বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


আমার ঘর থেকে তুষার ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বর

ছুটির প্রথম দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলে তাপমাত্রা দেখলাম চলে গিয়েছে মাইনাস ৪০। ক্রমে বিকেলের দিকে সেটা হল মাইনাস ৪৭। এরই মধ্যে আমার একটু সব জিনিসই পরখ করে দেখার ইচ্ছা। সোজা বাংলায় যাকে বলে সুস্থ শরীরকে ব্যস্ত করা। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে ওই ঠান্ডায় কোনও গরমের জামাকাপড় না পরে একবার বেরিয়ে দেখি যে কেমন লাগে। যেই ভাবা সেই কাজ। বাড়ি থেকে নীচে চলে এলাম একটি হাত কাটা জামা পরে। সেটা সত্যিই একটু ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। দুমিনিটের মধ্যেই বুঝতে পারলাম যে কেন পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে বলেছে।

প্রথমেই যেটা হল ওই প্রচণ্ড ঠান্ডায় আর ততোধিক ঝোড়ো হাওয়ায়, সেটা হল আমার নাক দিয়ে প্রচণ্ডভাবে জল ঝরতে শুরু করল। যেন নাকের মধ্যে যে বাতাস নিচ্ছি সেটাই যেন গলে জল হয়ে বেরিয়ে আসছে। সেরকম ভাবেই মুখ বাঁকিয়ে দুটো নিজস্ব তুললাম যদিও এখানে আর অভিনয় করে মুখ বাঁকাতে হয়নি, এমনিতেই বেঁকে গিয়েছিল। যাই হোক, এভাবে এক মিনিট হতে না হতেই শুরু হল শ্বাসকষ্ট। এই কষ্টটা দৌড়োনোর পরে হয় শ্বাসকষ্টের চাইতে অনেকটাই আলাদা। কীরকম যেন মনে হচ্ছিল যে পুরো শ্বাসতন্ত্রটাই শরীরের ভেতর জমে যাচ্ছে আর তাই জন্য আমি চাইলেও ভেতরে বাতাস নিতে পারছি না। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই আমি বুঝতে পারলাম যে আমি এবার আর দাঁড়াতে পারছি না। মনে হচ্ছে নাকের ওই জলগুলোই শ্বাসনালির ভেতরে জমে গিয়ে আর বাতাস ঢুকতে দেবে না।

ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-প্লেটভিলের শেষ প্রান্তে: প্লেট-রিভারের ধরে বরফাবৃত বিকেল

তাই সঙ্গে সঙ্গে আর বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ না করে ঢুকে এলাম প্রাণ বাঁচাতে। ছুটির পরের কদিন আর বাড়ি থেকে বেরোইনি। তবে বরফের অভিজ্ঞতা কিন্তু সবসময় আদৌ এরকম ভয়াবহ নয়। আমার প্রথম বরফ দেখার অভিজ্ঞতা বেশ মজার। সেদিন ছিল শনিবার। সকাল থেকেই বেশ উজ্জ্বল, রৌদ্রকরোজ্জ্বল পরিবেশ। কোনও কাজে সেদিন সকালবেলা আমি গেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার বাড়ি থেকে মাত্র ৫ মিন্টের হাঁটাপথ। আমার অফিস ঘরে বসে কাজ করছি। হঠাৎ করে পেছনে জানলার দিকে ফিরে দেখি চারদিকে প্রচুর ধুলোর মতো কী সব উড়ছে। ঝড়ে ধুলো বালি উড়লে চারদিকে যেরকম দেখতে লাগে অনেকটা সেই রকমই লাগছিল। মোটা মোটা দানার ধুলো চারদিকে উড়ছে বলা যেতে পারে। আমি প্রথমে দেখে ভেবেছি সত্যিই হয়তো ধুলো।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেদিকটা আমার জানলা থেকে দেখা যায় তার কাছাকাছিই কিছু মেরামতির কাজ হচ্ছিল। ভাবলাম হয়তো সেখান থেকেই উড়ছে। তারপর দেখি ৩-৪ মিনিট হয়ে গেছে; অথচ ওরকম উড়েই চলেছে। আর সবচেয়ে অদ্ভুত কোনও যন্ত্রপাতির শব্দ ও নেই যে কি না ওই মাপের ধুলো ওড়াচ্ছে। তাই শেষমেশ আমার উলটোদিকের ঘরে আমার সহকর্মী ডগলাসকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। ডগলাস ছোটবেলা থেকেই এরকম বরফের জায়গায় মানুষ। সে হেসে বলল, যে একে বলে পাউডার স্নো। অনেক সময় অপেক্ষাকৃত শুকনো বাতাস জমে গিয়ে ওরকম ধুলোর মতো বরফ তৈরি হয়। আর্দ্রতা কম হওয়ার জন্য এরা বেশি বড় দলা পাকিয়ে উঠতে পারে না। ওই রকম ধুলো বা শুকনো পাউডারের মতো চারদিকে উড়তে থাকে।—চলবে
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content