গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
তাঁর সুর শুনে আমাদের বড় হয়ে ওঠা৷ কালের নিয়মে হয়তো সবাইকেই এ পৃথিবীর জায়গা ছেড়ে দিতে হয়, কিন্তু তিনি তো তাঁদের একজন গুণিগণগণনারম্ভে যাঁদের নাম সসম্ভ্রমে উচ্চারিত হয়৷ তিনি চলে গিয়েও রয়ে গেছেন আমাদের মধ্যে৷ জীবন্ত কিংবদন্তি সুরের মোহমায়ায় মুগ্ধ করে রেখেছেন কয়েক দশকব্যাপী মানুষজনকে৷ তাঁর গাওয়া কথায় বলতে হয়, মাঝে মাঝে আড়ালে না হারালে ওই মন কি অমন মনে রাখত! তিনি চলে গেছেন চিরতরে, কিন্তু আবালবৃদ্ধবনিতা তাঁকে মনে করছে, তাঁর সুর শুনছে, তাঁর গাওয়া গানের কথার অনুরণন চলছে চারধারে, ‘কিছুক্ষণ আরও নাহয় রহিতে কাছে’৷ ব্যথা অনুভব করছে, সুর থেমে যাওয়ার কষ্টে৷ হয়তো এ সময় পেরিয়ে যাবে৷ হয়তো এ অভাবে প্রলেপ পড়বে জীবনের নিয়মে, কিন্তু রয়ে যাবে যাবে স্বর্ণযুগের সেইসব গান, প্রখ্যাত সুরকার গীতিকারদের অমর করে রেখে গেলেন যিনি, লোকে মনে করবে তাঁকে, ব্যথায়, প্রেমে, একাকিত্বে, আনন্দে, উচ্ছলতায়, ভালোলাগায়৷
তাঁর বাড়িতেই ছিল সাংগীতিক আবহাওয়া৷ বংশপরম্পরাক্রমে শাস্ত্রীয় সংগীতের আলাপচারিতা যাঁর ঘরে, তাঁর সুরের হাতেখড়ি হয় নিজের বাবার কাছে ভক্তিমূলক গান শিখে আর মায়ের গলায় নিধুবাবুর টপ্পা শুনে শুনে৷ এরপর সন্তোষকুমার বসু, চিন্ময় লাহিড়ী আর যামিনী গাঙ্গুলির কাছে বেশ কিছু বছর তালিম নিলেও তাঁর জীবনে মোড় ঘোরে তখন, যখন ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁর কাছে শাস্ত্রীয় সংগীত শেখার ইচ্ছা তাঁর প্রবল হয়৷ নিজের বড়দাদার কাছে তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷ বড়দাদা তাঁর সংগীতের সবচেয়ে বড় সমালোচক তথা অনুপ্রেরণাদাতা ছিলেন৷ ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ তখন কলকাতায় পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে থাকছিলেন৷ পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের মাধ্যমে ওস্তাদজির কাছে গান শেখার আর্জি পেশ করতে অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর এ আর্জি মঞ্জুর হয়ে যায়৷ খাঁসাহেবের কাছে নাড়া বেঁধে তাঁর শিক্ষা শুরু হয়৷ খাঁসাহেবকে তিনি বাবা বলতেন৷ খাঁসাহেবের অত্যন্ত স্নেহের পাত্রী ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়৷ ইতিপূর্বে তাঁর শেখার পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ পৃথক৷ তাই ওস্তাদজির কাছে শেখার প্রথমদিকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁর গায়কি, স্বরক্ষেপণের নিপুণতা, শেখানোর ধরন ততটা আত্মস্থ করতে পারেননি৷ তবে গুরু তাঁকে অনেক স্নেহে, অতি যত্নে শিখিয়েছেন রাগের চলনবলন৷ পরবর্তীকালে ওস্তাদজির সুযোগ্য পুত্র মুনাবর আলি খাঁয়ের কাছেও তিনি শিক্ষালাভ করেন৷ ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁ তখন পরলোকপ্রাপ্ত হয়েছেন৷ মুনাবরজি, যাঁকে তিনি ভাইয়া বলে সম্বোধন করতেন, তাঁর কাছেই পাটিয়ালা ঘরানার খুঁটিনাটি আত্মস্থ করতে সমর্থ হন আর ধীরে ধীরে এও বোঝেন যে এই সুর, এই গায়কিই কীভাবে ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলির কণ্ঠে অনবদ্য স্বর্গীয়সুষমা সৃষ্টি করত৷
তাঁর সতীর্থ ছিলেন মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আজীবন শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা করে গিয়েছেন তিনি৷ ওস্তাদজির ‘দেখো বেটা, একভাগ শিখনা ঔর তিনভাগ সুননা’ এই আপ্তবচন তিনি শিরোধার্য করেছেন৷ সময় সুযোগ পেলেই তিনি শুনতেন অনেক অনেক গান, যোগ দিতেন অনুষ্ঠানে, শুধু গান শোনবার জন্য৷ মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর প্রথম রেকর্ড৷ আর ১০০০-এর বেশি গেয়ে যাওয়া তাঁর বেশিরভাগ গানেই শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিমের ছোঁয়া সুস্পষ্ট৷ তবে শাস্ত্রীয় সংগীতের জগৎ থেকে এসে আধুনিক গানের নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সেও তো বড় সহজ নয়৷ দুটোই দীর্ঘপথ, কিন্তু দুইয়ের চলন সম্পূর্ণ পৃথক৷ তাঁর অনেক গানেই রয়েছে শাস্ত্রীয় সংগীতের ছোঁয়া অথচ অদ্ভুত পরিমিতিবোধ, তাই তিনি আপামর জনসাধারণের বড় আপনার৷
