শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


শ্রীরামকৃষ্ণদেব।

দক্ষিণেশ্বর ভাবতারিণী মন্দিরের আনন্দ নিকেতনের আনন্দ-পাঠশালায় সকলের অবারিত দ্বার। সেখানে বালক, কিশোর, তরুণ, যুবক, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা সকলেই শ্রীরামকৃষ্ণের ছাত্র। সকলেই দু-একদিন আসা যাওয়ার পরেই বুঝতে পারে ‘এ বড় কঠিন ঠাঁই, এখানে চলবে না ডিগ্রি বা কোনও বিদ্যার ডমফাই। শুধু আনত মস্তকে শুনে দু’ একটা কথা জীবনে ফুটিয়ে তুললেই এ জীবন মহান ও ধন্য হয়ে যাবে।
সদানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর এই আনন্দ-পাঠশালায় সব শিক্ষাই দিচ্ছেন, কিন্তু আনন্দের মাধ্যমে। প্রকৃতির মধ্যে যে শিক্ষার কথা রবীন্দ্রনাথ আরও পরে ভেবেছেন এবং সেই ভাবনাকে রূপ দিতে শান্তিনিকেতনে তৈরি করেছিলেন এক আনন্দময় বিদ্যালয়, শ্রীরামকৃষ্ণ তারও অনেক আগে সে কথা ভেবেছিলেন ও তৈরি করেছিলেন দক্ষিনেশ্বরের এই আনন্দ-পাঠশালা।
আরও পড়ুন:

যত মত, তত পথ, পর্ব-১: শ্রীরামকৃষ্ণের আনন্দ-পাঠশালা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭: গৃহিণী সারদার প্রথম দক্ষিণেশ্বর আগমন

রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ চল্লিশ বছর তাঁর শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়টিকে লালন-পালন করার সময় পেয়েছিলেন, আর শ্রীরামকৃষ্ণ মাত্র বছর আটেক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিদ্যালয়ে অনেক আদর্শ গুরুমশায় পেয়েছিলেন। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের আনন্দ-পাঠশালায় শ্রীরামকৃষ্ণই এক ও অদ্বিতীয় গুরুমশায়। পরে তাঁরই প্রধান ছাত্র শ্রীরামকৃষ্ণের দেহাবসানের মাত্র সাত বছর পরেই স্বামী বিবেকানন্দ নাম ধরে ১৮৯৭ সালে বিদেশে গিয়ে জগতের আচার্য, শিক্ষক ও গুরু হয়ে জগৎ তোলপাড় করলেন।
আরও পড়ুন:

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-৩: কোচ কামতেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য এক অনন্যসাধারণ মিশ্রশৈলীর উদাহরণ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭২: রবীন্দ্রনাথ প্রয়োজনে কঠোর হতেও পারতেন

বারো বছরের অকল্পনীয় ও অচিন্ত্যনীয় সাধনার শেষে শ্রীরামকৃষ্ণ দিনান্তে দক্ষিণেশ্বর কুঠিবাড়ির ছাদের উপর থেকে আকুল হয়ে আধ্যাত্মপিপাসু ভক্ত ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ডেকে ডেকে বলতেন, “ওরে তোরা কে কোথায় আছিস আয়! তোদের না দেখে যে আমার প্রাণ যায়!”

দীর্ঘ, প্রায় দশ বছর এই ভক্ত-ছাত্রদের জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৮৭৯ খৃস্টাব্দ থেকে ক্রমশ তাঁরা একে একে এসে জুটতে থাকে শ্রীরামকৃষ্ণের আনন্দ-পাঠশালায়। এই আনন্দ-পাঠশালার গুরুমশায় শ্রীরামকৃষ্ণের শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্মন্ধে তাঁর ছাত্রদের কী অভিমত?

কবি, নাট্যকার, যশস্বী অভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমি যখন বিল্বমঙ্গল লিখি, তাঁহার (শ্রীরামকৃষ্ণের) ভক্তেরা প্রশ্ন করিলে বলি নাটক লেখা তাঁর কাছে শেখা। নরেন্দ্র (স্বামী বিবেকানন্দ) বলে বিজ্ঞান তাঁর কাছে শেখা। মহেন্দ্র মাস্টার (শ্রীম, যিনি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত লিখেছেন এবং পেশায় শিক্ষক ছিলেন) বলেন, মাস্টারি শেখা তাঁর কাছে।” (ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, সম্পাদনা শঙ্করীপ্রসাদ বসু, বিমলকুমার ঘোষ, পৃ: ১৯৭)
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন

ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে: বাচ্চা খেতে খেতে টিভি দেখে কিংবা ফোন ঘাঁটে?

স্বামী বিবেকানন্দ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, শ্রীমর মতো বিখ্যাত ছাত্র ছাড়াও শ্রীরামকৃষ্ণের আরও কয়েকজন শ্রদ্ধেয়, শক্তিশালী ও বিখ্যাত ছাত্র হলেন— স্বামী অভেদনন্দ, স্বামী ব্রহ্মানন্দ,
স্বামী শিবানন্দ, স্বামী সারদানন্দ, স্বামী প্রেমানন্দ, স্বামী যোগানন্দ, স্বামী অখন্ডানন্দ, স্বামী নিরঞ্জনানন্দ, স্বামী অদ্বৈতানন্দ, স্বামী বিজ্ঞানানন্দ, স্বামী ত্রিগুনাতীতানন্দ, স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ, স্বামী তুরীয়ানন্দ, স্বামী সুবোধানন্দ, স্বামী অদ্ভূতানন্দ, সাধু নাগমহাশয়, বলরাম বসু, রামচন্দ্র দত্ত প্রমুখ।

এখানে মাত্র কয়েকজন ছাত্রের নাম করা হল। উপরে উল্লিখিত ছাত্ররা স্ব স্ব ক্ষেত্রে মানবসেবায় কী কাজ করে গিয়েছেন তা জানতে হলে পড়তে হবে ‘ শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তমালিকা।—চলবে।
* সুসময় রায় চৌধুরী (Susamay Roy Chowdhury) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইরাজি সাহিত্যে সাম্মানিক ও সাংবাদিকতায় এমএ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ: ১. শিক্ষায় জীবন গঠন ও আনন্দলাভ—শ্রীরামকৃষ্ণ ও রবীন্দ্রনাথ, ২. শ্রীরামকৃষ্ণ-আলোয় সবার জীবন, ৩. শ্রীরামকৃষ্ণের কথা রবীন্দ্রনাথের গান—প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। আরও কয়েকটি খণ্ড প্রকাশের অপেক্ষায়। প্রকাশিতব্য: ১. জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য—ঈশ্বরলাভ, ২. কে তুমি শ্রীরামকৃষ্ণ?, ৩. কে তুমি বিবেকানন্দ?, ৪. জন্মানতরবাদ—ভারতীয় শাস্ত্র ও ঋষি, মহামানবেরা।

আপনার রায়

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ কি তৃতীয় বারের এই অভিযানে সাফল্যের স্বাদ পাবে?

Skip to content