একটা সময় ছিল যখন একটি কলমই একজন মানুষের সারা জীবনের সঙ্গী ছিল। তার সঙ্গেই ছিল তার অসীম বন্ধুতা। সেই কলমের সঙ্গেই গড়ে উঠত এক অদ্ভুত সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের গভীরতা কেবল কয়েকটি শব্দে বর্ণনা করা কঠিন। সময় বদলেছে। সে দিন গিয়েছে। জীবনে এসেছে নতুন ছন্দ। অধিকাংশ মানুষের হাতে উঠে এসেছে ‘ইউজ এন্ড থ্রো পেন’। মানুষ ভুলেছে তার অতীত, ঝর্ণা কলমকে।
সত্যিই কি ভুলেছে? কালি-কলমের মেলায়, যার পোশাকি নাম ‘পেন মহোৎসব’-য়ে, আজ যখন গিয়ে পৌঁছলাম, নিজের মনেই প্রশ্ন জাগলো, এত মানুষ তবে কিসের টানে এসেছেন? নিছক কৌতূহলী হয়ে, নাকি ফেলে আসা দিনের গন্ধ মাখতে?
মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, নানা বয়সের উৎসাহী মানুষের সমাগম। দুপুর থেকে বিকেল গড়াতে সে ভিড় বেড়েই চললো। দেখা গেল, বিশেষজ্ঞরা নবীন-নবীনাদের ধৈর্যসহকারে চিনিয়ে দিচ্ছেন ঝর্ণা কলমের নানা অজানা পথ, বুঝিয়ে দিচ্ছেন নানা খুঁটিনাটি। ক্লান্তিহীন তাঁদের এই শেখা, এই জানা। দেখে, বড় ভালো লাগলো।
মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, নানা বয়সের উৎসাহী মানুষের সমাগম। দুপুর থেকে বিকেল গড়াতে সে ভিড় বেড়েই চললো। দেখা গেল, বিশেষজ্ঞরা নবীন-নবীনাদের ধৈর্যসহকারে চিনিয়ে দিচ্ছেন ঝর্ণা কলমের নানা অজানা পথ, বুঝিয়ে দিচ্ছেন নানা খুঁটিনাটি। ক্লান্তিহীন তাঁদের এই শেখা, এই জানা। দেখে, বড় ভালো লাগলো।
আরও পড়ুন:
সঙ্গহীন জীবনের অন্তিম অবলম্বন— ঋতুপর্ণর সাহিত্যচর্চা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৮: রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কাটতেন, সাঁতার শেখাতেন
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৪: কাওয়ার্ধা পরিভ্রমণ
শহর ও দেশের বিভিন্ন কোণ থেকে শুধু যে পরিচিত-অপরিচিত প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতারাই এসেছেন তাই নয়, এসেছেন কোনও কোনও সংগ্রাহকও। তাঁরাও তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন কেবল বিক্রির আশায় নয়, বরং ফেলে আসা দিনের স্মৃতিকে উস্কে দিতে। আর ঝর্ণা কলমের ধারার যে গতিপথ সে সম্পর্কে আজকের প্রজন্মকে সচেতন করতে।
আরও পড়ুন:
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১২: স্ট্যানলি ম্যাথুজ— একজন কিংবদন্তি, লড়াই আবেগ আর মেহনতী জনতার বন্ধু
সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-১৩: পয়লা বৈশাখের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’— অসম্প্রদায়িক চেতনার বিশ্ব ঐতিহ্য
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬: রামচন্দ্রের আবির্ভাব ও বসুন্ধরাকন্যা সীতার অনুষঙ্গ
অনেকদিন ধরে মনের কোণে লালন করে রাখা স্বপ্নের কলমটিকে আপন করে নেওয়ার ইচ্ছেকে বাস্তবায়িত করছেন কেউ, আবার কেউ শুধুই ঘুরে-ঘুরে অচেনাকে চিনতে চাইছেন, আর বিস্ময়ে মুগ্ধতায় আপ্লুত হচ্ছেন।
মানুষ কেন ফিরতে চাইছে এই অবলম্বনের কাছে, শুধুই কি স্মৃতিমেদুরতা? হয়তো নয়! হয়তো নির্ভেজাল বন্ধুতার টানে, কী বলেন?
মানুষ কেন ফিরতে চাইছে এই অবলম্বনের কাছে, শুধুই কি স্মৃতিমেদুরতা? হয়তো নয়! হয়তো নির্ভেজাল বন্ধুতার টানে, কী বলেন?
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৫: শরীর ফিট রাখতে রোজ ভিটামিন টনিক খাচ্ছেন?
দশভুজা: ‘পুরুষ মানুষের কাজে হাত দিলে এমনই হবে, মহিলাদের এসব সাজে না’
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯: নুনিয়া
এক-একজন মানুষের যেমন এক-একরকম বর্ণ-গন্ধ, এক-একরকম প্রকৃতি, এক-একটি কলমেরও তাই। প্রতিটি ঝর্ণা কলমের অনন্য একটি চরিত্র রয়েছে। বাহ্যিকভাবে তেমন কিছুই মনে হবে না হয়তো, কিন্তু কলমগুলি এক-এক করে হাতে তুলে নিয়ে লিখতে শুরু করলে সে কলম কথা বলবে আপনার সঙ্গে, তার নিজের ছন্দে। এক-একটি কলমের আপন স্বতন্ত্র এক একটি ভাষা রয়েছে। আর তার ছন্দে সুর মেলানতেই লেখার আনন্দ। আর সেই অপার আনন্দের খোঁজেই আসলে রসিক মানুষ হাতে তুলে নেন ঝর্ণা কলম। অর্থহীন উন্মাদনা মনে হচ্ছে কি? একদিন হাতে একটি কলম তুলে নিলে সে ভুল আপনার ভাঙবেই, বন্ধু।
কলমের অপরিহার্য সঙ্গী কালি, তাদেরও দেখা মিলছে এই মেলায়। নানা রূপে নানা রঙে তারা সেজে রয়েছে আপনার অপেক্ষায়। কথায়-কথায় তো বলাই হল না কবে, কখন, কোথায় দেখা পাবেন আপনার এই বন্ধুদের! আগামী ১৬ তারিখ অবধি, দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওরা আপনার অপেক্ষায় থাকবে কলকাতার হো চি মিন সরণি-তে অবস্থিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেসন্স (আইসিসিআর)-এর প্রাঙ্গণে। আর হ্যাঁ, কালি-কলমের মেলায় কিন্তু কোনও প্রবেশ মূল্য নেই!
* সৌম্য দে, উপস্থাপক, আকাশবাণী, কলকাতা।