ওয়ালমার্টের সামনে বরফে বসে গিয়েছে শপিং কার্টগুলো।
আমি ফেয়ারব্যাঙ্কস এসে পৌঁছলাম ক্রিসমাস ইভ-এর দিন। ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ, ২০২১। এই সময় এখানে প্রায় সারাক্ষণই রাত। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ সূর্যোদয় আর বিকেল আড়াইটে নাগাদ সূর্যাস্ত। এর সঙ্গে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের আগে পরে আরও আধঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাদ দিলে পুরোটাই রাত।
আমার উদ্যেশ্য ছিল এমত মেরুদেশীয় রাতে, সুমেরুর বুকে সান্তাক্লজের শহরে কাটাবো ক্রিসমাস। এখান থেকে মাত্র ২০ মাইল দক্ষিণে নর্থপোল শহর, যাকে বলা হয় সান্তাক্লজ-ভিলেজ। মনে মনে ভেবেছিলাম আকাশ জুড়ে থাকবে মেরুজ্যোতি (নর্দার্ন লাইট বা অরোরা বোরিয়ালিস), আর তার তলায় সান্তার সঙ্গে একটা নিজস্বী তুলে শেষ করবো ২০২১ সাল। কিন্তু ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল অন্য রকম বা হয়তো প্রকৃতির খেয়াল, যাতে ঈশ্বরের ও কোনও হাত নেই।
আমার উদ্যেশ্য ছিল এমত মেরুদেশীয় রাতে, সুমেরুর বুকে সান্তাক্লজের শহরে কাটাবো ক্রিসমাস। এখান থেকে মাত্র ২০ মাইল দক্ষিণে নর্থপোল শহর, যাকে বলা হয় সান্তাক্লজ-ভিলেজ। মনে মনে ভেবেছিলাম আকাশ জুড়ে থাকবে মেরুজ্যোতি (নর্দার্ন লাইট বা অরোরা বোরিয়ালিস), আর তার তলায় সান্তার সঙ্গে একটা নিজস্বী তুলে শেষ করবো ২০২১ সাল। কিন্তু ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল অন্য রকম বা হয়তো প্রকৃতির খেয়াল, যাতে ঈশ্বরের ও কোনও হাত নেই।
সে যাই হোক আসার দিন কয়েক আগেই আবহাওয়ার ওয়েবসাইটে লক্ষ্য করলাম আলাস্কার অন্তর্বর্তী এলাকায় চলছে তুমুল তুষার ঝড়। একটার পর একটা ঝড়ের পূর্বাভাস। চলেছে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু গোটা ব্যাপারটাকে আমি তখন অত পাত্তা দিইনি। এমন পূর্বাভাস তো কতই আসে। এর আগে লুইসিয়ানায় বন্যা, হারিকেন, উইসকনসিনে পোলার ভর্টেক্স, টর্নেডো সব কিছুই দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু যত যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্রীয় তৎপরতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দৌলতে গাড়ি চলাচলের রাস্তা কখনওই একদিন কি বড়োজোর দু’দিনের বেশি খারাপ অবস্থায় দেখিনি। তাও সে খারাপ মানে চলাচলের অযোগ্য বলা যায় না। একটু সাবধানে চালালেই সে সমস্যার সমাধান হয়।
আরও পড়ুন:
পর্ব-১: পৃথিবী খ্যাত ডালটন হাইওয়ে এই শহরকে ছুঁয়েছে আর্কটিক বৃত্ত তথা উত্তরমেরুর সঙ্গে
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-২: প্রসঙ্গ ছত্তিসগড়
আমি বরং একটু বেশি চিন্তিত ছিলাম অন্য একটি ব্যাপারে। ২৪ ডিসেম্বর এখানে সারা দেশেই বেশিরভাগ দৈনন্দিন কৃত্যক (সার্ভিস) এবং সরকারী বেসরকারি প্রায় সমস্তরকম নিয়মিত ব্যবসায়িক কর্মসূচি বন্ধ থাকে। তাই চিন্তা ছিল যে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি যাওয়ার উপায় কি হবে। সে চিন্তার অবসান হয়েছিল আমার বিভাগেরই এক সহকর্মী অধ্যাপক ওরায়নের তৎপরতায়। সে বলেছিল তার একটি পুরোনো গাড়ি বিমানবন্দরে এসে আমাকে দিয়ে যাবে ব্যবহার করার জন্য। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলা ছিল। কিছু না পাওয়া গেলে সেখানকারই কোনও ছাত্র এসে তুলে নিয়ে যাবে। অতএব, উড়ানে সারা পথ আমি বেশ নিশ্চিন্তই ছিলাম। শিকাগো থেকে এঙ্কোরেজ প্রায় সাত ঘণ্টা। আর সেখান থেকে আরও ৪৫ মিনিট উড়ানে পৌঁছলম ফেয়ারব্যাঙ্কস।
ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস: বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তা।
চিন্তার সূত্রপাত হল ঠিক তখন থেকেই। উড়ান এসে ফেয়ারব্যাঙ্কস বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই দেখলাম মুঠোফোনে চারপাঁচটি মেসেজ, ওরায়ন অর্থাৎ আমার সহ অধ্যাপকের নম্বর থেকে। তার পৌঁছতে অন্তত পক্ষে আধঘন্টা দেরি হবে কারণ তার গাড়িটি পিছলে গিয়ে রাস্তার ধারে বরফে ফেঁসে গিয়েছে। সেখান থেকে বের করে আসতে দেরি হবে। সঙ্গে এটাও যোগ করা যে, এরকম অবস্থা তার গত তিরিশ বছরে কখনও হয়নি।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৮: খোকা নয়, খুকি নয়
স্বাদে-গন্ধে: মুরগির ঝোল কিংবা ঝাল নয়, এবার বানিয়ে ফেলুন দই মুরগি
শেষ যখন তার গাড়ি এমন বসে গিয়েছিল, তখন সে কলেজে পাঠরত। রাস্তার অবস্থা নাকি এত খারাপ যে, গাড়ি চালানো মুশকিল। এ বার আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। ইন্টারনেটের দৌলতে ফেয়ারব্যাঙ্কস-এর শীতকালীন রাস্তার কথা আগেই পড়েছিলাম। আর এই সাম্প্রতিক তুষারঝড়ের কথাও পড়েছি। যদিও পাত্তা দিইনি।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৮: মাছের ডিম বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়! মাছের ডিমের এই অবাক করা গুণের কথা জানতেন?
ডায়াবিটিস ধরা পড়েছে? হার্ট ভালো রাখতে রোজের রান্নায় কোন তেল কতটা ব্যবহার করবেন? দেখুন ভিডিয়ো
কিন্তু এবার মনে হল সত্যিই হয়তো পাত্তা দিতে হতো। কারণ, ওরায়ন এই আলাস্কার বুকেই রয়েছে প্রায় আজন্ম। সে বরফের ওপর গাড়ি চালানোর খুঁটিনাটি সব কিছুই জানে। বলাই বাহুল্য আমার থেকে অনেক অনেক বেশি জানে। কাজেই তারই যখন এমন অবস্থা হয়েছে, আমি আর কোথাকার কে! প্রথম বারের জন্য আমার মনে হল যে জীবন কঠিন হতে চলেছে। তাই মনে মনে প্রস্তুত হতে শুরু করলাম উড়ান থেকে নেমেই।—চলবে
ছবি: লেখক
ছবি: লেখক
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.co
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।