![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/Kimbhoot.jpg)
অলঙ্করণ: পাপিয়া দেবনাথ।
নটবর আর তার রাগ আক্ষেপ সামলাতে পারে না।
আমার পাঁচিকে চাই। পাঁচিকে চাই যেকোনও উপায়ে। চাই ব্যাস।
ফটিক দারোগা এবার ধমক দেয়।
থামুন মশাই! একখানা আস্ত মানুষ কি লবঞ্চুস বট্যে। আপনার চাই তো আমি খুঁজ্যে এনে হাত্যে ধরায়ে দিব্যো? আর কাক্যু মেয়ের বাপ হইয়্যে কিছ্যুটি বইলছ্যেন না! আর আপনি জ্যাঠ্যামশায় হইয়্যে কেনে মেলা খচরখচর কইরছ্যেন বট্যে? তারা ফিরে এলে ভালো। না হলে ধজ্জি ধরেন গো। বচ্ছর ঘুইরল্যে পোয়াতি হইয়্যে তো বাপ-জ্যাঠার কাছ্যে আসির্বাদ নিতে আইসব্যে বট্যে। চলি গো কাকা চিন্তা কইরবেন না। মেইয়্যে জামাই ফিরবে বটে। সময় লাইগব্যে। তবে দু’ জনায় আইসব্যে কী ছানাসমেত এক্কেবারে তিঞ্জনায় আইসব্যে সেটি দেখেন। চলি নট্টোবর বাবু। সদ্দরে কাজে কম্মে এল্যে গড়াগাছির সিংগাড়া আইনবেন গো। বড়ো সুস্বাদু। আর সক্কালবেলা জিভটো ছুলবেন বট্যে তোতলামিটা কম হব্যে গো!
ফটিক যেতেই নটবর কানাইয়ের ওপর রাগে ফেটে পড়ে।
আচ্চা কোবরেজ ওই হতচ্ছাড়াকে বয়েস নিয়ে অত কথা বলার দরকার কী ছিল? এই বুদ্দি নিয়ে তুমি পঞ্চায়েত সদস্য হবে কোবরেজ!
কানাইলালের যেন বোধোদয় ঘটিয়ে গেছে ফটিক দারোগা।
ভুল তো হয়েই চে! মস্ত বড়ো ভুল হয়েচে। তবে শেষবেলায় বড্ডো বাঁচান বেঁচে গেচি। পঞ্চায়েতের লোভে আমি পঞ্চাননকে অপমান করেচি! নট অনলি আমি আমার মেয়েকে গাল মন্দ করেচি বাট অলসো কী বলে আই টায়েড হার ইন দি কাউরুম মানে গোয়ালে বেঁদে রেকেছিলুম! তবে মেয়েটাকে জলে ফেলে দেবার থেকে একটুর জন্যে বেঁচে গেচি বাবা। খুব বাঁচা বেঁচে গেচি। কী বলে লাস্ট মোমেন্ট সেভড। তোমার খুরে খুরে দণ্ডবত আমি চলি!
নটবরের সব রাগ পড়ে হাবাগোবা নিমের ওপর।
আমার পাঁচিকে চাই। পাঁচিকে চাই যেকোনও উপায়ে। চাই ব্যাস।
ফটিক দারোগা এবার ধমক দেয়।
থামুন মশাই! একখানা আস্ত মানুষ কি লবঞ্চুস বট্যে। আপনার চাই তো আমি খুঁজ্যে এনে হাত্যে ধরায়ে দিব্যো? আর কাক্যু মেয়ের বাপ হইয়্যে কিছ্যুটি বইলছ্যেন না! আর আপনি জ্যাঠ্যামশায় হইয়্যে কেনে মেলা খচরখচর কইরছ্যেন বট্যে? তারা ফিরে এলে ভালো। না হলে ধজ্জি ধরেন গো। বচ্ছর ঘুইরল্যে পোয়াতি হইয়্যে তো বাপ-জ্যাঠার কাছ্যে আসির্বাদ নিতে আইসব্যে বট্যে। চলি গো কাকা চিন্তা কইরবেন না। মেইয়্যে জামাই ফিরবে বটে। সময় লাইগব্যে। তবে দু’ জনায় আইসব্যে কী ছানাসমেত এক্কেবারে তিঞ্জনায় আইসব্যে সেটি দেখেন। চলি নট্টোবর বাবু। সদ্দরে কাজে কম্মে এল্যে গড়াগাছির সিংগাড়া আইনবেন গো। বড়ো সুস্বাদু। আর সক্কালবেলা জিভটো ছুলবেন বট্যে তোতলামিটা কম হব্যে গো!
