অলঙ্করণ: পাপিয়া দেবনাথ।
এ রাস্তায় গাড়িঘোড়া বড় একটা চলে না। একটা দুটো বাস, কখনও-সখনও টেম্পো না হলে নিশুতি। গরুর গাড়ির ক্যাঁচোর-কোঁচ বা সাইকেলের টিংটিং শব্দে তো গোল বাঁধে না। তাই পাখ-পাখালি তিড়িং-বিড়িং করে নেচে বেড়ায়। গরু ছাগল বড় রাস্তার পাশে বসে। ঘাস খায়। এই যেমন এখন এই গাধাটা। পাঁচুর মনে হল তার নিঃশব্দ চাউনি দিয়ে গাধাটা তাকে কিছু বলছে। আশেপাশে কেউ কোত্থাও নেই। দূরে একটা ঘুঘু কোথাও ডাকছে। মাঝে মাঝে হাওয়ার সরসর শব্দ। পাঁচু গাধাটাকেই তার মনের কথা বলে হালকা হতে চাইল।
— ‘চালাক না হলে কলিযুগে। মরবে তুমি ভুগে ভুগে।’ কী বুঝলে? ছড়াটা আমিই বেঁধেছি। তোমাকেই প্রথম বললুম। আমার কথাই ধরো না। ছোটবেলায় মন দিয়ে পড়াশোনা করলে আজ জজ-ব্যারিস্টার না হলেও একটা খাতা লেখার কাজ তো পেতুম। তা নয়, ভেবে বসলুম বাবা পুরুত ছিলেন আমিও পুরুত হবো। বাবার যজমানগুলো তো পাবো। আজকাল নিজেকে নিয়েই সব ব্যস্ত। ঠাকুর-দেবতা নিয়ে পুজো-আচ্চা করবে কখন? আজ একটা পাশ দেওয়া হলে কী কানাইখুড়ো অমন অপমানটা করতে পারত? না দেখো বাপের বয়সী লোক তুইতোকারি করতে পারে। আর গাধা বলেছে, তাতেও দুঃখু নেই। তুমিও কিছু মনে করো না। এটা মানুষের মুখের ভাষা। বোকা হলে গাধা আর চালাক হলে ঘোড়া। ভেবে দেখ দুনিয়ায় চালবাজি করলে সেতো ঘোড়ার মত টগবগিয়ে এগোবেই। আর সৎ ভালো মানুষকে তো বোকা হতেই হবে। এই দুনিয়ায় সক্কলে চালাক-চতুর-চড়কো। গাধা শুধু তুমি আর আমি।
গাধাটা মাঝে মাঝে মুখ তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘাস চিবোতে চিবোতে পাঁচুকে দেখছিল। পাঁচু তাকাল। হেসে বলল,
— তোমাকে মুখের সামনেটায় ওই সাদা জায়গাটা দেখলেই আমার কেমন দাড়িগোঁফ কামানো ভদ্র সভ্য ভালো মনে হয়। তাই তোমার মতো নির্বিরোধী চুপচাপ মানুষজনকে লোকে ‘গাধা’ বলে। ও নিয়ে মন খারাপ করে কোন লাভ নেই। আমি একটা মতলব করেছি। আসলে কী জানো নিজের বলতে আছে মা আর চাম্পি। চাম্পি ধরো হাতছাড়া হয়েই যাচ্ছে আর মা’র সঙ্গে আমি এসব নিয়ে কথা বলতে পারব না। মা রাজি তো হবেই না। কান্নাকাটি করে শরীর খারাপ করবে, কিন্তু অনেক ভেবে দেখলুম এটাই একমাত্র রাস্তা। আমি বেম্যদত্যি হবো। বেস্পতিবার অমাবস্যার দুপহর রাতে বেলগাছে দেহ রেখে আমার মায়ের মেজমামা
