ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস: দফতরের জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি।
গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে গিয়ে ঠিক ঠাক জায়গায় দাঁড় করিয়ে সমস্ত জিনিসপত্তর ঘরে তুলছি। ইতিমধ্যে দেখি ওরায়ন এসে হাজির একটি নতুন ব্যাটারি নিয়ে। সে এখন ওই ঠান্ডার মধ্যে ব্যাটারি পরিবর্তন করবে। একদিকে যেমন অস্বস্তি হচ্ছে আমার জন্য তার হয়রানি দেখে, আবার অন্য দিকে তেমনি সারাদিনের সফরে নিজেকে বেশ ক্লান্তও লাগছে। কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না। সে নিজেই বড় মুখ করে তার গাড়িটা দিয়েছে আমার সুবিধার জন্য। আর এখন তাতেই সমস্যা হয়েছে। সে কিছুতেই ঠিক না করে ছাড়বে না।
অগত্যা ওই ঠান্ডার মধ্যে আমরা দু’জন বাইরে দাঁড়িয়ে গাড়ি ঠিক করছি। আমি অবশ্য কিছুই করছি না শুধু এটা ওটা এগিয়ে দেওয়া ছাড়া। তবে যাই হোক প্রায় আধ ঘণ্টা সময় নিয়ে সে গাড়ি ঠিক করে তবে ছাড়লো। আমার বাড়ির এলাকায় তখন তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাত্র ৩ মাইল দূরে বিমান বন্দরে দেখেছিলাম মাইনাস ৩২ মতো।
আরও পড়ুন:
পর্ব-৪: ভাবলাম এ যাত্রায় কোনও রকমে বাঁচা গেল, কিন্তু এতো সবে সন্ধ্যে! রাত তখনও অনেক বাকি…
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৫: জনজাতি ও জনসত্ত্বা
সম্ভবত এই তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য পৃথিবীর উপবৃত্তাকার আকৃতি দায়ী। মেরুর দিকে পৃথিবী কিছুটা চাপা হওয়ার জন্য এখানে দুটি কাছাকাছি অঞ্চলের মধ্যেও আপতিত সূর্যালোকের পার্থক্য অনেকটা। সম্ভবত সেটা একটা কারণ। এছাড়াও একটি মজার ব্যাপার ঘটে এখানে, যাকে বলে ‘ইনভার্শন’ বা বিপরীত পরিস্থিতি। ঝড়ের সময় মাঝে মাঝে আশপাশের অঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ বাতাস ঢুকে পড়ে মেরু অঞ্চলে। আর প্রকৃতির নিয়মে স্থানীয় ঠান্ডা বাতাস ভারী বলে নেমে আসে একেবারে নিচে। আর ওই ঠান্ডা ভারী বাতাস অপেক্ষাকৃত গরম হালকা বাতাসকে ঠেলে ওপরের দিকে তুলে দিতে থাকে। তাতে করে হয় কি শহরের সবচেয়ে নিচু অঞ্চলটি হয়ে যায় সবচাইতে ঠান্ডা। আর উঁচু পাহাড়ী অঞ্চলগুলো হয়ে যায় সবচেয়ে গরম। প্রচলিত ধারণার ঠিক বিপরীত।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৩: মোর সাধের বাসরে ঘটল ‘গৃহ প্রবেশ’
হেলদি ডায়েট: পেট ফাঁপা ও বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন? এই ঘরোয়া উপায়গুলি ম্যাজিকের মতো কাজ করবে
এখন, ফেয়ারব্যাঙ্কস বিমান বন্দরটি শহরের সবচেয়ে নিচু অঞ্চল হওয়ায় এখানে ঝড়ের সময় ঠান্ডা বেশি থাকে অন্যান্য জায়গার তুলনায়। এই ব্যাপারটা হয় পৃথিবীর সব জায়গাতেই। কিন্তু মেরুর ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এবং এখানে ঠান্ডা ও গরম বাতাসের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটা বেশি হওয়ার কারণে ব্যাপারটা বোঝা যায় স্পষ্ট ভাবে। খুব সম্ভবত ওই ‘ইনভার্শন’ ব্যাপারটি তখনই হচ্ছিল এবং এটাও তাপমাত্রার পার্থক্যের একটা বড় কারণ।
শীতকালে রাস্তায় হাঁটছি।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম যে ৪-৫ ডিগ্রি পার্থক্য তো কিছুই নয়। আমি এই নতুন চাকরিতে যোগদানের দিন সকালেই নিকটবর্তী পাহাড়ে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১৮ ডিগ্রি আর নিচে মাইনাস ৩৭ ডিগ্রি। আমাদের ডিন মহাশয় ভোর বেলায় তার কুকুরকে ঘোরাতে পাহাড়ের ওপরের দিকে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের নিচের দিকে এসে পড়েছিলেন মহা ফাঁপরে। সে কুকুর নাকি ঠান্ডা ছেড়ে যেতে চায় না আর ডিনের পরনে মাইনাস ১৮ এর জন্য উপযুক্ত গরমের জামাকাপড় মাইনাস ৩৭ এর নয়।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন
গুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫: সত্যিই কি মায়ের দয়ায় পক্স হয়?
তো যাই হোক, আধ ঘণ্টা পরে গাড়ি ঠিক হল। ঠিক হওয়ার পরে আমাকে ওরায়ন দেখালো যে গাড়ি রাখার জায়গায় প্রচুর চার্জ দেওয়ার জায়গা, সাধারণ পাওয়ার আউটলেট। ওরায়ন অবশ্য ব্যাপারটা আমায় আগেই বিমান বন্দরে গাড়ি দেওয়ার সময়ই জানিয়েছিল। এখানে তো খুব ঠান্ডা। কাজেই গাড়ির ব্যাটারি খুব তাড়াতাড়ি নিঃশেষ হয়ে যায়।
ঠিক যেমন আমার হয়েছিল খানিক আগে এবং যার কারণে এতো ভোগান্তি। তাই গাড়িকে সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখতে হয় মুঠোফোনের মতো। আর তার গাড়ির ইঞ্জিনের সামনে থেকে একটি তারও বেরিয়ে আছে যেটাকে কিনা ওই পাওয়ার আউটলেটে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। তবে সেটা বেশ ছোট। তবে তার ব্যবস্থাও আছে। গাড়ির পেছনেই আরেকটি লম্বা তার রাখা আছে। ওই লম্বা তারের সঙ্গে জুড়ে গাড়িকে চার্জ বসানো গেল।
ঠিক যেমন আমার হয়েছিল খানিক আগে এবং যার কারণে এতো ভোগান্তি। তাই গাড়িকে সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখতে হয় মুঠোফোনের মতো। আর তার গাড়ির ইঞ্জিনের সামনে থেকে একটি তারও বেরিয়ে আছে যেটাকে কিনা ওই পাওয়ার আউটলেটে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। তবে সেটা বেশ ছোট। তবে তার ব্যবস্থাও আছে। গাড়ির পেছনেই আরেকটি লম্বা তার রাখা আছে। ওই লম্বা তারের সঙ্গে জুড়ে গাড়িকে চার্জ বসানো গেল।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।