ফটিক যেতেই নটবর কানাইয়ের ওপর রাগে ফেটে পড়ে।
আচ্চা কোবরেজ ওই হতচ্ছাড়াকে বয়েস নিয়ে অত কথা বলার দরকার কী ছিল? এই বুদ্দি নিয়ে তুমি পঞ্চায়েত সদস্য হবে কোবরেজ!
কানাইলালের যেন বোধোদয় ঘটিয়ে গেছে ফটিক দারোগা।
ভুল তো হয়েই চে! মস্ত বড়ো ভুল হয়েচে। তবে শেষবেলায় বড্ডো বাঁচান বেঁচে গেচি। পঞ্চায়েতের লোভে আমি পঞ্চাননকে অপমান করেচি! নট অনলি আমি আমার মেয়েকে গাল মন্দ করেচি বাট অলসো কী বলে আই টায়েড হার ইন দি কাউরুম মানে গোয়ালে বেঁদে রেকেছিলুম! তবে মেয়েটাকে জলে ফেলে দেবার থেকে একটুর জন্যে বেঁচে গেচি বাবা। খুব বাঁচা বেঁচে গেচি। কী বলে লাস্ট মোমেন্ট সেভড। তোমার খুরে খুরে দণ্ডবত আমি চলি!
নটবরের সব রাগ পড়ে হাবাগোবা নিমের ওপর।
এদিকে পাঁচুর মা বসে একা একা ভাবেন পাঁচুর বাবা তাকে আর পাঁচুকে রেখে চলে গিয়েছিল। এবার পাঁচু যে কোন দেশে চলে গেল। কিন্তু ভগবানের এমন লীলা গাঁয়ের সব্বাই মিলে শিবমন্দিরে পাঁচুর মায়ের একটা পাকাপাকি থাকার বন্দোব্যস্ত করে দিলো! মন্দির সারাই হচ্চে। কাজ শেষ হলে পাঁচুর মা ওখানেই চলে যাবে। ঠাকুরের পেসাদের ক্ষুদকুঁড়োতেই তাঁর চলে যাবে। পাঁচুটা এত হুড়োপনা করে। গড়াগাছিতে থেকে গেলে এই পুরুতের কাজটা সে পেতো। মা-ছেলে একসঙ্গে মন্দিরেই থাকা হতো!
পাঁচুর মা ভাবছে মহাদেবের কৃপা। কৃপা তো বটেই। ভূত-প্রেত এরা তো ভোলা মহেশ্বরেরই চেলাচামুণ্ড। মা’তো জানে না ছেলে পাঁচুর অনুরোধেই দা’ঠাকুর এমন ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু পাঁচু ভাবছে এমন হল কী করে? মানুষ কী করে ভূতের কথা শুনল?
