রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


নব আনন্দে জাগো...।

এই তো মেরেকেটে বছর চল্লিশের ওপারেই এমন হাঁসফাঁসানো সময়কালে কমলাখামে লালচে ‘পহেলা বৈশাখ’ লেখা নেমন্তন্ন পত্তরগুলো যেন নতুন করে আশা জাগানিয়া হয়ে দেখা দিত। তাবৎ বাঙালিমন—’হে নূতন দ্যাখা দিক আরবার’— রকমে সানাইয়ের পোঁ ধরত নিজ নিজ সাধ্যমতো।

সে নেমন্তন্ন পত্তরের বকলমে আসলেই হাতেগরম যা পাওয়া যেত তা হল হালখাতার নামে সান্ধ্য বিনোদনের ছুতো। পয়লা বোশেখের সকালবেলা লুচি ছোলার ডালের পরে পরেই ‘পড়তে বোস’—জাতীয় তালকাটানো দুঃখটা হজম করা তো একমাত্র সন্ধেবেলা ওই দোকানে দোকানে ঘুরতে পাব ভেবেই। নতুন ছিটের ফ্রকের কড়কড়ানি অগ্রাহ্য করে ওই যে ঘেমেনেয়ে ঘুরনচাকির পালা ছিল, তার প্রথম শর্তটিই ছিল হালখাতাবাবদ পাওয়া প্যাকেটের তিনকোনা বাসি নিমকিটির সদ্ব্যবহার! মা জননীরা কস্মিনকালেও ও বস্তুটি খেতে দেবেন না, অথচ ওইটে খাওয়ার জন্যেই প্রায় মা কালীর মতো আধহাত জিভ বেরিয়ে পড়ত মনে মনে। কিছু বছর পরের দিকে হালখাতার অনুষ্ঠানে গিয়ে অবশ্য লোভের পালাবদল ঘটেছিল নিয়মভাঙা আরেক বস্তুর জন্য–কোকাকোলা!
আহ্—কালচে পানীয়ে কী বিপুল ঝাঁঝালো আকর্ষণ! ভালোমানুষ বাবাকে নাকে কেঁদে ভুলিয়েভালিয়ে চোঁওওও করে সে কী সুখটান! পুরো ‘ডুব দে রে মন কালী বলে’!

রাতে অবশ্য দুই যাত্রাতেই যথাক্রমে গলাবুক জ্বালা এবং সাঁই সাঁই হেঁপো তান পোড়া প্রেস্টিজের দফারফা করে ছাড়ত দুর্গতিনাশিনী ত্রিতাপহারিণী মা জননীর কাছে! অতঃপর, সংকল্পের বন্যায় ভেসে ‘আসছে বছর আর হবে না’—ধুয়োতে দোসরা বোশেখের বিচ্ছিরি সকালটা আসত। আমাদের সেই ভ্যেবলিমার্কা বিছনাগত দিনটাকে কোনও শুকতারা-আনন্দমেলাই রংচঙে করতে পারত না।
গোল করে পাকানো নতুন ক্যালেন্ডারের রাধাকৃষ্ণ- রবীন্দ্রনাথ-দুগ্গাঠাকুর- গঙ্গাঝুঁটি-শিবঠাকুরের ছবিগুলো দেখতে দেখতে গলাভাত আর সজনেডাঁটা-শিঙিমাছের ঝোল খেতে খেতে শুরু হত তেরোশো বঙ্গাব্দের সেই নতুনবছরী দিনগুলো—

শতকরা শতভাগ পালটে গেছে যা শতাব্দীর ভাঁজে!

ছবি: লেখিকা

Skip to content