শুক্রবার ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


হোয়াইট ওয়াটার লেক।

আমার প্রথম বছরের ফল কালারের অভিজ্ঞতা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরেই। তবে এই জায়গাটি উইসকনসিনের একদম দক্ষিণ প্রান্তে। কাজেই সারা রাজ্য ঘুরে এদিকে রং আসে সবার শেষে। অক্টোবরের প্রায় শেষের দিকে, তৃতীয় কি চতুর্থ সপ্তাহে। প্রথম বছর, সবে এক মাস হয়েছে চাকরিতে ঢুকেছি। গাড়ি এখনও কেনা হয়নি। কাজেই অপেক্ষা করতে হল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার মুখেই রয়েছে কয়েকটি বড় বড় পর্ণমোচী গাছ। আর সেখানেই আমার প্রথম রং দেখার অভিজ্ঞতা।
রোজই দেখছি একটি দুটি করে পাতায় রং ধরছে। তবে মনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া ছবির সঙ্গে ঠিক মিল খাচ্ছে না। এখানে একটি সরকারি ওয়েবসাইটে কখন কোথায় ফল কালার দেখা যাবে তার বেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া থাকে মানচিত্র সহযোগে। রোজই একবার করে খুলে খুলে দেখছি কখন এই অঞ্চলে ঠিকঠাক রং আসবে। এরই মধ্যে চলে এল দুর্গাপুজো। উৎসবের মরশুম। আর সেই সঙ্গে, ওয়েবসাইট অনুযায়ী দক্ষিণ উইসকনসিনে ফল কালার দেখার সময়।

হোলিহিল গির্জা, মিলওয়াকি।

তবে একচোট বেশ বৃষ্টি হয়ে গেল পুজোর দিন, যার অর্থ হল শুকিয়ে যাওয়া পাতা রং ধরার আগেই ঝরে যেতে পারে। সেই ভেবে মনটা একটু খারাপও বটে। তবে সে বছর মা শুনেছিলেন আমার কথা। সপ্তাহান্তের পুজো দেখতে গিয়েছি ম্যাডিসনে। বাসে করে যেতে যেতেই রাস্তায় দেখেছি রঙের কিছু ছিটে। কিন্তু মেঘলা আকাশে রং তেমন বোঝা যায় না। তো যা-ই হোক, পুজোর আনন্দে আর অত মাথায় ছিল না। শনিবারে পুজো সেরে ম্যাডিসনেই বন্ধুর বাড়িতে থেকে গেলাম। পেটপুরে পুজোর খাওয়াদাওয়া সেরে রবিবার সেই পৌঁছে দিয়ে গেল বাড়িতে তার গাড়িতে করে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৩: রবীন্দ্রনাথের মাস্টারমশায়

ভালোবাসা এবং ভরসা

যে জীবন মানেনি বাধা…

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১: আলোছায়ায় ‘দৃষ্টিদান’

পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই চোখ যেন জুড়িয়ে গেল আমার। যদিও আকাশ তখন কিছু মেঘলা কিন্তু তারই মধ্যে রং মেলে ধরেছে ক্যাম্পাসে ঢোকার মুখেই বার্চ, এস্পেন আর সাইপ্রেসগুলি। ওই কালো আকাশের তলায় সে রং যেন আগুনের মতো আর কালো মেঘগুলো যেন সেই আগুনেরই ছাই। সেদিন পোড়ানোর শেষে আমি আর নিজের অফিসঘরে গেলাম না। সারাদিন এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে। পায়ে হেঁটেই। কচিৎ কদাচিৎ যখন একটু রোদ উঠল তার মধ্যে কিছু কিছু গাছে প্রত্যক্ষ করলাম ফল কালারের আসল রূপ, যদিও খুবই ক্ষুদ্র সংস্করণে। আর সেদিনই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম যে একটা গাড়ি কিনে পরের বছর চষে ফেলব গোটা রাজ্য। ওয়েবসাইট তো আছেই। তাকে ধরে ধরে ঘুরতে যাব এদিক থেকে ওদিক।

হোলিহিল গির্জা, মিলওয়াকি।

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল। এরই মধ্যে একটি গাড়িও কেনা গিয়েছে। তাই অক্টোবর পড়তে না পড়তেই চোখ বোলাতে শুরু করলাম ওয়েবসাইটে। ঠিক করলাম যে একেকটি সপ্তাহের শেষে যাব একেকটি জায়গায়। উত্তরে ডোর কাউন্টি থেকে শুরু করে মধ্যে মিলওয়াকি হয়ে দক্ষিণে গ্রান্ট কাউন্টি, সব জায়গাই দেখতে যাব এক এক করে।—চলবে

* ফল কালারের রূপ-মাধুরী (Wisconsin Fall Color : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content