ঠাকুর হাসতে হাসতে বলেন—
এমনি এমনি তো হয় না! সম্ভব করাতে হল। মানুষকে দিয়ে ইচ্ছে মতো কাজ করিয়ে নিতে আমরা পারি। তবে এরকম কাজ বড় একটা করি না! অনেক মানুষ ভালো। তারা কষ্ট পায়। তাই আমরা মনুষ্যসমাজে ইচ্ছে করেই মাথা দিই না।
পাঁচু-পাঁচি বা দাঠাকুর কেউই এখন অবয়বে নেই। ভরদুপুরে ঘোষডাঙা নিশুতি রাতের মতোই শুনশান। ওরা ঘোষবাড়ির ভাঙ্গাচোরা পেল্লায় ছাতে ধোঁয়ার ছোটছোট কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুরছিল। পাঁচু বলে ওঠে—
তার মানে এই ভাবে খারাপ মানুষকে দিয়েও ভালো কাজ করানো যায় দাঠাকুর? অসৎকে সৎ করা যায়?
দাঠাকুর এই নিয়ে আগে কখনও ভাবেননি। কারণ মানুষদের নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। জন্তু-জানোয়ার যা আছে তার মধ্যে মানুষ হল সবচেয়ে ঝগড়াটে। সবচেয়ে কাঠিবাজ। কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। তাই তিনি রাজি হতে চান না। মানুষের মনে বিস্তর প্যাঁচ। ওখানে ঢুকে ভূতেদের লাভটা কী হবে। পাঁচু আশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু পাঁচি দাঠাকুরকে বোঝাতে থাকে। আগেও বলেছে তবে দা’ঠাকুর শুনতে চাননি। পাঁচি বোঝায় ওপার থেকেই তো লোকজন মানে আত্মারা এপারে আসেন। আগের কালে ওপারে ভালো মানুষ সংখ্যায় বেশি ছিল। তাই সমাজের একটা বাঁধন ছিল। গুরুজনে মান পেত। গুণী মানুষের কদর হতো। খারাপ মানুষও ছিল।
পাঁচুর মা ভাবছে মহাদেবের কৃপা। কৃপা তো বটেই। ভূত-প্রেত এরা তো ভোলা মহেশ্বরেরই চেলাচামুণ্ড। মা’তো জানে না ছেলে পাঁচুর অনুরোধেই দা’ঠাকুর এমন ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু পাঁচু ভাবছে এমন হল কী করে? মানুষ কী করে ভূতের কথা শুনল?
ঠাকুর হাসতে হাসতে বলেন—
এমনি এমনি তো হয় না! সম্ভব করাতে হল। মানুষকে দিয়ে ইচ্ছে মতো কাজ করিয়ে নিতে আমরা পারি। তবে এরকম কাজ বড় একটা করি না! অনেক মানুষ ভালো। তারা কষ্ট পায়। তাই আমরা মনুষ্যসমাজে ইচ্ছে করেই মাথা দিই না।
পাঁচু-পাঁচি বা দাঠাকুর কেউই এখন অবয়বে নেই। ভরদুপুরে ঘোষডাঙা নিশুতি রাতের মতোই শুনশান। ওরা ঘোষবাড়ির ভাঙ্গাচোরা পেল্লায় ছাতে ধোঁয়ার ছোটছোট কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুরছিল। পাঁচু বলে ওঠে—
তার মানে এই ভাবে খারাপ মানুষকে দিয়েও ভালো কাজ করানো যায় দাঠাকুর? অসৎকে সৎ করা যায়?
