সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর, উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী এ টি কানন ও গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ঢাকুরিয়ার ব্যানার্জিপাড়ার বাড়িতে।
চলে গেলেন ভারতবর্ষের সুরসম্রাজ্ঞী। শোকস্তব্ধ দেশবাসী। ভারতবর্ষের আপামর সংগীত জগৎকে বিগত আট দশক ধরে ঋদ্ধ করেছেন তিনি। দেশের প্রতিটি প্রান্তের মতো বাংলা সংগীত জগৎও তাঁর কাছে চিরঋণী৷ বাংলা ভাষায় গেয়েছেন অজস্র গান৷ বাংলার বিভিন্ন খ্যাতনামা সংগীতশিল্পীর সঙ্গেও তাঁর ছিল ভালো সম্পর্ক। তেমনই এক সুমধুর বন্ধুত্বপূর্ণ দিদি-বোনের সম্পর্ক ছিল প্রবাদপ্রতিম শিল্পী লতা মঙ্গেশকর এবং কিংবদন্তি গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। লতাজি কলকাতায় এলেই হয় উঠতেন ভবানীপুরের রূপনারায়ণ নন্দন লেনে হেমন্তদার বাড়িতে. নয়তো উঠতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মা লতাজিকে নিজের মেয়ের মতো দেখতেন। হেমন্তদার মা তো মারাঠি রান্না জানতেন না, আর লতাজি ছিলেন ভীষণ সাত্ত্বিক প্রকৃতির মানুষ, নিজের রান্না তিনি নিজেই করে নিতেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মা লতাজিকে একটি স্টোভ দিয়েছিলেন, সেই স্টোভেই লতাজি রান্না করে নিতেন। রান্নাবান্নায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। হেমন্তদাই লতাজিকে দক্ষিণেশ্বর, শান্তিনিকেতন, বেলুড় মঠে নিয়ে যান৷ সঙ্গে ছিলেন হেমন্তদার স্ত্রী বেলা মুখোপাধ্যায়।
একবার এক মজার ঘটনা ঘটে। সেবার লতা মঙ্গেশকর কলকাতায় এসে উঠেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ঢাকুরিয়ার ব্যানার্জিপাড়ার পৈতৃক বাড়িতে। ব্যানার্জিপাড়াকে তখন প্রায় গ্রামই বলা চলে। দুপুরে খাওয়ার আগে লতাজি সন্ধ্যাদির কাছে আবদার করলেন ছোট একবাটি নারকেল তেলের জন্য। লতাজির একঢাল চুল ছিল। সেই নারকেল তেল চুলে মেখে ওইদিন সন্ধ্যাদির বাড়িতে স্নান করে মধ্যাহ্নভোজন করেন তিনি।
একবার এক মজার ঘটনা ঘটে। সেবার লতা মঙ্গেশকর কলকাতায় এসে উঠেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ঢাকুরিয়ার ব্যানার্জিপাড়ার পৈতৃক বাড়িতে। ব্যানার্জিপাড়াকে তখন প্রায় গ্রামই বলা চলে। দুপুরে খাওয়ার আগে লতাজি সন্ধ্যাদির কাছে আবদার করলেন ছোট একবাটি নারকেল তেলের জন্য। লতাজির একঢাল চুল ছিল। সেই নারকেল তেল চুলে মেখে ওইদিন সন্ধ্যাদির বাড়িতে স্নান করে মধ্যাহ্নভোজন করেন তিনি।
মধুবালা।
শচীন দেব বর্মনের ডাকে যেবার গান গাইবার জন্য মুম্বইয়ে যান সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সেবার উনি উঠেছিলেন খার রেলস্টেশনের কাছে এভারগ্রিন হোটেলে৷ সঙ্গে ছিলেন তাঁর মাও। সন্ধ্যাদির সঙ্গে লতাজি প্রায়ই এভারগ্রিনে আসতেন দেখা করতে এবং বহুদিন সন্ধ্যাদির মা তাঁকে নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েওছেন। লতাজিকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন সন্ধ্যাদির মা। বেশ কিছুদিন আগে কলকাতার এক বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সন্ধ্যাদি বেশকিছু প্রশংসাসূচক কথা বলেছিলেন। সেই সাক্ষাৎকার কোনওভাবে গিয়ে পৌঁছেছিল লতাজির কাছে। সাক্ষাৎকারটি পেয়েই ওইদিন রাতে তিনি ফোন করেন সন্ধ্যাদিকে৷ বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে নিয়ে এত ভালো কথা লিখেছ! তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’ প্রত্যুত্তরে সন্ধ্যাদি বলেছিলেন, ‘কৃতজ্ঞতার কী আছে? আমরা তো কতদিনের পুরনো বন্ধু বলো।’ ওইদিন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় লতাজির কাছে আবদার করেন তাঁরই গাওয়া সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’ গানটি গেয়ে শোনানোর জন্য। লতাজিও কোনও আপত্তি ছাড়াই সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে শোনান গানটি৷ তিনি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কেও অনুরোধ করেন একটি গান শোনানোর জন্য। সন্ধ্যাদিও একটি ভজন গেয়ে শোনান। এমন প্রায়ই তাঁরা ফোন করে একে অপরকে গান গেয়ে শোনাতেন৷ বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা চলত গান নিয়ে, কথাবার্তা হত শারীরিক কুশলাদি সংক্রান্ত বিষয়েও৷ এমনই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল দুজনার।
শ্যামা।
যদিও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন শচীন দেব বর্মনের ডাকে কিন্তু লতাজি এবং তিনি প্রথম একসঙ্গে গান গেয়েছিলেন ‘তারানা’ ছবিতে অনিল বিশ্বাসের সুরে। গানটি ছিল ‘বোল পাপিহে বোল রে/ বোল পাপিহে বোল/ হ্যায় কৌন মেরা চিতচোর’। লতাজি গেয়েছিলেন মধুবালার লিপে এবং সন্ধ্যাদি গেয়েছিলেন সেই সময়কার ডাকসাইটে নায়িকা শ্যামার লিপে। ভাবতে অবাক লাগে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দুজনেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল ভর্তি হলেন। একজন চলে গেলেন চিরতরে, আরেকজন এখনও হাসপাতালে৷
লক্ষ লক্ষ অনুরাগীর মতো সংগীত সাধিকা গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জীবনীকার (গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু) হিসেবে এই লেখকও কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেন যেন তিনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
অনিবার্য কারণবশত আজ ‘স্মৃতিকথায় সুরসম্রাজ্ঞী’-এর ৩য় পর্ব’ প্রকাশিত হয়নি।
লক্ষ লক্ষ অনুরাগীর মতো সংগীত সাধিকা গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জীবনীকার (গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু) হিসেবে এই লেখকও কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেন যেন তিনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
ইউটিউব লিঙ্ক সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে