মেরুজ্যোতির ম্যাজিক। ছবি: অঙ্কনা চৌধুরী।
শীতকালে রোজই অরোরাল ওভাল বা মেরুজ্যোতিকে দেখি, তবুও তাকে দেখার সাধ মেটে না। গোপন প্রেমিকার মতোই সে যেন রোজ কিছুক্ষণের জন্য দেখা দিয়েই চলে যায়। রোজই ইচ্ছা করে তাকে ধরে রাখতে। তবু তার সেই সবুজ, প্রাণ চঞ্চল, সর্পিল গতিকে রুদ্ধ করতে পারে এমন সাধ্য কোনও প্রেমিকের আছে? সে কাউকে ধরা দেয় না। পবিত্র দেবদাসীর মতো সে প্রতিদিন শুধু একবার করে সামনে আসে তুচ্ছ, নগন্য মনুষ্যকুলের চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন করার জন্য। আর তারপরেই সৃষ্টিকর্তা বিধাতার চরণে সে লুটিয়ে পড়ে দূরে-এ-এ-এ-এ মহাবিশ্বের অন্য কোনও প্রান্তে, কোনও এক মন্দিরের গহীন কোণে।
মেরুজ্যোতিকে দেখা যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি। যখন সে সর্পিল গতিতে মহাকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যায় সমস্ত বুকের মধ্যে যেন এক শিহরণ খেলে যায়। বিধাতার ওপরে হয়তো একটু অভিমান হয় তাকে সেই মন্দিরের গহীন কোণে আটকে রাখার জন্য। কিন্তু, পরক্ষণেই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নত হয়ে আসে আমাকে পৃথিবীর এই প্রান্তে নিয়ে আসার জন্য। তাকে রোজ একবার করে অন্তত দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-২৪: মেরুজ্যোতি আলাস্কাবাসীর প্রেম
এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-২: রাজমালা অনুসারে রত্ন মাণিক্যের পিতা হলেন ডাঙ্গর ফা, তিনিই ধর্ম মাণিক্য
মেরুজ্যোতি দেখতে পাওয়া যায় গোটা ফেয়ারব্যাঙ্কস শহর থেকেই। এই শহর সৌরমণ্ডলের ‘অরোরাল ওভাল’। অর্থাৎ মহাকাশে যেখান থেকে মেরুজ্যোতি উৎপন্ন হয় ঠিক তার নিচে অবস্থিত এই ফেয়ারব্যাঙ্কস। তাই শহরের সব জায়গা থেকেই মেরুজ্যোতি দেখা যায়। তবে একদম শহরের কেন্দ্রস্থলে চতুর্দিকে আলো বেশি থাকার জন্য একটু আবছা দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৪: নারী দিবস ও শিবরাত্রি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮২: রবীন্দ্রনাথ সাহেব-শিক্ষকদের কাছেও পড়েছেন
মেরুজ্যোতি সবচেয়ে ভালো দেখা যায় শহরের কাছাকাছি ছোট ছোট পাহাড়গুলোর ওপর থেকে। যেমন ক্লিয়ারি সামিট, মার্ফি ডোম, উইকারশ্যাম ডোম। এই জায়গাগুলো ফেয়ারব্যাঙ্কস শহর থেকে ২০-২৫ মিনিট দূরত্বে একটু উঁচু পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত। একটু উঁচুতে হওয়ার জন্য জায়গাগুলোর চারিদিক পুরো খোলা থাকে। যাকে আমরা বলি ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ। এই সমস্ত জায়গায় গোটা আকাশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত জুড়ে দেখা যায় মেরুজ্যোতি। তবে এসব জায়গায় যাওয়ার রাস্তা কিন্তু পুরো বরফের তলায় থাকে শীতকালে।
লেকের পাড়ে। ছবি: অঙ্কনা চৌধুরী।
মেরুজ্যোতি দেখার জায়গা বলে সেরকম কোনও আলাদা করে রক্ষণাবেক্ষণ কিছু তেমন হয় না। তাই যখন যেতে হয় তখন একটু উঁচু গাড়ি (এসইউভি বা ট্রাক), অল হুইল ড্রাইভ এবং বরফের ওপর চালানোর জন্য বিশেষ টায়ার (স্নো-টায়ার) থাকা বাঞ্চনীয় নিরাপত্তার খাতিরে। এছাড়া শহরের কাছেই আছে একটা হ্রদ, চেনা লেক। সেখানে গেলেও খোলা হ্রদের ওপরেও অনেকটা খোলা আকাশ পাওয়া যায় মেরুজ্যোতি দেখার জন্য।—চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।