সৃষ্টিতে মগ্ন রবীন্দ্রনাথ।
বাবুমশাই বললেন, সিংহাসন সরাতে। তিনি বসবেন সবার সঙ্গে, সবার মাঝে। নিচে আসন পাতা হল। তারপরে পাতা হল এক বিরাট সতরঞ্জি। তার সামনের দিকটা সাদা চাদরে ঢাকা। জমিদারবাবু তার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। প্রজারা বললেন, সাদা অংশে বসবে হিন্দু প্রজারা, বাকি অংশে মুসলিম প্রজারা। এবার বাবুমশাই দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, সবার আসন হবে এক। হিন্দু-মুসলমান সকলে বসবে একাসনে। পদস্থ হিন্দু প্রজা ও কর্মীরা আপত্তি জানিয়ে বললেন, এই নিয়ম চালু আছে ‘প্রিন্স বাবুমশাই’ এর সময় থেকে। কিন্তু ‘নতুন বাবুমশাই’ বললেন, এই নিয়মের পরিবর্তন না হলে আজ পুণ্যাহ অনুষ্ঠান হবেই না।
সর্বধর্ম মিলন ও রবীন্দ্র সাহিত্য
যশোহরের পিরালী ব্রাহ্মণ জগন্নাথ ও পুরুষোত্তমপুর কুশারীর বংশধর রবীন্দ্রনাথ। অর্থ-সম্পত্তির সঙ্গে কুসংস্কারহীন মুক্ত মনের মানুষ ছিলেন তিনি। তাই তাঁর সাহিত্যে সদা প্রবাহিত হতো মুক্ত হওয়া। কবির বাড়ি, শান্তিনিকেতন ও তাঁর জমিদারিতে ছিল সর্বধর্মের মানুষের অবাধ আনাগোনা। ঘুরে ফিরে তাঁর বিভিন্ন গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও নাটকে এসেছেন সমাজের এই সাধারণ মুসলিম মানুষজন, যাঁরা তাঁর লেখনীর গুণে চিরঅমরত্ব লাভ করেছেন। আমরা পড়েছি ‘মুসলমানীর গল্প’, ‘গোরা’, ‘কাবুলিওয়ালা’ ইত্যাদি।
‘গোরা’ উপন্যাসে তিনি গৌরর মাধ্যমে বললেন, ‘আপনি আমাকে আজ সেই দেবতার মন্ত্র দিন যিনি হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান ব্রাহ্ম সকলেরই, যাঁর মন্দিরের দ্বার কোনও জাতির কাছে, কোনও ব্যক্তির কাছে, কোনও দিন অবরুদ্ধ হয় না। যিনি কেবলই হিন্দুর দেবতা নন, যিনি ভারতবর্ষের দেবতা’। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য তিনি লিখলেন ‘জাতীয় সংগীত’। সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এসেছে অসংখ্য মুসলিম চরিত্র, যেমন: রহমান, জুলিখা, অছিমদ্দি, হাবিব খাঁ ইত্যাদি। ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসে বিল্বন সন্ন্যাসীর মুখে উচ্চারিত হল জাতপাতহীন হিন্দু ধর্মের সারকথা। তিনি মহামারি পীড়িত মানুষদের অকাতরে সেবা করতে লাগলেন ধর্মের রং না দেখেই। ধর্মের ধ্বজাধারীরা অনেকে প্রতিবাদ করায় তিনি শোনালেন প্রেমের অমরবাণী, “আমি সন্ন্যাসী, আমার কোনো জাত নাই। আমার জাত মানুষ জাত। মানুষ যখন মরিতেছে তখন কিসের জাত”।
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৭: কবিকন্যার সঙ্গে নগেন্দ্রনাথের সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও কবির সঙ্গে ঘটেনি
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪২: আশা-ভরসার ‘শঙ্কর নারায়ণ ব্যাঙ্ক’
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১: জয়রামবাটির আদরের ছোট্ট সারু
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৭: মদ না খেলে ফ্যাটি লিভার হয় না?
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৯: পঞ্চমের সুরে লতার গাওয়া ‘মেরে নয়না সাওন ভাদো’ গান শুনে শুনেই প্রস্তুতি শুরু করেন কিশোর
দশভুজা: আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১
ইসলাম ধর্ম-বিবৃতি, বাণী ও রবীন্দ্রনাথ
১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর বম্বে পালিত ‘পয়গম্বর দিবস’ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ একটি বাণী লিখলেন এবং তা পাঠ করে শোনালেন সরোজিনী নাইডু। সেই বাণী হল: ‘জগতে যে সামান্য কয়েকটি ধর্ম আছে, ইসলাম ধর্ম তাদেরই অন্যতম। মহান এই ধর্মমতের অনুগামীদের দায়িত্বও তাই বিপুল। ইসলামপন্থীদের মনে রাখা দরকার, ধর্ম বিশ্বাসের মহত্ত্ব আর গভীরতা যেন তাঁদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ওপর ছাপ রেখে যায়’।
১৯৩৪ সালের ২৫ জুন মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের বেতার বার্তা: “ইসলাম পৃথিবীর মহত্তম ধর্মের মধ্যে একটি। এই কারণে তার অনুবর্তীগনের দায়িত্ব অসীম, যেহেতু আপন জীবনে এই ধর্মের মহত্ব সম্বন্ধে তাঁদের সাক্ষ্য দিতে হবে। …আজকের এই পুণ্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে মুসলিম ভাইদের সঙ্গে একযোগে ইসলামের মহাঋষির উদ্দেশ্যে আমার ভক্তি অর্পণ করে উৎপীড়িত ভারতবর্ষের জন্য তাঁর আশীর্বাদ ও সান্তনা কামনা করি”।
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৬: আমার হৃদয় কাঁপে পরিস্থিতির চাপে
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৩: মাছচাষের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চাইতে সতর্কতাই আসল কথা
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৫১: মারীচমায়ায় কি দিগভ্রান্ত সীতা?
এই ভাবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে এবং লেখনীতে ইসলামধর্মের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা পরোতে, পরোতে প্রকাশিত হয়েছে। তাই মনে হয় আজ এই অসহিষ্ণুতা, ধৈর্যহীনতার সময়ে প্রয়োজন রবীন্দ্রনাথের মতো সেই বিখ্যাত মহাপুরুষদের, যাঁদের শান্তির বারিধারায় স্নিগ্ধ, শীতল হবে এই পৃথিবী।
ঋণ: