বরফে ঢাকা আমার কমপ্লেক্সের গাড়ি রাখার জায়গা।
উড়ান থেকে সমস্ত বাক্স-প্যাটরা বের হতে সেসব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারই মধ্যে দু’ তিন জন যাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হল। তাঁরা সবাই এই অঞ্চলেরই বাসিন্দা। অন্যান্য জায়গায় চাকরি করে। খ্রিস্টমাস ইভ-এ বাড়ি ফিরছেন। কেউ না কেউ নিতে আসছে তাঁদের। কারও মেয়ে আসছেন মাকে নিতে, আবার কারও বা মা-বাবা আসছেন ছেলে-মেয়েকে নিতে।
সবার মধ্যেই বেশ একটা খুশির আমেজ। তাঁদের কাছ থেকেই শুনলাম যে, এরকম তুষারপাত এর আগে কখনও এখানে হয়নি। এর আগে ১৯৯৬ সালে একবার অনেক বরফ পড়েছিল, তাও এবারের থেকে অনেক কম। আর সেটা ছাড়া সকলেই শুনেছে ১৯৩৭ সালে নাকি একবার এরকম হয়েছিল। সেটা নাকি এর থেকেও বেশি। আমার শুনেই একটু ভয় ভয় লাগলো। একেই এতো শীত, তাতে কী করে থাকবো বুঝতে পারছি না, তার ওপরে আবার এই সব।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-২: এই প্রথম বার মনে হল জীবন কঠিন হতে চলেছে, তাই মনে মনে প্রস্তুত হতে শুরু করলাম
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩: টক খেওনা ধরবে গলা
তবে ভয় পাওয়ার তখন অনেক বাকি ছিল। ওরায়ন এসে পৌঁছল প্রায় একঘণ্টা পর। সবাই তখন প্রায় বিমানবন্দর থেকে চলে গিয়েছেন। তিনি আসতেই আমি সমস্ত রকম গরমের জামা কাপড় দু-তিনটে স্টোরে চাপিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আর বেরোনোর পর-মূহূর্তেই উইসকনসিনের সঙ্গে এখানকার পার্থক্যটা পরিষ্কার গেল। উইসকনসিনে সাধারণ ভাবে কখনওই আমাকে মুখ ঢাকতে হত না ঠান্ডা থেকে বাঁচতে। এখানে বেরিয়েই মনে হল যেন ঠোঁট আর গাল জমে যাচ্ছে। আন্দাজ করেছিলাম এরকম কিছু হতে পারে। সঙ্গে একটি গরমের মাস্ক ছিল। সেটা পরে নিলাম।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২১: কে তুমি নিলে আমার চিরসবুজের ‘অগ্নিপরীক্ষা’
ইংলিশ টিংলিশ: জেনে নাও Unseen Comprehension এ কীভাবে পাবে ফুল মার্কস এবং পড়বে কোন Phrasal Verbগুলো
কিন্তু তাতে সমস্যা হল চশমায়। প্রথম বার নিঃশ্বাস ফেলেছি কি ফেলিনি চশমা তা ঢেকে গেল ভাপে। এটা সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস যেকোনও ঠান্ডার জায়গায়। কিন্তু এখানে আরও বড় সমস্যা হল ওই চশমার ওপরে ওই বাষ্প ঠান্ডায় জল নয় বরফ হয়ে জমে যাচ্ছিল আর তাতে সমস্যা হল এই, যে কয়েক সেকেন্ড পরেই তাকে আর কাপড় দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। হয় মাস্ক না হলে চশমা। কি আর করা। এই ঠান্ডার দুনিয়ায় মুখের ঢাকা তো আর খোলা যাবে না। চশমাই খুলে রাখতে হল। কোনও রকমে বাক্স পেটরা গাড়িতে তোলা গেল।
একটি গাছ ভেঙে পড়েছে বরফের চাপে।
এরপরেই শুনলাম আরও সাংঘাতিক ব্যাপার। এই যে গাড়িটা ওরায়ন আমাকে দিচ্ছেন এটা বিশেষত তার ‘সামার-কার’। মানে সে মূলত এই গাড়িটা গরমকালেই ব্যবহার করে যখন কোনও বরফ থাকে না। আর তাই জন্য তাতে কোনও স্নো-টায়ার লাগানো নেই। সেই জন্যই আসার পথে সেটা পিছলে গিয়েছিল। আর তার ওপরে এই গাড়িটা ১৯৮৫ সালের তৈরি। অর্থাৎ আমার জন্মের ও আগেকার। আমি তাঁকে মুখে বললাম বটে কোনও সমস্যা নেই, তবে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে মনে মনে বেশ ভয়ও পেলাম। এর আগে উইসকনসিনে সামান্য বরফের ছোট একটি দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই হয়েছে। কাজেই এখানে যে আর কী কী হতে পারে সেই ভেবেই আমি আকুল।
আরও পড়ুন:
স্বাদে-গন্ধে: সামনেই জন্মদিন? বিশেষ দিনের ভূরিভোজে বানিয়ে ফেলুন কাশ্মীরি পদ মটন রোগান জোস!
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৩: সবুজের নেশায় অভয়ারণ্য
বলা যায় একরকম ভয়ে ভয়েই উঠে বসলাম চালকের আসনে। উঠে প্রথমেই দেখলাম যে গাড়ির গিয়ারটা ফোর-হুইল-ড্রাইভ-এ লাগানো আছে কিনা। অর্থাৎ গাড়ির এক্সেলারেটর চাপলে সব চাকাতেই বল প্রয়োগ হবে গাড়ি চলার জন্য। সেই সুবিধাটি এই গাড়িতে আছে দেখে ওরই মধ্যে একটু নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। অবশ্য এই সুবিধাটি এখানকার প্রায় সমস্ত গাড়িতেই থাকে। কারণ টু-হুইল-ড্রাইভ (অর্থাৎ শুধু পেছনের চাকায় বল প্রয়োগ হবে এবং একটি শ্যাফেটর সাহায্যে সামনের চাকাটিও ঘুরবে) হলে এই বরফের রাস্তায় গাড়ি যেকোনও সময়ে পিছলে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৯: গুরুদেবের দেওয়া গুরুদায়িত্ব
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৪: যেখানে অর্জিত ভক্তি ও বিশ্বাস আছে, সেখানেই ভগবান আছেন
তা ছাড়া ওরায়নের এই গাড়িটি আসলে একটি বড় পিকআপ ট্রাক। মানে এর পেছনে জিনিস পত্তর ওঠানো-নামানোর জন্য জায়গা আছে। আমাদের দেশে যেমন লরি চলে, এটা তার থেকে খানিকটা ছোট। তবে মূল নকশাটি একই রকম। আর এই গাড়িগুলো যেহেতু হেভি ডিউটি অর্থাৎ ভারী কাজকর্মের জন্যই ব্যবহার হয় এতে ওই ফোর-হুইল-ড্রাইভ-এর সুবিধাটি সাধারণত থাকে। এর পরেই শিখে নিলাম গাড়ির গরম রাখার জন্য হিটার আর কাঁচে জল বা হালকা বরফ পরিষ্কারের জন্য ওয়াইপারের কার্য প্রণালী। ১৯৮৫এর গাড়ি, সব কিছু একটু আলাদা রকমের।
ছবি : লেখক
ছবি : লেখক
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com