
অলঙ্করণ: সৌমি দাসমণ্ডল।
অগস্ট ২২০৪। আমাদের এই কলকাতা শহর। আমাদের চেনা-জানা সাদার্ন অ্যাভেনিউ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক অনেক বদলে গিয়েছে শহর। রাসবিহারী থেকে এখন তিনতলা রাস্তা।
মানে যাকে বলে থ্রি টায়ার ফ্লাই-ওভার। একতলায় মানে মাটি ছুঁয়ে আমাদের সেই চেনা রাস্তাটাই কিছুটা এগোলেই তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা আছে ‘ভি সার্কেল’। হ্যাঁ, যা ভাবছেন ঠিক তাই। গোলপার্ক মানে বিবেকানন্দ সার্কেলই সংক্ষেপে ‘ভি সার্কেল’ সেই সাইনেজের ঠিক ওপরেই খাড়া তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা ইএমবিপি ১, ইএমবিপি ২, ইএমবিপি ৩। এর মানে হল দোতলা ফ্লাইওভারে একটু এগিয়ে তিনতলা ফ্লাইওভারে চড়লে আপনি সরাসরি পৌঁছে যাবেন বাইপাসে। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস এখন একটা নয়। তিন তিনখানা। বিশ্বব্যাংকের টাকায় মায়াপুর রানাঘাট হাবড়া হয়ে রায়দিঘি হল এমবিপি ২। আর বনগাঁ গোবরডাঙ্গা বসিরহাট হয়ে সন্দেশখালি গোসাবা চলে যাচ্ছে এমবিপি ৩। এখন আর কলকাতায় মনীষীদের নামে রাস্তার নামকরণ হয় না।
গাড়িতে এখন ফাস্ট্যাগ লাগান বাধ্যতামূলক। যেটা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা। আপনি ফাস্ট্যাগ রিচার্জ করুন বা না করুন আপনার ব্যাংক থেকে ফাস্ট্যাগে টাকা চলে যাবে। আজকাল আপনাকে আয়কর ভরতে হয় না। আপনার রোজগার থেকে আপনাআপনি আয়কর কেটে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের ঘরে টাকা জমা পড়ে। প্রশাসন চালায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। পার্টি পলিটিক্স ইলেকশন শপথগ্রহণ দলবদল প্রতিবাদসভা ধর্না এসব নেই। ভবিষ্যৎদ্রষ্টা সুকুমার রায়-এর হিজিবিজবিজ এর গাছে বসে সিলেট পেনসিল নিয়ে হিসেব করতে থাকা ‘কাকেশ্বর কুচকুচে’র মতোই আজকাল মানুষের হাতে সময়ের বড় আকাল।
বছর ৩২-এর যুবতী প্রফেশনাল তিয়াসের ঘুম ভাঙলো তার ৩৬ তলার আধুনিক বেডরুমে। এখন বেশ খানিকটা সময় তিয়াস তার নিজস্ব জিমে গা ঘামাবে। তারপর ধ্যানে বসবে। তার নিজের ডিজাইনে বানানো কাচের ক্যাপসুল রুমে বসে ধ্যান করবে সে। বিশেষ ব্যবস্থায় অনবদ্য নীল রঙের জলরাশি অনবরত আছড়ে পড়ছে সেই ক্যাপসুলের বাইরের কাচের দেওয়ালে। সেই ক্যাপসুল এর মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা অক্সিজেনে ঠাসা বাতাস বয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। তখন বাজতে থাকবে হালকা ফ্লুট বা সেতার। এটা সিন্থেসাইজড সংগীতের যুগ। অকৃত্রিম বাঁশি বা সেতার এখন আর পাওয়াই যায় না। সামান্য কয়েকজন যাঁরা সেসব বাজাতে জানেন তাঁরা এসব বাজাবার পাবলিক শো আর করেন না। বিশাল অবস্থাপন্ন মানুষজনের আমন্ত্রণে তাঁরা সামান্য কিছু মানুষের সামনে লাইভ শো করেন। তাঁদের নিজস্ব সিকিউরিটি খেয়াল রাখে যাতে কোনও অডিও ভিডিও ‘পাইরেসি রেকর্ডিং’ না হয়। এরপরেও অনুষ্ঠানের অংশ চুরি হলে উদ্যোক্তাকে ভয়ঙ্কর অর্থদণ্ড ভোগ করতে হয়। ক্লাসিকাল মিউজিকের কোনও রেকর্ডিং বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না।
অনেক খরচ করে তিয়াস তার পছন্দের সেতার শিল্পীর মিউজিকের অংশ কিনেছে। ধ্যানের সময়টুকু বাজানোর জন্য। ফ্লুট-মিউজিকের রিনিউয়্যাল করেনি। ডিজাইনার পোশাকের মতো রাগসংগীতের ডিজিটাল রেকর্ডিং-এর অংশও আজকাল দুর্মূল্য। সাবস্ক্রাইব করতে হয়। যন্ত্রনির্ভর এই যুগে দিনের শুরুতে কিছুটা সময় গা ঘামিয়ে ক্যালোরি খরচ আর মনের ভারসাম্য রাখতে ধ্যান করাটা আজকাল আর ফ্যাশন নয়। খুব জরুরি। যে হারে পলিউশন বাড়ছে। সেখানে নিয়ম করে অক্সিজেন নেওয়াটাও সমান জরুরি। তিয়াস তাই তার ধ্যানের সময়টাই অক্সিজেন নেবার ব্যবস্থা রেখেছে।
মানে যাকে বলে থ্রি টায়ার ফ্লাই-ওভার। একতলায় মানে মাটি ছুঁয়ে আমাদের সেই চেনা রাস্তাটাই কিছুটা এগোলেই তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা আছে ‘ভি সার্কেল’। হ্যাঁ, যা ভাবছেন ঠিক তাই। গোলপার্ক মানে বিবেকানন্দ সার্কেলই সংক্ষেপে ‘ভি সার্কেল’ সেই সাইনেজের ঠিক ওপরেই খাড়া তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা ইএমবিপি ১, ইএমবিপি ২, ইএমবিপি ৩। এর মানে হল দোতলা ফ্লাইওভারে একটু এগিয়ে তিনতলা ফ্লাইওভারে চড়লে আপনি সরাসরি পৌঁছে যাবেন বাইপাসে। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস এখন একটা নয়। তিন তিনখানা। বিশ্বব্যাংকের টাকায় মায়াপুর রানাঘাট হাবড়া হয়ে রায়দিঘি হল এমবিপি ২। আর বনগাঁ গোবরডাঙ্গা বসিরহাট হয়ে সন্দেশখালি গোসাবা চলে যাচ্ছে এমবিপি ৩। এখন আর কলকাতায় মনীষীদের নামে রাস্তার নামকরণ হয় না।
গাড়িতে এখন ফাস্ট্যাগ লাগান বাধ্যতামূলক। যেটা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা। আপনি ফাস্ট্যাগ রিচার্জ করুন বা না করুন আপনার ব্যাংক থেকে ফাস্ট্যাগে টাকা চলে যাবে। আজকাল আপনাকে আয়কর ভরতে হয় না। আপনার রোজগার থেকে আপনাআপনি আয়কর কেটে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের ঘরে টাকা জমা পড়ে। প্রশাসন চালায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। পার্টি পলিটিক্স ইলেকশন শপথগ্রহণ দলবদল প্রতিবাদসভা ধর্না এসব নেই। ভবিষ্যৎদ্রষ্টা সুকুমার রায়-এর হিজিবিজবিজ এর গাছে বসে সিলেট পেনসিল নিয়ে হিসেব করতে থাকা ‘কাকেশ্বর কুচকুচে’র মতোই আজকাল মানুষের হাতে সময়ের বড় আকাল।
বছর ৩২-এর যুবতী প্রফেশনাল তিয়াসের ঘুম ভাঙলো তার ৩৬ তলার আধুনিক বেডরুমে। এখন বেশ খানিকটা সময় তিয়াস তার নিজস্ব জিমে গা ঘামাবে। তারপর ধ্যানে বসবে। তার নিজের ডিজাইনে বানানো কাচের ক্যাপসুল রুমে বসে ধ্যান করবে সে। বিশেষ ব্যবস্থায় অনবদ্য নীল রঙের জলরাশি অনবরত আছড়ে পড়ছে সেই ক্যাপসুলের বাইরের কাচের দেওয়ালে। সেই ক্যাপসুল এর মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা অক্সিজেনে ঠাসা বাতাস বয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। তখন বাজতে থাকবে হালকা ফ্লুট বা সেতার। এটা সিন্থেসাইজড সংগীতের যুগ। অকৃত্রিম বাঁশি বা সেতার এখন আর পাওয়াই যায় না। সামান্য কয়েকজন যাঁরা সেসব বাজাতে জানেন তাঁরা এসব বাজাবার পাবলিক শো আর করেন না। বিশাল অবস্থাপন্ন মানুষজনের আমন্ত্রণে তাঁরা সামান্য কিছু মানুষের সামনে লাইভ শো করেন। তাঁদের নিজস্ব সিকিউরিটি খেয়াল রাখে যাতে কোনও অডিও ভিডিও ‘পাইরেসি রেকর্ডিং’ না হয়। এরপরেও অনুষ্ঠানের অংশ চুরি হলে উদ্যোক্তাকে ভয়ঙ্কর অর্থদণ্ড ভোগ করতে হয়। ক্লাসিকাল মিউজিকের কোনও রেকর্ডিং বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না।
অনেক খরচ করে তিয়াস তার পছন্দের সেতার শিল্পীর মিউজিকের অংশ কিনেছে। ধ্যানের সময়টুকু বাজানোর জন্য। ফ্লুট-মিউজিকের রিনিউয়্যাল করেনি। ডিজাইনার পোশাকের মতো রাগসংগীতের ডিজিটাল রেকর্ডিং-এর অংশও আজকাল দুর্মূল্য। সাবস্ক্রাইব করতে হয়। যন্ত্রনির্ভর এই যুগে দিনের শুরুতে কিছুটা সময় গা ঘামিয়ে ক্যালোরি খরচ আর মনের ভারসাম্য রাখতে ধ্যান করাটা আজকাল আর ফ্যাশন নয়। খুব জরুরি। যে হারে পলিউশন বাড়ছে। সেখানে নিয়ম করে অক্সিজেন নেওয়াটাও সমান জরুরি। তিয়াস তাই তার ধ্যানের সময়টাই অক্সিজেন নেবার ব্যবস্থা রেখেছে।
বিছানা থেকে মেঝের কার্পেটে পা রাখতেই তিয়াসের রোবটিক্স সেক্রেটারি চালু হল। সারাদিন কী কী কাজ আছে গড় গড় করে বলে গেল ‘পাগলা দাশু’ । তিয়াস তার পছন্দের এই নামটাই রেজিস্টার করেছিল এই গাজেট কেনার সময়। কোম্পানি থেকে সেভাবেই কাস্টমাইজ করা হল, যাতে গাজেট তার নিজের নাম বলে ‘পাগলা দাশু’ বা দাশু বললে সে সাড়া দেয়। এখন বিশ্ববাজারে এই ধরনের সহযোগী মাত্র ১০০ জিসিতে পাওয়া যায়। ‘জিসি’ হল ২২০০ সালে সারা পৃথিবীতে চালু হওয়া এক এবং অভিন্ন ‘গ্লোবাল কারেন্সি’। এখন সারা বিশ্বে তথাকথিত দেশের সীমানা বলতে কিছুই নেই। ডলার ইউরো পাউন্ড বা ইয়েনের লড়াই নেই। সত্যিকারের এক আন্তর্জাতিক একক। একই আকাশের নীচে সকলেই নিজস্ব অস্তিত্ব নিয়ে সহাবস্থান করছে। ২০২২ সালে পুরনো এক হাজার ভারতীয় টাকার সমান আজকের এক জিসি।
তিয়াসের সঙ্গে থাকেন তার মা। মায়ের বয়স ৭০ । নাম ডোনা। ডোনা কিন্তু ৭০ বছরের বৃদ্ধা নয়। নিয়মিত হরমোন চিকিৎসায় ডোনা ৫০ বছর বয়সেই তাঁর বার্ধক্যকে থামিয়ে দিতে পেরেছেন। তিয়াসের বাবা জিজোকে ডোনা হারিয়েছেন দুরারোগ্য এইডস রোগে। পাঁচ বছর আগে ২১৯৯ সালে। এইডস-এর প্রকোপ এখন ভয়ঙ্কর। সেই সঙ্গে আরও এক মানসিক ব্যাধি মানসিক দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। একাকীত্ব বা মেলাঙ্কলি এখন ঘরে ঘরে। ঠিক দু’বছর আগে ২২০২-এ তিয়াস তার আদরের ভাই বাবুইকে হারিয়েছে সেই ভয়ঙ্কর মানসিক রোগে।
ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে দু’বছরের মধ্যেই তিয়াস নিজে এখন একজন অত্যন্ত সফল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তিয়াস কমবয়সীদের মানসিক চিকিৎসায় স্পেশালাইজেশন করেছে। সে এখন সকাল থেকে রাত কল্যাণীতে গড়ে ওঠা তার অতি আধুনিক কম্পিউটারাইজড মেন্টাল এইলমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ল্যাবে থাকে, যা ‘ম্যাডল্যাব’ নামে বিখ্যাত। হাইস্পিড কলকাতা কল্যাণী করিডর বা ‘থ্রি সি’ দিয়ে মিনিট ৩৫ সময় লাগে।
ব্রেকফাস্ট বলতে একেবারেই নিক্তিমাপা মৌল যৌগ কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট এর সুষম বিন্যাসে বানানো দুধ আর কর্নফ্লেক্স। তৈরি হয়ে নিয়ে শেষ মুহূর্তে রিমোটে নিজের আয়রন সেফ বন্ধ করতে করতেই মোবাইলে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে নতুন সংযোজিত কার পারকিং কন্ট্রোলের রোবটিক ব্যবস্থা ‘পার্কোবট’-কে জানায় তার গাড়িপোর্টিকোতে পাঠানোর জন্য। তার স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ড্রাইভারবিহীন। কিন্তু কলকাতার রাস্তা এখনও ড্রাইভারবিহীন গাড়ি চড়ার জন্য উপযোগী হয়ে ওঠেনি। তাই বাড়ির পার্কিং থেকে পোর্টিকো এইটুকুই তিয়াস ড্রাইভারবিহীন গাড়ির সুবিধে ব্যবহার করে।
তিয়াস আর্থিকভাবে সচ্ছল বেশ সুন্দরী কিন্তু, একটু পুরুষালি। তবে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। অথচ তার সত্যিকারের বন্ধুর সংখ্যা বড্ড কম। হতে পারে তার ব্যক্তিত্ব হয়তো কিছুটা বা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তিয়াসের সঙ্গে থাকেন তার মা। মায়ের বয়স ৭০ । নাম ডোনা। ডোনা কিন্তু ৭০ বছরের বৃদ্ধা নয়। নিয়মিত হরমোন চিকিৎসায় ডোনা ৫০ বছর বয়সেই তাঁর বার্ধক্যকে থামিয়ে দিতে পেরেছেন। তিয়াসের বাবা জিজোকে ডোনা হারিয়েছেন দুরারোগ্য এইডস রোগে। পাঁচ বছর আগে ২১৯৯ সালে। এইডস-এর প্রকোপ এখন ভয়ঙ্কর। সেই সঙ্গে আরও এক মানসিক ব্যাধি মানসিক দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। একাকীত্ব বা মেলাঙ্কলি এখন ঘরে ঘরে। ঠিক দু’বছর আগে ২২০২-এ তিয়াস তার আদরের ভাই বাবুইকে হারিয়েছে সেই ভয়ঙ্কর মানসিক রোগে।
ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে দু’বছরের মধ্যেই তিয়াস নিজে এখন একজন অত্যন্ত সফল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তিয়াস কমবয়সীদের মানসিক চিকিৎসায় স্পেশালাইজেশন করেছে। সে এখন সকাল থেকে রাত কল্যাণীতে গড়ে ওঠা তার অতি আধুনিক কম্পিউটারাইজড মেন্টাল এইলমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ল্যাবে থাকে, যা ‘ম্যাডল্যাব’ নামে বিখ্যাত। হাইস্পিড কলকাতা কল্যাণী করিডর বা ‘থ্রি সি’ দিয়ে মিনিট ৩৫ সময় লাগে।
ব্রেকফাস্ট বলতে একেবারেই নিক্তিমাপা মৌল যৌগ কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট এর সুষম বিন্যাসে বানানো দুধ আর কর্নফ্লেক্স। তৈরি হয়ে নিয়ে শেষ মুহূর্তে রিমোটে নিজের আয়রন সেফ বন্ধ করতে করতেই মোবাইলে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে নতুন সংযোজিত কার পারকিং কন্ট্রোলের রোবটিক ব্যবস্থা ‘পার্কোবট’-কে জানায় তার গাড়িপোর্টিকোতে পাঠানোর জন্য। তার স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ড্রাইভারবিহীন। কিন্তু কলকাতার রাস্তা এখনও ড্রাইভারবিহীন গাড়ি চড়ার জন্য উপযোগী হয়ে ওঠেনি। তাই বাড়ির পার্কিং থেকে পোর্টিকো এইটুকুই তিয়াস ড্রাইভারবিহীন গাড়ির সুবিধে ব্যবহার করে।
তিয়াস আর্থিকভাবে সচ্ছল বেশ সুন্দরী কিন্তু, একটু পুরুষালি। তবে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। অথচ তার সত্যিকারের বন্ধুর সংখ্যা বড্ড কম। হতে পারে তার ব্যক্তিত্ব হয়তো কিছুটা বা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-১২: বাইরের দরজা ঠেলে দু’ জন মাঝবয়সী অচেনা লোক ঢুকে পড়লেন

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬: রামচন্দ্রের আবির্ভাব ও বসুন্ধরাকন্যা সীতার অনুষঙ্গ

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১২: দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ঢুকে পড়লাম নিকটবর্তী একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে
মা ডোনা চেয়েছেন তিয়াস নিজের পছন্দমত সঙ্গী খুঁজে নিক। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। যৌন অভিজ্ঞতা হয়েছে তারই এক সহপাঠীর সঙ্গে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সবকিছুই একঘেয়ে হয়ে যাওয়ায় সম্পর্ক আর গড়ায়নি।
হঠাৎই তিয়াস জিয়াকে খুঁজে পেল। তিয়াসের থেকে জিয়া সামান্য ছোট। জিয়া তার পেশেন্ট, মানসিক বৈকল্যের শিকার।
জিয়া এক ফ্যাশন ডিজাইনার। অরণ্য এক মাল্টি মিডিয়া প্রফেশনাল। অনেকগুলো প্রজেক্টে একসঙ্গে কাজ করতে করতে জিয়া ক্রমশ অরণ্যের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছিল। এভাবেই জিয়া তার শরীরে অরণ্যের সন্তান ধারণ করার পর জানতে পারল, অরণ্য বিবাহিত। অরণ্যের মুখোমুখি হতে জিয়ার সঙ্গে অরণ্য তার ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করল। এসময় আইন-কানুন পুলিশ যথেষ্ট কড়া। ইচ্ছে করলেই অরণ্যকে শাস্তি দিতে পারত। সন্তানের জন্য দায়িত্ব নিতে বাধ্য করতে পারত। কিন্তু জিয়া তা করেনি। অরণ্যের সঙ্গে সম্পর্কটা তার কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জিয়া অরণ্যকে এতটাই বিশ্বাস করত। যে এই ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকতার সাংঘাতিক ধাক্কা সে সহ্য করতে পারেনি। স্লিপিং পিল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও জিয়া বেঁচে গেল কিন্তু বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেল। জিয়া পুরোপুরিভাবে মানসিক অবসাদের রোগী হয়ে পড়ল। আর এখান থেকে জিয়াকে আবার জীবনের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তিয়াস।
জিয়ার মনের ধাক্কাকে স্বাভাবিক করতে করতে তিয়াস বুঝতে পারে নরম স্বচ্ছ মনের জিয়ার সঙ্গে তিয়াসের পছন্দ-অপছন্দের অসম্ভব মিল। তিয়াসকে নির্ভর করেই আবার মাথা তুলে দাঁড়ায় জিয়া। জিয়া আবার প্রেমে পড়ল আবার স্বপ্ন দেখল। এক নারী আরেক নারীকে ভালবাসল। এবার শরীরী ভালোবাসাকে ছাপিয়ে গেল মানসিক তৃপ্তি। তিয়াস বুঝল জিয়াই তার যোগ্য সঙ্গী, নাকি সঙ্গিনী!
জিয়া আর তিয়াস কাছাকাছি হতে থাকে। নারীর সঙ্গে নারীর সম্পর্ক আজ সামাজিকভাবেও গ্রহণযোগ্য। প্রায় গত শতকের ডোনাও মেনে নেন। জিয়া আর তিয়াস সিদ্ধান্ত নেয় তারা একে অপরের জীবনে পরিপূরক হবে।
১৫ আগস্ট ২২০৫। এক জ্যোৎস্না রাতে লেকে নৌকাবিহার করতে করতে জিয়া আর তিয়াস আংটি বদল করল। প্রথাগতভাবে প্রথমে তিয়াস ভেবেছিল সে নিজের সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করাবে। কিন্তু পরে দু’ জনে আলোচনা করে ঠিক করল তেইশ শতকে পৌঁছেও সন্তানের জন্য পুরুষকে দরকার হবে কেন?
