মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


রাস্তায় বরফ জমে এমন পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছে যে, সেখানে গাছের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এমন রাস্তায় গাড়ি মাঝে মধ্যে পিছলে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

বাড়ি থেকে যখন বেরোলাম তখন রাত প্রায় পৌনে ন’টা। এবার এখানকার রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি এবং তার কারণ সম্পর্কে একটু বলে নিই, তাহলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে। আগেই বলেছি যে, এখানে কিছুদিন ধরে চলেছে এক অস্বাভাবিক তুষার ঝড়। যদিও এর গতিবেগ এমন কিছু বেশি নয়, কিন্তু এই ঝড়টির অস্বাভাবিকতা মূলত দুটি। প্রথমত, এই ঝড়ের দীর্ঘস্থায়ীতা। অর্থাৎ এতো দিন ধরে এমন তুষার ঝড় কখনও দেখা যায়নি। শুরু হয়েছে গত ১৫-১৬ তারিখ আর চলছে এখনও। শুধু তাই নয়, আবহাওয়া দপ্তরের গণনা অনুযায়ী, এ চলবে এই মাসের শেষ পর্যন্ত। মানে আরও প্রায় এক সপ্তাহ।
দ্বিতীয়ত, এই ঝড়ের তাপমাত্রা এবং আধেয় (কনটেন্ট)। এই ঝড়ে বাতাসের তাপমাত্রা কিছুক্ষেত্রে বেশ ঠান্ডা আবার কখনও খুব বেশি। সেই কারণে বাতাসে কখনও প্রচুর বেশি বরফ, আবার কখনও বা জল। অর্থাৎ কখনও তুষারপাত, আবার কখনও হিমশীতল বৃষ্টি। শুধু তুষারপাত হলে হয়তো এমন কিছু অসুবিধা হতো না। কারণ গুঁড়ো গুঁড়ো বরফ রাস্তা থেকে পরিষ্কার করা সহজ। কিন্তু সমস্যা হল বৃষ্টির জল। এই গরম বাতাসের বৃষ্টির জল রাস্তায় পড়ছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে শীতল ভূপৃষ্ঠ এবং বরফের সংস্পর্শে এসে জমে যাচ্ছে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার পরবর্তী পর্যায়ের ঠান্ডা বাতাসের তোড়ে সে আরও জমে যাচ্ছে পরিষ্কার করার আগেই।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৭: একটার পর একটা রেস্তরাঁয় ফোন করে জানতে পারলাম ৫ মাইল দূরে একটি খোলা আছে

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৮: শ্রীপুরার কাহিনি

এ ভাবে পর্যায়ক্রমে ঠান্ডা ও গরম বাতাসে তুষারপাত ও বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তার ওপর জমে যাচ্ছে শক্ত জমাট বরফ। বাজার থেকে একটি আইসক্রিম কিনে এনে তাকে একবার গলিয়ে আবার যদি ডিপফ্রিজে জমানো হয় তাহলে এই একই রকম ব্যাপার হয়। বাজার থেকে সদ্য কেনা আইসক্রিমটি নরম হওয়ায় খুব সহজেই তাকে চামচ দিয়ে তোলা যায়। কিন্তু একবার গলে গিয়ে আবার জমালে সেটি কাটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়। কিছুক্ষণ বাইরে রেখে তাকে গরম করে তারপর কাটতে হয়। এখানে পুরো অঞ্চলটাই এই সময় হয়ে গিয়েছে ওই জমাট বেঁধে যাওয়া আইসক্রিমের মতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই জমা বরফ রাস্তার ওপরে প্রায় ছয় ইঞ্চি উঁচু। এই অবস্থাকে বলে ‘ফ্রিজিড রোড’।
আরও পড়ুন:

