অলঙ্করণ: পাপিয়া দেবনাথ।
পরদিন হাওয়ায় ভেসে পাঁচু-পাঁচি গড়াগাছি ঘুরে দেখল। পাঁচি দেখল মেয়েকে না পেয়ে কানাই কবিরাজের মনে খুব দুঃখ হয়েছে। ঠাকমার রোদে দেওয়া আচারের বয়ামগুলো অন্যদিন পাঁচিই তুলে দিত। সেদিনও সে আচারের বয়ামগুলো সে তুলে দিল। ঠাকমা ভাবল মা তুলেছে, মা ভাবল ঠাকমা তুলেছে। পাঁচু মায়ের জন্যে বেশ কয়েকটা গাছপাকা আম, খানকতক নারকোল পাকা পেয়ারা ক’টা এককাঁদি পাকা কলা ঘরে গুছিয়ে দিয়ে এল।
সন্ধ্যে রাতে দাঠাকুর ডাকলেন, সারাদিনে কী কী করল তারা, সেই সব খোঁজখবর নিলেন। হঠাৎ পাঁচি বলে উঠল।হঠাৎ পাঁচি বলে উঠল—
আচ্ছা দাঠাকুর যেতে গিয়ে বাস ট্রেন বাড়ি দেওয়াল গাছ সব পেরিয়ে যাব কিন্তু যদি সামনে জ্যান্ত মানুষ পড়ে? তখন?
মানুষের অজান্তেই তাকে ভেদ করে যেতে পারবে। তবে—
তবে কী দাঠাকুর!
তোমরা মনুষ্যসমাজের কোনও ব্যাপারে মাথা দিতে পারবে না! মানুষের ঝঞ্ঝাটে জড়াবে না!
পাঁচির কাছে বিষয়টা কিছুতেই স্পষ্ট নয়।
দাঠাকুর মানুষরাই তো মরলে ভূত হবে!
তা হোক কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা কঠিন বেড়া রয়েছে সেটা টপকানো যাবে না। মানুষের নানান প্যাঁচ পয়জার। আমরা চাই না সেসব আমাদের ভূতসমাজকে কলুষিত করুক! মানুষ নিজের ঢাক নিজেই পেটায়। কিন্তু নিজের পিঠ নিজে চাপড়াতে পারেনা বলে অন্যকে দিয়ে নিজের পিঠ চাপড়ে বাহবা নেবারও ব্যবস্থা করে।
পাঁচু বুঝতে পারে না।
সন্ধ্যে রাতে দাঠাকুর ডাকলেন, সারাদিনে কী কী করল তারা, সেই সব খোঁজখবর নিলেন। হঠাৎ পাঁচি বলে উঠল।হঠাৎ পাঁচি বলে উঠল—
আচ্ছা দাঠাকুর যেতে গিয়ে বাস ট্রেন বাড়ি দেওয়াল গাছ সব পেরিয়ে যাব কিন্তু যদি সামনে জ্যান্ত মানুষ পড়ে? তখন?
মানুষের অজান্তেই তাকে ভেদ করে যেতে পারবে। তবে—
তবে কী দাঠাকুর!
তোমরা মনুষ্যসমাজের কোনও ব্যাপারে মাথা দিতে পারবে না! মানুষের ঝঞ্ঝাটে জড়াবে না!
পাঁচির কাছে বিষয়টা কিছুতেই স্পষ্ট নয়।
দাঠাকুর মানুষরাই তো মরলে ভূত হবে!
তা হোক কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা কঠিন বেড়া রয়েছে সেটা টপকানো যাবে না। মানুষের নানান প্যাঁচ পয়জার। আমরা চাই না সেসব আমাদের ভূতসমাজকে কলুষিত করুক! মানুষ নিজের ঢাক নিজেই পেটায়। কিন্তু নিজের পিঠ নিজে চাপড়াতে পারেনা বলে অন্যকে দিয়ে নিজের পিঠ চাপড়ে বাহবা নেবারও ব্যবস্থা করে।
পাঁচু বুঝতে পারে না।
অন্য লোকে খামোকা একজনের পিঠ চাপড়াবে কেন?
