গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি আঁকতেন। তাঁর সন্তান-সন্ততিরাও ছবি আঁকায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ দুই ভ্রাতৃদ্বয়ের ছবি-আঁকার খ্যাতি তো পৃথিবীব্যাপী!
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুই ধারার শিল্পরীতির আশ্চর্য ব্যবহার গগনেন্দ্রনাথের ছবিতে দেখা যায়। কখনও তিনি দেশজ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। আবার কখনও জাপানি ওয়াশ-পদ্ধতি। কার্টুনিস্ট হিসাবেও তিনি খ্যাতির অধিকারী। গ্রন্থচিত্রণেও তাঁর হাতে নতুনতর দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ‘জীবনস্মৃতি’ চিত্রিত করেছিলেন। ‘রক্তকরবী’রও প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। গগনেন্দ্রনাথের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’। মঞ্চসজ্জাতেও নতুনত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। ছোটদের কথা ভেবে একটি বই লিখেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ। চিরায়ত-চিরকালীন সে-বইটির নাম ‘ভোঁদড় বাহাদুর’ হিসেবেই সকলে জানেন। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, ‘ভোঁদড় বাহাদুর’ নামে নয়, ‘দাদাভায়ের দেয়ালা’ নামে বইটি লেখা হয়েছিল। ‘ভোঁদড় বাহাদুর’-এর আদি পাঠ ‘দাদাভায়ের দেয়ালা’ও বই হয়ে বেরিয়েছে।
দিনভর ছিল গগনেন্দ্রনাথের ব্যস্ততা। শিল্পকলার চর্চা। মঞ্চ সাজানো। কুটির শিল্পের প্রচার ও প্রসারে সক্রিয়তা। সাহিত্য-রচনা। ব্যস্ততার শেষ ছিল না তাঁর! গগনেন্দ্রনাথের মনে জমা ছিল গভীর স্বাদেশিকতাবোধ। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে যাঁরা জীবনপণ লড়াই করেছিলেন, নানাভাবে তাঁদেরও তিনি সাহায্য করতেন। মোহনলালের লেখা থেকে জানা যায়, আলিপুর বোমা-মামলার রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে জেলের ভেতরে গুলি করে হত্যা করার জন্য যে পিস্তলের প্রয়োজন হয়েছিল, সে পিস্তল গগনেন্দ্রনাথ সরবরাহ করেছিলেন।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও পশুপাখিদের প্রতি গগনেন্দ্রনাথের ছিল গভীর মমতা-ভালোবাসা। তাঁর পোষা দুটি ফুটফুটে কুকুর ছিল। যা-তা কুকুর নয়, জাপানি সারমেয়। কুকুরের প্রতি গগনেন্দ্রনাথের যে আকর্ষণ- ভালোবাসা, তা হয়তো পেয়েছিলেন বাবা গুণেন্দ্রনাথের কাছ থেকে। গুণেন্দ্রনাথ পোষা কুকুরের জন্য আলাদা চাকর-মেথরও রেখে দিয়েছিলেন। তারাই কুকুরের দেখাশোনা করতো।
জাপানি শিল্পীদের সঙ্গে গগনেন্দ্রনাথের ছিল গভীর যোগাযোগ। অনেকেই তাঁর কাছে আসতেন। ছবি আঁকা শিখতেন। ওকাকুরা জাপানি ছবি ও ছবি- আঁকিয়েদের সঙ্গে গগনেন্দ্রনাথের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। জাপানি শিল্পীদের জোব্বা-পোশাক দেখে তাঁর মাথায় তেমন পোশাক বানানোর ইচ্ছে জেগেছিল। বানিয়েছিলেন নিজের জন্য, ভাইয়ের জন্য, আর রবীন্দ্রনাথের জন্যও।