ভাষা দিবস পালনের বিশেষ অনুষ্ঠান। ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
সারাবছর যে আমরা আপন ভাষা, মাতৃভাষা কিংবা অন্য ভাষা নিয়েও খুব ভাবি তা নয়। একটা একুশে ফেব্রুয়ারি এসে পড়লেই আমরা আলোচনায় আসি, তর্কে জড়াই আর পার্বণী উদযাপনে মাতি। একটা রক্তস্নাত আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মুখের ভাষাকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা দেবার যে উদ্দীপনা, তাকে আমরা শুধু আজ বুঝি শুধু কিছু অনুষ্ঠান উদযাপনের পরিসরেই সীমাবদ্ধ রাখি। গৌরবের অনুভবে তাকে নিত্যদিনের জীবনচর্যায় লালন পালন আর করা হয়ে ওঠে কই!
পৃথিবীতে প্রায় ২০ কোটির ওপর মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। ভাষা ব্যবহারের নিরিখে বিশ্বে বাংলার স্থান সপ্তম। আর ভারতে বাংলায় কথা বলেন প্রায় ১০ কোটি মানুষ। ব্যবহারের হিসেবে ভারতে বাংলাভাষীর স্থান দ্বিতীয়। অথচ গৌরবের তথ্যটি হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালির গৌরবময় আত্মবিশ্বাসই বা কতটুকু! হয়তো সেই আত্মবিশ্বাসটুকু খুইয়ে এত বিস্তৃত বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালির একাংশ আজ বিপন্ন বোধ করে আত্মপরিচয়ের অস্মিতাহীনতায়।
ভাষা তো আসলে আত্মপরিচয়ের সংকেত। সাংকেতিক ধ্বনির মধ্যে দিয়ে ভাব-ভাবনার প্রকাশ আর তাতেই ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সংযোগ। এই সংকেতের বোধগম্যতা থেকেই ভাষার বিস্তৃতি। এটি প্রাথমিক কথা। কিন্তু ভাষার বিকাশ দাঁড়িয়ে আছে মূলত অর্থনৈতিক রাজনীতির ওপর। যে জাতির অর্থনীতি যত মজবুত, তার ভাষাও তত দাপুটে। সেখান থেকেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের শুরু। ভাষার ওপর সংখ্যাগুরুর সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ ছোট ভাষাকে গ্রাস করে নেয়। পৃথিবীতে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ কথা বলেন, এমন ভাষার সংখ্যা ১৬০। তথ্য বলছে, বিশ্বে স্বল্প সংখ্যক মানুষের ভাষায় কথা বলেন ৮৫ শতাংশ আর বড় ভাষায় কথা বলেন মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ। এখান থেকেই বোঝা সম্ভব ভাষা রাজনীতির স্বরূপ।
ভাষাকে দাবিয়ে রেখে অন্য ভাষা চাপিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রকল্প আমরা দেখেছি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। একটা অভূতপূর্ব লড়াই লড়ে সে দেশের বঙ্গভাষীরা যেভাবে জিতে গিয়েছিলেন, সেটা শুধু একটা ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের সংগ্রাম ছিল না। ছিল আত্মপরিচয় অক্ষুণ্ণ রাখবার এক মরিয়া আন্দোলন। এই সংগ্রাম পরবর্তীতে বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে।
আজ আমরা এমন এক ভুবনগ্রামে এসে পৌঁছেছি, যেখানে বিশ্ববাজারের ভুবনগ্রাসী অর্থনীতি বিপন্ন করে তুলছে বহুমাত্রিক বিভিন্নতা। ভাষা সংস্কৃতি সবই এখন বাজারের অর্থনীতির স্বার্থে একীকরণের আগ্রাসনের মুখে। সেখানে ছোট ভাষাদের টিকে থাকা শুধু দুরূহই নয়, প্রায় অসম্ভবই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভাষাকে রক্ষার আন্দোলন শুধু আজ জাতির সাংস্কৃতিক আবেগ দিয়ে রক্ষা করা যাবে না, তাকে দাঁড়াতে হবে জাতিগত ও অর্থনীতিগত স্বাধিকার, সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে।
এই বোধ থেকেই মনে ভাবনা আসে, শুধু পার্বণী উদযাপনেই একুশে ফেব্রুয়ারিকে আটকে রাখলে একুশের মূল অন্তর্বস্তুই আড়ালে চলে যাবে। একুশের উদ্দীপনাকে রূপান্তরিত করতে হবে অকারণ অসূয়াজনিত ধর্মান্ধ সংস্কৃতিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তচিন্তার সংবর্তনে।
কিন্তু, নির্লিপ্ততার শীতঘুম থেকে আমরা জাগব কি?
