আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেখা যাচ্ছে ডেনালি পর্বতমালা।
প্রায় প্রতিদিনই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। কখনও বাড়িতে ইন্টারনেটের বন্দোবস্ত করার জন্য, কখনও কিছু জিনিস কেনার জন্য বা বিভিন্ন রকম কাজে। সমস্ত রকম সতর্কবাণী উপেক্ষা করেই বেরিয়েছি। হয়তো না বেরোলেও চলতো, কিন্তু তবুও বেরিয়েছি নিজেকে আর একটু খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য। ওই স্নো টায়ার ছাড়া গাড়ি নিয়েই বেরিয়েছি। পঞ্চান্ন মাইল প্রতি ঘণ্টার গাড়ি চালাতে হচ্ছিল দশ কি বড়জোর পনেরো মাইল প্রতি ঘণ্টায়। কারণ বরফে যেকোনও সময় গাড়ি পিছলে যেতে পারে।
তবুও যাচ্ছিলাম সব জায়গাতেই। এখানেই যে থাকতে হবে আমাকে এখন! কাজেই প্রথমেই সমস্ত কিছু অভিজ্ঞতা করে নেওয়া ভালো (বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: এটা কিন্তু পুরোপুরি আমার নিজের মত। এসব উটকো বেয়াড়া কাজ কিন্তু জীবনে না করলেও চলে। এবং, তাতে কিচ্ছুটি যায় আসে না)। তবে সত্যি কথা বলতে কি, প্রথম দিনের ওই অভিজ্ঞতার কাছে অন্যগুলো আর তেমন কিছু নয়। তাছাড়া এরপর থেকে যতদিন ওই রকম সতর্কতা জারি ছিল, গাড়ি নিয়ে যেটুকু কাজ করার সবটুকু ওই বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টের মধ্যেই করে নিয়েছি। দিনের আলো থাকতে থাকতেই।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১০: ব্যস্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে কোথায় যেন চলে এলাম উত্তরমেরুর জনমানবহীন এই জঙ্গলে, যেখানে এখন শুধুই রাত
জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৪: কাশীর পথে-ঘাটে
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১২: বাইগা রিসর্ট ও বস্তি
ওই সময়েই দেখেছি রাস্তার ধারে কনিফার গাছ প্রচুর ভেঙে পড়েছে। তবে ঝড়ের দাপটে নয়। এই গাছগুলি প্রচণ্ড গতিবেগের ঝড়ও সামলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া এই ঝড়ের গতিবেগ তেমন ছিলও না। কিন্তু গাছ ভেঙে পড়ছিলো স্রেফ বরফের চাপে। গাছের ডালে বা পাতায় বরফ জমে এমন ভারী হয়ে যাচ্ছে যে গাছগুলো ভেঙে যাচ্ছে। কখনও বা গাছের তলায় বরফ জমতে জমতে নিচের দিকে গাড়ির কাছে এমন চাপ দিচ্ছে তাতেও ভেঙে পড়ছে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৬: কবির ভালোবাসার পশুপাখি
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৮: ড. হীরালাল চৌধুরীর আবিষ্কার আজও পোনামাছ চাষীদের কাছে এক পরম আশীর্বাদ
স্বাদে-আহ্লাদে: চিকেন প্রিয়? তাহলে এমন হায়দরাবাদি চিকেনে জমিয়ে দিন দুপুর
আমার ঘরের ঠিক সামনের গাছটিও ভেঙে গিয়েছে মাথা থেকে বেশ কিছুটা। আবার কিছু গাছ একদম নিচ থেকেই ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু চারিদিকে বরফের উঁচু শক্ত বেষ্টনী বা দেওয়াল থাকায় পড়ে যায়নি। ওই বেষ্টনীতেই ঠেস দিয়ে হেলে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু জায়গায় গাছ পড়ে গিয়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। সে-সব অঞ্চলে ঘরের মধ্যে লোকে হিটার চালাতে পারছে না এই ঠান্ডায়। সে দুর্গতির এক শেষ।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪: পঞ্চমকে সিনেমা হলে বসিয়েই বেরিয়ে যান রীতা
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১২: ঘাম কমাতে পাউডার ব্যবহার করেন?
অন্য কোথাও হলে রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সব জিনিসের ছবি তোলা যেত। কিন্তু এখানে রাস্তার ধার মানেই প্রচুর বরফ। আর তার মধ্যে চাকা ফেঁসে গেলেই আবার প্রথম দিনের অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে। নেড়া কি আর সব জেনে শুনে আবার বেলতলায় যায়। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন বরফ বোঝাই হয়ে আছে যে, দেখে বোঝাই যাচ্ছে না যে কোনটা রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা।
পার্কের মধ্যে থাকা এই জাহাজটি ডুবে গিয়েছে বরফে।
তারই মধ্যে যখন মাঝে মধ্যে একটু বুঝতে পারছিলাম, সেখানে দাঁড়িয়ে একটা দুটো ছবি তুলছিলাম। তবে ওই মাইনাস ৩৬ বা মাইনাস ৩৭ এ ছবি তোলার জন্য হাত বের করতেও সমস্যা হচ্ছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দু’ একটি ছবি তুলতে না তুলতেই হাত অসাড় হয়ে যাচ্ছিল। আর ওই ঠান্ডায় মুঠোফোনের ব্যাটারিও শেষ হয়ে যায় খুব দ্রুত। মাঝে মধ্যে ব্যাটারি ঠিক থাকলেও পর্দাটি বন্ধ হয়ে কিছু দেখা যাচ্ছিল না।—চলবে
ছবি: লেখক
ছবি: লেখক
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com