দাঠাকুর এই নিয়ে আগে কখনও ভাবেননি। কারণ মানুষদের নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। জন্তু-জানোয়ার যা আছে তার মধ্যে মানুষ হল সবচেয়ে ঝগড়াটে। সবচেয়ে কাঠিবাজ। কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। তাই তিনি রাজি হতে চান না। মানুষের মনে বিস্তর প্যাঁচ। ওখানে ঢুকে ভূতেদের লাভটা কী হবে। পাঁচু আশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু পাঁচি দাঠাকুরকে বোঝাতে থাকে। আগেও বলেছে তবে দা’ঠাকুর শুনতে চাননি। পাঁচি বোঝায় ওপার থেকেই তো লোকজন মানে আত্মারা এপারে আসেন। আগের কালে ওপারে ভালো মানুষ সংখ্যায় বেশি ছিল। তাই সমাজের একটা বাঁধন ছিল। গুরুজনে মান পেত। গুণী মানুষের কদর হতো। খারাপ মানুষও ছিল।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/12/COVER.jpg)
কিম্ভূতকাণ্ড, পর্ব-৬: ‘আমরা এমন প্রতিহিংসা নিতে মানা করি! এতে ভূত সমাজে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা অরাজকতা দেখা দেবে’
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_Golpo2022.jpg)
গল্প-৬: পর্সতার
তবে তারা সংখ্যায় কম ছিল। তাই তাদের মনে শাস্তি পাবার ভয় ছিল। এখন সব উল্টে গিয়েছে। চোরজোচ্চোর ঠকবাজ তোলাবাজ বন্দুকবাজ যেভাবে বাড়ছে তাতে কমতে থাকা ভালো মানুষ ভয়ে লুকিয়ে আছে। আর বজ্জাতেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই বাড়তে থাকা বজ্জাতেরা মরে তো বজ্জাত ভূতই হবে। আজ মামদো আপনার বিচার মেনে নিয়ে গোভূত হয়েছে। কারণ ভূতসমাজের সকলে মামদোকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু যদি মামদোরাই সংখ্যায় বেড়ে যায়? পিলপিল করে তখন সেইসব ছ্যাঁচড়া গুন্ডা লুচ্চা বদমাইশ ঝগড়ুটে মামলাবাজ ভূতেরা তো ছেয়ে ফেলবে ভূতসমাজ!! আপনাদের আইন-কানুন নিয়ম-শৃঙ্খলাকে লবডঙ্কা দেখিয়ে ওইসব বিদঘুটে বজ্জাত ভূতেরা নিয়ম-মানা ভালো ভূতেদের কোণঠাসা করে ফেলবে।
দা’ঠাকুর সব শুনে চমকে উঠলেন। এতো সাংঘাতিক কথা। কিন্তু এত এত লোভী মানুষকে সৎ স্বার্থহীন নির্ভীক করা অসম্ভব।
আপনার তো অনেক ক্ষমতা দা’ঠাকুর! সেই ক্ষমতার কিছুটা আমাদের দিন। আমরা একটিবার চেষ্টা করে দেখি। যদি না পারি তাহলে আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করবেন। কিন্তু যদি পারি তাহলে আমাদের মতো আরও কয়েকজনকে পাঠাবেন তারা দশ-দশ করে শ’খানেক ভালো মানুষ করবে। সেই একশ আরও হাজারকে।
ঠিক হল পাঁচু-আর -পাঁচি তাদের জানা-চেনা জায়গা গড়াগাছি দিয়েই শুরু করবে। বেশ কঠিন দায়িত্ব। খারাপ বজ্জাত মানুষের মনের মধ্যে সেঁদিয়ে নোংরা মনটাকে সাফসুতরো করতে হবে। মনের কালি ধুয়ে মুছে সাদা ধবধবে করতে হবে। তারা দাঠাকুরের আশীর্বাদ নিয়ে কাজে লেগে পড়ল। দা’ঠাকুর জানালেন যখন যেমন সাহায্য লাগে তিনি করবেন।
