বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫


ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেখা যায় ডেনালি পর্বতমালা।

কিন্তু পরের দিন কি হবে সেটা ভেবেই একটু চিন্তা হল। নতুন বাড়ি কিছুই নেই। খাবারও শেষ। অন্যদিকে ২৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ খ্রিস্টমাসের দিন ও সবই প্রায় বন্ধ। পরিকল্পনা ছিল বাড়ির থেকে মাত্র এক-দেড় মাইলের মধ্যে ফ্রেড-মায়ার বা সেফওয়ে (দেশের রিলায়েন্স, স্পেন্সার বা বিগবাজারের মতো) থেকে সেদিন কিছু বাজার করে আনবো।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনেছিলাম যে, খ্রিস্টমাস-ইভের দিন সে সব সন্ধ্যে ৬টা অব্দি খোলা থাকবে। আমার উড়ান ফেয়ারব্যাঙ্কসে নামবে বিকেল ৪টে নাগাদ। ওরায়ন গাড়ি দিয়ে আসবে সেখানেই। অতএব উড়ানের চেকইন লাগেজ থেকে সব বাক্স পেটরা বের করে গাড়িতে গোছাতে আর ওরায়নের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে গাড়ির সমস্ত খুঁটিনাটি বুঝে নেওয়ার জন্য ধরেছিলাম আরও ৪৫মিনিট। তার পরেও হাতে থাকছে এক ঘণ্টার ওপর।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৬: বাড়িতে ঢুকে জুতো মজা দস্তানা খুলে প্রথমেই দেখলাম ‘ফ্রস্টবাইট’ হয়ে গিয়েছে কিনা!

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৭: কুডার ছুঁয়ে শিরপুর

বাড়ির চাবি হাতে নিয়ে ঘরে জিনিসপত্তর রেখেই চলে যাবো বাজার করতে। কাজেই কোনও সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এই সমস্ত ঝামেলার জন্য বলাই বাহুল্য সে তো আর হল না, ওরায়ন তো এসেই পৌঁছল এক ঘণ্টা পরে আর তার পরে এই ব্যাটারি বসে যাওয়া। সবকিছু যখন মিটল তখন সাতটা সাড়ে সাতটা। তাই সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে ঝামেলা পরের দিন অর্থাৎ খ্রিস্টমাসের দিন সারাদিনই সে সব বন্ধ। সেই সিনেমাতে যেমন পুলিশরা পরিকল্পনা করে এক, আর হয়ে যায় আরেক, অনেকটা সেরকমই অবস্থা।
তবে সাধারণ ভাবে গোটা দেশের প্রায় সর্বত্রই কিছু চাইনিজ রেস্তরাঁ এই দিনগুলিতেও খোলা থাকে, অন্ততপক্ষে কিছুক্ষণের জন্য। তাই কাছাকাছির মধ্যে একটা একটা করে চাইনিজ রেস্তরাঁয় ফোন করা শুরু করলাম। অবশেষে ৪-৫ মাইল দূরত্বে একটি খোলা পাওয়া গেল। শুনলাম আজ ১১টা অবধি খোলা। কিন্তু পরের দিন অর্থাৎ খ্রিস্টমাসের দিন পুরোপুরি বন্ধ। বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্তও তাদের আছে, কিন্তু প্রচণ্ড খারাপ আবহাওয়া ও রাস্তার জন্য সে সুবিধা আপাতত বাতিল। শুধু তাই নয়, উবের-ইটস, ডোরড্যাশ এর মতো সুবিধাগুলিও সব বন্ধ।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫২: বইয়ের সব কপি কবির নির্দেশে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২: এসেছে দৈব পিকনিকে

হেলদি ডায়েট: করলা স্বাদে তেতো হলেও পুষ্টিগুণ কিন্তু মিষ্টি! একঝলকে জেনে নিন রোজ কেন পাতে রাখবেন এই সব্জি

অন্যদিকে আমার গাড়িটিও খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কাজেই কখন কি হয় সেই সব দিক ভেবে ঠিক করলাম সেদিন রাতেই বেরোতে হবে খাবার কেনার জন্য। কিন্তু রাস্তায় যে এতো হয়রানি অপেক্ষা করছিল সে আর কে জানত তখন। না হলে একদিন অভুক্ত থাকাই শ্রেয় বলে মনে হতো।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৩: সুন্দরবনের সুন্দর মাছ

সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-১০: ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’

স্বাদে-আহ্লাদে: সকালে জলখাবারে থাক নতুনত্ব, বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পালক পনির পরোটা

তো যাই হোক, মনস্থির করে ফেললাম যখন বেরোবো, তখন আর দেরি করে লাভ নেই। ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে ঠিক পৌঁছে যাবো, এরকম ভেবেই আবার বাইরে বেরোনোর জন্য প্রস্তুত হলাম।

শীতকালে রাস্তায় হাঁটছি।

গুগল-মাপের মানচিত্রে দেখে নিয়েছি যে, ওই রেস্তরাঁটি বিমানবন্দর ছাড়িয়ে যেতে হয়। হয়তো সেখানে তাপমাত্রা আরও কম হবে। তাই হাতে পায়ে গায়ে সব জায়গায় দুটো দুটো করে গরমের জিনিস চাপিয়ে বেরোলাম। দুটো দস্তানা, দুটো মোজা, দুটো জামা, দুটো প্যান্ট, দুটো জ্যাকেট, এরকম আর কি। শীতের দেশে এগুলো করতেই হয়। তবে প্রায় সারাক্ষণই গাড়িতে থাকবো। অত চিন্তার কিছু নেই।—চলবে

ছবি: লেখক
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।

Skip to content