মেডিকেল প্রফেশনে থাকার জন্য তিয়াসের পরিচিতি সূত্রেই ডক্টর আলি রেজার নাম শুনল যিনি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে প্রায় পনের বিশ বছর ক্রমাগত গবেষণা করছেন। ডঃ রেজার সংস্থা ই-কিওর দাবি করে তারা জিন ম্যাচিং করে পছন্দমতো ক্লোনিংয়ের শিশু উপহার দিতে পারেন। তবে পুরো পদ্ধতিটার খরচ অনেক। তিয়াস আর জিয়া দু’জনেই সচ্ছল। ওরা রাজি হয়ে গেল। ডঃ রেজা সারাবিশ্ব ঘুরে বেড়ান কিন্তু আজকের দুনিয়ায় পারস্পরিক দূরত্বটা কোনও সমস্যা নয়। ধাপে ধাপে প্রোগ্রাম বানিয়ে শুরু হল পছন্দের বাছাই। জিয়া তিয়াস ডোনা এবং ডঃ রেজা নিজে নানা ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বেছে বেছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বানালেন সেখান থেকেই ডিএনএ হেলিক্সের বিন্যাস ঠিক করে ক্রোমোজোমে দেওয়া হবে। ভীষণ জটিল ব্যাপার। কিন্তু যন্ত্রনির্ভর নিখুঁত সূক্ষ্মতায় কাজটা করতে সক্ষম ডঃ রেজা ও তার সহকর্মীরা ।
হঠাৎই তিয়াস জিয়াকে খুঁজে পেল। তিয়াসের থেকে জিয়া সামান্য ছোট। জিয়া তার পেশেন্ট, মানসিক বৈকল্যের শিকার।
জিয়া এক ফ্যাশন ডিজাইনার। অরণ্য এক মাল্টি মিডিয়া প্রফেশনাল। অনেকগুলো প্রজেক্টে একসঙ্গে কাজ করতে করতে জিয়া ক্রমশ অরণ্যের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছিল। এভাবেই জিয়া তার শরীরে অরণ্যের সন্তান ধারণ করার পর জানতে পারল, অরণ্য বিবাহিত। অরণ্যের মুখোমুখি হতে জিয়ার সঙ্গে অরণ্য তার ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করল। এসময় আইন-কানুন পুলিশ যথেষ্ট কড়া। ইচ্ছে করলেই অরণ্যকে শাস্তি দিতে পারত। সন্তানের জন্য দায়িত্ব নিতে বাধ্য করতে পারত। কিন্তু জিয়া তা করেনি। অরণ্যের সঙ্গে সম্পর্কটা তার কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জিয়া অরণ্যকে এতটাই বিশ্বাস করত। যে এই ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকতার সাংঘাতিক ধাক্কা সে সহ্য করতে পারেনি। স্লিপিং পিল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও জিয়া বেঁচে গেল কিন্তু বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেল। জিয়া পুরোপুরিভাবে মানসিক অবসাদের রোগী হয়ে পড়ল। আর এখান থেকে জিয়াকে আবার জীবনের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তিয়াস।
জিয়ার মনের ধাক্কাকে স্বাভাবিক করতে করতে তিয়াস বুঝতে পারে নরম স্বচ্ছ মনের জিয়ার সঙ্গে তিয়াসের পছন্দ-অপছন্দের অসম্ভব মিল। তিয়াসকে নির্ভর করেই আবার মাথা তুলে দাঁড়ায় জিয়া। জিয়া আবার প্রেমে পড়ল আবার স্বপ্ন দেখল। এক নারী আরেক নারীকে ভালবাসল। এবার শরীরী ভালোবাসাকে ছাপিয়ে গেল মানসিক তৃপ্তি। তিয়াস বুঝল জিয়াই তার যোগ্য সঙ্গী, নাকি সঙ্গিনী!
জিয়া আর তিয়াস কাছাকাছি হতে থাকে। নারীর সঙ্গে নারীর সম্পর্ক আজ সামাজিকভাবেও গ্রহণযোগ্য। প্রায় গত শতকের ডোনাও মেনে নেন। জিয়া আর তিয়াস সিদ্ধান্ত নেয় তারা একে অপরের জীবনে পরিপূরক হবে।
১৫ আগস্ট ২২০৫। এক জ্যোৎস্না রাতে লেকে নৌকাবিহার করতে করতে জিয়া আর তিয়াস আংটি বদল করল। প্রথাগতভাবে প্রথমে তিয়াস ভেবেছিল সে নিজের সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করাবে। কিন্তু পরে দু’ জনে আলোচনা করে ঠিক করল তেইশ শতকে পৌঁছেও সন্তানের জন্য পুরুষকে দরকার হবে কেন?
মেডিকেল প্রফেশনে থাকার জন্য তিয়াসের পরিচিতি সূত্রেই ডক্টর আলি রেজার নাম শুনল যিনি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে প্রায় পনের বিশ বছর ক্রমাগত গবেষণা করছেন। ডঃ রেজার সংস্থা ই-কিওর দাবি করে তারা জিন ম্যাচিং করে পছন্দমতো ক্লোনিংয়ের শিশু উপহার দিতে পারেন। তবে পুরো পদ্ধতিটার খরচ অনেক। তিয়াস আর জিয়া দু’জনেই সচ্ছল। ওরা রাজি হয়ে গেল। ডঃ রেজা সারাবিশ্ব ঘুরে বেড়ান কিন্তু আজকের দুনিয়ায় পারস্পরিক দূরত্বটা কোনও সমস্যা নয়। ধাপে ধাপে প্রোগ্রাম বানিয়ে শুরু হল পছন্দের বাছাই। জিয়া তিয়াস ডোনা এবং ডঃ রেজা নিজে নানা ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বেছে বেছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বানালেন সেখান থেকেই ডিএনএ হেলিক্সের বিন্যাস ঠিক করে ক্রোমোজোমে দেওয়া হবে। ভীষণ জটিল ব্যাপার। কিন্তু যন্ত্রনির্ভর নিখুঁত সূক্ষ্মতায় কাজটা করতে সক্ষম ডঃ রেজা ও তার সহকর্মীরা ।