পরদিন ভোরের বেলা পাঁচুদের বাড়িতে পরাণ দত্ত হাজির হল। – অমন ডাকসাইটে কুচুটে ধুরন্ধর যেন একদিনে বদলে গিয়েছে। পাঁচির মা আর মাত্র ক’টা দিন সে বাড়িতে থাকবে। তারপর তো ঠিকানা গাঁয়ের শিবমন্দির। আলো অন্ধকারে পাঁচুর মা প্রথমে বুঝতে পারেনি। পরাণ তখন জানালো সেই তার স্বামীর ছোটবেলার বন্ধু। লোভের বশে বন্ধুকে ঠকিয়ে সব বিষয় সম্পত্তি গ্রাস করেছিল। কাল পরাণের মৃত বাবা-মা হরেন আর সুরবালা দত্ত স্বপ্নে এসে বিধান দিয়ে গিয়েছেন সব সম্পত্তি ফিরিয়ে না দিলে পরাণের পরিবার রাধারানি কঠিন অসুখে পড়বে। বাবা-মা বলেছে মানুষের ক্ষতি করে করেই পরাণের কোনও বংশধর নেই। এবার স্ত্রীকেও হারাবে। পাঁচু নেই। তাই আর মা রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু পরাণ হাতে পায়ে ধরে গোটা রাত জেগে বানানো দলিলে তাঁর টিপছাপ নিয়েই সদরে ছুটল।
দা’ঠাকুর সব শুনে চমকে উঠলেন। এতো সাংঘাতিক কথা। কিন্তু এত এত লোভী মানুষকে সৎ স্বার্থহীন নির্ভীক করা অসম্ভব।
আপনার তো অনেক ক্ষমতা দা’ঠাকুর! সেই ক্ষমতার কিছুটা আমাদের দিন। আমরা একটিবার চেষ্টা করে দেখি। যদি না পারি তাহলে আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করবেন। কিন্তু যদি পারি তাহলে আমাদের মতো আরও কয়েকজনকে পাঠাবেন তারা দশ-দশ করে শ’খানেক ভালো মানুষ করবে। সেই একশ আরও হাজারকে।
ঠিক হল পাঁচু-আর -পাঁচি তাদের জানা-চেনা জায়গা গড়াগাছি দিয়েই শুরু করবে। বেশ কঠিন দায়িত্ব। খারাপ বজ্জাত মানুষের মনের মধ্যে সেঁদিয়ে নোংরা মনটাকে সাফসুতরো করতে হবে। মনের কালি ধুয়ে মুছে সাদা ধবধবে করতে হবে। তারা দাঠাকুরের আশীর্বাদ নিয়ে কাজে লেগে পড়ল। দা’ঠাকুর জানালেন যখন যেমন সাহায্য লাগে তিনি করবেন।
পরদিন ভোরের বেলা পাঁচুদের বাড়িতে পরাণ দত্ত হাজির হল। – অমন ডাকসাইটে কুচুটে ধুরন্ধর যেন একদিনে বদলে গিয়েছে। পাঁচির মা আর মাত্র ক’টা দিন সে বাড়িতে থাকবে। তারপর তো ঠিকানা গাঁয়ের শিবমন্দির। আলো অন্ধকারে পাঁচুর মা প্রথমে বুঝতে পারেনি। পরাণ তখন জানালো সেই তার স্বামীর ছোটবেলার বন্ধু। লোভের বশে বন্ধুকে ঠকিয়ে সব বিষয় সম্পত্তি গ্রাস করেছিল। কাল পরাণের মৃত বাবা-মা হরেন আর সুরবালা দত্ত স্বপ্নে এসে বিধান দিয়ে গিয়েছেন সব সম্পত্তি ফিরিয়ে না দিলে পরাণের পরিবার রাধারানি কঠিন অসুখে পড়বে। বাবা-মা বলেছে মানুষের ক্ষতি করে করেই পরাণের কোনও বংশধর নেই। এবার স্ত্রীকেও হারাবে। পাঁচু নেই। তাই আর মা রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু পরাণ হাতে পায়ে ধরে গোটা রাত জেগে বানানো দলিলে তাঁর টিপছাপ নিয়েই সদরে ছুটল।
