মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


চিপেওয়া নদীর ধারে।

চিপেওয়া একটি ছোট্ট নদী। শহরের একপ্রান্ত দিয়ে বয়ে চলে গিয়েছে অনেকটা বড় নালার মতোই। নদীসংলগ্ন শহরটিও বেশ ছোটখাট। প্লেটভিল আমার শহরটির থেকে বড় তবে ওই যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন। আগের দিন ডোর কাউন্টি দেখে এসে চিপেওয়া তেমন মনে ধরছিল না দুজনের কারওরই। তাই ঠিক করা হল এদিক-সেদিক চলে যাওয়া হবে উদ্দেশ্যবিহীনভাবেই। যেখানেই রং দেখা যাবে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ব আমরা।

তবে উত্তর ছেড়ে যাতে ভুল করে দক্ষিণের দিকে না চলে যায় সেই জন্য জিপিএসে একটি নাম দিয়ে দেওয়া হল। ব্যারন কাউন্টি। সেটাও উত্তর উইসকনসিনে। এবং সেখানেও এখন ফল কালার পিক। সেই রাস্তায় যেতে যেতেই আমি প্রথম দেখলাম উইসকনসিনের গ্রাম্য মেঠো আঁকাবাঁকা পথ, যাকে বলে কান্ট্রি রোড। কিছু রাস্তা শুধুই লাল মোরাম ঢাকা গ্রাভেলড রোড। তার ধারে ধারে খেত, খামার। আর তারই মধ্যে মাঝে মাঝে রাস্তার ধারে হঠাৎ হঠাৎ বার্চ এস্পেনের সারি। তারই মধ্যে কখনও কখনও ঢুকে পড়ছি হঠাৎ কোনও ছোট শহরে।
সাজানো গোছানো দু-একটি ঘর আবার চলেছি রাস্তায়। হঠাৎ আবার নিজের অজান্তেই কখনও ঢুকে পড়ছি কোনও স্টেট পার্কে যেখানে হঠাৎই চারদিকে ফল কালারের সমারোহ। সেদিনই প্রথম আমি উইসকনসিনে গাড়ি চালানোর মজা উপভোগ করলাম। মাইলের পর মাইল ফাঁকা রাস্তা, কখনও মসৃণ কালো বিটুমিনাস রোড, আবার কখনও লাল মোরামের গ্রাভেলড রোড আবার কখনও বা ফাঁকা হাইওয়ে। মাঝে মাঝে আবার চলে আসছি রুক্ষ শুষ্ক মেঠোপথের ওপর। আর তার চারধারেও রঙের খেলা। আর রাস্তার তীক্ষ্ণ বাঁকগুলো যেন গাড়ি চালানোর মজা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।
আরও পড়ুন:

বাইরে দূরে: ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৪: তারপর সেই আঁকাবাঁকা পথে হারিয়ে গেলাম গ্রিন-বে অভিমুখে, সন্ধে পর্যন্ত কোত্থাও যাইনি

দশভুজা: রুমা দেবী—তিরিশ হাজার মহিলার ভাগ্য পরিবর্তনের কান্ডারি তিনি

আমার বন্ধু তো মহা খুশি। এমন সুন্দরের মাঝে নির্ভয়ে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ তো জীবনে রোজ রোজ বড় একটা আসে না। ঠিক যেরকম রূপকথায় জাদুকরিদের মায়ার মধ্যে রুক্ষ মরুভূমিতে পথ হারিয়ে জল খাওয়ার ভ্রম তৈরি হয়, বা গভীর অরণ্যে বিলাসবহুল নন্দনকাননের দৃষ্টি বিভ্রম হয়, এ যেন ঠিক সেই রকম। রুক্ষ পথ কোথাও কিছু নেই, হঠাৎ চারপাশে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে রঙের খেলা চলছে। সেদিন ওরকম অপরিকল্পিত ভাবেই ঘোরা হয়ে গেল বহু জায়গা। সেবয়গ্যান, মনরো, ব্যারন কাউন্টি হয়ে স্পার্টা, অসকস শহর কতশত মাইল যে সেদিন গাড়ি চালিয়েছি খেয়ালই করিনি। শুধু গাড়ি চালিয়ে গেছি। যেন মরীচিকার মতো হাতছানি। শুধু মনে হচ্ছে রাস্তার ওধারে গেলে বোধহয় আরও রং দেখতে পাব।

