রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ ও দিনেন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথের পৌত্র দিনেন্দ্রনাথ। তাঁর পিতা দ্বিপেন্দ্রনাথ। মাতা সুশীলা দেবী মারা গিয়েছিলেন অকালে। তখন দিনেন্দ্রনাথের বছর আটেক বয়েস। ওই শৈশব-বাল্যেই সংগীতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ গড়ে উঠেছিল। ইন্দিরা দেবীর লেখায় আছে, তিন বছর বয়েস থেকেই গান গাইতেন তিনি। দিনেন্দ্রনাথের মা সুশীলা দেবীও ভালো গান গাইতে পারতেন। নাটকেও অভিনয় করতেন। ঠাকুরবাড়িতে নাট্যাভিনয় তো লেগেই থাকত ! ‘বিবাহ উৎসব’ নামে একটি নাটক অভিনীত হয়েছিল। সে-নাটকে পুরুষ-চরিত্র অভিনয় করেছিলেন সুশীলা।
দিনেন্দ্রনাথের উপর অকালপ্রয়াত মায়ের প্রভাব সবথেকে বেশি। শুধু গান নয়, ভালো পিয়ানোও বাজাতেন তিনি। চার বছর বয়েসে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পিয়ানো-বাদনে পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। সংগীত ছিল তাঁর রক্তে, প্রাণে। ব্যারিস্টার হতে বিলেতে গিয়ে পাশ্চাত্য সংগীতে, সাহিত্যে পারঙ্গম হয়ে দেশে ফিরেছিলেন। ব্যারিস্টার হওয়া হয়নি, ও-জগৎ তাঁর নয়, সংগীতেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রাণের আনন্দ। সে-আনন্দ পূর্ণতা পেয়েছিল শান্তিনিকেতনে। বিবাহোত্তর জীবনে তিনি শান্তিনিকেতনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন ব্রহ্মচর্যাশ্রমে, সংগীত বিভাগে, অধ্যাপকপদে।
আশ্রম-বিদ্যালয় দিনেন্দ্রনাথের আন্তরিক চেষ্টায় প্রাণরসে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল। গানে গানে, প্রাণে প্রাণে ভালোবাসার এক অদৃশ্য রাখি বুঝি বাধা হয়ে গিয়েছিল! মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী কমলা দিনেন্দ্রনাথের সমস্ত রচনা একত্রে একখণ্ডে প্রকাশ করেছিলেন, সে-বইতে যুক্ত হয়েছিল বেশ কয়েকটি স্মৃতিচর্চাও। বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দিনেন্দ্রনাথ প্রয়াণের পর শান্তিনিকেতনের মন্দিরে তাঁর স্মরণে যে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল, সে-অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন, বক্তব্যও রেখেছিলেন। সে-বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল দিনেন্দ্রনাথের সুগভীর ভূমিকার কথা। কবি বলেছিলেন, ‘প্রথম যখন এখানে এসেছিলাম, তখন চারদিকে ছিল নীরস মরুভূমি —আমার পিতৃদেব কিছু শালগাছ রোপণ করেছিলেন, এছাড়া তখন চারিদিকে এমন শ্যামশোভার বিকাশ ছিল না। এই আশ্রমকে আনন্দনিকেতন করবার জন্য তরুলতার শ্যামশোভা যেমন, তেমনি প্রয়োজন ছিল সংগীতের উৎসবের। সেই আনন্দ উপচার সংগ্রহের প্রচেষ্টায় প্রধান সহায় ছিলেন দিনেন্দ্র। এই আনন্দের ভাব যে ব্যাপ্ত হয়েছে, আশ্রমের মধ্যে সজীবভাবে প্রবেশ করেছে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চারিত হতে চলেছে, এর মূলেতে ছিলেন দিনেন্দ্র।… দিনেন্দ্রের দান এই যে আনন্দের রূপ, এ তো যাবার নয়—যতদিন ছাত্রদের সংগীতে এখানকার শালবন প্রতিধ্বনিত হবে, বর্ষে বর্ষে নানা উপলক্ষ্যে উৎসবের আয়োজন চলবে, ততদিন তাঁর স্মৃতি বিলুপ্ত হতে পারবে না, ততদিন তিনি আশ্রমকে অধিগত করে থাকবেন; আশ্রমের ইতিহাসে তাঁর কথা ভুলবার নয়।’