পৃথিবীতে প্রায় ২০ কোটির ওপর মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। ভাষা ব্যবহারের নিরিখে বিশ্বে বাংলার স্থান সপ্তম। আর ভারতে বাংলায় কথা বলেন প্রায় ১০ কোটি মানুষ। ব্যবহারের হিসেবে ভারতে বাংলাভাষীর স্থান দ্বিতীয়। অথচ গৌরবের তথ্যটি হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালির গৌরবময় আত্মবিশ্বাসই বা কতটুকু! হয়তো সেই আত্মবিশ্বাসটুকু খুইয়ে এত বিস্তৃত বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালির একাংশ আজ বিপন্ন বোধ করে আত্মপরিচয়ের অস্মিতাহীনতায়।
ভাষা তো আসলে আত্মপরিচয়ের সংকেত। সাংকেতিক ধ্বনির মধ্যে দিয়ে ভাব-ভাবনার প্রকাশ আর তাতেই ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সংযোগ। এই সংকেতের বোধগম্যতা থেকেই ভাষার বিস্তৃতি। এটি প্রাথমিক কথা। কিন্তু ভাষার বিকাশ দাঁড়িয়ে আছে মূলত অর্থনৈতিক রাজনীতির ওপর। যে জাতির অর্থনীতি যত মজবুত, তার ভাষাও তত দাপুটে। সেখান থেকেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের শুরু। ভাষার ওপর সংখ্যাগুরুর সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ ছোট ভাষাকে গ্রাস করে নেয়। পৃথিবীতে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ কথা বলেন, এমন ভাষার সংখ্যা ১৬০। তথ্য বলছে, বিশ্বে স্বল্প সংখ্যক মানুষের ভাষায় কথা বলেন ৮৫ শতাংশ আর বড় ভাষায় কথা বলেন মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ। এখান থেকেই বোঝা সম্ভব ভাষা রাজনীতির স্বরূপ।
ভাষাকে দাবিয়ে রেখে অন্য ভাষা চাপিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রকল্প আমরা দেখেছি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। একটা অভূতপূর্ব লড়াই লড়ে সে দেশের বঙ্গভাষীরা যেভাবে জিতে গিয়েছিলেন, সেটা শুধু একটা ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের সংগ্রাম ছিল না। ছিল আত্মপরিচয় অক্ষুণ্ণ রাখবার এক মরিয়া আন্দোলন। এই সংগ্রাম পরবর্তীতে বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে।
আজ আমরা এমন এক ভুবনগ্রামে এসে পৌঁছেছি, যেখানে বিশ্ববাজারের ভুবনগ্রাসী অর্থনীতি বিপন্ন করে তুলছে বহুমাত্রিক বিভিন্নতা। ভাষা সংস্কৃতি সবই এখন বাজারের অর্থনীতির স্বার্থে একীকরণের আগ্রাসনের মুখে। সেখানে ছোট ভাষাদের টিকে থাকা শুধু দুরূহই নয়, প্রায় অসম্ভবই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভাষাকে রক্ষার আন্দোলন শুধু আজ জাতির সাংস্কৃতিক আবেগ দিয়ে রক্ষা করা যাবে না, তাকে দাঁড়াতে হবে জাতিগত ও অর্থনীতিগত স্বাধিকার, সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে।
এই বোধ থেকেই মনে ভাবনা আসে, শুধু পার্বণী উদযাপনেই একুশে ফেব্রুয়ারিকে আটকে রাখলে একুশের মূল অন্তর্বস্তুই আড়ালে চলে যাবে। একুশের উদ্দীপনাকে রূপান্তরিত করতে হবে অকারণ অসূয়াজনিত ধর্মান্ধ সংস্কৃতিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তচিন্তার সংবর্তনে।
কিন্তু, নির্লিপ্ততার শীতঘুম থেকে আমরা জাগব কি?