আরও পড়ুন:

ডায়াবিটিসে ভুগছেন? সকালের জলখাবারে কী ধরনের খাবার খেতে পারেন? রইল ডক্তারবাবুর জরুরি পরামর্শ

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৮: রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কাটতেন, সাঁতার শেখাতেন
সব ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। কিন্তু যেদিন ক্রোমোজোমের মিল করে জন্মকোষ গঠন হবে সেদিন আচমকা একটা ঘটনা ঘটল।
পৃথিবীর চৌম্বকীয় উত্তর মেরু বা ম্যাগনেটিক নর্থ পোল কিন্তু থেমে নেই। খুব ধীরে হলেও সে জায়গা বদলায়। ২০২২ নাগাদ বছরে প্রায় ৩৪ মাইল সরে সরে যেত ম্যাগনেটিক নর্থ পোল। বাইশ শতকের মাঝামাঝি অজস্র অসংখ্য স্যাটেলাইটে ছেয়ে গিয়েছে মহাকাশ। তেইশ শতকে এসে সেটা আরও বেড়েছে, যার ফলে ম্যাগনেটিক নর্থ পোল আরও দ্রুত জায়গা বদলাচ্ছে। দ্রুত বদল আসছে গ্লোবাল ম্যাগনেটিক ফিল্ডে। আর ই-কিওরের বানতলার ভূগর্ভস্থ ল্যাবে ডিএনএ প্রতিস্থাপনের কাজ চলছিল। ডঃ রেজা সেই মূহুর্তে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চেয়নে। কয়েক ন্যানো সেকেন্ড-এর নেট কানেক্টিভিটি ছিল না। আর তাতেই সব ওলটপালট হয়ে গেল।
নির্দিষ্ট সময়ে জিয়ার গর্ভ থেকে জন্ম নিল এক ফুটফুটে শিশু পুত্র। জিয়া-তিয়াস দু’জনেই খুব খুশি। নাতিকে দেখে খুশি ডোনাও। কিন্তু খুশি নন ডঃ আলি রেজা। তিনি জানালেন ঠিক ঠিক যেভাবে প্ল্যান করা হয়েছিল। শিশুর ডিএনএ হেলিক্স সেইভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে ভবিষ্যতে শিশুর মস্তিষ্ক অপরিণত হতে পারে কথাবার্তায় জড়তা আসতে পারে। তিনি নিশ্চিত হতে পারছেন না। পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ডঃ আলি রেজা নতুন করে প্রোগ্রাম লোড করতে রাজি হলেন। এমনকি প্রথম ক্লোন তৈরির কোনও খরচ নেবেন না একথাও জানালেন ডক্টর রেজা।
এরই মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানে আরেক যুগান্ত ঘটে গিয়েছে। ‘বট স্যারোগেসি’ সাফল্য পেয়েছে। শারীরিক বা দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে গর্ভ ভাড়া নেওয়ার চল তো বহুবছর আগেই চালু ছিল। ইদানীং রোবট গর্ভে সন্তান বেড়ে উঠবে। রিয়্যাল-টাইম মনিটারিং-সমেত। কোনও ভুলভ্রান্তি হবার সম্ভাবনাই নেই। খরচ সামান্য বেশি। কিন্তু অনেক নিশ্চিন্ত ব্যবস্থা।
এসব শুনে জিয়া ভাবে পুরোনো গল্প-উপন্যাসে বহু পুরোনো ছবিতে বা আরও বহু বহু বছর আগের ঋষিমানব রবীন্দ্রনাথ সেই ১৯০৩ নাগাদ তাঁর জন্মকথা কবিতায় লিখে গিয়েছেন
খোকা মাকে শুধায় ডেকে
‘এলেম আমি কোথা থেকে—
কোনখেনে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে।’
মা শুনে কয় হেসে কেঁদে,
খোকারে তার বুকে বেঁধে—
ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।
জিয়া’র কাছে ১৯৭৬ সালে বিশ্বভারতী প্রকাশিত শিশু কাব্যগ্রন্থের ‘অরিজিন্যাল অথেন্টিকেটেড’ ছাপ দেওয়া সার্টিফায়েড পিডিএফ আছে। কভার-সমেত। সেখানে শেষপাতায় বিশ্বভারতীর লোগোর নিচে দাম লেখা আছে। আইএনার ৪.৫০ মানে তখনকার হিসেবে সাড়ে চার টাকা। ’৭৬-এর সাড়ে চার টাকামানে ২০২২-এ তার সাড়ে বাইশ গুণ। মানে ১০১ টাকা। আর ২০২২ এর হাজার টাকামানে আজকের এক জিসি। তার মানে সেই সাড়ে চার টাকা আজ ১০ সিজিসি বা কয়েন গ্লোবাল কারেন্সি। এই এত হিসেব এক মূহুর্তে করে ‘কনকার অ্যাপ্লিকেশন’ জিয়া বা তিয়াসের কাছে এটা একটা নেশার মতো। পুরোনো সময়টা ছুঁয়ে দেখার জানার নেশা।
পৃথিবীর চৌম্বকীয় উত্তর মেরু বা ম্যাগনেটিক নর্থ পোল কিন্তু থেমে নেই। খুব ধীরে হলেও সে জায়গা বদলায়। ২০২২ নাগাদ বছরে প্রায় ৩৪ মাইল সরে সরে যেত ম্যাগনেটিক নর্থ পোল। বাইশ শতকের মাঝামাঝি অজস্র অসংখ্য স্যাটেলাইটে ছেয়ে গিয়েছে মহাকাশ। তেইশ শতকে এসে সেটা আরও বেড়েছে, যার ফলে ম্যাগনেটিক নর্থ পোল আরও দ্রুত জায়গা বদলাচ্ছে। দ্রুত বদল আসছে গ্লোবাল ম্যাগনেটিক ফিল্ডে। আর ই-কিওরের বানতলার ভূগর্ভস্থ ল্যাবে ডিএনএ প্রতিস্থাপনের কাজ চলছিল। ডঃ রেজা সেই মূহুর্তে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চেয়নে। কয়েক ন্যানো সেকেন্ড-এর নেট কানেক্টিভিটি ছিল না। আর তাতেই সব ওলটপালট হয়ে গেল।