দিনেন্দ্রনাথের উপর অকালপ্রয়াত মায়ের প্রভাব সবথেকে বেশি। শুধু গান নয়, ভালো পিয়ানোও বাজাতেন তিনি। চার বছর বয়েসে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পিয়ানো-বাদনে পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। সংগীত ছিল তাঁর রক্তে, প্রাণে। ব্যারিস্টার হতে বিলেতে গিয়ে পাশ্চাত্য সংগীতে, সাহিত্যে পারঙ্গম হয়ে দেশে ফিরেছিলেন। ব্যারিস্টার হওয়া হয়নি, ও-জগৎ তাঁর নয়, সংগীতেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রাণের আনন্দ। সে-আনন্দ পূর্ণতা পেয়েছিল শান্তিনিকেতনে। বিবাহোত্তর জীবনে তিনি শান্তিনিকেতনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন ব্রহ্মচর্যাশ্রমে, সংগীত বিভাগে, অধ্যাপকপদে।
আশ্রম-বিদ্যালয় দিনেন্দ্রনাথের আন্তরিক চেষ্টায় প্রাণরসে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল। গানে গানে, প্রাণে প্রাণে ভালোবাসার এক অদৃশ্য রাখি বুঝি বাধা হয়ে গিয়েছিল! মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী কমলা দিনেন্দ্রনাথের সমস্ত রচনা একত্রে একখণ্ডে প্রকাশ করেছিলেন, সে-বইতে যুক্ত হয়েছিল বেশ কয়েকটি স্মৃতিচর্চাও। বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দিনেন্দ্রনাথ প্রয়াণের পর শান্তিনিকেতনের মন্দিরে তাঁর স্মরণে যে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল, সে-অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন, বক্তব্যও রেখেছিলেন। সে-বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল দিনেন্দ্রনাথের সুগভীর ভূমিকার কথা। কবি বলেছিলেন, ‘প্রথম যখন এখানে এসেছিলাম, তখন চারদিকে ছিল নীরস মরুভূমি —আমার পিতৃদেব কিছু শালগাছ রোপণ করেছিলেন, এছাড়া তখন চারিদিকে এমন শ্যামশোভার বিকাশ ছিল না। এই আশ্রমকে আনন্দনিকেতন করবার জন্য তরুলতার শ্যামশোভা যেমন, তেমনি প্রয়োজন ছিল সংগীতের উৎসবের। সেই আনন্দ উপচার সংগ্রহের প্রচেষ্টায় প্রধান সহায় ছিলেন দিনেন্দ্র। এই আনন্দের ভাব যে ব্যাপ্ত হয়েছে, আশ্রমের মধ্যে সজীবভাবে প্রবেশ করেছে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চারিত হতে চলেছে, এর মূলেতে ছিলেন দিনেন্দ্র।… দিনেন্দ্রের দান এই যে আনন্দের রূপ, এ তো যাবার নয়—যতদিন ছাত্রদের সংগীতে এখানকার শালবন প্রতিধ্বনিত হবে, বর্ষে বর্ষে নানা উপলক্ষ্যে উৎসবের আয়োজন চলবে, ততদিন তাঁর স্মৃতি বিলুপ্ত হতে পারবে না, ততদিন তিনি আশ্রমকে অধিগত করে থাকবেন; আশ্রমের ইতিহাসে তাঁর কথা ভুলবার নয়।’
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রতিমা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ও তাঁর পত্নী কমলা দেবী