যাতে সেই একজন সময় বুঝে আগেরজনের পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়ে ধার শুধে দেয়।
পাঁচির চটপটে উত্তরে পাঁচু খুশি। পাঁচির বুদ্ধি যে তাঁর চেয়ে বেশি তাতে সে গর্ব বোধ করে। দাঠাকুরও পাঁচির প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত।
সত্যিই চম্পা তুমি বুদ্ধিমতি।
আপনি আমায় পাঁচি বলতে পারেন দাঠাকুর। আমার ঠাকমার মায়ের নাম ছিলো চম্পা। তাই মা-বাবা আমায় পাঁচি বলতেন কিন্তু ঠাকমা চম্পা বলেই—
পাঁচু জানতে চায়, মাথা না দিলেও আজকের মতো আমরা বাড়ির লোকজনকে রোজ চোখের দেখা তো দেখে আসতে পারবো? দাঠাকুর জানান সেটা পারলেও দু’নৌকোয় পা দিয়ে চলাটা ঠিক নয়! তোমরা তো পাকাপাকিভাবে ওপারের মায়া কাটিয়েই আসতে চেয়েছিলে তবে এখনও কেনই বা এত মায়া? কেনই বা পিছুটান?!
ভাগ্যিস পাঁচি গুছিয়ে বলল—
না দাঠাকুর— ছেড়ে এসেছি বটে কিন্তু মা-বাবাকে ফেলে এসেছি। তাদের প্রতি তো কর্তব্য আছে! ও যেমন বিধবা মাকে ছেড়ে এসেছে। বয়স্ক বিধবা মানুষ! তাঁর খাওয়া পরার কী হবে?
পাঁচু সত্যি কথাটাই বলে—
না, মা নিজেই নিজেরটা জোটাতো। আমারটাও মা-ই যোগাতো। পরাণ উকিলের বাড়ির নিত্যপূজা করে কিছুই প্রায় জুটতো না।
পরাণ উকিলের প্রসঙ্গ উঠতেই দাঠাকুর মুখ খিঁচিয়ে বললেন ওটা একটা ছ্যাঁচড়া-বজ্জাত!
পাঁচু যেন হঠাৎ ক্ষেপে ওঠে—
আচ্ছা দাঠাকুর এখন তো আমরা ইচ্ছে করলেই কাউকে একটা বলতে পারি কি নিজেই ওই পরান উকিলের ঘাড়ে চেপে তার মুণ্ডুটা মটকে দিতে পারি!
না, পঞ্চানন। আমরা এমন প্রতিহিংসা নিতে মানা করি! এতে ভূত সমাজে চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলা অরাজকতা দেখা দেবে। আর যদি তা হয়ও বা, তাহলে পরান দত্ত একটা ঘাড় ভাঙ্গা ভূত হবে। কিন্তু অমন বজ্জাতকে তো আমরা জায়গা দেবো না।
এদিকে পাঁচির প্রশ্নের জবাব বোধহয় দাঠাকুরের কাছে নেই। “তাহলে তো এই লোকগুলোর কোন দিন শাস্তি বিচার কিছুই হবেনা! কিন্তু দাঠাকুরের নিজের প্রশ্নের উত্তরও নেই তাঁর কাছে “মনুষ্য সমাজের বিচার ভূতেরা করবে কোন হিসেবে?
যাতে সেই একজন সময় বুঝে আগেরজনের পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়ে ধার শুধে দেয়।
পাঁচির চটপটে উত্তরে পাঁচু খুশি। পাঁচির বুদ্ধি যে তাঁর চেয়ে বেশি তাতে সে গর্ব বোধ করে। দাঠাকুরও পাঁচির প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত।
সত্যিই চম্পা তুমি বুদ্ধিমতি।
আপনি আমায় পাঁচি বলতে পারেন দাঠাকুর। আমার ঠাকমার মায়ের নাম ছিলো চম্পা। তাই মা-বাবা আমায় পাঁচি বলতেন কিন্তু ঠাকমা চম্পা বলেই—
পাঁচু জানতে চায়, মাথা না দিলেও আজকের মতো আমরা বাড়ির লোকজনকে রোজ চোখের দেখা তো দেখে আসতে পারবো? দাঠাকুর জানান সেটা পারলেও দু’নৌকোয় পা দিয়ে চলাটা ঠিক নয়! তোমরা তো পাকাপাকিভাবে ওপারের মায়া কাটিয়েই আসতে চেয়েছিলে তবে এখনও কেনই বা এত মায়া? কেনই বা পিছুটান?!