নিজের গান নিয়ে তিনি নিজেই সন্তুষ্ট ছিলেন না৷ ইচ্ছা ছিল আরও শাস্ত্রীয় সংগীত গাইবার৷ আরও অ্যালবাম তৈরি করবার৷ তাঁর সে ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি৷ পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতিও তাঁর অসম্ভব আগ্রহ ছিল৷ সে ইচ্ছাও পূর্ণ হয়নি মহাগায়িকার৷ সুরসম্রাট ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁর বড় স্নেহের সুযোগ্যা শিষ্যা, সুরসাধিকা আজ অমৃতলোকে৷ শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে জনপ্রিয় লঘুসংগীতে অবাধ অনায়াস বিচরণের পথটি রয়ে গেল বহু মানুষের ভালোলাগা, অনুপ্রেরণা হয়ে৷
তাঁর বাড়িতেই ছিল সাংগীতিক আবহাওয়া৷ বংশপরম্পরাক্রমে শাস্ত্রীয় সংগীতের আলাপচারিতা যাঁর ঘরে, তাঁর সুরের হাতেখড়ি হয় নিজের বাবার কাছে ভক্তিমূলক গান শিখে আর মায়ের গলায় নিধুবাবুর টপ্পা শুনে শুনে৷ এরপর সন্তোষকুমার বসু, চিন্ময় লাহিড়ী আর যামিনী গাঙ্গুলির কাছে বেশ কিছু বছর তালিম নিলেও তাঁর জীবনে মোড় ঘোরে তখন, যখন ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁর কাছে শাস্ত্রীয় সংগীত শেখার ইচ্ছা তাঁর প্রবল হয়৷ নিজের বড়দাদার কাছে তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷ বড়দাদা তাঁর সংগীতের সবচেয়ে বড় সমালোচক তথা অনুপ্রেরণাদাতা ছিলেন৷ ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ তখন কলকাতায় পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে থাকছিলেন৷ পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের মাধ্যমে ওস্তাদজির কাছে গান শেখার আর্জি পেশ করতে অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর এ আর্জি মঞ্জুর হয়ে যায়৷ খাঁসাহেবের কাছে নাড়া বেঁধে তাঁর শিক্ষা শুরু হয়৷ খাঁসাহেবকে তিনি বাবা বলতেন৷ খাঁসাহেবের অত্যন্ত স্নেহের পাত্রী ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়৷ ইতিপূর্বে তাঁর শেখার পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ পৃথক৷ তাই ওস্তাদজির কাছে শেখার প্রথমদিকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁর গায়কি, স্বরক্ষেপণের নিপুণতা, শেখানোর ধরন ততটা আত্মস্থ করতে পারেননি৷ তবে গুরু তাঁকে অনেক স্নেহে, অতি যত্নে শিখিয়েছেন রাগের চলনবলন৷ পরবর্তীকালে ওস্তাদজির সুযোগ্য পুত্র মুনাবর আলি খাঁয়ের কাছেও তিনি শিক্ষালাভ করেন৷ ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁ তখন পরলোকপ্রাপ্ত হয়েছেন৷ মুনাবরজি, যাঁকে তিনি ভাইয়া বলে সম্বোধন করতেন, তাঁর কাছেই পাটিয়ালা ঘরানার খুঁটিনাটি আত্মস্থ করতে সমর্থ হন আর ধীরে ধীরে এও বোঝেন যে এই সুর, এই গায়কিই কীভাবে ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলির কণ্ঠে অনবদ্য স্বর্গীয়সুষমা সৃষ্টি করত৷
তাঁর সতীর্থ ছিলেন মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আজীবন শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা করে গিয়েছেন তিনি৷ ওস্তাদজির ‘দেখো বেটা, একভাগ শিখনা ঔর তিনভাগ সুননা’ এই আপ্তবচন তিনি শিরোধার্য করেছেন৷ সময় সুযোগ পেলেই তিনি শুনতেন অনেক অনেক গান, যোগ দিতেন অনুষ্ঠানে, শুধু গান শোনবার জন্য৷ মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর প্রথম রেকর্ড৷ আর ১০০০-এর বেশি গেয়ে যাওয়া তাঁর বেশিরভাগ গানেই শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিমের ছোঁয়া সুস্পষ্ট৷ তবে শাস্ত্রীয় সংগীতের জগৎ থেকে এসে আধুনিক গানের নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সেও তো বড় সহজ নয়৷ দুটোই দীর্ঘপথ, কিন্তু দুইয়ের চলন সম্পূর্ণ পৃথক৷ তাঁর অনেক গানেই রয়েছে শাস্ত্রীয় সংগীতের ছোঁয়া অথচ অদ্ভুত পরিমিতিবোধ, তাই তিনি আপামর জনসাধারণের বড় আপনার৷
নিজের গান নিয়ে তিনি নিজেই সন্তুষ্ট ছিলেন না৷ ইচ্ছা ছিল আরও শাস্ত্রীয় সংগীত গাইবার৷ আরও অ্যালবাম তৈরি করবার৷ তাঁর সে ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি৷ পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতিও তাঁর অসম্ভব আগ্রহ ছিল৷ সে ইচ্ছাও পূর্ণ হয়নি মহাগায়িকার৷ সুরসম্রাট ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁর বড় স্নেহের সুযোগ্যা শিষ্যা, সুরসাধিকা আজ অমৃতলোকে৷ শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে জনপ্রিয় লঘুসংগীতে অবাধ অনায়াস বিচরণের পথটি রয়ে গেল বহু মানুষের ভালোলাগা, অনুপ্রেরণা হয়ে৷