রবীন্দ্রনাথ ‘ফাল্গুনী’ নাটকটি দিনেন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন, ‘আমার সকল গানের ভাণ্ডারী।’ দিনেন্দ্রনাথ নিজেও কবিতা-গান লিখতেন। একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল। পরে সে- সব ছেড়েছুড়ে দিয়েছিলেন। নিজের কথা তিনি এক মুহূর্তের জন্যও ভাবেননি। রবীন্দ্রনাথের সংগীতে, সুর সংযোজনে ও সংরক্ষণ নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। তাঁর করা রবীন্দ্র-গানের স্বরলিপি একসময় নিয়মিত ছাপা হয়েছে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রবাসী’তে। স্বরলিপি প্রস্তুতে তাঁর আশ্চর্য দক্ষতা ছিল। অত্যন্ত দ্রুত স্বরলিপি করে ফেলতেন। একটি গান দু-একবার শুনলেই তা দিনেন্দ্রনাথের স্মৃতির খাতায় চিরমুদ্রিত হয়ে যেত। রবীন্দ্রনাথ গানের সুর মনে মনে ভেঁজে নেওয়ার পর তা অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যেতেন। তাই গানের সুর দিয়েই দিনেন্দ্রনাথের শরণাপন্ন হতেন। কখনও দিনেন্দ্রনাথকে নিজের কাছে ডাকতেন। কখনও-বা তাঁর বাড়িতে কবি নিজেই গিয়ে উপস্থিত হতেন। এসব ঘটনার সাক্ষী তেজশচন্দ্র সেন। দিনেন্দ্রনাথ প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর যে ‘দিনেন্দ্ররচনাবলী’ প্রকাশিত হয়েছিল, সে বইয়ের পরিশিষ্ট-অংশে সংকলিত তেজেশচন্দ্রের লেখায় আছে, ‘উভয়েরই (রবীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথের) পা গানের তালে তালে উঠছে পড়ছে, হাতে তুড়ি বাজছে, গানের সুর আবৃত্তির পর আবৃত্তি হচ্ছে, উভয়েরই মুখ উজ্জ্বল, চোখে আনন্দের দীপ্তি। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনছি, এক একবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছি। গান শেষ হয়ে যেত, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তখনও বসে থাকতেন—গানের কথা উঠতো, সুরের কথা উঠতো। কখনো তিনি এক একটি সুরের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতেন; স্নানের সময়, খাবারের সময় উত্তীর্ণ হয়ে যেত, যখন ঘরে ফিরতাম মন ভরে থাকতো।’
সদ্য লেখা সংগীতে কী সুর সংযোজন করলেন, তা খানিক পরেই হয়তো ভুলে যাবেন, এই আশঙ্কা থেকেই রবীন্দ্রনাথ যখন-তখন দিনেন্দ্রনাথকে ডাকতেন। স্নানঘরে অনেকেরই গান আসে। অনেকের মতো রবীন্দ্রনাথেরও গান এসেছিল। একবার বাথরুম থেকে খুব ডাকাডাকি। ব্যাপার কী, কেন কবি এভাবে ডাকছেন, সকলের মনেই বিস্ময়-প্রশ্ন! শেষে জানা গেল, কবি সুরের সন্ধান পেয়েছেন, তা হারিয়ে যাবে হতে পারে না, তাই তখনই দিনেন্দ্রনাথকে প্রয়োজন ! কবির বার্তা পেয়ে দিনেন্দ্রনাথ ছুটে এসেছিলেন। বাথরুমে বাইরে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন সেই শব্দমালা, সুরের মূর্ছনা।
গান ছিল দিনেন্দ্রনাথের প্রাণ। নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। কখনও ‘বাল্মীকি প্রতিভা’-য়, ‘বিসর্জন’-এ, কখনও বা ‘অচলায়তন’-এ। রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকীতে শান্তিনিকেতনে অভিনীত হয়েছিল ‘রাজা’। রবীন্দ্রনাথের লেখা এই নাটকেও দিনেন্দ্রনাথ অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অভিনয়-নৈপুণ্য দর্শকদের আকৃষ্ট করেছিল। আলুথালু মাথার চুল, ছেঁড়া-বিবর্ণ পোশাক-আশাকে পাগলের সাজে দিনেন্দ্রনাথ কণ্ঠে গান নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেছিলেন। গেয়েছিলেন, ‘তোরা যে যা বলিস ভাই,/ আমার সোনার হরিণ চাই।’