ভাগ্যিস পাঁচি গুছিয়ে বলল—
না দাঠাকুর— ছেড়ে এসেছি বটে কিন্তু মা-বাবাকে ফেলে এসেছি। তাদের প্রতি তো কর্তব্য আছে! ও যেমন বিধবা মাকে ছেড়ে এসেছে। বয়স্ক বিধবা মানুষ! তাঁর খাওয়া পরার কী হবে?
পাঁচু সত্যি কথাটাই বলে—
না, মা নিজেই নিজেরটা জোটাতো। আমারটাও মা-ই যোগাতো। পরাণ উকিলের বাড়ির নিত্যপূজা করে কিছুই প্রায় জুটতো না।
পরাণ উকিলের প্রসঙ্গ উঠতেই দাঠাকুর মুখ খিঁচিয়ে বললেন ওটা একটা ছ্যাঁচড়া-বজ্জাত!
পাঁচু যেন হঠাৎ ক্ষেপে ওঠে—
আচ্ছা দাঠাকুর এখন তো আমরা ইচ্ছে করলেই কাউকে একটা বলতে পারি কি নিজেই ওই পরান উকিলের ঘাড়ে চেপে তার মুণ্ডুটা মটকে দিতে পারি!
না, পঞ্চানন। আমরা এমন প্রতিহিংসা নিতে মানা করি! এতে ভূত সমাজে চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলা অরাজকতা দেখা দেবে। আর যদি তা হয়ও বা, তাহলে পরান দত্ত একটা ঘাড় ভাঙ্গা ভূত হবে। কিন্তু অমন বজ্জাতকে তো আমরা জায়গা দেবো না।
এদিকে পাঁচির প্রশ্নের জবাব বোধহয় দাঠাকুরের কাছে নেই। “তাহলে তো এই লোকগুলোর কোন দিন শাস্তি বিচার কিছুই হবেনা! কিন্তু দাঠাকুরের নিজের প্রশ্নের উত্তরও নেই তাঁর কাছে “মনুষ্য সমাজের বিচার ভূতেরা করবে কোন হিসেবে?
আরও পড়ুন:
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১: চায়ের দোকান থেকে বিশ্বজয়
কিম্ভূতকাণ্ড, পর্ব-৫: জ্বলন্ত দুটো চোখ, শরীর ভাসছে অন্ধকারে, ঠোঁটের দু’পাশে রক্তাক্ত বড় দুটো দাঁত…
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১: অমৃতের সন্ধানে…
স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে চিকেন কারি আর ভালো লাগছে না? বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো বানিয়ে ফেলুন মুর্গ মালাই হান্ডি
আলোচনায় কোনও সমাধান সুত্র বের হল না। অবশ্য মনুষ্যসমাজে এতো আকচার হচ্ছে। কিছু লোক আজীবন মিটিং করে চলে। সমাধান পেলেও সমাধান গুলিয়ে দিয়ে আবার মিটিং করে। কারণ সমাধান খোঁজাটাই তো কাজ। একটা উত্তর পেলেই তো আবার নতুন কাজ। নতুন প্রশ্ন। নতুন চাপ। কিন্তু ভূতসমাজে ওসব ফাঁকিবাজি নেই।
দা’ঠাকুর বলে দিলেন—
আজ সন্ধ্যের মধ্যে কিছু একটা উত্তর ভেবে বের করো। আমিও ভাবছি।
সন্ধ্যেবেলা সমাধান দিল চম্পা ওরফে পাঁচি।