— ‘চালাক না হলে কলিযুগে। মরবে তুমি ভুগে ভুগে।’ কী বুঝলে? ছড়াটা আমিই বেঁধেছি। তোমাকেই প্রথম বললুম। আমার কথাই ধরো না। ছোটবেলায় মন দিয়ে পড়াশোনা করলে আজ জজ-ব্যারিস্টার না হলেও একটা খাতা লেখার কাজ তো পেতুম। তা নয়, ভেবে বসলুম বাবা পুরুত ছিলেন আমিও পুরুত হবো। বাবার যজমানগুলো তো পাবো। আজকাল নিজেকে নিয়েই সব ব্যস্ত। ঠাকুর-দেবতা নিয়ে পুজো-আচ্চা করবে কখন? আজ একটা পাশ দেওয়া হলে কী কানাইখুড়ো অমন অপমানটা করতে পারত? না দেখো বাপের বয়সী লোক তুইতোকারি করতে পারে। আর গাধা বলেছে, তাতেও দুঃখু নেই। তুমিও কিছু মনে করো না। এটা মানুষের মুখের ভাষা। বোকা হলে গাধা আর চালাক হলে ঘোড়া। ভেবে দেখ দুনিয়ায় চালবাজি করলে সেতো ঘোড়ার মত টগবগিয়ে এগোবেই। আর সৎ ভালো মানুষকে তো বোকা হতেই হবে। এই দুনিয়ায় সক্কলে চালাক-চতুর-চড়কো। গাধা শুধু তুমি আর আমি।
গাধাটা মাঝে মাঝে মুখ তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘাস চিবোতে চিবোতে পাঁচুকে দেখছিল। পাঁচু তাকাল। হেসে বলল,
— তোমাকে মুখের সামনেটায় ওই সাদা জায়গাটা দেখলেই আমার কেমন দাড়িগোঁফ কামানো ভদ্র সভ্য ভালো মনে হয়। তাই তোমার মতো নির্বিরোধী চুপচাপ মানুষজনকে লোকে ‘গাধা’ বলে। ও নিয়ে মন খারাপ করে কোন লাভ নেই। আমি একটা মতলব করেছি। আসলে কী জানো নিজের বলতে আছে মা আর চাম্পি। চাম্পি ধরো হাতছাড়া হয়েই যাচ্ছে আর মা’র সঙ্গে আমি এসব নিয়ে কথা বলতে পারব না। মা রাজি তো হবেই না। কান্নাকাটি করে শরীর খারাপ করবে, কিন্তু অনেক ভেবে দেখলুম এটাই একমাত্র রাস্তা। আমি বেম্যদত্যি হবো। বেস্পতিবার অমাবস্যার দুপহর রাতে বেলগাছে দেহ রেখে আমার মায়ের মেজমামা
বেম্যদত্যি হয়েছিল বহু আগে। এপারে তো অনেকদিন কাটালুম! এবার দেখি ওপারটা
কেমন? আর তোমায় চুপিচুপি জানিয়ে রাখি তেঁনারা আমায় খুব একটা অপছন্দ করে না। আর একবার বেম্যদত্যি হতে পারলে মায়ের খাবার-দাবার আমি জোগাড় করে দেব। পাঁচি চাইলে ফস করে এসে তার সঙ্গেও গপ্পো করে যেতে পারি। কিন্তু সে তখন পরস্ত্রী আর আমি পরপুরুষ-থুড়ি মরে তখন ভূত হয়ে আমি তো পরভূত।
নিজের ঠাট্টা শুনে পাঁচু হেসে লুটোপুটি। গাছের তলায় হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ল। চোখের ওপর খোলা আকাশ গাছের তলায় ঠান্ডা বাতাস। মনের কষ্ট যেন একটু একটু করে পিদিমের তেলের মত ফুরিয়ে গেল।
পাঁচু বাড়ি ফিরে পাঁজি খুলে দিনক্ষণ মিলিয়ে দেখল, তিন দিন বাদেই বেস্পতিবারের অমাবস্যা। তার মানে তাকে যোগাড়যন্ত্র যা কিছু দু’দিনের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে। আর পাঁচিকে খবরটা দিয়ে যেতে হবে।
বেস্পতিবারের আগের দিন বুধবার মাঝরাতে গোয়ালে হাওয়া আসার ঘুলঘুলিতে চড়ে পাঁচিকে সব জানাতে পাঁচি ভেঙে পড়ল। সে-কাঁদকাঁদ স্বরে বলল
— আত্মহত্যা যে মহাপাপ!!