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুই ধারার শিল্পরীতির আশ্চর্য ব্যবহার গগনেন্দ্রনাথের ছবিতে দেখা যায়। কখনও তিনি দেশজ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। আবার কখনও জাপানি ওয়াশ-পদ্ধতি। কার্টুনিস্ট হিসাবেও তিনি খ্যাতির অধিকারী। গ্রন্থচিত্রণেও তাঁর হাতে নতুনতর দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ‘জীবনস্মৃতি’ চিত্রিত করেছিলেন। ‘রক্তকরবী’রও প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। গগনেন্দ্রনাথের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’। মঞ্চসজ্জাতেও নতুনত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। ছোটদের কথা ভেবে একটি বই লিখেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ। চিরায়ত-চিরকালীন সে-বইটির নাম ‘ভোঁদড় বাহাদুর’ হিসেবেই সকলে জানেন। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, ‘ভোঁদড় বাহাদুর’ নামে নয়, ‘দাদাভায়ের দেয়ালা’ নামে বইটি লেখা হয়েছিল। ‘ভোঁদড় বাহাদুর’-এর আদি পাঠ ‘দাদাভায়ের দেয়ালা’ও বই হয়ে বেরিয়েছে।
দিনভর ছিল গগনেন্দ্রনাথের ব্যস্ততা। শিল্পকলার চর্চা। মঞ্চ সাজানো। কুটির শিল্পের প্রচার ও প্রসারে সক্রিয়তা। সাহিত্য-রচনা। ব্যস্ততার শেষ ছিল না তাঁর! গগনেন্দ্রনাথের মনে জমা ছিল গভীর স্বাদেশিকতাবোধ। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে যাঁরা জীবনপণ লড়াই করেছিলেন, নানাভাবে তাঁদেরও তিনি সাহায্য করতেন। মোহনলালের লেখা থেকে জানা যায়, আলিপুর বোমা-মামলার রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে জেলের ভেতরে গুলি করে হত্যা করার জন্য যে পিস্তলের প্রয়োজন হয়েছিল, সে পিস্তল গগনেন্দ্রনাথ সরবরাহ করেছিলেন।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও পশুপাখিদের প্রতি গগনেন্দ্রনাথের ছিল গভীর মমতা-ভালোবাসা। তাঁর পোষা দুটি ফুটফুটে কুকুর ছিল। যা-তা কুকুর নয়, জাপানি সারমেয়। কুকুরের প্রতি গগনেন্দ্রনাথের যে আকর্ষণ- ভালোবাসা, তা হয়তো পেয়েছিলেন বাবা গুণেন্দ্রনাথের কাছ থেকে। গুণেন্দ্রনাথ পোষা কুকুরের জন্য আলাদা চাকর-মেথরও রেখে দিয়েছিলেন। তারাই কুকুরের দেখাশোনা করতো।
জাপানি শিল্পীদের সঙ্গে গগনেন্দ্রনাথের ছিল গভীর যোগাযোগ। অনেকেই তাঁর কাছে আসতেন। ছবি আঁকা শিখতেন। ওকাকুরা জাপানি ছবি ও ছবি- আঁকিয়েদের সঙ্গে গগনেন্দ্রনাথের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। জাপানি শিল্পীদের জোব্বা-পোশাক দেখে তাঁর মাথায় তেমন পোশাক বানানোর ইচ্ছে জেগেছিল। বানিয়েছিলেন নিজের জন্য, ভাইয়ের জন্য, আর রবীন্দ্রনাথের জন্যও।
গগনেন্দ্রনাথের আঁকা ছবি
কয়েকজন জাপানি শিল্পীর সঙ্গে মিশে তাঁদের আঁকা ছবি দেখে জাপানের প্রতিও গগনেন্দ্রনাথের ভালোবাসা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। জাপানি কুকুরের কথা তাঁর জানা ছিল। ঠিক করেছিলেন, পুষবেন তো, জাপানি কুকুরই পুষবেন! হঠাৎ করে এই ইচ্ছে, ক্রমেই সে-ইচ্ছে তীব্র হয়ে ওঠে!
জাপানিদের জিজ্ঞাসা করে সে-দেশের কুকুর সম্পর্কে বিচিত্র খবরও দ্রুত সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ। চেনাজানা মানুষজনদের অনেকের বাড়িতে দেখতেন ‘বড় বড় লোমওয়ালা কানঝোলা কুকুর, ঝালরের মতো তাদের ল্যাজ।’ সবাই যেমন কুকুর পোষেন, তেমন কুকুর মোটেই গগনেন্দ্রনাথের পছন্দ ছিল না। তাই ঠিক করেছিলেন, পুষবেন জাপানদেশের ওই ‘ছোট্ট পুতুলের মতো কুকুর!’
জাপানিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই পুতুল- কুকুর সম্পর্কে কৌতূহল জাগানিয়া রকমারি তথ্যও সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ। জাপানি শিল্পীরা কেউ কেউ অবশ্য সে-কুকুর এ দেশে বাঁচবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের যাবতীয় সংশয় নিমেষে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে গগনেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘জাপানদেশের বনসাইয়ের মতো গুড়িয়া-কুকুর-ই আমার চাই।’
কীভাবে আনবেন ওদেশের কুকুর, কে বা কারা এনে দেবে সে-কুকুর, গগনেন্দ্রনাথ একে জিজ্ঞেস করেন, তাকে জিজ্ঞেস করেন, শেষে পেলেন সঠিক সংবাদ। রুটলেজ কোম্পানি জন্তু-জানোয়ার আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করে। সরকারি নিয়মকানুন মেনে, বেশ গুছিয়ে ব্যবসা তাদের। কুমির-সাপ শুধু নয়, বাঘ-হাতি রপ্তানি করে পশ্চিমের দেশে। সে দেশ থেকে এদেশে আসে ঘোড়া, আফ্রিকা থেকে আনে জেব্রা। এসব খবর জানার পর গগনেন্দ্রনাথ পুলকিত চিত্তে তখনই ছুটলেন রুটলেজ কোম্পানির মালিকের বাড়ি। জাপান থেকে কুকুর এনে দেওয়ার ব্যাপারে রুটলেজ-কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলেন তাঁকে। দিলেন প্রতিশ্রুতিও। হাসি ফুটলো গগনেন্দ্রনাথের। কী আনন্দ, কী আনন্দ!
সেই আনন্দ-খুশির মাঝে জাপানি কুকুর সম্পর্কে বাস্তব সত্যটিও জানিয়ে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। জাপানি কুকুর বড় সুখী! বাঁচা না-বাঁচা ভাগ্যের ব্যাপার। মরে গেলে তাদের কোনো দায় থাকবে না!
পুঁচকে জাপানি কুকুর এদেশের আবহাওয়ায় বাঁচানোর সহজ কাজ নয় জেনে গগনেন্দ্রনাথ অবশ্য পিছিয়ে পড়েননি। ভাঁটা পড়েনি তাঁর উৎসাহে। অবনীন্দ্র-কন্যা করুণার পুত্র মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় চোখে দেখা অভিজ্ঞতার বিবরণ লিখে রেখেছেন। তাঁর লেখার অংশ-বিশেষ তুলে দেওয়া যেতে পারে, ‘হঠাৎ একদিন দেখা গেল গগন বেড়িয়ে ফিরলেন তাঁর ঘোড়ার গাড়ি করে। গাড়ির মাথায় প্রকাণ্ড এক বাক্স। সবাই উৎসুক, অত বড় বাক্সয় করে কী নিয়ে এলেন! সবাই ঝুঁকে এল। দেখা গেল বাক্সের দুই ফোকর দিয়ে দু জোড়া চোখ আর নাক উঁকি দিচ্ছে। বাক্স নামাতে তার মধ্যে থেকে বেরোলো একরত্তি দুটি জাপানি কুকুর।’
জাপানি কুকুর পেয়ে গগনেন্দ্রনাথের আহ্লাদ আর ধরে না। এমন ছোট্ট পুঁচকে কুকুর আর কারও নেই। গর্বের হাসি খেলে যায় তাঁর চোখে মুখে। যেভাবেই হোক এদের বাঁচাতে হবে! গগনেন্দ্রনাথ চেষ্টার কসুর করলেন না। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখা, কত যত্ন! তাদের সাফসুতরো রাখার জন্য বহাল হল ‘অরুণ’ নামে এক কিশোর।
জাপানিদের জিজ্ঞাসা করে সে-দেশের কুকুর সম্পর্কে বিচিত্র খবরও দ্রুত সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ। চেনাজানা মানুষজনদের অনেকের বাড়িতে দেখতেন ‘বড় বড় লোমওয়ালা কানঝোলা কুকুর, ঝালরের মতো তাদের ল্যাজ।’ সবাই যেমন কুকুর পোষেন, তেমন কুকুর মোটেই গগনেন্দ্রনাথের পছন্দ ছিল না। তাই ঠিক করেছিলেন, পুষবেন জাপানদেশের ওই ‘ছোট্ট পুতুলের মতো কুকুর!’
জাপানিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই পুতুল- কুকুর সম্পর্কে কৌতূহল জাগানিয়া রকমারি তথ্যও সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ। জাপানি শিল্পীরা কেউ কেউ অবশ্য সে-কুকুর এ দেশে বাঁচবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের যাবতীয় সংশয় নিমেষে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে গগনেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘জাপানদেশের বনসাইয়ের মতো গুড়িয়া-কুকুর-ই আমার চাই।’
কীভাবে আনবেন ওদেশের কুকুর, কে বা কারা এনে দেবে সে-কুকুর, গগনেন্দ্রনাথ একে জিজ্ঞেস করেন, তাকে জিজ্ঞেস করেন, শেষে পেলেন সঠিক সংবাদ। রুটলেজ কোম্পানি জন্তু-জানোয়ার আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করে। সরকারি নিয়মকানুন মেনে, বেশ গুছিয়ে ব্যবসা তাদের। কুমির-সাপ শুধু নয়, বাঘ-হাতি রপ্তানি করে পশ্চিমের দেশে। সে দেশ থেকে এদেশে আসে ঘোড়া, আফ্রিকা থেকে আনে জেব্রা। এসব খবর জানার পর গগনেন্দ্রনাথ পুলকিত চিত্তে তখনই ছুটলেন রুটলেজ কোম্পানির মালিকের বাড়ি। জাপান থেকে কুকুর এনে দেওয়ার ব্যাপারে রুটলেজ-কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলেন তাঁকে। দিলেন প্রতিশ্রুতিও। হাসি ফুটলো গগনেন্দ্রনাথের। কী আনন্দ, কী আনন্দ!
সেই আনন্দ-খুশির মাঝে জাপানি কুকুর সম্পর্কে বাস্তব সত্যটিও জানিয়ে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। জাপানি কুকুর বড় সুখী! বাঁচা না-বাঁচা ভাগ্যের ব্যাপার। মরে গেলে তাদের কোনো দায় থাকবে না!
পুঁচকে জাপানি কুকুর এদেশের আবহাওয়ায় বাঁচানোর সহজ কাজ নয় জেনে গগনেন্দ্রনাথ অবশ্য পিছিয়ে পড়েননি। ভাঁটা পড়েনি তাঁর উৎসাহে। অবনীন্দ্র-কন্যা করুণার পুত্র মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় চোখে দেখা অভিজ্ঞতার বিবরণ লিখে রেখেছেন। তাঁর লেখার অংশ-বিশেষ তুলে দেওয়া যেতে পারে, ‘হঠাৎ একদিন দেখা গেল গগন বেড়িয়ে ফিরলেন তাঁর ঘোড়ার গাড়ি করে। গাড়ির মাথায় প্রকাণ্ড এক বাক্স। সবাই উৎসুক, অত বড় বাক্সয় করে কী নিয়ে এলেন! সবাই ঝুঁকে এল। দেখা গেল বাক্সের দুই ফোকর দিয়ে দু জোড়া চোখ আর নাক উঁকি দিচ্ছে। বাক্স নামাতে তার মধ্যে থেকে বেরোলো একরত্তি দুটি জাপানি কুকুর।’
জাপানি কুকুর পেয়ে গগনেন্দ্রনাথের আহ্লাদ আর ধরে না। এমন ছোট্ট পুঁচকে কুকুর আর কারও নেই। গর্বের হাসি খেলে যায় তাঁর চোখে মুখে। যেভাবেই হোক এদের বাঁচাতে হবে! গগনেন্দ্রনাথ চেষ্টার কসুর করলেন না। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখা, কত যত্ন! তাদের সাফসুতরো রাখার জন্য বহাল হল ‘অরুণ’ নামে এক কিশোর।
বইয়ের প্রচ্ছদ
এলাহি আয়োজন, ছোট্ট ওই কুকুর দুটির জন্য। তাদের জন্য ব্যবস্থা হল আলাদা রান্নার। মেনুও খুব কম নয়। সকালে ডিম ও রুটি দিয়ে ব্রেকফাস্ট। দুপুরে মাংস আর পোলাও।
অরুণ কুকুর দুটিকে সাফসুতরো রাখতো, পরিচর্যা করতো। কুকুরের সঙ্গে খেলাটেলার জন্য, দেখাশোনার জন্য একটি নেপালি বালককেও রাখা হয়েছিল। রান্নাঘর থেকে নিজের হাতে খাবার এনে আদর করে কুকুর দুটিকে খাওয়াতো সে। সিঁড়ির ধারে বসে সারাক্ষণ নজর রাখতো।