নটবরকে সিধে করল পাঁচু-আর-পাঁচি। এক ভাগচাষি তার ধানের দাম চাইতে এলে তাকে মুখখারাপ করে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিল। নটবর এখন ক্ষেপে আগুন-তেতে আছে। পাঁচিকে বিয়ে করতে না পারার দুঃখ সেই সঙ্গে গাঁ-গঞ্জে আড়ালে-আবডালে হাসিঠাট্টা। তাই ক’টা টাকার আশায় লোকটা যখন নটবরের পায়ে পড়ল নটবর গুদামে রাখা হান্টার দিয়ে লোকটাকে মারতে গেল। এই প্রথম সেই দেখে ভাবলেশহীন হাবাগোবা নিমের চোখে জল এলো। কিন্তু কি আশ্চর্য হান্টার ধরা হাত তুলতে পারলো না নটবর। হাত যেন আটকে গিয়েছে। নটবর ঘুরে লাথি মারতে যায়। পা যেন পিছনে আটকে গেল। আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। নটবর গর্জন করছে। কিন্তু কিছু করতে পারছে না। একটা অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে সারা ঘরে বনবন করে ঘোরাচ্ছে। শেষে হাঁপিয়ে নটবর মাটিতে পড়ে থাকা চাষির পায়ের কাছে পড়ে। শরীরে শক্তি নেই। গলায় গর্জন নেই। নটবর অসহায়ের মতো দেখে চাবি ঘুরিয়ে তার ক্যাশ বাক্সটা অদৃশ্য কেউ খুলল। তার থেকে মুঠো মুঠো টাকা কে যেন চাষির দু-হাত তার কোঁচড় বোঝাই করে দিল। ভাবলেশহীন বোবা-কালা নিমে হঠাৎ ভারী গলায় বলে উঠল — “এ কী কাণ্ড!”
হতভম্ব নটবর কথা বলতে গিয়েই বুঝতে পারল তার কথা আটকে গিয়েছে। তার মুখ দিয়ে গোঁ-গোঁ করে একটা অদ্ভূৎ শব্দ বের হচ্ছে। অনেকটা গাধার ডাকের শোনাচ্ছে। পাঁচু দেখল নটবর গাধার ডাক ডাকতে ডাকতে তাকে গুঁতোতে আসছে। ভূতেদের কোন কায়দাকানুন কাজে লাগছে না। পাঁচু কিছুতেই অদৃশ্য হতে পারছে না। পাঁচি আশেপাশে কোত্থাও নেই! নটবর একেবারে কাছাকাছি। এবার কামড়েই দেবে।
পাঁচি রে! বাঁচা!
হতভম্ব নটবর কথা বলতে গিয়েই বুঝতে পারল তার কথা আটকে গিয়েছে। তার মুখ দিয়ে গোঁ-গোঁ করে একটা অদ্ভূৎ শব্দ বের হচ্ছে। অনেকটা গাধার ডাকের শোনাচ্ছে। পাঁচু দেখল নটবর গাধার ডাক ডাকতে ডাকতে তাকে গুঁতোতে আসছে। ভূতেদের কোন কায়দাকানুন কাজে লাগছে না। পাঁচু কিছুতেই অদৃশ্য হতে পারছে না। পাঁচি আশেপাশে কোত্থাও নেই! নটবর একেবারে কাছাকাছি। এবার কামড়েই দেবে।
পাঁচি রে! বাঁচা!
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/Diet-3.jpg)
ডায়েট ফটাফট: সানস্ক্রিন মাখবেন তো বটেই, এবার খেয়েও দেখুন—সিঙ্গল ইনভেস্টমেন্টে ডবল প্রফিট!
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/health-2.jpg)
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২: ন্যাড়া মাথায় ভালো চুল গজায়?
এই বলে চেঁচাতেই পাঁচুর প্রায় মুখের গোড়া থেকে গাধাটা নালপড়া মুখটা সরিয়ে নিল। ধড়মড় করে উঠে বসতেই দেখল সুয্যি পাটে বসেছে। তার মানে এই সবই স্বপ্ন। আর ভর দুপুরবেলার স্বপ্ন। ভোর তো নয় যে স্বপ্ন একটু-আধটু হলেও সত্যি হবে। মনটা ভেঙে গেল। আর গাধাটা তার নালশুদ্দু মুখটা পাঁচুর মুখে…। তবে আর কিছু অকাজ করেনি এই রক্ষে!
