণে রারেনবাক অঞ্চলে আমাদের বাঙালিদের মতো মাছ খাওয়ার চল আছে। কিছু কিছু জিনিস একটু অন্যরকম। যেমন কিছু দোকানে পিরানহা মাছের ফিস-এন-চিপ্স পাওয়া যায় যেখানে কিনা বেনি নদী থেকে ধরা টাটকা পিরানহা ভেজে দেওয়া হয় আলুভাজার সঙ্গে। অবশ্যই জোগানের আধিক্যের জন্য এবং কিছুটা পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য ওই বিশেষ পদটি বানানো হয়েছে। যদিও ভেজে ফেলার পরে খেতে এমন কিছু আলাদা নয়। এছাড়া আছে পিকে মাচু। বিভিন্ন রকমের মাংস, ডিম, এবং আলু; একটার ওপর আরেকটার স্তর। বেশ খেতে। অনেক জায়গাতেই খাবারের সঙ্গে পাওয়া যায় আসাউর, বাঙালি আচার। তেলের মধ্যে কিছু সবজি এবং লংকা দিয়ে জমিয়ে রাখা হয় আমাদের আচারের মতোই। কথাটা শুনতেও অনেকটা একই রকম। কিছু বাড়িতে লুচির প্রচলনও আছে। যদিও একটু বড় মাপের লেচিগুলো কিন্তু খেতে অবিকল লুচির মতোই। কে বলতে পারে হয়তো কোনও এক ‘শঙ্কর’ এখানে এসে মিলে গিয়েছিল এদেরই সঙ্গে আর সেখান থেকেই এসব খাবার বঙ্গভূমি থেকে আমাজনের এই উপকণ্ঠে থাকা মানুষের থালাতেও জায়গা করে নিয়েছে।
পৃথিবীর সবচাইতে ছোট প্রজাতির নারকেল
লাপাজের পথে উড়ানে বসে মনটা একটু খারাপই লাগছিল। এত বাতাস, দূষণমুক্ত কয়েকটা দিন, অচেনা সঙ্গীদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, আমাজনের প্রাণীসম্পদ সব নিয়ে দিনগুলো যেন স্বপ্নের মতো। আমাদের যান্ত্রিক জীবনে এমন তো বড় একটা হাতে পাওয়া যায় না। কিন্তু অমৃতও রোজ পান করতে থাকলে সেও ভাত ডালের মতোই হয়ে যায়। তাতে আর আলাদা কিছু স্বাদ পাওয়া যায় না। তাই মনকে বেশি খারাপ করার কোনও মানে হয় না। তাই আবার একবার সবার কথা মনে মনে ভেবে নিয়ে উঠে পড়লাম তাছাড়া আরও অনেক কিছুই হয়তো থেকে গেল অদেখা। যেমন টুকান পাখি বা জাগুয়ার; তাদের ডাকই শুধু শুনলাম। কিন্তু তাকে চোখে তো দেখলাম না। হয়তো এদের টানেই আবার ফিরে আসব এই প্রান্তরে। হয়তো অন্য কোনও দেশে।
তবে মনটা সত্যিই খারাপ হল এর কয়েক মাস পরে যখন খবরে প্রথম দেখলাম ব্রাজিলিয়ান আমাজন পুড়ে যাচ্ছে। এবং সবচাইতে খারাপ লাগল এটা জেনে যে এই অগ্নিকাণ্ড কোনও প্রাকৃতিক দাবানল নয়। এর জন্য দায়ী সেখানকার মানুষদের অনিয়ন্ত্রিত ঝুম চাষ এবং বিপণন স্বার্থে অনিয়ন্ত্রিত অরণ্য বিনাশ কর্মসূচি। সরকারি উদাসীনতা এবং দুর্নীতি তো আছেই। হাজার হাজার বন্যপ্রাণী পুড়ে ছাই। হয়তো যাদের দেখে এসেছি তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এই তালিকায় আছে। কোটি কোটি টন অক্সিজেন উৎপাদনের প্রাকৃতিক একটা কারখানা ধ্বংস হয়ে গেল স্রেফ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে! শুধু মনে একবার ভেবে দেখার চেষ্টা করলাম যে আমার ছোটবেলায় দেখা এনাকোন্ডা ছায়াছবিটিতে হিংস্র, ধ্বংসোন্মাদ এনাকোন্ডাটি আসলে কে? আবারও একবার মনে পড়ে গেল কবিগুরুর কবিতাটি, যা দিয়ে এই লেখাটি শুরু করেছিলাম; তারই পরের কয়েকটি পংক্তি:
হায় ছায়াবৃতা,
কালো ঘোমটার নীচে অপরিচিত ছিল
তোমার মানবরূপ উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।
এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
এল মানুষ-ধরার দল
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
সভ্যের বর্বর লোভ
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে
পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে;
দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়
বীভৎস কাদার পিণ্ড
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে৷
সমাপ্ত
তবে মনটা সত্যিই খারাপ হল এর কয়েক মাস পরে যখন খবরে প্রথম দেখলাম ব্রাজিলিয়ান আমাজন পুড়ে যাচ্ছে। এবং সবচাইতে খারাপ লাগল এটা জেনে যে এই অগ্নিকাণ্ড কোনও প্রাকৃতিক দাবানল নয়। এর জন্য দায়ী সেখানকার মানুষদের অনিয়ন্ত্রিত ঝুম চাষ এবং বিপণন স্বার্থে অনিয়ন্ত্রিত অরণ্য বিনাশ কর্মসূচি। সরকারি উদাসীনতা এবং দুর্নীতি তো আছেই। হাজার হাজার বন্যপ্রাণী পুড়ে ছাই। হয়তো যাদের দেখে এসেছি তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এই তালিকায় আছে। কোটি কোটি টন অক্সিজেন উৎপাদনের প্রাকৃতিক একটা কারখানা ধ্বংস হয়ে গেল স্রেফ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে! শুধু মনে একবার ভেবে দেখার চেষ্টা করলাম যে আমার ছোটবেলায় দেখা এনাকোন্ডা ছায়াছবিটিতে হিংস্র, ধ্বংসোন্মাদ এনাকোন্ডাটি আসলে কে? আবারও একবার মনে পড়ে গেল কবিগুরুর কবিতাটি, যা দিয়ে এই লেখাটি শুরু করেছিলাম; তারই পরের কয়েকটি পংক্তি:
হায় ছায়াবৃতা,
কালো ঘোমটার নীচে অপরিচিত ছিল
তোমার মানবরূপ উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।
এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
এল মানুষ-ধরার দল
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
সভ্যের বর্বর লোভ
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে
পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে;
দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়
বীভৎস কাদার পিণ্ড
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে৷
সমাপ্ত
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com