
লেক জেনেভার ধারে তুষারভাস্কর্যের মেলা।
যাই হোক, এগুলো তো গেল বরফের বিভিন্ন অসুবিধার কথা। কিন্তু যখন জানলার ওপারে তুলোর মতো তারা উড়ে বেড়ায়, বা আদিগন্তবিস্তৃত হয়ে এক অদ্ভুত শান্তির সঞ্চার করে মনের মধ্যে তখন সত্যিই এসবের কথা আর মাথায় আসে না। মনে হয় যেন জন্মমৃত্যুর গণ্ডি পার হয়ে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি অনন্তকাল ধরে। কোথাও কোনও শব্দ নেই। কলুষতার লেশ মাত্র নেই এই শুভ্রতায়।
এ যেন এক অজানা অচেনা পৃথিবী বা হয়তো স্বর্গেরই প্রতিরূপ। ঈশ্বর যখন নিজের আদলেই মানুষকে গড়েছেন; হয়তো তার থাকার জায়গাটিও কিছু জায়গায় বানিয়ে দিয়েছেন নিজের হাতেই, তাঁর স্বর্গের মতোই। এই সময়গুলোতে আমি মাঝেমধ্যেই একা একা বেরিয়ে পড়ি। উদ্যেশ্যবিহীনভাবে গাড়ি চালাই। আমার এখন থেকে ৫-১০ মিনিট পর থেকেই সব ফাঁকা। জনমানবহীন প্রান্তর। মাইলের পর মাইল শুধু সাদা আর সাদা। আর তার মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে রাস্তা। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। তাকে ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। কখনও কখনও হয়তো চিন্তা করার শক্তিও চলে যায়। তখন শুধু দুচোখ ভরে তাকে দেখতে হয়। পড়ে থাকুক দিনের সমস্ত কাজ, তোলা থাক যত গতানুগতিকতা, পার্থিব নিত্যতা।… শুধু দু’চোখ ভরে দেখি।
এইরকম আদিগন্ত প্রসারিত তুষারশুভ্র পৃথিবীর রূপ যদি সত্যিই অনুভব করতে হয় তাহলে অবশ্যই যেতে হবে এই অঞ্চলের বড় হ্রদগুলিতে। পঞ্চহ্রদ অঞ্চলের কাছাকাছি হওয়ার জন্য এখানে প্রচুর বড় বড় হ্রদ আছে। আর সব চাইতে মজার ব্যাপার এরা সবাই শীতকালে জমে যায়। তখন তাদের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া যায় এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। আমার এই অভিজ্ঞতা প্রথম হয়েছিল ম্যাডিসন শহরে।
এ যেন এক অজানা অচেনা পৃথিবী বা হয়তো স্বর্গেরই প্রতিরূপ। ঈশ্বর যখন নিজের আদলেই মানুষকে গড়েছেন; হয়তো তার থাকার জায়গাটিও কিছু জায়গায় বানিয়ে দিয়েছেন নিজের হাতেই, তাঁর স্বর্গের মতোই। এই সময়গুলোতে আমি মাঝেমধ্যেই একা একা বেরিয়ে পড়ি। উদ্যেশ্যবিহীনভাবে গাড়ি চালাই। আমার এখন থেকে ৫-১০ মিনিট পর থেকেই সব ফাঁকা। জনমানবহীন প্রান্তর। মাইলের পর মাইল শুধু সাদা আর সাদা। আর তার মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে রাস্তা। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। তাকে ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। কখনও কখনও হয়তো চিন্তা করার শক্তিও চলে যায়। তখন শুধু দুচোখ ভরে তাকে দেখতে হয়। পড়ে থাকুক দিনের সমস্ত কাজ, তোলা থাক যত গতানুগতিকতা, পার্থিব নিত্যতা।… শুধু দু’চোখ ভরে দেখি।
এইরকম আদিগন্ত প্রসারিত তুষারশুভ্র পৃথিবীর রূপ যদি সত্যিই অনুভব করতে হয় তাহলে অবশ্যই যেতে হবে এই অঞ্চলের বড় হ্রদগুলিতে। পঞ্চহ্রদ অঞ্চলের কাছাকাছি হওয়ার জন্য এখানে প্রচুর বড় বড় হ্রদ আছে। আর সব চাইতে মজার ব্যাপার এরা সবাই শীতকালে জমে যায়। তখন তাদের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া যায় এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। আমার এই অভিজ্ঞতা প্রথম হয়েছিল ম্যাডিসন শহরে।
