শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রাক্তন ফুটবলার তথা অলিম্পিয়ান বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত। ময়দানে যিনি বদ্রু নামেই পরিচিত ছিলেন। শুক্রবার রাত ২টো ১০ মিনিটে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। সুত্রের খবর, গত ২৭ জুলাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অ্যালজাইমারস, উচ্চ-রক্তচাপ এবং অ্যাজোটেমিয়া-সহ একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। দিনে দিনে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। তাই তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সেখানেও ক্রমশ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল।
তাঁর চিকিৎসায় এসএসকেএম হাসপাতাল একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছিল। সমর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয়টি চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছিল। গত কয়েক দিনে অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। শেষের দিকে চিকিৎসাতেও তাঁর সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে সব লড়াই শেষ হয়ে গেল। থেমে গেল ২৪ দিনের যুদ্ধ। শনিবার গভীর রাতে এসএসকেএম হাসপাতালেই প্রয়াত হলেন তিনি।
বদ্রুর প্রয়ানে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘তারকা ফুটবলার সমর (বদ্রু) ব্যানার্জির প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। আজ কলকাতায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ১৯৫৬ সালে তিনি মেলবোর্নে সামার অলিম্পিকসে জাতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়া মোহনবাগান, বালি প্রতিভা ক্লাব, বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে দলেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে খেলেছিলেন। অংশ নিয়েছেন ডুরান্ড কাপ, কলকাতা ফুটবল লিগ, আইএফএ শিল্ড, রোভার্স কাপে। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৬-১৭ সালে তাঁকে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।’
উল্লেখ্য, বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফুটবল জীবন বেশ উজ্জ্বল। মোহনবাগান ক্লাবের বদ্রু হয়ে খেলেছিলেন ১৯৫২ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত টানা সাত বছর। ১৯৫৮ সালে তিনি অধিনায়কও ছিলেন। সবুজ মেরুন জার্সিতে ১০টি ট্রফি জিতেছেন। মোহনবাগান ১৯৫৩ এবং ১৯৫৫ সালে প্রথমবার ডুরান্ড কাপ এবং রোভার্স কাপ জেতে। মোহনবাগান দলের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া, হংকং এবং সিঙ্গাপুরে বিদেশ সফরেও গিয়েছিলেন বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সফরে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ছিলেন। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে চারটে গোল রয়েছে এই ফুটবলারের। সবুজ মেরুন জার্সি গায়ে পাঁচ গোল করেছেন মহমেডানের বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলা ফুটবলেও তাঁর অবদান কম নয়। প্লেয়ার এবং কোচ হিসেবে সন্তোষ ট্রফি জিতেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৬-১৭ সালে তাঁকে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে ক্রীড়ামহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।


Skip to content