স্বাদে-আহ্লাদে: চিকেন প্রিয়? তাহলে এমন হায়দরাবাদি চিকেনে জমিয়ে দিন দুপুর

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৩: রবীন্দ্রনাথের পোশাকআশাক

কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাস্তা যদি একেবারে সমতল হয়, বরফ জমে যাচ্ছে একদম মসৃণ হয়ে। সে এমন মসৃণ যে তাতে পাশাপাশি গাছের প্রতিফলন দেখা যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে এদিক ওদিক বিভিন্ন মাপের বরফ জমে সে এমন এবড়ো খেবড়ো হয়ে আছে যে, আমাদের দেশের কাঁচা, গর্তওয়ালা রাস্তাকেও হার মানাবে। আর এই দুই ক্ষেত্রেই গাড়ি পিছলে যায় পুরোদমে। আর পিছলে গেলেই পড়বে রাস্তার ধারে। এখন রাস্তার ধারে ভূপৃষ্ঠের অমসৃণতা এবং কিছু ছোট ছোট গাছপালা বা আগাছা থাকার জন্য বৃষ্টির জল একদম নিচে চলে গিয়ে জমাট বেঁধে যায় আর ওপরে জমে থাকে কম ঘনত্বের গুঁড়ো গুঁড়ো হালকা বরফ। এর মধ্যেই ফেঁসে যায় গাড়ির চাকা।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৮: জ্বরে ভাত খাবেন?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৫: আঁধার ভূবনে আবার কে তুমি জ্বেলেছ ‘সাঁঝের প্রদীপ’ খানি

এখন রাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে সমস্যা হল যে, সব কিছুই সাদা হয়ে আছে। আর কোনটা যে রাস্তা আর কোথায় যে রাস্তাটা শেষ হয়েছে সেটা আর বোঝা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে আমি কোনওরকমে গাড়ি নিয়ে চললাম। মাইল দুয়েক পরে শহর থেকে একটু বেরোতে না বেরোতেই দেখি রাস্তা আর আলাদা করা যাচ্ছে না। সবথেকে মুশকিল হল গুগলম্যাপে বলছে যে ডান দিকে বা বাঁ দিকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেখানে আমি কোনও রাস্তাই দেখতে পাচ্ছি না! কারণ বরফে সব একই রকম ভাবে সাদা হয়ে আছে।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৩: কালাদেওর বলি

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৯: জলে হরি, স্থলে হরি, হরিময় এ জগৎ

কোনওরকমে আন্দাজ করে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করছি। আবার কিছু কিছু জায়গায় কিছু বুঝতেই পারছি না বলে ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছি। মানচিত্রে আবার অন্য রাস্তা দেখাচ্ছে। কিন্তু সর্বত্রই একই অবস্থা। আরও কিছুটা পরে দেখি সামনের রাস্তাটাও আর বোঝা যাচ্ছে না। শুধু আন্দাজ করে মাঝ বরাবর চলছি। কাজেই আর ওই রকম রাস্তা ছাড়িয়ে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। গুগলম্যাপ যেখানে ডানদিক বাঁ দিক নিতে বলবে সেটাই নিতে হবে। এবার আমি সত্যিই একটু ভয় পেতে শুরু করলাম।

রাস্তায় বরফ জমে এমন পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছে যে, সেখানে গাছের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এমন রাস্তায় গাড়ি মাঝে মধ্যে পিছলে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

গাড়িতে কিছু হলে আমি কোনও গাড়ি তোলার কোম্পানি (টোয়িং এজেন্সি) বা ৯১১ (যুক্তরাষ্ট্রের জরুরীকালীন পরিষেবা) কাউকেই ডাকতে পারবো না। কারণ, এই গাড়ির বিমায় আমার নাম এখনও নেই। এরা এসে প্রথমেই আমার বিমার কাগজপত্তর দেখতে চাইবে। আর তা না দেখতে পারলে তার যে কি পরিণতি হয় তাও আমি জানি না। ফলে আর ফেরার চেষ্টা করেও আর লাভ নেই। কারণ, আমি তখন মাঝেমাঝি অঞ্চলে। অর্থাৎ একেবারে উভয় সংকট, জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। আর যেখানে বাঘের ভয় সন্ধে ঠিক সেখানেই হয়। আমারও ঠিক তাই হল।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content