ম্যাডিসন শহরটি দুটি হ্রদের মাঝখানে: মনোনা আর মেন্ডোটা। মনোনা হ্রদের পাশেই ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন ম্যাডিসনের স্টুডেন্ট ইউনিয়ন। এখানে স্টুডেন্ট ইউনিয়ন-এর ধারণাটা একটু অন্য রকম। এখানে স্টুডেন্ট ইউনিয়ন-এর মধ্যে প্রচুর বসার জায়গা, রেস্তোরাঁ, অনুষ্ঠানের জায়গা, আরও কত কি; সব কিছু থাকে একসঙ্গে। ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন ম্যাডিসনের ইউনিয়নটি মনোনার ধারে হওয়ায় সত্যিই খুব সুন্দর। চারদিক কাচ দিয়ে ঢাকা যাতে ভেতর থেকে বাইরে সব কিছু দেখা যায়। আমি প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তেই এখানে চলে আসি। সারাদিন লেক-মনোনার রূপ দেখতে দেখতে ওই ইউনিয়ন-এ সে বসেই সব কাজ কর্ম করি, ওখানকারই কোনও রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে ওখানে বসেই খাওয়াদাওয়া করি, আবার হ্রদের ওপারে সূর্যাস্তের শেষে ফিরে আসি বাড়ি।
ডিসেম্বরের ছুটি কাটিয়ে দেশ থেকে ফিরেছি সবে সবে। প্রথম সপ্তাহেই ভাবলাম যাই ঘুরে আসি ম্যাডিসন থেকে। পরিকল্পনা ওই একই রকম, সারাদিন ইউনিয়ন-এ বসে কাজকর্ম করে দিনের শেষে ফিরে আসব। রাস্তা থেকে ইউনিয়ন-এ ঢোকার মুখে একটা কফি কিনে নিয়ে উলটোদিকে অর্থাৎ হ্রদের দিকে যেখানটায় সব বসার জায়গা আছে সেদিকে গেছি। হ্রদের দিকে চোখ পড়তেই আমি তো অবাক! ডিসেম্বরে বাড়ি যাওয়ার আগে দেখেছি হ্রদে টলমল করছে জল, লোকজন নৌকা বাইছে, মাছ ধরছে। আর এখন দেখি সাদা হয়ে পুরো জমে গেছে। শুধু তাই নয়, ওই হ্রদের ওপরেই তার একদিকে কিছু ছাত্রছাত্রী কী সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর গান-বাজনা-নাচ ও করছে বিবিধ রকমের যন্ত্রপাতি বসিয়ে। আমার তো দেখেই খুব উৎসাহ লাগল। পড়ে থাকল সব কাজকর্ম। গেলাম হ্রদের ধারে।
ডিসেম্বরের ছুটি কাটিয়ে দেশ থেকে ফিরেছি সবে সবে। প্রথম সপ্তাহেই ভাবলাম যাই ঘুরে আসি ম্যাডিসন থেকে। পরিকল্পনা ওই একই রকম, সারাদিন ইউনিয়ন-এ বসে কাজকর্ম করে দিনের শেষে ফিরে আসব। রাস্তা থেকে ইউনিয়ন-এ ঢোকার মুখে একটা কফি কিনে নিয়ে উলটোদিকে অর্থাৎ হ্রদের দিকে যেখানটায় সব বসার জায়গা আছে সেদিকে গেছি। হ্রদের দিকে চোখ পড়তেই আমি তো অবাক! ডিসেম্বরে বাড়ি যাওয়ার আগে দেখেছি হ্রদে টলমল করছে জল, লোকজন নৌকা বাইছে, মাছ ধরছে। আর এখন দেখি সাদা হয়ে পুরো জমে গেছে। শুধু তাই নয়, ওই হ্রদের ওপরেই তার একদিকে কিছু ছাত্রছাত্রী কী সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর গান-বাজনা-নাচ ও করছে বিবিধ রকমের যন্ত্রপাতি বসিয়ে। আমার তো দেখেই খুব উৎসাহ লাগল। পড়ে থাকল সব কাজকর্ম। গেলাম হ্রদের ধারে।

লেক জেনেভার ধারে তুষারভাস্কর্যের মেলা।
প্রথমটায় নামতে একটু ভয় লাগছিল; যদি বরফটা ভেঙে যায় আর আমি ডুবে যাই এই ভেবে। তবে দু’তিন জনের সঙ্গে কথা বলতেই সেই ভয় দূর হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়িই। কাজেই হ্রদে নেমে পড়লাম বা বলা ভালো যে বরফে উঠে পড়লাম। তারপর এদিক-ওদিক চারদিকে বেশ হেঁটে চলে ঘুরে লাফিয়ে দেখতে লাগলাম। অনেকটা দূরে প্রায় হ্রদের মাঝামাঝি যেখানটায় লোক জন প্রায় নেই সেখানে যাওয়ার পরে একটু ভয় লাগছিল বটে আবার একবার; কিন্তু, খানিকক্ষণ পরেই বুঝলাম যে ভয়ের কিছুই নেই। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম যে সেখানে শুধু মানুষের পায়ের দাগই নয় রীতিমতো একটি ছোট গাড়ির চাকার দাগও আছে। সেদিন বলাই বাহুল্য কাজ তো আর কিছু হল না। সারাদিন ওই হ্রদের এপাশ থেকে ওপাশ প্রায় তিন মাইল যাওয়া আবার তারপরে ওপাশ থেকে এপাশ আবার তিন মাইল ফিরে আসতেই কেটে গেল। যদিও বরফের ওপরে ওই অতটা হাঁটার জন্য পরের দিন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারিনি৷—চলবে
*তুষারপাতের সেই দিনগুলি (Platteville Wisconsin) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস
*তুষারপাতের সেই দিনগুলি (Platteville Wisconsin) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com