রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


বাঙালির বারো মাসের চতুর্দশ তম পার্বণটি নিঃসন্দেহে বইমেলা। বাঙালি চিরকালের বই প্রেমিক! বইয়ের সঙ্গে তার অবিচ্ছেদ্য ভালোবাসা। ‘বইমেলা’ এই ভালোবাসারই অনবদ্য যাপনের আর এক নাম।
‘বইমেলা’ শব্দটি আমার মতো অনেকেরই মনে বিভিন্ন অনুভূতি এবং স্মৃতির বর্ণময় কোলাজের জলছবি এঁকে দেয়। সেই ছোট্টবেলায় বাবার হাত ধরে বইমেলায় যাওয়া দিয়ে শুরু। প্রথম কিনে দেওয়া বই— “তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম”! তখন বইমেলা মানেই ময়দান আর মেলায় ঢোকার টিকিটের বিশাল লাইন।
আর একটু বড় হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার বইমেলা। তখন মেট্রোরেলের স্টেশনে একসঙ্গে অনেকগুলো এন্ট্রি পাস দেওয়া হতো। ব্যাস, আমাদের আর তখন পেত কে! মাঠের ঘাসগুলোও চিনে যেত আমাদের বাউন্ডুলের দলকে।
আরও পড়ুন:

মাধ্যমিক ২০২৩: ইংরেজি বিষয়ে লাস্ট মিনিট সাজেশনের খুঁটিনাটি জানতে দেখে নাও ভিডিয়ো

মাধ্যমিক ২০২৩: ভূগোলে বেশি নম্বরের জন্য এইসব প্রশ্নগুলি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে পড়ো

মাধ্যমিক ২০২৩: একটু সতর্ক হলেই অঙ্কে লিখিত পরীক্ষায় ৯০তে ৯০ পাওয়া সম্ভব

প্রথম প্রেমের প্রথম উপহারও ছিল এই বইমেলা থেকেই। এই বইমেলা জানে আমার প্রথম অনেক কিছু। তারপর ময়দান থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বইমেলা আশ্রয় পেয়েছিল মিলন মেলায়, আপাতত তার ঠাঁই হয়েছে সল্টলেকের করুণাময়ীতে। বই-সোহাগী বাঙালির কাছে বইমেলার অমোঘ টান কিন্তু দুর্নিবার।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৬: প্রকৃতি নিয়ে পর্যটন

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৪: কাশীর পথে-ঘাটে

পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১: একটি ক্লান্তিকর বাসযাত্রা এবং…

সেই টানের কাছে দূরত্বের বাধা তুচ্ছ হয়ে যায়। গতকাল বিকেলে যখন অটো থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় পা রাখলাম আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবন সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আমায় ঘিরে ধরলো! ওই যে ছোট্ট ছেলেটি, যার চশমাটা নেমে এসেছে নাকের ওপর, আর সে মন দিয়ে ‘টিনটন সমগ্র’ বাছতে ব্যস্ত। তার ওই মোটা পাওয়ারের কাঁচে আমি নিজের ছোটবেলার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম।
আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন? সুস্থ থাকতে কোন ১০টি ফল খাবেন?

স্বাদে-আহ্লাদে: খুদের টিফিনে কী দেবেন ভেবেই মাথায় হাত? ঝটপট বানিয়ে ফেলুন মুগ ডালের চিল্লা!

দশভুজা: সোনার মেয়ে কার্তিকা

আমার কলেজবেলার আমি এক মুহূর্ত স্পর্শ করে গেল ‘Wuthering Heights’, ‘Jane Eyre’ এর তাকে হাত রাখা মেয়েটির হাত। ‘শরদিন্দু রচনাবলি’, ‘তারাশঙ্কর রচনাবলি’র নতুন জামা দেখে আনমনে হাত চলে গেল সেই দিকে।
স্টলের বাইরে বেরিয়ে দেখি আজও বাউন্ডুলের দল গিটার হাতে ঘাসের ওপর বসে। আজও ‘আনন্দ’ আর ‘দেজ’ এর সামনে সর্পিল মানব সরণি। খুব চেনা চেনা একটা গন্ধ, নস্টালজিয়ায় ডুবিয়ে দিল। আমার মতো বহু বাঙালিরই ‘জিয়া নস্টাল’ হয় এই বইমেলায় এসে। এই বই যাপনের রোম্যান্টিসিজমই হয়তো আজও বাঙালিকে বাঙালিয়ানার সঙ্গে জুড়ে রেখেছে এবং আগামীতেও রাখবে!

ছবি: লেখিকা
* ক্লাসরুম-ইংলিশ টিংলিশ (Classroom-English Tinglish) : পর্ণা চৌধুরী (Parna Chowdhury) ইংরেজির শিক্ষিকা, গভঃ বেসিক কাম মাল্টিপারপাস স্কুল, বাণীপুর

Skip to content