ডোর কাউন্টি।

তবে দু-একটি জায়গায় যে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরতে হয়নি তা নয়। যেমন গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ দেখি মানচিত্রে একটি হ্রদ দেখা যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী পাশের ঘুরপথ দিয়ে চললাম দশ পনেরো মাইল। হ্রদের কাছে পৌঁছে দেখি বার্চ এসপেন গাছ তো দূরের কথা কোনও গাছই সেখানে নেই। হ্রদের পাশে শুধু বাড়ি আর রাস্তা। আবার ফিরে গিয়ে অন্য দিকে চলে গেলাম। তবে সোজা হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে বেশিরভাগ সময়ই চারদিকে রঙের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে হাইওয়ে ১২ আর হাইওয়ে ৪২-এর ওপর একটু উত্তরে যেতে না যেতেই চারদিকে রঙের মেলা।

ডোর কাউন্টির সেই রাস্তা।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৭: হারিয়ে যাওয়ার আগে এ এক বিফল মৃত—‘সঞ্জিবনী’ [০৮/০২/১৯৫২]

ছোটদের যত্নে: বাচ্চা খেতেই চায় না? কী করে খিদে বাড়াবেন? কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন? জানুন শিশু বিশেষজ্ঞের মতামত

পরের দিন বন্ধু চলে গেল ছুটির শেষে। তাকে ম্যাডিসন বিমানবন্দরে সকাল সকাল পৌঁছে দিয়ে আমি বাড়ি ফিরে এলাম। আবার অপেক্ষা পরের শনিবার রবিবারের জন্য। পরের সপ্তাহে ওয়েবসাইটে দেখলাম যে উত্তরের জায়গাগুলিতে ‘পাস্টপিক’, অর্থাৎ রং চলে গেছে। মানে এখন সেখানে গাছের সব পাতা ঝরে গেছে। এবং ফল কালার এসে পৌঁছেছে মধ্য-উইসকনসিনে। মানে আমার বাড়ি থেকে আরও কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে। তাই শনিবার সকাল হতেই আর দেরি করলাম না। ওয়েবসাইটে দেখলাম কাছাকাছির মধ্যে ভিরোকুয়া অঞ্চলে রং এসে গিয়েছে। ভিরোকুয়া যদিও দক্ষিণ উইসকনসিনে তবুও এর উচ্চতা সামান্য বেশি হওয়ার জন্য দক্ষিণের তুলনায় এখানে রং আসে সপ্তাহ খানেক আগে। কাজেই ঠিক করলাম সেদিক দিয়েই শুরু করব। তারপর চলে যাব মিলওয়াকির দিকে।

কিন্তু গাড়ি চালাতে গিয়ে দেখি ওই সকালে ভিরোকুয়ায় চারদিক কুয়াশায় ঢাকা। মধ্যে মধ্যে রাস্তার দুধারে উঠে যাওয়া পাহাড়ি টিলাগুলোর গায়ে গায়ে মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে উজ্জ্বল হলুদ রং, কিন্তু বেশিরভাগটাই কুয়াশায় ঢাকা। তবে সেটা এক অন্য রকমের অভিজ্ঞতা হল। চারদিক সাদা ধোঁয়ার মতো কুয়াশায় ঢাকা আর তার ফাঁকে ফাঁকে গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ একঝলক উজ্জ্বল লাল হলুদ রং।

* ফল কালারের রূপ-মাধুরী (Wisconsin Fall Color : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content