‘গড়াগাছি গড়াগাছি’ করে হাঁফাতে হাঁফাতে একটা বাস এসে থামল। বাস থেকে নামল কানাই কোবরেজ আর পরাণ উকিল। দু’জনের সামনেই এখন মুখ দেখানো নয়! একজন মাগনায় সত্যনারানের পুজো করাবে আর অন্যজন তো দেখলেই বাংলা ইংরিজি গাল ছোটাবে। মুখটা অন্যদিকে ঘোরাবার আগেই দেখে ফেলেছে পরাণ দত্ত!
ও পঞ্চানন ঠাকুর!— ও ঠাকুরমশায়!
নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস হচ্ছে না।
আরে পঞ্চানন এই দিকে এই দিকে। বড় রাস্তার দিকে!
এ বার ফিরে তাকাতেই হল। কাছে ডাকছে পরাণ দত্ত। নিশ্চয়ই কোন মতলব। কারও কাছে হয়তো কাজে পাঠাবে। ও সব ডাকপিয়নগিরি পাঁচু করবে না— হ্যাঁ।
বলতে বলতেই মাঠ ভেঙে পরাণ উকিল এগিয়ে এল। ব্যাগে হাত দিচ্ছে। পাঁচু জানে — একটা দলিল বেরোবে। ঠিক তাই। সরকারি মোহর ছাপ ফিতে বাঁধা দলিল।
এটা ধরো। তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, না হলে আমি নিজেই যেতুম।
“তা নিজেই যান না। ধরুন আমার সঙ্গে দেখা হয়নি”—কথাটা মাথার মধ্যে ঠেলাঠেলি করছে পাঁচুর।
‘গড়াগাছি গড়াগাছি’ করে হাঁফাতে হাঁফাতে একটা বাস এসে থামল। বাস থেকে নামল কানাই কোবরেজ আর পরাণ উকিল। দু’জনের সামনেই এখন মুখ দেখানো নয়! একজন মাগনায় সত্যনারানের পুজো করাবে আর অন্যজন তো দেখলেই বাংলা ইংরিজি গাল ছোটাবে। মুখটা অন্যদিকে ঘোরাবার আগেই দেখে ফেলেছে পরাণ দত্ত!
ও পঞ্চানন ঠাকুর!— ও ঠাকুরমশায়!
নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস হচ্ছে না।
আরে পঞ্চানন এই দিকে এই দিকে। বড় রাস্তার দিকে!
এ বার ফিরে তাকাতেই হল। কাছে ডাকছে পরাণ দত্ত। নিশ্চয়ই কোন মতলব। কারও কাছে হয়তো কাজে পাঠাবে। ও সব ডাকপিয়নগিরি পাঁচু করবে না— হ্যাঁ।
বলতে বলতেই মাঠ ভেঙে পরাণ উকিল এগিয়ে এল। ব্যাগে হাত দিচ্ছে। পাঁচু জানে — একটা দলিল বেরোবে। ঠিক তাই। সরকারি মোহর ছাপ ফিতে বাঁধা দলিল।
এটা ধরো। তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, না হলে আমি নিজেই যেতুম।
“তা নিজেই যান না। ধরুন আমার সঙ্গে দেখা হয়নি”—কথাটা মাথার মধ্যে ঠেলাঠেলি করছে পাঁচুর।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/06/Basundhara-Ebong_cover-pic-.jpg)
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, পর্ব-৫১
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/samayupdates_Rabindranath-5.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৭: পুরীতে বাড়ি— রবীন্দ্রনাথের, গগনেন্দ্রনাথ-অবনীন্দ্রনাথের
ধরো এটা তোমাদের জমির দলিল! আমার কাছে ছিল। আজ সব ফিরিয়ে দিয়ে ঋণমুক্ত হলুম। বৌঠানের কাছে সব বলে এসেছি। এই কাজেই সদরে গেছিলুম!