নির্দিষ্ট সময়ে জিয়ার গর্ভ থেকে জন্ম নিল এক ফুটফুটে শিশু পুত্র। জিয়া-তিয়াস দু’জনেই খুব খুশি। নাতিকে দেখে খুশি ডোনাও। কিন্তু খুশি নন ডঃ আলি রেজা। তিনি জানালেন ঠিক ঠিক যেভাবে প্ল্যান করা হয়েছিল। শিশুর ডিএনএ হেলিক্স সেইভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে ভবিষ্যতে শিশুর মস্তিষ্ক অপরিণত হতে পারে কথাবার্তায় জড়তা আসতে পারে। তিনি নিশ্চিত হতে পারছেন না। পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ডঃ আলি রেজা নতুন করে প্রোগ্রাম লোড করতে রাজি হলেন। এমনকি প্রথম ক্লোন তৈরির কোনও খরচ নেবেন না একথাও জানালেন ডক্টর রেজা।
এরই মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানে আরেক যুগান্ত ঘটে গিয়েছে। ‘বট স্যারোগেসি’ সাফল্য পেয়েছে। শারীরিক বা দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে গর্ভ ভাড়া নেওয়ার চল তো বহুবছর আগেই চালু ছিল। ইদানীং রোবট গর্ভে সন্তান বেড়ে উঠবে। রিয়্যাল-টাইম মনিটারিং-সমেত। কোনও ভুলভ্রান্তি হবার সম্ভাবনাই নেই। খরচ সামান্য বেশি। কিন্তু অনেক নিশ্চিন্ত ব্যবস্থা।
এসব শুনে জিয়া ভাবে পুরোনো গল্প-উপন্যাসে বহু পুরোনো ছবিতে বা আরও বহু বহু বছর আগের ঋষিমানব রবীন্দ্রনাথ সেই ১৯০৩ নাগাদ তাঁর জন্মকথা কবিতায় লিখে গিয়েছেন
খোকা মাকে শুধায় ডেকে
‘এলেম আমি কোথা থেকে—
কোনখেনে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে।’
মা শুনে কয় হেসে কেঁদে,
খোকারে তার বুকে বেঁধে—
ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।
জিয়া’র কাছে ১৯৭৬ সালে বিশ্বভারতী প্রকাশিত শিশু কাব্যগ্রন্থের ‘অরিজিন্যাল অথেন্টিকেটেড’ ছাপ দেওয়া সার্টিফায়েড পিডিএফ আছে। কভার-সমেত। সেখানে শেষপাতায় বিশ্বভারতীর লোগোর নিচে দাম লেখা আছে। আইএনার ৪.৫০ মানে তখনকার হিসেবে সাড়ে চার টাকা। ’৭৬-এর সাড়ে চার টাকামানে ২০২২-এ তার সাড়ে বাইশ গুণ। মানে ১০১ টাকা। আর ২০২২ এর হাজার টাকামানে আজকের এক জিসি। তার মানে সেই সাড়ে চার টাকা আজ ১০ সিজিসি বা কয়েন গ্লোবাল কারেন্সি। এই এত হিসেব এক মূহুর্তে করে ‘কনকার অ্যাপ্লিকেশন’ জিয়া বা তিয়াসের কাছে এটা একটা নেশার মতো। পুরোনো সময়টা ছুঁয়ে দেখার জানার নেশা।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩১: মরুভূমির উপল পারে বনতলের ‘হ্রদ’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৬: পঞ্চম-সভার তিন রত্ন বাসু-মনোহারী-মারুতি

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: আধুনিক আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় সায়াটিকার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব
সেখানে ‘কোনখেনে’ ছাপা আছে। পরের অনেক নেটভার্সানে কেউ কেউ নিজের বুদ্ধিতে অর্বাচীনের মতো ‘কোনখানে’ করে ফেলেছে। সে যাই হোক, শিশুকে তার জন্মবৃত্তান্ত বোঝাতে গিয়ে এই কথাই নানা ভাবে নানান আঙ্গিকে মায়েরা বলেছেন। ‘মেলা থেকে কিনে এনেছি’— ‘মা দূর্গার বরে তোকে পেয়েছি’— নিজের শরীরে প্রাণ ধারণ করার যে পরমপ্রাপ্তি সেটা মেলার পড়ে থাকা খেলনার মতো রোবোট বানাবে?… রোজকার জীবনযাত্রায় তারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে। ব্যবহার করতে হয়। তবু…
জিয়া ভাবতেই পারছে না। তিয়াস সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ডঃ রেজার প্রস্তাবে রাজি ডোনা। ডোনা তিয়াসকে বোঝায় সেকেলে সেন্টিমেন্ট এখন চলে না। এটা জিয়াকে বোঝাতে হবে। এত খরচখরচা করে বানানো হল। খুঁতওলা ছেলে নিয়ে লাভ কী? ডঃ রেজা বলেন, এরকম অ্যাক্সিডেন্টাল ফেলিওর ভেরি রেয়ার! কিন্তু আনফরচ্যুনেটলি সেটাই যখন ঘটে গিয়েছে জেনেশুনে ডিফেক্টিভ প্রডাক্ট রাখলে এর কোনও ওয়ারেন্টি ই-কিওর দিতে পারবে না। তাদের পলিসিতে নেই। এটা ইউজ এন্ড থ্রো-র যুগ — সন্তানের ওয়ারেন্টি? সন্তান একটা প্রডাক্ট?
