হোলিহিলগির্জা, মিলওয়াকি।
ভিরোকুয়া ছাড়িয়ে সেদিন চললাম কেটলমোরেইন ড্রাইভ। পুরো কেটলমোরেইন ড্রাইভ-এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৫ মাইল। উত্তর এবং দক্ষিণে কেটলমোরেইন স্টেট ফরেস্ট-এর দুটি অংশকে এই রাস্তা যুক্ত করেছে। এর উত্তর মুখ শেষ হয়েছে সেবয়গ্যান কাউন্টির এল্কহার্ট হ্রদের কাছে। আমার গন্তব্য ওই জায়গাটিই। কারণ সেখানে রাস্তা বেশ আঁকাবাঁকা এবং এই অংশে বনাঞ্চল প্রায় পুরোটাই গড়ে উঠেছে পর্ণমোচী ফলকালার যুক্ত গাছ দিয়ে। এটি এই রাজ্যের অন্যতম সুন্দর রাস্তা। অবশ্য পৌঁছে যা দেখলাম তাতে করে তাকে অন্যতম সুন্দর না বলে সবচাইতে সুন্দর বললেও হয়তো অত্যুক্তি হবে না। অন্ততপক্ষে বছরের এই সময়ে।
ডোরকাউন্টিতে।
সামনে ঘন অরণ্য। তার পুরোটাই উজ্জ্বল হলুদ। সেখানে লাল, কমলা বা সবুজ রঙের ছিটেফোঁটাও নেই। আর রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনে সে হলুদের আভা যেন ঠিকরে এসে পড়ছে চোখে। অন্যান্য স্টেট ফরেস্টের মতোই এখানকার রাস্তায় আঁকাবাঁকা। একটু বাইরের দিকে বেরোতেই দেখি এদিক-ওদিক বিভিন্ন ঘুরপথ, যাকে আমরা বলি ডি-টুর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা মেঠো পথ। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছুটা গিয়ে সামনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু তার মধ্যেই গাড়ি ঢুকিয়ে দিচ্ছিলাম কিছুটা আর এগোনো না গেলে হেটে যতটা দেখা যায় দেখে নিচ্ছিলাম আশ মিটিয়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা ওই বনের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিলাম একা একাই। তারপর আমি একটি ঘুরপথে শেষে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওপরের সান রুফ তা খুলে সেখান দিয়ে বেরিয়ে গাড়ির ছাদটায় বসেছিলাম। আর সঙ্গে চালিয়ে দিলাম ‘সুহানা সফর হ্যায় য়ে মৌসম হাসিঁ, হামে ডর হ্যায় কে হাম খো না যায়ে কাহিঁ।’ সে এক অদ্ভুত আনন্দ। ছেলেবেলা থেকে আরণ্যক পড়ে বনভূমির সৌন্দর্য বুঝতে শিখেছি। বনের মধ্যে কেমনভাবে চলে গেছে সুঁড়িপথ, সেখানে সত্যচরণ কেমনভাবে বসে থাকত ঘণ্টার পর ঘণ্টা, সবটুকু যেন আরও বেশি করে অনুভব করতে পারছিলাম এখানে। এভাবে বসে বসেই কাটিয়ে দিলাম আরও ঘণ্টাখানেক। সূর্য তখন প্রায় পশ্চিমে, দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে। মনে হল এবার বাড়ি ফেরা উচিত।
আরও পড়ুন:
ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৫: এমন সুন্দরের মাঝে নির্ভয়ে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ জীবনে রোজ রোজ আসে না…
অযোধ্যা: প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতি সমন্বয়ের প্রাণকেন্দ্র/১
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১০: কান্না-হাসির দোল দোলানো ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ [২০/০২/১৯৫৩]
ফেরার পথে বাড়ির ঠিকানা দিতে গিয়ে দেখলাম একদম চটজলদি রাস্তাটা না নিয়ে একটু ঘুরে গেলে পাশেই পড়বে হোয়াইটওয়াটার লেক। আর সেইসঙ্গে ওই রাস্তা দিয়ে গেলে প্রায় পুরো কেটলমোরেইন ড্রাইভ-টাই দেখা হয়ে যাবে। উত্তরে এখন যেখানে আছি সেখানে যেমন এল্কহার্ট হ্রদ দক্ষিণে তেমনই এই হোয়াইটওয়াটার হ্রদটি। কেটলমোরেইন স্টেট ফরেস্ট-এর দুই অংশে দুটি হ্রদ এবং বলা যায় এরাই কেটলমোরেইন ড্রাইভ-এর দুই প্রান্ত নির্ধারণ করছে। সেইমতো ঠিকানা লাগিয়ে দিলাম।
কেটলমোরেন ড্রাইভে।
হোয়াইটওয়াটার হ্রদে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় সূর্যাস্ত। আর সূর্যাস্তের ঠিক উলটোদিকে হ্রদের যে পাড়টা সেখানেই ফল কালার সমৃদ্ধ গাছের বেশি প্রাচুর্য। কাজেই ওই সূর্যাস্তের প্রাক্কালে ফল কালারের আর এক অদ্ভুত রূপ লক্ষ করা গেল। ছবি তুলতে গিয়ে দেখলাম, ছবিতে তেমন পার্থক্য লক্ষ করা যায় না বটে কিন্তু ওই সূর্যাস্তের রঙের সঙ্গে লালহলুদ মিশে গিয়ে এক অন্য রকম অনুভূতি সৃষ্টি করে। যেন মনে হয় দিগন্তের কাছে সূর্যাস্তের রঙে রাঙা আকাশটাই নেমে এসেছে পৃথিবীর ওপরে। আর তার প্রতিফলন ওই হ্রদের ওপরে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪০: রবীন্দ্রনাথকে দারোয়ান ভেবে দৌড়ে পালিয়েছিল চোর
হিন্দি ‘মমতা’ ছবির শুটিংয়ে সুচিত্রা’র সংলাপ মুখস্ত করার ঘটনা ছিল অসাধারণ
দশভুজা: আমার উড়ান— থামতে শেখেননি ইন্দুবেন, বড়া পাও-তেই বাজিমাত!
গাড়িটা স্টেট ফরেস্ট-এ ঢোকার মুখে যে অনুসন্ধান দপ্তর ছিল তার সামনে রেখে দিয়ে হেঁটে হেঁটে খাঁইনকোন ঘরে বেড়াতে লাগলাম সেখানে। কানে হেডফোনে তখন চলেছে ‘সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো, গোধূলির রঙে হবে এ ধরণী স্বপ্নের দেশ তো’। এ যেন সত্যি এক স্বপ্ন। এ যেন সত্যিই এক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নে চারদিকে কেউ কোত্থাও নেই, শুধু আমি একা, আর চারধার থেকে রং এসে লেগে যাচ্ছে আমার শরীরে, মনে, পঞ্চইন্দ্রিয়ের সব ইন্দ্রিয়গুলিতে।
* ফল কালারের রূপ-মাধুরী (Wisconsin Fall Color : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
* ফল কালারের রূপ-মাধুরী (Wisconsin Fall Color : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com