মনুষ্যসমাজ যখন দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করতে পারছে না। তখন ভূতসমাজকেই সে দায় নিতে হবে! পরাণ কী শয়তানি করেছে আপনি জানেন— নটবর গরিব চাষিদের ঠকিয়ে কমদামে ধান কিনে গোলা ভরে। নিজের ধানকলে চাল বানিয়ে তিন-চার গুণ দামে বেচে। গুদামের কর্মচারীদের খাটায় কিন্তু মাইনেকড়ি দেয় না। শাস্তি না হলে এই পরাণ নটবরদের দৌরাত্ম্য দিনে দিনে বাড়তে বাড়তে শেষসীমায় পৌঁছবে। কেউ একটা ধৈর্য্য হারিয়ে মারধর করলেই তো এরা মরে তখন বদমাইশ ভূত। আর ভূত একবার হয়ে গেলে তো আর তাকে ফেলে দিতে পারবেন না। ভূতসমাজে নিতে হবে।
দাঠাকুর গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। তবে পাঁচুকে বললেন ‘মায়ের ভরণপোষণ নিয়ে চিন্তা করো না পঞ্চানন।’
পরদিন ভর সন্ধেবেলা দেখা হতেই দাঠাকুর জানতে চাইলেন—‘পঞ্চানন কেমন দেখে এলে মাকে?’
পাঁচু হাত জড়ো করে গদগদ ভাবে বললো—
আঁজ্ঞে মা ভালো আছে। আপনি যেমন বলেছিলেন গ্রামের কত্তাব্যক্তিরা গ্রামের শিবমন্দিরে পুজোর যোগাড় ঠাকুরের বাসনকোসন ধোওয়া-মোছা রান্নাবাড়ির কাজটা মায়ের হয়ে গিয়েছে। সবই আপনার লীলা।
দাঠাকুর উদাত্ত ভাবে হাসেন।
হা হা হা! কেষ্ট করলে লীলা মানুষে করলে বিলা আর ভূতে করলে খেলা— হা হা হা ভেলকিও বলতে পারো! চম্পার কথাটা আমি ভেবেছি। আমার সিদ্ধান্ত যথাসময়ে জানাব।
দা’ঠাকুর বলে দিলেন—
আজ সন্ধ্যের মধ্যে কিছু একটা উত্তর ভেবে বের করো। আমিও ভাবছি।
সন্ধ্যেবেলা সমাধান দিল চম্পা ওরফে পাঁচি।
মনুষ্যসমাজ যখন দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করতে পারছে না। তখন ভূতসমাজকেই সে দায় নিতে হবে! পরাণ কী শয়তানি করেছে আপনি জানেন— নটবর গরিব চাষিদের ঠকিয়ে কমদামে ধান কিনে গোলা ভরে। নিজের ধানকলে চাল বানিয়ে তিন-চার গুণ দামে বেচে। গুদামের কর্মচারীদের খাটায় কিন্তু মাইনেকড়ি দেয় না। শাস্তি না হলে এই পরাণ নটবরদের দৌরাত্ম্য দিনে দিনে বাড়তে বাড়তে শেষসীমায় পৌঁছবে। কেউ একটা ধৈর্য্য হারিয়ে মারধর করলেই তো এরা মরে তখন বদমাইশ ভূত। আর ভূত একবার হয়ে গেলে তো আর তাকে ফেলে দিতে পারবেন না। ভূতসমাজে নিতে হবে।
দাঠাকুর গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। তবে পাঁচুকে বললেন ‘মায়ের ভরণপোষণ নিয়ে চিন্তা করো না পঞ্চানন।’
পরদিন ভর সন্ধেবেলা দেখা হতেই দাঠাকুর জানতে চাইলেন—‘পঞ্চানন কেমন দেখে এলে মাকে?’
