রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


আমরা প্রবাসে থাকি। এখানে দুর্গাপুজোর থেকে দিওয়ালির জাঁকজমক বেশি। এটা আমাদের একটা বড়সড় কমপ্লেক্স। করোনার প্রথম বছর উৎসব-বিহীন ছিল। দ্বিতীয় বছরে একটু আধটু আনন্দ অনুষ্ঠান হয়েছিল। এবারের এই তৃতীয় বছরে যাকে বলে ‘ফুল-অন ফুর্তি’। স্বাভাবিকভাবে প্রথম বছর আমরা বাড়ি থেকে বেরোতাম না। অনলাইন নির্ভর জীবন। সেই ডেলিভারিও আবার ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে নয়, কমপ্লেক্সের মেনগেটে পৌঁছত। সিকিউরিটির কাছ থেকে গিয়ে প্যাকেট নিয়ে আসতে হতো। করোনার প্রকোপে সকলের ওয়ার্ক ফ্রম হোম। তাই ছেলে তখন আমাদের কাছে থেকে কাজ করছে।
কালীপুজোর দিন সকালে জিনিস আনতে গিয়ে দেখি সিকিউরিটিরা কী একটা ব্যাপারে খুব ব্যস্ত। তাঁদের কাছে চার-চারটে মিষ্টির প্যাকেট এসেছে। ডেলিভারি এড্রেস-এ লেখা আছে, ‘সিকিউরিটি স্টাফ’ আমাদের কমপ্লেক্স এর নাম। ‘হ্যাপি দিওয়ালি’। কে পাঠিয়েছে তার নাম ধাম কিছু উল্লেখ নেই। তাঁদের সন্দেহ হয়। কে পাঠিয়েছেন? কেন পাঠিয়েছেন? আমি তাঁদের বুঝিয়ে বললাম, কেউ আপনাদের দিওয়ালির শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন হয়তো। সবাই ভাগ করে খেয়ে নিন। খুলে দেখুন কী আছে? বাক্স খুলে দেখা গেল চারটি বাক্স কাজু বরফি দিয়ে সাজানো।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-১২: বাইরের দরজা ঠেলে দু’ জন মাঝবয়সী অচেনা লোক ঢুকে পড়লেন

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক,

পরের বছর ছেলে তার কর্মস্থলে। তবে কালীপুজোর দিন এসেছিল। তখন অবশ্য অনলাইন ডেলিভারি ফ্ল্যাটের দরজা পর্যন্ত আসতেন। দিওয়ালির দিন কী একটা কাজে বেরিয়েছিলাম, কি মনে হল গেটে দাঁড়িয়ে একবার সিকিউরিটি ইনচার্জকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘এবার দিওয়ালিতে কাজু বরফি এসেছে?’’
আরও পড়ুন:

স্বাদে-গন্ধে: রোজকার খাবার একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে? বাড়িতে সহজেই বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পালং পনির

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৮: রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কাটতেন, সাঁতার শেখাতেন

আমাকে অবাক করে তাঁরা বলে উঠলেন, ‘‘হ্যাঁ। সেই একই রকম বড় বড় চার প্যাকেট। কে পাঠিয়েছেন কোনও নাম ছিল না।”

বেশ অবাক হয়ে লেগেছিল। এই দেখনদারির দুনিয়ায় কে এমন প্রচারহীন মানুষ আছেন! যেই পাঠান না কেন তাঁর শিক্ষা, রুচি, সহবতের প্রশংসা করতেই হয়। ধন্যবাদ তাঁর মা-বাবারও প্রাপ্য নিজেকে আড়ালে রেখে মানুষের উপকার করার সুশিক্ষা তাঁরা দিতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন:

রোজ প্রাতরাশে ডিমের সঙ্গে কলা খাচ্ছেন? এর ফলে কী হচ্ছে জানেন

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩০: সত্যজিৎ ও সুচিত্রা জুটির সেই ছবি তৈরি হলে তা মাইলস্টোন হয়ে উঠতে পারতো

এ বছর চারদিকে উছলে পড়া আনন্দ কিন্তু আমাদের মন ভালোমন্দে মেশানো। অফিসের কাজে ছেলে বিদেশে। সুযোগটা পাবার খুশি আর উৎসবের দিনে দূরে থাকার খারাপ লাগা মিলেমিশে আছে। কালীপুজোর দিনে ছেলে হোয়াটসঅ্যাপ কল করল। একথা সেকথা পর বলল, ‘‘বাবা তোমায় একটা কাজ করতে হবে। ৫০০ গ্রাম করে চার প্যাকেট কাজু বরফি অন লাইনে অর্ডার করে গেটের সিকিউরিটির নামে ডেলিভারি করিয়ে দিও, সেন্ডারের নাম দেবে না”।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।

Skip to content