—অমন ভাবছিস কেন। দেশ-গাঁ ছেড়ে কত লোক বিদেশ-বিভূঁইয়ে রোজগারের চেষ্টায় যায় কিনা? তোর আমার চেনা দেশ ছেড়ে একটা অচেনা দেশে যাব। এই তো ব্যাপার। তুই ইচ্ছে করলেই আমায় দেখতে পাবি। আজ বাদে কাল বেস্পতিবার অমাবস্যা, রাত ঠিক দু-পহরে পোড়াবেলগাছ তলায় পৌঁছতে পারলেই ব্যাস। কেল্লা ফতে।
পাচুঁ একাই বকে গেল। রাগে অভিমানে পাঁচি কোন কথা বলেনি। পাঁচু ফিরে গিয়েছে। মাকে একই কথা বলেছে। পুরুতগিরি করে কোনও রোজগারপাতি নেই। কাজের চেষ্টায় এবার অন্যকিছু একটা করতে হবে। মা যেন চিন্তা না করে। মা’র জন্যে যা টাকাপয়সা ছিল তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল, নুন, মশলাপাতির যোগাড় করে দিল। সকালে গ্রামের শিবমন্দিরে গিয়ে ভক্তিভরে পুজো দিল। ফলমূল প্রসাদ ভোলা মহেশ্বরের জন্যে দেওয়া খিচুড়িভোগ মা-ছেলে তৃপ্তি করে খেল। তারপর রাত নিশুতি হতে একহাতে সেই ভূতে ছোঁয়া টর্চ-লাইট আর অন্য হাতে কাছিদড়ি আর একটা লম্বা লগা নিয়ে চলল পোড়া বেলগাছ তলায়।
কেমন? আর তোমায় চুপিচুপি জানিয়ে রাখি তেঁনারা আমায় খুব একটা অপছন্দ করে না। আর একবার বেম্যদত্যি হতে পারলে মায়ের খাবার-দাবার আমি জোগাড় করে দেব। পাঁচি চাইলে ফস করে এসে তার সঙ্গেও গপ্পো করে যেতে পারি। কিন্তু সে তখন পরস্ত্রী আর আমি পরপুরুষ-থুড়ি মরে তখন ভূত হয়ে আমি তো পরভূত।
নিজের ঠাট্টা শুনে পাঁচু হেসে লুটোপুটি। গাছের তলায় হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ল। চোখের ওপর খোলা আকাশ গাছের তলায় ঠান্ডা বাতাস। মনের কষ্ট যেন একটু একটু করে পিদিমের তেলের মত ফুরিয়ে গেল।
পাঁচু বাড়ি ফিরে পাঁজি খুলে দিনক্ষণ মিলিয়ে দেখল, তিন দিন বাদেই বেস্পতিবারের অমাবস্যা। তার মানে তাকে যোগাড়যন্ত্র যা কিছু দু’দিনের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে। আর পাঁচিকে খবরটা দিয়ে যেতে হবে।
বেস্পতিবারের আগের দিন বুধবার মাঝরাতে গোয়ালে হাওয়া আসার ঘুলঘুলিতে চড়ে পাঁচিকে সব জানাতে পাঁচি ভেঙে পড়ল। সে-কাঁদকাঁদ স্বরে বলল
— আত্মহত্যা যে মহাপাপ!!
—অমন ভাবছিস কেন। দেশ-গাঁ ছেড়ে কত লোক বিদেশ-বিভূঁইয়ে রোজগারের চেষ্টায় যায় কিনা? তোর আমার চেনা দেশ ছেড়ে একটা অচেনা দেশে যাব। এই তো ব্যাপার। তুই ইচ্ছে করলেই আমায় দেখতে পাবি। আজ বাদে কাল বেস্পতিবার অমাবস্যা, রাত ঠিক দু-পহরে পোড়াবেলগাছ তলায় পৌঁছতে পারলেই ব্যাস। কেল্লা ফতে।
পাচুঁ একাই বকে গেল। রাগে অভিমানে পাঁচি কোন কথা বলেনি। পাঁচু ফিরে গিয়েছে। মাকে একই কথা বলেছে। পুরুতগিরি করে কোনও রোজগারপাতি নেই। কাজের চেষ্টায় এবার অন্যকিছু একটা করতে হবে। মা যেন চিন্তা না করে। মা’র জন্যে যা টাকাপয়সা ছিল তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল, নুন, মশলাপাতির যোগাড় করে দিল। সকালে গ্রামের শিবমন্দিরে গিয়ে ভক্তিভরে পুজো দিল। ফলমূল প্রসাদ ভোলা মহেশ্বরের জন্যে দেওয়া খিচুড়িভোগ মা-ছেলে তৃপ্তি করে খেল। তারপর রাত নিশুতি হতে একহাতে সেই ভূতে ছোঁয়া টর্চ-লাইট আর অন্য হাতে কাছিদড়ি আর একটা লম্বা লগা নিয়ে চলল পোড়া বেলগাছ তলায়।
আরও পড়ুন:
কিম্ভূতকাণ্ড, পর্ব-২: শেকড়বাকড়-লতাপাতা, গন্ডারের শিং, বাঘের নখ— যে ভাবেই হোক শরীরের বয়সটা কমিয়ে দাও
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৪৭: বসুন্ধরা এবং…
ছোটদের যত্নে: শিশু পেটের ব্যথায় ভুগছে? তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলি মেনে চলুন
ত্বকের পরিচর্যায়: ত্বক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে? যত্নে কী কী করবেন? জেনে নিন ত্বক বিশেষজ্ঞের জরুরি পরামর্শ
এদিকে চম্পা মানে আমাদের পাঁচির ঠাকুমা নিভাননী নাতনির কান্না সহ্য করতে পারেন না। অনেক বলার পর গোয়ালঘরের বেড়া-দরজার ওপারে বসে নাতনি কাঁদতে কাঁদতে সব কথা বলল। জানাল যদিও নিজে মুখে বলেনি কিন্তু পাঁচি জানে তার সঙ্গে বিয়ে না হওয়ার দুঃখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। সে-দিন রাত দু’ পহরে সে যাবে পোড়া বেলগাছতলায়। সে যে কে বৃদ্ধা বুঝলেন।
অন্যদিকে পাঁচু তো পৌঁছে গেছে পোড়া বেল গাছতলায় মনে মনে ভাবছে দিনের বেলা এখান দিয়ে যেতে লোকের বুক কাঁপে। আর আজ বেস্পতিবার অমাবস্যার রাত দু’ পহর। পঞ্চানন ভট্টাচাজ্জি বেম্যদত্যি হতে এসেছে। মনে কোনও ভয় নেই কোন দুঃখ নেই। জীবনের ওপারটা কেমন দেখার জন্য মনের মধ্যে কেমন একটা উত্তেজনা হচ্ছে।