পাঁচু হাত জড়ো করে গদগদ ভাবে বললো—
আঁজ্ঞে মা ভালো আছে। আপনি যেমন বলেছিলেন গ্রামের কত্তাব্যক্তিরা গ্রামের শিবমন্দিরে পুজোর যোগাড় ঠাকুরের বাসনকোসন ধোওয়া-মোছা রান্নাবাড়ির কাজটা মায়ের হয়ে গিয়েছে। সবই আপনার লীলা।
দাঠাকুর উদাত্ত ভাবে হাসেন।
হা হা হা! কেষ্ট করলে লীলা মানুষে করলে বিলা আর ভূতে করলে খেলা— হা হা হা ভেলকিও বলতে পারো! চম্পার কথাটা আমি ভেবেছি। আমার সিদ্ধান্ত যথাসময়ে জানাব।
ওদিকে পাঁচু-পাঁচির একসঙ্গে নিরুদ্দেশ হবার খবরে হতাশ নটবর ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পায়চারি করছে তার চালের গুদামে। আর তারই গদিতে বসে পায়ের ওপর রাখা পা নাচাতে নাচাতে সিঙ্গাড়া খাচ্ছে রোগা কাঠির মতো দারোগা ফটিক। পাশে বিধ্বস্ত কানাই। নটবর হতাশা আর চেপে রাখতে পারে না। তোতলাতে তোতলাতেই বলে—
এখনও একটা খোঁজ পাওয়া গেলোনাকো! এটা কেমন কতা ফটিকবাবু! লোকে বলে ফটিক দারোগার অসাদ্য কিচু নেইকো!
ফটিকদারোগা লালমাটির দেশের মানুষ। এসে সিঙ্গাড়া খাবার আগে কড়কড়ে ছ’খানা পাঁচশ টাকার নোট জলপানি নিয়েছে নটবরের ক্যাশবাক্স থেকে। তারপর একটানা বিরামহীন প্রচেষ্টায় এই নিয়ে ছ’খানা সিঙ্গাড়ার সার্জিকাল স্ট্রাইক শেষ করছে ফটিক। যতটা রোগা ততটাই ভারী গলা ফটিকের। ঈশ্বর যেন চেহারার খামতিটা কণ্ঠস্বরে পুষিয়ে দিতে চেয়েছেন। নটবর – পাঁচি, তিনহাজার টাকা ও বিশু ময়রার সিঙ্গাড়ার অন্তর্ধানের শোক মানতে পারছে না।
এখনও একটা খোঁজ পাওয়া গেলোনাকো! এটা কেমন কতা ফটিকবাবু! লোকে বলে ফটিক দারোগার অসাদ্য কিচু নেইকো!
ফটিকদারোগা লালমাটির দেশের মানুষ। এসে সিঙ্গাড়া খাবার আগে কড়কড়ে ছ’খানা পাঁচশ টাকার নোট জলপানি নিয়েছে নটবরের ক্যাশবাক্স থেকে। তারপর একটানা বিরামহীন প্রচেষ্টায় এই নিয়ে ছ’খানা সিঙ্গাড়ার সার্জিকাল স্ট্রাইক শেষ করছে ফটিক। যতটা রোগা ততটাই ভারী গলা ফটিকের। ঈশ্বর যেন চেহারার খামতিটা কণ্ঠস্বরে পুষিয়ে দিতে চেয়েছেন। নটবর – পাঁচি, তিনহাজার টাকা ও বিশু ময়রার সিঙ্গাড়ার অন্তর্ধানের শোক মানতে পারছে না।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১: স্নানের কি আগে রোজই সর্ষের তেল মাখেন?
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১: নারী কি আলাদা? তাঁরা পুরুষদের সঙ্গে বসতে ভয় পান? তাহলে কি এত আয়োজন শুধু তাঁদের ভয় দেখাতে…
চলো যাই ঘুরে আসি: মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তিশগড় নয়, আমাদের এই বাংলাতেই রয়েছেন ডোকরা শিল্পীরা
শোকার্ত অবস্থায় সে আড়চোখে দেখল গদির চাদরে আঙ্গুলের তেল মুছতে মুছতে ফটিক বলছে—
লোক্যে ভুল কথা বইলছ্যে, সেটি মনে হচ্ছে কেনে?