কথাগুলো শুনে তিয়াসার গা গুলোচ্ছে। বমিবমি পাচ্ছে। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখে হাল্কা জলের ঝাপ্টা দিল। এবার ভালো লাগছে। জল এখনও একই রকম আছে। জলের ব্যবহার নিয়ে বিধিনিষেধ আছে। অপচয় রুখতে কড়া আইন আছে। কিন্তু তেষ্টা মেটাতে জল আজও জীবন।
জিয়া সব শুনল। জানতে চাইল ডঃ রেজা কী বলেছেন। তারপর জিজ্ঞেস করল তিয়াস কী চায়? তিয়াস জানাল, তিয়াস কী চায় সেটা বড় কথা নয়, এই শিশুকে গর্ভে ধারণ করতে নানান ওষুধপত্রে নিজেকে তৈরি করেছে জিয়া। সারোগেসি করে অর্থের বিনিময়ে অন্যের গর্ভে শিশুকে লালনপালন করার শর্টকাট নিতে চায়নি জিয়া। এখন রোবোট মায়ের আধুনিক সাহায্যও দরকার নেই। আধুনিক সু্যোগ-সুবিধে জেনেশুনে অস্বীকার করে শরীরের সবকষ্ট সব অস্বস্তি জিয়া একা ভোগ করেছে। তাই তার সন্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সেই নেবে।
পাশের কটে শোয়ানো সন্তানের শরীরে হাত রেখে জিয়া বলে—
আজও যখন কারো আয়ু দেবার ক্ষমতা যন্ত্রের নেই। মানুষের নেই। তখন আয়ু নেবার ক্ষমতাও নেই। স্নেহ মায়া মমতা অতি ব্যবহারে জীর্ণ হয় না। তাই ফেলা যায় না। আমরা দু’ জনে ১৫ অগাস্ট ২২০৫ এক হবার শপথ নিয়েছি। ২৫৮ বছর আগে ওই দিন এই ঐতিহাসিক ভারত ভূখণ্ড স্বাধীন হয়েছিল। সেকথা মনে রেখেই ওরা আগত সন্তানের নাম রেখেছিল ক্রান্তি। তাই ক্রান্তিকে একটা সুস্থ স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে দেবার লড়াইটা এবার না হয় ওরা দু’ জনেই লড়বে। ওদের স্বপ্নকে সার্থক করতে না হয় আবার একটা ক্রান্তি শুরু হবে।
জিয়ার হাত ধরে তিয়াস, জানলা থেকে সূর্যের শেষরশ্মি এসে গোধূলি আলোয় উজ্জ্বল করে তোলে শিশু ক্রান্তির শরীর।
জিয়া ভাবতেই পারছে না। তিয়াস সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ডঃ রেজার প্রস্তাবে রাজি ডোনা। ডোনা তিয়াসকে বোঝায় সেকেলে সেন্টিমেন্ট এখন চলে না। এটা জিয়াকে বোঝাতে হবে। এত খরচখরচা করে বানানো হল। খুঁতওলা ছেলে নিয়ে লাভ কী? ডঃ রেজা বলেন, এরকম অ্যাক্সিডেন্টাল ফেলিওর ভেরি রেয়ার! কিন্তু আনফরচ্যুনেটলি সেটাই যখন ঘটে গিয়েছে জেনেশুনে ডিফেক্টিভ প্রডাক্ট রাখলে এর কোনও ওয়ারেন্টি ই-কিওর দিতে পারবে না। তাদের পলিসিতে নেই। এটা ইউজ এন্ড থ্রো-র যুগ — সন্তানের ওয়ারেন্টি? সন্তান একটা প্রডাক্ট?
কথাগুলো শুনে তিয়াসার গা গুলোচ্ছে। বমিবমি পাচ্ছে। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখে হাল্কা জলের ঝাপ্টা দিল। এবার ভালো লাগছে। জল এখনও একই রকম আছে। জলের ব্যবহার নিয়ে বিধিনিষেধ আছে। অপচয় রুখতে কড়া আইন আছে। কিন্তু তেষ্টা মেটাতে জল আজও জীবন।
জিয়া সব শুনল। জানতে চাইল ডঃ রেজা কী বলেছেন। তারপর জিজ্ঞেস করল তিয়াস কী চায়? তিয়াস জানাল, তিয়াস কী চায় সেটা বড় কথা নয়, এই শিশুকে গর্ভে ধারণ করতে নানান ওষুধপত্রে নিজেকে তৈরি করেছে জিয়া। সারোগেসি করে অর্থের বিনিময়ে অন্যের গর্ভে শিশুকে লালনপালন করার শর্টকাট নিতে চায়নি জিয়া। এখন রোবোট মায়ের আধুনিক সাহায্যও দরকার নেই। আধুনিক সু্যোগ-সুবিধে জেনেশুনে অস্বীকার করে শরীরের সবকষ্ট সব অস্বস্তি জিয়া একা ভোগ করেছে। তাই তার সন্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সেই নেবে।
পাশের কটে শোয়ানো সন্তানের শরীরে হাত রেখে জিয়া বলে—
আজও যখন কারো আয়ু দেবার ক্ষমতা যন্ত্রের নেই। মানুষের নেই। তখন আয়ু নেবার ক্ষমতাও নেই। স্নেহ মায়া মমতা অতি ব্যবহারে জীর্ণ হয় না। তাই ফেলা যায় না। আমরা দু’ জনে ১৫ অগাস্ট ২২০৫ এক হবার শপথ নিয়েছি। ২৫৮ বছর আগে ওই দিন এই ঐতিহাসিক ভারত ভূখণ্ড স্বাধীন হয়েছিল। সেকথা মনে রেখেই ওরা আগত সন্তানের নাম রেখেছিল ক্রান্তি। তাই ক্রান্তিকে একটা সুস্থ স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে দেবার লড়াইটা এবার না হয় ওরা দু’ জনেই লড়বে। ওদের স্বপ্নকে সার্থক করতে না হয় আবার একটা ক্রান্তি শুরু হবে।
জিয়ার হাত ধরে তিয়াস, জানলা থেকে সূর্যের শেষরশ্মি এসে গোধূলি আলোয় উজ্জ্বল করে তোলে শিশু ক্রান্তির শরীর।
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।