টর্চ লাইট জ্বেলে পোড়া বেলগাছটা দেখতে দেখতে একটা শক্ত ডাল বেছে নিল পাঁচু। বলা যায় না, বাজের আগুনে-জ্বলা গাছ, পলকা ডাল হলে গলায় ভালোভাবে ফাঁস লাগার আগেই হয়তো মড়াৎ করে সে ডাল ভেঙে নিচে মাটিতে পড় ল। তারপর মরা তো হবেই না হাত পা ভেঙ্গে পড়ে থাকতে হবে। রাত্তির বেলায় এতটা রাস্তা হেঁটে আসা ফস ক’রে সাপখোপের ছোবলে প্রাণটা দিলে তো আর বেম্যদত্যি হওয়া হবে না। তাইতো ভেবেচিন্তে সঙ্গে টর্চলাইট আনা। টর্চটা মাটিতে রেখে কাছি দড়িটায় ফাঁস দিয়ে এক হাতে দড়ির খুঁট ধরে অন্যহাতে খেপলা জাল ফেলার মতো ফাঁসটা ঘোরাতে ঘোরাতে উঁচুতে বেল গাছের মোটা ডালটায় ছুঁড়ে দিল। এবার টর্চ জ্বেলে দেখে নিল কাছির ফাঁসটা কতদূরে নেমেছে। এবার আর টর্চের কাজ নেই। তবে জ্বলন্ত টর্চটা গাছের গোড়ায় ঠেকনা দিয়ে রেখে দিল। তারপর সঙ্গে আনা লম্বা লগাটা কাছির ফাঁসে গলিয়ে সেটা নামিয়ে আনলো। কিন্তু এ কী হল! এ কি দেখছে পাঁচু। জ্বলন্ত টর্চ লাইটটা পোড়া বেলগাছতলা থেকে ঘোষডাঙ্গার দিকে চলে গিয়েছে, হাওয়ায় ভাসছে টর্চলাইটখানা। পাঁচু ভাবল তার মানে সে মরেই গিয়েছে। উত্তেজনার বশে কখন গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েছে তার মনে পড়ছে না।
অন্যদিকে পাঁচু তো পৌঁছে গেছে পোড়া বেল গাছতলায় মনে মনে ভাবছে দিনের বেলা এখান দিয়ে যেতে লোকের বুক কাঁপে। আর আজ বেস্পতিবার অমাবস্যার রাত দু’ পহর। পঞ্চানন ভট্টাচাজ্জি বেম্যদত্যি হতে এসেছে। মনে কোনও ভয় নেই কোন দুঃখ নেই। জীবনের ওপারটা কেমন দেখার জন্য মনের মধ্যে কেমন একটা উত্তেজনা হচ্ছে।
টর্চ লাইট জ্বেলে পোড়া বেলগাছটা দেখতে দেখতে একটা শক্ত ডাল বেছে নিল পাঁচু। বলা যায় না, বাজের আগুনে-জ্বলা গাছ, পলকা ডাল হলে গলায় ভালোভাবে ফাঁস লাগার আগেই হয়তো মড়াৎ করে সে ডাল ভেঙে নিচে মাটিতে পড় ল। তারপর মরা তো হবেই না হাত পা ভেঙ্গে পড়ে থাকতে হবে। রাত্তির বেলায় এতটা রাস্তা হেঁটে আসা ফস ক’রে সাপখোপের ছোবলে প্রাণটা দিলে তো আর বেম্যদত্যি হওয়া হবে না। তাইতো ভেবেচিন্তে সঙ্গে টর্চলাইট আনা। টর্চটা মাটিতে রেখে কাছি দড়িটায় ফাঁস দিয়ে এক হাতে দড়ির খুঁট ধরে অন্যহাতে খেপলা জাল ফেলার মতো ফাঁসটা ঘোরাতে ঘোরাতে উঁচুতে বেল গাছের মোটা ডালটায় ছুঁড়ে দিল। এবার টর্চ জ্বেলে দেখে নিল কাছির ফাঁসটা কতদূরে নেমেছে। এবার আর টর্চের কাজ নেই। তবে জ্বলন্ত টর্চটা গাছের গোড়ায় ঠেকনা দিয়ে রেখে দিল। তারপর সঙ্গে আনা লম্বা লগাটা কাছির ফাঁসে গলিয়ে সেটা নামিয়ে আনলো। কিন্তু এ কী হল! এ কি দেখছে পাঁচু। জ্বলন্ত টর্চ লাইটটা পোড়া বেলগাছতলা থেকে ঘোষডাঙ্গার দিকে চলে গিয়েছে, হাওয়ায় ভাসছে টর্চলাইটখানা। পাঁচু ভাবল তার মানে সে মরেই গিয়েছে। উত্তেজনার বশে কখন গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েছে তার মনে পড়ছে না।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৫: যখন ‘ওরা থাকে ওধারে’