পাশে দাঁড়ানো নিমেকে সিঙ্গাড়া দেখিয়ে ইশারা করে ফটিক। নিমে কথা বলতে বা শুনতে পায়না। তাই ইশারা বুঝেই কাজ শুরু করে দেয়। কারো দিকে তাকায় না। এ ভাবেই নটবর তাঁকে এতদিন কাজ করিয়ে এসেছে। না, জেনেই ফটিক দারোগা নিমেকে ঠিকঠাক চালু করে দিয়েছে। তাই তাঁর মালিক নটবর মুকুজ্জে হাত নাড়িয়ে ঘাড় দুলিয়ে ‘উঁহুহুহু!’ করেও তাঁকে আটকাতে পারল না। মনে মনে গজগজ করে নটবর— ‘তোমায় দূর করে দেবো হতচ্ছাড়া কালার মরণ। হাবা। বোবা কোথাকার।’
নিমে ঝড়ের বেগে ভিতর থেকে সিঙ্গাড়ার ঠোঙা নিয়ে ফটিকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তাতে অবশিষ্ট আর চারটি। ফটিক ঠোঙায় হাত গলিয়ে একসঙ্গে তিনটে তুলে নিতে নিতে বলে।
না না বেশি দিওনি! মোর খাওয়া দাওয়ার খুব রেস্টিকশন বট্যে!
নিজের সামনে রাখা খালি স্টিলের রেকাবে সিঙ্গাড়া ঢেলে তৃপ্তির সঙ্গে বলে—
গড়াগাছ্যি না এলে জানাই হোতুনি ইখানে সিঙ্গাড়া এ তো ফাসক্লাস বট্যে।
নটবর তখন দাঁত ঘসটাচ্ছে ‘সদর থেকে তদন্তে গড়াগাছা আসার জন্যে তিনটি হাজার খেয়েচে! এখন বসে বসে সিঙ্গাড়া প্যাঁদাচ্চে!’
পুলিশের চাকরি। চোখকান দুটোই তেজ।
নটবরবাবু! কিছু বইলছ্যেন বট্যে?
নন না তো! আমি শুদোচ্চি ওই বজ্জাত বামুনটাকে ধরার কি ব্যবোস্তা হল—
দ্বিতীয় সিঙ্গাড়ার পঞ্চত্ব ঘটিয়ে শেষ সিঙ্গাড়াটা একটু তারিয়ে তারিয়ে কোণা ভেঙ্গে খেতে খেতে ফটিক দারোগা বলল—
পূণ্যবয়স্কো ছ্যেল্যে মেইয়্যে! মেইয়্যেটার বয়োস কত্যো হইঞ্ছে কাকা?
প্রশ্নটা কানাই কোবরেজকে।
বয়েস? কুড়ি বছর আড়াই মাস না তিনই ধরুন!
নটবর ছুটে আসে মাঝে চম্পা তার বাগদত্তা। এখন তার বয়েস নিয়ে কথাবার্তা। নটবরের ঘোর অপছন্দ।
বয়োসের কতা উটচে কেন? বাপের অমতে মেয়েটাকে ফুসলিয়ে নিয়ে পালিয়েচে ওই বজ্জাত বামুনটা।
লোক্যে ভুল কথা বইলছ্যে, সেটি মনে হচ্ছে কেনে?
পাশে দাঁড়ানো নিমেকে সিঙ্গাড়া দেখিয়ে ইশারা করে ফটিক। নিমে কথা বলতে বা শুনতে পায়না। তাই ইশারা বুঝেই কাজ শুরু করে দেয়। কারো দিকে তাকায় না। এ ভাবেই নটবর তাঁকে এতদিন কাজ করিয়ে এসেছে। না, জেনেই ফটিক দারোগা নিমেকে ঠিকঠাক চালু করে দিয়েছে। তাই তাঁর মালিক নটবর মুকুজ্জে হাত নাড়িয়ে ঘাড় দুলিয়ে ‘উঁহুহুহু!’ করেও তাঁকে আটকাতে পারল না। মনে মনে গজগজ করে নটবর— ‘তোমায় দূর করে দেবো হতচ্ছাড়া কালার মরণ। হাবা। বোবা কোথাকার।’
নিমে ঝড়ের বেগে ভিতর থেকে সিঙ্গাড়ার ঠোঙা নিয়ে ফটিকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তাতে অবশিষ্ট আর চারটি। ফটিক ঠোঙায় হাত গলিয়ে একসঙ্গে তিনটে তুলে নিতে নিতে বলে।
না না বেশি দিওনি! মোর খাওয়া দাওয়ার খুব রেস্টিকশন বট্যে!
