ছবি প্রতীকী
ত্বকের সমস্যা নিয়ে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সেটি হল, ফর্সা বা গ্ল্যামার বাড়ানোর জন্য নিজের মতো করে অর্থাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বা মলম লাগানো এবং তার ভয়ংকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে। বেশিরভাগ মহিলারা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এটা ওটা ব্যবহার করেন। এর জন্য অনেক আবার টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনে বিভিন্ন ধরনের মলম বা ওষুধ ব্যবহার করতে শুরু করেন। এই ধরনের মলম তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করে থাকেন। এতে কিছুটা ফর্সা ভাব আসে ঠিকই, কিন্তু রোদ্দুরে বেরলেই ত্বক চুলকায়, র্যা শ বের হতে থাকে। কারও কারও ত্বক লালচে হয়ে যায়। তখন এমন একটা পরিস্থিতি হয় যে, তখন তাঁরা সেই সব মলমের ব্যবহার বন্ধও করতে পারে না, আবার সমস্যাও বাড়তে থাকে। ফলে মলম লাগানো বন্ধ করলেই মুখ বিশ্রী দেখতে লাগে, কারও কারও ত্বক কালো হয়ে যায়, চুলকাতে থাকে, আবার র্যা শও বেরয়। তাই তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার সেই সব মলমগুলো মাখতে শুরু করেন।
এরপর তাঁরা এক সময় বুঝতে পারেন যে, ওই জাতীয় মলম ব্যবহার করে তাঁরা ঠিক কাজ করছেন না। তখন তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যান। কিন্তু সমস্যা হল, চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তাঁরা এতদিন ধরে যে মলম লাগাচ্ছেন তা তাঁরা সহজে বলতেও চান না। আসলে বাজার চলতি এই ধরনের মলমগুলো সাধারণত স্টেরয়েড জাতীয় মলম হয়। তাই আমরা সেগুলিকে ব্যবহার করতে বারণ করি। কারণ, এগুলি ত্বকের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল, মলমগুলো যখন ব্যবহার করবেন তখন চটজলদি খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু বন্ধ করে দিলেই নানান সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
এই সময় একটা অদ্ভুত সমস্যা দেখা দেয়। সেটি হল তাঁরা কী মলম মাখছেন তা তাঁরা চিকিৎসকের কাছে খলসা করতে চান না। যদি চিকিৎসক তাঁদের পরামর্শ দেন যে, ওই মলমটা ব্যবহার বন্ধ করে দিন, আমি ওর বদলে আরও ভালো ওষুধ দিচ্ছি! এতে তাঁদের মধ্যে একটা আশঙ্কা বা দুশ্চিন্তা কাজ করে যে, আগের মলম ব্যবহার করা বন্ধ করে দিলে যদি ফের ত্বকে রাশ বের হয় বা চুলকোয়, তখন কী হবে। এরকম ক্ষেত্রে অনেকেই অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের দেওয়া মলম মেখেই তাঁর এই হাল হয়েছে। তখন তাঁর একটা ধারণা হয় যে, চিকিৎসক হয়তো ভুল ওষুধ তাঁকে দিয়েছেন। ফলে তৎক্ষণাৎ তিনি চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ বন্ধ করে আবার আগের মলম মাখতে আরম্ভ করে দেন। এর ফলে একটার পর একটা ভুল করতেই থাকলেন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এরকম সিদ্ধান্ত বদল একদমই উচিত নয়। এবং তা খুব ক্ষতিকরও।
যে কোনও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ না জেনে-বুঝে মুখে বা অন্যত্র ব্যবহার করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের ওষুধ বা মলম ব্যবহার করলে ত্বক পাতলা হয়ে যেতে পারে। ফলে ওই জায়গার ত্বক লাল হয়ে রক্তনালী পর্যন্ত ফুটে ওঠতে পারে। অনেকের ব্রণর সমস্যাও হয়। এমনকি, অবাঞ্ছিত লোমও গজাতে পারে মহিলাদের মুখে। রোদে বেরলে ত্বক লাল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলে ত্বকের জটিল অসুখও দেখা দিতে পারে, যার জেরে মানসিক সমস্যারও শিকারও হন কেউ কেউ। অনেকে তো স্টেরয়েড অ্যাডিকশন বা নেশার শিকারও হয়ে ওঠেন।
সুতরাং, আমি প্রাকৃতিক ভাবে যে গায়ের রং পেয়েছি সেটাই আসল, সেটাই বাস্তব এবং সুন্দর। সেই ভাবে নিজের মনকে প্রস্তুত করুন। আর কোনও কারণে নিজের মতো মলম ব্যবহার করলে প্রথমেই আমাদের মেনে নিতে হবে যে, এই জাতীয় মলম মাখা বন্ধ করে দিলে তাৎক্ষনিক হয় তো কিছুটা অসুবিধা হতে পারে, তবুও সেটি আর মাখব না। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাজার চলতি কোনও স্টেরয়েড ক্রিম না ব্যবহার করা যাবে না। মনে রাখবেন, আমাদের নিজস্ব রং নিয়েই সুন্দর হওয়া যায়। সব থেকে বড় কথা সুরক্ষিত থাকা যায়। তবে একটু আধটু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো যেতেই পারে। সেই ভাবনায় কোনও গলদও নেই। তবে সেটা করার আগে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। জেনে রাখা ভালো, নিজের স্বাভাবিক রং-কে আরও ফর্সা করতে হবে, এই প্রতিযোগিতায় দৌড়লে কিন্তু বড় ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর সেই ভুলের মাশুল কিন্তু বহুদিন ধরে দিতে হতে পারে।
যোগাযোগ: ৯৮৩১৫৮৫০৮০, ৯৮৩০৩৮২৪৯৮
যোগাযোগ: ৯৮৩১৫৮৫০৮০, ৯৮৩০৩৮২৪৯৮