সদ্য লেখা সংগীতে কী সুর সংযোজন করলেন, তা খানিক পরেই হয়তো ভুলে যাবেন, এই আশঙ্কা থেকেই রবীন্দ্রনাথ যখন-তখন দিনেন্দ্রনাথকে ডাকতেন। স্নানঘরে অনেকেরই গান আসে। অনেকের মতো রবীন্দ্রনাথেরও গান এসেছিল। একবার বাথরুম থেকে খুব ডাকাডাকি। ব্যাপার কী, কেন কবি এভাবে ডাকছেন, সকলের মনেই বিস্ময়-প্রশ্ন! শেষে জানা গেল, কবি সুরের সন্ধান পেয়েছেন, তা হারিয়ে যাবে হতে পারে না, তাই তখনই দিনেন্দ্রনাথকে প্রয়োজন ! কবির বার্তা পেয়ে দিনেন্দ্রনাথ ছুটে এসেছিলেন। বাথরুমে বাইরে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন সেই শব্দমালা, সুরের মূর্ছনা।
গান ছিল দিনেন্দ্রনাথের প্রাণ। নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। কখনও ‘বাল্মীকি প্রতিভা’-য়, ‘বিসর্জন’-এ, কখনও বা ‘অচলায়তন’-এ। রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকীতে শান্তিনিকেতনে অভিনীত হয়েছিল ‘রাজা’। রবীন্দ্রনাথের লেখা এই নাটকেও দিনেন্দ্রনাথ অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অভিনয়-নৈপুণ্য দর্শকদের আকৃষ্ট করেছিল। আলুথালু মাথার চুল, ছেঁড়া-বিবর্ণ পোশাক-আশাকে পাগলের সাজে দিনেন্দ্রনাথ কণ্ঠে গান নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেছিলেন। গেয়েছিলেন, ‘তোরা যে যা বলিস ভাই,/ আমার সোনার হরিণ চাই।’
দিনেন্দ্রনাথ ও কমলা দেবী
মঞ্চে সেদিন গানে গানে সোনার হরিণ চেয়েছিলেন দিনেন্দ্রনাথ। পশুপাখিদের প্রতি তাঁর ও স্ত্রী কমলার অপরিসীম ভালোবাসা ছিল। একটি হরিণও পুষেছিলেন তাঁরা। আদরে যত্নে প্রতিপালিত হরিণটি একদিন আশ্রমের বাইরে পালিয়ে গিয়েছিল। সকলেই চিন্তিত, উৎকন্ঠিত হয়ে পড়ে। শেষে আসে তার মৃত্যুসংবাদ ! কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে! এই সংবাদ শুনে দিনেন্দ্রনাথ ও কমলা বিমর্ষ হয়ে যান। নিঃসন্তান দম্পতি খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁদের যন্ত্রণা কবি হৃদয় দিয়ে স্পর্শ করেছিলেন। সান্ত্বনা দেওয়ার তাগিদে রচনা করেছিলেন ‘সে কোন্ বনের হরিণ’ গানটি। দিনেন্দ্রনাথ ও কমলার সংসারে একটি পালিত কুকুরও ছিল। নিজেদের মতো করে তাঁরা একটি আনন্দের জগৎ তৈরি করে নিয়েছিলেন। কবির সান্নিধ্যে আনন্দ যে বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দিনেন্দ্রনাথ সুঅভিনেতাও ছিলেন। তাঁর মেদবহুল ভারী দেহ অভিনয়-নৈপুণ্যে সামান্যও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। সাহানা দেবী স্মৃতিচর্চায় আছে ‘বিসর্জন’ নাটকে রঘুপতির ভূমিকায় তাঁর চমৎকার অভিনয়ের কথা। রবীন্দ্রনাথ নিজে নাটকের কুশীলবদের শেখাতেন কীভাবে ভালো অভিনয় করতে হয় ! মনের মতো অভিনয় না হলে বারবার রিহার্সাল করাতেন। রঘুপতি-র ভূমিকায় কীভাবে অভিনয় করবেন, দিনেন্দ্রনাথকে তা অবশ্য দেখিয়ে দেননি রবীন্দ্রনাথ। সাহানা দেবী লিখেছেন, ‘অভিনয় ক্ষমতা ওর দেখেছিলাম সহজাত। … দিনুদার অভিনয়ের রবীন্দ্রনাথ খুব প্রশংসা করতেন।’
‘বিসর্জন’-এ রঘুপতির ভূমিকায় জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বরে দিনেন্দ্রনাথের স্পর্শময় অভিনয় আশ্রমিকদের স্মৃতিতে অনেকদিন জেগেছিল। কেউ কেউ সেই মুগ্ধতার কথা নানা স্মৃতিচর্চায় সযত্নে উল্লেখ করেছেন। আরও বেশ কয়েকটি নাটকে দিনেন্দ্রনাথ অভিনয় করেছেন। ‘ডাকঘর’, ‘তপতী’ ও ‘মায়ার খেলা’-তেও চমৎকার অভিনয় করেছিলেন। নাটকে গান থাকলে সে গান কীভাবে গাইতে হবে, তা তিনিই শেখাতেন। ‘চিরকুমার-সভা’-রও সংগীত-পরিচালক ছিলেন তিনি।