নিজের সামনে রাখা খালি স্টিলের রেকাবে সিঙ্গাড়া ঢেলে তৃপ্তির সঙ্গে বলে—
গড়াগাছ্যি না এলে জানাই হোতুনি ইখানে সিঙ্গাড়া এ তো ফাসক্লাস বট্যে।
নটবর তখন দাঁত ঘসটাচ্ছে ‘সদর থেকে তদন্তে গড়াগাছা আসার জন্যে তিনটি হাজার খেয়েচে! এখন বসে বসে সিঙ্গাড়া প্যাঁদাচ্চে!’
পুলিশের চাকরি। চোখকান দুটোই তেজ।
নটবরবাবু! কিছু বইলছ্যেন বট্যে?
নন না তো! আমি শুদোচ্চি ওই বজ্জাত বামুনটাকে ধরার কি ব্যবোস্তা হল—
দ্বিতীয় সিঙ্গাড়ার পঞ্চত্ব ঘটিয়ে শেষ সিঙ্গাড়াটা একটু তারিয়ে তারিয়ে কোণা ভেঙ্গে খেতে খেতে ফটিক দারোগা বলল—
পূণ্যবয়স্কো ছ্যেল্যে মেইয়্যে! মেইয়্যেটার বয়োস কত্যো হইঞ্ছে কাকা?
প্রশ্নটা কানাই কোবরেজকে।
বয়েস? কুড়ি বছর আড়াই মাস না তিনই ধরুন!
নটবর ছুটে আসে মাঝে চম্পা তার বাগদত্তা। এখন তার বয়েস নিয়ে কথাবার্তা। নটবরের ঘোর অপছন্দ।
বয়োসের কতা উটচে কেন? বাপের অমতে মেয়েটাকে ফুসলিয়ে নিয়ে পালিয়েচে ওই বজ্জাত বামুনটা।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৬: ছোটদের, একান্তই ছোটদের ‘ভাই-বোন সমিতি’
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৮: দেখা-অদেখা চেনা-অচেনায় ‘মরণের পরে’
ইংলিশ টিংলিশ : APOSTROPHE-এর সঠিক ব্যবহার, Happy Teacher’s Day, নাকি Happy Teachers’ Day?
একটু আগেই নটবরের আড়চোখো দৃষ্টি ফটিক দারোগার নজর এড়ায়নি। তাই এবার গদি ছেড়ে দাঁড়িয়ে আঙুলের তেল মোছার জন্যে কিছু খোঁজে। নিমে এসে নিজের কাঁধের গামছাটা এগিয়ে দেয়। আঙুল মুছতে মুছতে ফটিক বলে—
ফটিক দারোগার কাছে কুনো দু-লম্বরি হবেক নাই! নো ইল্লিগাল আকসান!
নটবর মুখটা ঘুরিয়ে বলে ওঠে—
বুজিচি! ধম্মোপুত্তুর! যুধিষ্ঠির!
‘যুধিষ্ঠির’ কথাটা ফটিককে উদ্দেশ্য করে বলা।
যুধিষ্ঠির? এই যুধিষ্ঠির নামটা বড় চেন্যাজান্যা ঠেকছ্যে বট্যে? ইনি কি এই সদর থানার দারোগা ছিলেন নট্টোবরবাবু?
