শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

বাগদেবীর বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই যেন বিসর্জন হল সংগীতের সুরের প্রতিমাও। চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী, শোকস্তব্ধ আপামর সংগীতজগৎ। লতা মঙ্গেশকরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেন। পাশাপাশি আগামী পনেরো দিন টানা সমগ্র বাংলা জুড়ে বাজবে লতার গান। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের তরফ থেকে জারি করা মুখ্যমন্ত্রী শোকবার্তায় লেখা হয়, ‘কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে আমি গভীরতম শোক প্রকাশ করছি৷ তিনি আজ মুম্বইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তাঁর প্রয়াণে আমরা রিক্ত হলাম।’ রবিবার সকাল ৮টা ১২ মিনিটে মুম্বইয়ের ‘ব্রিচ ক্যান্ডি’ হাসপাতালে ৯২ বয়স বয়সি শিল্পী শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ তাঁর শেষ যাত্রায় তাঁকে সম্মান জানিয়েছেন শোকস্তব্ধ দেশবাসী। লতা মঙ্গেশকরের প্রতি সম্মানজ্ঞাপনার্থে দেশে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। অর্ধনমিত থাকবে জাতীয় পতাকা। পাশাপাশি এই কিংবদন্তি শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শততম শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎসব (মাঘ উৎসব)-এর রবিবারের সন্ধ্যার অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিল। এদিন দুপুরেই বিশ্বভারতীর তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎসবের সন্ধ্যার অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানানো হয়। শততম শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎসব (মাঘ উৎসব) উপলক্ষে এদিন সকাল থেকে বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণে বৈতালিক সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটায় পাকুড়তলায় বৈতালিকের মাধ্যমে মাঘ উৎসবের সূচনা। এরপর সকাল সাড়ে আটটায় বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি প্রাক্তন অধ্যাপক মাননীয় সুনীতি পাঠক সহ অন্যান্য অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মী সহ আশ্রমিকবৃন্দসহ ফ্রেস্কো প্রাঙ্গণে শ্রীনিকেতনের বার্ষিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সন্ধ্যা ছটায় ফ্রেস্কো প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এদিনের মাঘ উৎসবের সমাপ্তি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এর মধ্যেই হল নক্ষত্রপতন, ভারতীয় সংগীতজগৎকে শূন্য করে দিয়ে চলে গেলেন কোকিলকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর। তাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই মাঘ উৎসবের সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

রবিবার মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে সমস্ত করোনা বিধি মেনেই তিন বাহিনীর গান স্যালুটের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হল তাঁর শেষকৃত্য। এদিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় প্রভুকুঞ্জে, তাঁর বাড়িতে। সেখান থেকেই বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁর শবদেহ নিয়ে যাত্রা করা হয় শিবাজি পার্কের উদ্দেশে। সুরসম্রাজ্ঞীর শেষকৃত্যের সময় উপস্থিত থেকে তাঁকে শেষযাত্রায় সম্মান জানান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন এবং শচীন তেন্ডুলকারের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। সোমবার মহারাষ্ট্র সরকার তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সোমবার পূর্ণ দিবস ছুটি ঘোষণা করেছে।

গত ২৭ দিন ধরেই অবনতি ঘটছিল শারীরিক অবস্থার৷ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠলেও অবস্থা খারাপ হতে আরম্ভ করে বাড়িতে ফেরার পর থেকেই। অবশেষে ৬ তারিখ সকালে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ৯২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ তিনি দ্য ইন্ডিয়ান নাইটিঙ্গল লতা মঙ্গেশকর। কোকিলকণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল চিরকালের মতো। শোকস্তব্ধ ভারবতবাসী। ক্রিকেটপ্রেমী লতা মঙ্গেশকারের সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক সম্পর্ক ছিল সচীন তেন্ডুলকরের। এদিন সকালে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে তিনি শোকপ্রকাশ করে লেখেন, ‘লতাদিদির জীবনে আমি একটা অংশ হিসেবে ছিলাম। ওঁর মৃত্যুতে মনে হচ্ছে, আমি একটা সত্তা হারিয়ে ফেললাম।

দীর্ঘ আট দশক ধরে তিনি আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন, মুগ্ধ করেছেন তার সুরের মাধুর্যে, কণ্ঠের জাদুতে। হিন্দি, মারাঠি, বাংলা সহ ছত্রিশটিরও বেশি ভারতীয় ও বিদেশি ভাষায় তাঁর গাওয়া অগণিত ক্লাসিকাল, গজল, ভজন, আধুনিক ও সিনেমার গান আজও সমানভাবে জনপ্রিয় দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে। লতা মঙ্গেশকরই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি জীবিত অবস্থায় গ্রহণ করেছিলেন ‘ভারতরত্ন’ সম্মাননা৷ এছাড়াও সারাজীবনে পেয়েছেন পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, লিজিয়ন অফ অনার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড সহ অজস্র সম্মাননা। তাঁর প্রয়াণে যথার্থ অর্থেই রিক্ত হল ভারতবর্ষ।

Skip to content