দিনেন্দ্রনাথ সচেতনভাবে বোধহয় তাঁর কবিতা লেখা, অভিনয়ের কথা ভুলে থাকতে চেয়েছিলেন। নিজের কবিতা লেখা বা অভিনয় নিয়ে তাঁর সামান্যও মাথাব্যথা ছিল না। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন জীবনের ধ্রুবতারা। তাঁর সংগীতে দিনেন্দ্রনাথ নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। এটেই ছিল তাঁর আনন্দ, এতেই মুক্তি।
ছবি সৌজন্যে: লেখক
* গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি (tagore-stories – Rabindranath Tagore) : পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Parthajit Gangopadhyay) অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্যে ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা, ডি-লিট অর্জন। শিশুসাহিত্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। ছোটদের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। সম্পাদিত বই একশোরও বেশি।
দিনেন্দ্রনাথ সুঅভিনেতাও ছিলেন। তাঁর মেদবহুল ভারী দেহ অভিনয়-নৈপুণ্যে সামান্যও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। সাহানা দেবী স্মৃতিচর্চায় আছে ‘বিসর্জন’ নাটকে রঘুপতির ভূমিকায় তাঁর চমৎকার অভিনয়ের কথা। রবীন্দ্রনাথ নিজে নাটকের কুশীলবদের শেখাতেন কীভাবে ভালো অভিনয় করতে হয় ! মনের মতো অভিনয় না হলে বারবার রিহার্সাল করাতেন। রঘুপতি-র ভূমিকায় কীভাবে অভিনয় করবেন, দিনেন্দ্রনাথকে তা অবশ্য দেখিয়ে দেননি রবীন্দ্রনাথ। সাহানা দেবী লিখেছেন, ‘অভিনয় ক্ষমতা ওর দেখেছিলাম সহজাত। … দিনুদার অভিনয়ের রবীন্দ্রনাথ খুব প্রশংসা করতেন।’
‘বিসর্জন’-এ রঘুপতির ভূমিকায় জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বরে দিনেন্দ্রনাথের স্পর্শময় অভিনয় আশ্রমিকদের স্মৃতিতে অনেকদিন জেগেছিল। কেউ কেউ সেই মুগ্ধতার কথা নানা স্মৃতিচর্চায় সযত্নে উল্লেখ করেছেন। আরও বেশ কয়েকটি নাটকে দিনেন্দ্রনাথ অভিনয় করেছেন। ‘ডাকঘর’, ‘তপতী’ ও ‘মায়ার খেলা’-তেও চমৎকার অভিনয় করেছিলেন। নাটকে গান থাকলে সে গান কীভাবে গাইতে হবে, তা তিনিই শেখাতেন। ‘চিরকুমার-সভা’-রও সংগীত-পরিচালক ছিলেন তিনি।
দিনেন্দ্রনাথ সচেতনভাবে বোধহয় তাঁর কবিতা লেখা, অভিনয়ের কথা ভুলে থাকতে চেয়েছিলেন। নিজের কবিতা লেখা বা অভিনয় নিয়ে তাঁর সামান্যও মাথাব্যথা ছিল না। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন জীবনের ধ্রুবতারা। তাঁর সংগীতে দিনেন্দ্রনাথ নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। এটেই ছিল তাঁর আনন্দ, এতেই মুক্তি।
ছবি সৌজন্যে: লেখক
* গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি (tagore-stories – Rabindranath Tagore) : পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Parthajit Gangopadhyay) অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্যে ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা, ডি-লিট অর্জন। শিশুসাহিত্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। ছোটদের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। সম্পাদিত বই একশোরও বেশি।