দশভুজা: ‘ওগো তুমি যে আমার…’— আজও তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেনি/২
যোগা-প্রাণায়াম: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান? তাহলে যোগাসন হতে পারে সেরা অস্ত্র
ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৯: নীল আকাশ, রঙিন ফল কালার, হ্রদের জলে তার প্রতিচ্ছবি…ঠিক যেন রূপকথার গল্প
এখন সে যেটাকে তার হাত-পা- মুখ বুক পেট এসব ভাবছে এসব আসলে কিছু নেই। তার মানে সে বেম্যদত্যি হয়ে গিয়েছে। তাই সে তেঁনাদের কাণ্ডকারখানা চোখে দেখতে পাচ্ছে। হঠাৎ মেয়েলি খোঁনা গলায় কে যেন খিলখিল করে হেসে উঠলো। তারপর সুর করে করে বলতে লাগল।
— ভঁয় পেঁলে নাঁকি ঠাঁকুর!
এবার সত্যি ভয় ভয় করছে পাঁচুর। তবু গলায় জোর এনে বলল,
— রাম রাম রাম রাম!! আমার সঙ্গে মশকরা নয়। বামুনের ছেলে আমি শান্তি স্বস্ত্যয়ন- বারের পুজো জানি। খানিক পরেই কিন্তু আমি বেম্যদত্যি হচ্ছি।
এবার অন্ধকার থেকে চেনা গলা শোনা গেল।
—তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ঠাকুর। আমাকে সঙ্গে নাও।
নিজের মুখে টর্চের আলো ধরল পাঁচি। লাল বেনারসি গয়নায় বিয়ের কনের মত সেজেছে সে। দড়ি ফেলে পাঁচু ছুটে গেল।
— চাম্পু তুই!! এত সেজেগুজে মরতে এসছিস? মেয়েমানুষের সাজগোজের এতো সখ?
— ওই কালো জলহস্তি নটবরের সঙ্গে বিয়ে দেবার জন্যে বাবা এই বেনারসি শাড়ি গয়না কাটোয়া বাজার থেকে কিনেছিল। বাবা ঘুমোতে তার বালিশের তলা থেকে চাবি নিয়ে ঠাকমা আমায় গোয়াল থেকে বের করে এসব পরিয়ে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিল।
—সময় বয়ে যাচ্ছে চাম্পু। আয় গলায় ফাঁস দিয়ে দু’জনে ঝুলে পড়ি।
— ভঁয় পেঁলে নাঁকি ঠাঁকুর!
এবার সত্যি ভয় ভয় করছে পাঁচুর। তবু গলায় জোর এনে বলল,
— রাম রাম রাম রাম!! আমার সঙ্গে মশকরা নয়। বামুনের ছেলে আমি শান্তি স্বস্ত্যয়ন- বারের পুজো জানি। খানিক পরেই কিন্তু আমি বেম্যদত্যি হচ্ছি।
এবার অন্ধকার থেকে চেনা গলা শোনা গেল।
—তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ঠাকুর। আমাকে সঙ্গে নাও।
নিজের মুখে টর্চের আলো ধরল পাঁচি। লাল বেনারসি গয়নায় বিয়ের কনের মত সেজেছে সে। দড়ি ফেলে পাঁচু ছুটে গেল।
— চাম্পু তুই!! এত সেজেগুজে মরতে এসছিস? মেয়েমানুষের সাজগোজের এতো সখ?