পাঁচুর মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। সে দলিলটা হাতে নিয়ে হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে। কাঁধে কে যেন হাত রাখল। কানাই কোবরেজ! পাঁচু সিঁটিয়ে যায়।
ভয় পেও না। তোমায় গালমন্দ করে আমি বড় অনুতপ্ত। অকারণে তোমায় আমার বাড়ি থেকে সেদিন… তুমি কিছু মনে করো না বাবা। সামনের বিষ্যুদবার খুব শুভদিন। ওদিন আমি পাঁচির সঙ্গে তোমার বে দেব। সদরে গিয়ে আমি সব যোগাড়যন্ত্র করে এলুম! বাড়ির দিকে যাবে তো চলো।
পরাণ ভারমুক্ত মনে নিজের বাড়ির দিকে পা চালাল। কানাই পাঁচুকে নিয়ে চলল অন্যদিকে।
পাঁচু যেন হাওয়ায় ভেসে ভেসেই চলছে। আর সে যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। একানড়ে স্কন্ধকাটা হাঁড়িচাচা তার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশ দিয়ে চলেছে। শুনতে পাচ্ছে তারা মৃদু গলায় ফিসফিস করে ছড়া কাটছে—
পোঁড়া গাঁছের বেঁল
দাঁঠাকুরের খেঁল
গঁরিব চাঁষার ভাঁত মেঁরে
নঁটবরের জেঁল।
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া উঠল। পাঁচু বুঝল দাঠাকুর এলো। কানাইখুড়ো তাড়া দেয়।
পা চলিয়ে চলো বাবা। ঝড় আসবে বুঝি।
আঁজ্ঞে—ঝড় নয়! হাওয়া! তেঁনাদের হাওয়া! পেন্নাম করুন। তেঁনারা কোনও ক্ষতি করবেন না।
কানাই ঘাবড়ে তাকায় তারপর পাঁচুর সঙ্গে আকাশের দিকে প্রণাম করে।—শেষ
পাঁচুর মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। সে দলিলটা হাতে নিয়ে হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে। কাঁধে কে যেন হাত রাখল। কানাই কোবরেজ! পাঁচু সিঁটিয়ে যায়।
ভয় পেও না। তোমায় গালমন্দ করে আমি বড় অনুতপ্ত। অকারণে তোমায় আমার বাড়ি থেকে সেদিন… তুমি কিছু মনে করো না বাবা। সামনের বিষ্যুদবার খুব শুভদিন। ওদিন আমি পাঁচির সঙ্গে তোমার বে দেব। সদরে গিয়ে আমি সব যোগাড়যন্ত্র করে এলুম! বাড়ির দিকে যাবে তো চলো।
পরাণ ভারমুক্ত মনে নিজের বাড়ির দিকে পা চালাল। কানাই পাঁচুকে নিয়ে চলল অন্যদিকে।
পাঁচু যেন হাওয়ায় ভেসে ভেসেই চলছে। আর সে যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। একানড়ে স্কন্ধকাটা হাঁড়িচাচা তার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশ দিয়ে চলেছে। শুনতে পাচ্ছে তারা মৃদু গলায় ফিসফিস করে ছড়া কাটছে—
পোঁড়া গাঁছের বেঁল
দাঁঠাকুরের খেঁল
গঁরিব চাঁষার ভাঁত মেঁরে
নঁটবরের জেঁল।
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া উঠল। পাঁচু বুঝল দাঠাকুর এলো। কানাইখুড়ো তাড়া দেয়।
পা চলিয়ে চলো বাবা। ঝড় আসবে বুঝি।
আঁজ্ঞে—ঝড় নয়! হাওয়া! তেঁনাদের হাওয়া! পেন্নাম করুন। তেঁনারা কোনও ক্ষতি করবেন না।
কানাই ঘাবড়ে তাকায় তারপর পাঁচুর সঙ্গে আকাশের দিকে প্রণাম করে।—শেষ
* কিম্ভূতকাণ্ড (Kimbhoot kanda – Horror Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।