নটবর এবার চটে গিয়ে।
না, উনি দেশের বড়লাটের বড়দা ছিলেন। একন আর বেঁচে নেই কো! হেঁটে হেঁটে সগ্যে গেচিলেন! বাদ দিন। মেলা কতা হয়েচে ওই পাঁচু বামুন কবে ধরা পড়বে সেইটে বলুন দিকি।
ফটিক এবার কোমরে হাত দিয়ে পায়চারি করতে করতে বলতে থাকে।
আপনার চালগুদোমে আসার পথেই এলাকার মানুষের সাথ্যে ডিসকাশন হইঞ্ছে স্টেটমেন্ট নেওয়া হইঞ্ছে। পঞ্চানন ভালোমানুষ বট্যে। তার এগেনেস্টে গাঁয়ের কারও কিছ্যু কমপ্লেন নাই। তার কুনো ক্রিমিনাল রের্কড নাই! সক্কলেই বুইলছ্যে কাকার মেইয়্যেটার সাথে পঞ্চাননের ভালোবাসাবাসি ছিল – তারা লিচ্চয় পলাইছ্যে বটে।
নটবরের সব আশায় যেন ছাই পড়ে। সে চিৎকার করে ওঠে—
কে কে? কে বলেচে এসব আজে বাজে কতা!
ফটিক এবার নটবরের পাশে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলে—
দুটি সোমোত্থ ছেল্যে মেইয়্যে ভালোবাসাবাসি কইরেঞ্ছে। পলায়ে গিয়ে বিয়ে-সাদি কইরব্যে। ছানাপোনার বাপ-মা হব্যে। তাতে আপনার এত্যো ফাটছ্যে কেনে নট্টোবর বাবু সেটি বুইজছ্যিনা বট্যে। দুটি যুবক-যুবুতীকে নিজ্যের মতো বাঁইচতে দিন বট্যে। —চলবে
ফটিক দারোগার কাছে কুনো দু-লম্বরি হবেক নাই! নো ইল্লিগাল আকসান!
নটবর মুখটা ঘুরিয়ে বলে ওঠে—
বুজিচি! ধম্মোপুত্তুর! যুধিষ্ঠির!
‘যুধিষ্ঠির’ কথাটা ফটিককে উদ্দেশ্য করে বলা।
যুধিষ্ঠির? এই যুধিষ্ঠির নামটা বড় চেন্যাজান্যা ঠেকছ্যে বট্যে? ইনি কি এই সদর থানার দারোগা ছিলেন নট্টোবরবাবু?
নটবর এবার চটে গিয়ে।
না, উনি দেশের বড়লাটের বড়দা ছিলেন। একন আর বেঁচে নেই কো! হেঁটে হেঁটে সগ্যে গেচিলেন! বাদ দিন। মেলা কতা হয়েচে ওই পাঁচু বামুন কবে ধরা পড়বে সেইটে বলুন দিকি।
ফটিক এবার কোমরে হাত দিয়ে পায়চারি করতে করতে বলতে থাকে।
আপনার চালগুদোমে আসার পথেই এলাকার মানুষের সাথ্যে ডিসকাশন হইঞ্ছে স্টেটমেন্ট নেওয়া হইঞ্ছে। পঞ্চানন ভালোমানুষ বট্যে। তার এগেনেস্টে গাঁয়ের কারও কিছ্যু কমপ্লেন নাই। তার কুনো ক্রিমিনাল রের্কড নাই! সক্কলেই বুইলছ্যে কাকার মেইয়্যেটার সাথে পঞ্চাননের ভালোবাসাবাসি ছিল – তারা লিচ্চয় পলাইছ্যে বটে।
নটবরের সব আশায় যেন ছাই পড়ে। সে চিৎকার করে ওঠে—
কে কে? কে বলেচে এসব আজে বাজে কতা!
ফটিক এবার নটবরের পাশে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলে—
দুটি সোমোত্থ ছেল্যে মেইয়্যে ভালোবাসাবাসি কইরেঞ্ছে। পলায়ে গিয়ে বিয়ে-সাদি কইরব্যে। ছানাপোনার বাপ-মা হব্যে। তাতে আপনার এত্যো ফাটছ্যে কেনে নট্টোবর বাবু সেটি বুইজছ্যিনা বট্যে। দুটি যুবক-যুবুতীকে নিজ্যের মতো বাঁইচতে দিন বট্যে। —চলবে
* কিম্ভূতকাণ্ড (Kimbhoot kanda – Horror Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।