গগনেন্দ্রনাথ অবশ্য জাপানি কুকুর দুটিকে কোলে নিতেন না। দূর থেকেই ছিল তাঁর আদর, ভালোবাসা-জ্ঞাপন। নেপালি বালক কুকুর দুটিকে তাঁর পায়ের কাছে ছেড়ে দিত। দুটিতে খুনসুটিতে ইতস্তত ঘুরতো, ছুটতো, খেলতো। গগনেন্দ্রনাথ দক্ষিণের বারান্দায় বসে সেসব দেখতেন, উপভোগ করতেন। মিটিমিটি হাসতেন। কখনও ফুটফুটে তুলতুলে কুকুর দুটিতে গগনেন্দ্রনাথের পায়ের কাছে এসে গুটিসুটি মেরে চুপটি করে বসে থাকতো। বড়রা আদর করতে পারলেও ছোটদের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হত না। মোহনলাল লিখেছেন, ‘তারা কুকুরের খাওয়ার আর আদরের বহর দেখে হিংসেয় জ্বলে যেত। কুকুরের খাবার যখন নিয়ে যাওয়া হত, তার গন্ধে বাড়ির ছেলেদের জিভে জল ঝরত।’
না, ছোট্ট, সুন্দর ওই কুকুর দুটিকে বেশিদিন বাঁচানো যায়নি। কুকুর দুটির মৃত্যুতে গগনেন্দ্রনাথ ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। আর কখনও কুকুর পোষেননি তিনি।
ছবি সৌজন্যে: লেখক
* গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি (tagore-stories – Rabindranath Tagore) : পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Parthajit Gangopadhyay) অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্যে ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা, ডি-লিট অর্জন। শিশুসাহিত্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। ছোটদের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। সম্পাদিত বই একশোরও বেশি।
অরুণ কুকুর দুটিকে সাফসুতরো রাখতো, পরিচর্যা করতো। কুকুরের সঙ্গে খেলাটেলার জন্য, দেখাশোনার জন্য একটি নেপালি বালককেও রাখা হয়েছিল। রান্নাঘর থেকে নিজের হাতে খাবার এনে আদর করে কুকুর দুটিকে খাওয়াতো সে। সিঁড়ির ধারে বসে সারাক্ষণ নজর রাখতো।
গগনেন্দ্রনাথ অবশ্য জাপানি কুকুর দুটিকে কোলে নিতেন না। দূর থেকেই ছিল তাঁর আদর, ভালোবাসা-জ্ঞাপন। নেপালি বালক কুকুর দুটিকে তাঁর পায়ের কাছে ছেড়ে দিত। দুটিতে খুনসুটিতে ইতস্তত ঘুরতো, ছুটতো, খেলতো। গগনেন্দ্রনাথ দক্ষিণের বারান্দায় বসে সেসব দেখতেন, উপভোগ করতেন। মিটিমিটি হাসতেন। কখনও ফুটফুটে তুলতুলে কুকুর দুটিতে গগনেন্দ্রনাথের পায়ের কাছে এসে গুটিসুটি মেরে চুপটি করে বসে থাকতো। বড়রা আদর করতে পারলেও ছোটদের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হত না। মোহনলাল লিখেছেন, ‘তারা কুকুরের খাওয়ার আর আদরের বহর দেখে হিংসেয় জ্বলে যেত। কুকুরের খাবার যখন নিয়ে যাওয়া হত, তার গন্ধে বাড়ির ছেলেদের জিভে জল ঝরত।’
না, ছোট্ট, সুন্দর ওই কুকুর দুটিকে বেশিদিন বাঁচানো যায়নি। কুকুর দুটির মৃত্যুতে গগনেন্দ্রনাথ ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। আর কখনও কুকুর পোষেননি তিনি।
ছবি সৌজন্যে: লেখক
* গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি (tagore-stories – Rabindranath Tagore) : পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Parthajit Gangopadhyay) অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্যে ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা, ডি-লিট অর্জন। শিশুসাহিত্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। ছোটদের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। সম্পাদিত বই একশোরও বেশি।