— ওই কালো জলহস্তি নটবরের সঙ্গে বিয়ে দেবার জন্যে বাবা এই বেনারসি শাড়ি গয়না কাটোয়া বাজার থেকে কিনেছিল। বাবা ঘুমোতে তার বালিশের তলা থেকে চাবি নিয়ে ঠাকমা আমায় গোয়াল থেকে বের করে এসব পরিয়ে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিল।
—সময় বয়ে যাচ্ছে চাম্পু। আয় গলায় ফাঁস দিয়ে দু’জনে ঝুলে পড়ি।
আরও পড়ুন:
শীতের আমেজে লোভনীয় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা? রেস্তরাঁর মতো ঝটপট বানিয়ে ফেলুন সুখা মরিচ মাটন
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৬: ‘সত্যেরে লও সহজে’—রাজসুখ ছেড়ে কি তবে বনবাসী মন?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৩: নোবেল-প্রাপ্তির সংবর্ধনা-সভায় রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন
পর্ব-৪৬: ভৃগুবংশে জন্ম নিলেন পরশুরাম— চরুবদলের ভুলে ক্ষত্রতেজ পেলেন তিনি
মেয়েদের বুদ্ধি-বিবেচনা বেশি। সে বলে দু’জনে মিলে ঝুলে পড়লে ভারের চোটে যদি মরার আগে ঘাড় ভাঙ্গে। তবে কিন্তু ঘাড়-ভাঙ্গা ভূত হয়ে থাকতে হবে। কথাটায় যুক্তি আছে। কিন্তু তবে উপায়? পাঁচি জানায় উপায় তার হাতে। পাঁচু দেখে তার হাতে দুটো কাগজের মোড়কে কালো-কালো গুঁড়ো যেন মিহিকরে বাটা কাঠকয়লা।
—এগুলো কী রে চাম্পু?
—সাঙ্ঘাতিক বিষ। কী সব শেকড়-পাতা বেটে শুকিয়ে বাবা বানায়। ধানের গোলায় ধেড়ে ইঁদুর। গোয়ালের সাপ-খোপ মারতে একচিমটে এই বিষ দেয় বাবা।
—ধর্মের কল বাতাসে নড়ে চাম্পু। সেইসব সাপ-ইঁদুরের শাঁপে আজ তারই হাতে বানানো বিষে তার মেয়ে জামাই মরবে।
—জামাই হলে কখন?
—আরে বাপু খুড়ো আমাদের বে’টা মেনে নিলে তো আমিই জামাই হতুম।
পাঁচি মোড়ক খুলে একটা নিজে নেয় অন্যটা পাঁচুকে দেয়। যেই সে মোড়কের কালো গুঁড়ো তারা মুখে ফেলতে যাবে। হঠাৎ পিলে চমকানো গলায় কে যেন বলে উঠলো
— থামো!!! অর্বাচীনের দল!! —চলবে
—এগুলো কী রে চাম্পু?
—সাঙ্ঘাতিক বিষ। কী সব শেকড়-পাতা বেটে শুকিয়ে বাবা বানায়। ধানের গোলায় ধেড়ে ইঁদুর। গোয়ালের সাপ-খোপ মারতে একচিমটে এই বিষ দেয় বাবা।
—ধর্মের কল বাতাসে নড়ে চাম্পু। সেইসব সাপ-ইঁদুরের শাঁপে আজ তারই হাতে বানানো বিষে তার মেয়ে জামাই মরবে।
—জামাই হলে কখন?
—আরে বাপু খুড়ো আমাদের বে’টা মেনে নিলে তো আমিই জামাই হতুম।
পাঁচি মোড়ক খুলে একটা নিজে নেয় অন্যটা পাঁচুকে দেয়। যেই সে মোড়কের কালো গুঁড়ো তারা মুখে ফেলতে যাবে। হঠাৎ পিলে চমকানো গলায় কে যেন বলে উঠলো
— থামো!!! অর্বাচীনের দল!! —চলবে
* কিম্ভূতকাণ্ড (Kimbhoot kanda – Horror Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।