শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


অলঙ্করণ: পাপিয়া দেবনাথ।

কানাই কোবরেজ মেয়ের জন্যে এ গাঁয়ে, সে গাঁয়ে ভালো পাত্র খুঁজছিল। পাঁচু শুনল সে-কথা। সে ভাবল পাঁচি নিশ্চয়ই বাবাকে মুখ ফুটে নিজের বিয়ের কথা বলতে পারেনি, রোজকার পুজারি বামুনের ধুতি-নামাবলি ছেড়ে প্যান্ট-শার্ট পরল। বাবা তখন বেঁচে। পুজোর সময় বাবা টাকা দিয়েছিল পাঁচু সদরবাজার থেকে সেই টাকায় অনেক সখ করে একজোড়া সাদা টেরিকটের প্যান্ট-শার্ট কিনেছিল। সেই শার্ট-প্যান্ট পরেই পাঁচু গেল ভাবি শ্বশুর কানাই কোবরেজের কাছে। সহজ সত্যি কথাটা সহজভাবে বলতে। চম্পা মানে পাঁচি, পাঁচুকে সরাসরি বাড়িতে দেখে চমকে উঠল— বাবা এমনিতেই ইদানীং ক্ষেপে থেকে, পাঁচুকে এ ভাবে এ বাড়িতে দেখলে নির্ঘাৎ আজ অনর্থ হবে। পাঁচু বাড়ির খিড়কির দরজা দিয়ে বের করবার জন্যে পাঁচি দেখতে গেল, বাবা সেদিকটা আছে কিনা। এদিকে পাঁচু দাওয়ায় রাখা কবিরাজি ওষুধের বয়ামগুলো খুব উৎসাহ নিয়ে উঁকি মেরে দেখছিল। পেছন ঘুরতেই একেবারে বাঘের মুখোমুখি। মানে সামনে স্বয়ং কানাই কবিরাজ। কালচে একটা কবিরাজী পাঁচন পাথরের বাটিতে গুলছিল। পাঁচুকে দেখামাত্রই কানাইয়ের মোটা ভুরুজোড়া কুঁচকে গেল। কানাইয়ের বুনো ভুরুর জঙ্গলে প্রশ্নের খোঁচা! ‘এ ছোকরা এখানে কী করচে?’

পাঁচু একগাল হেসে ঢিপ করে একটা প্রণাম করল।
— থাক থাক!
— শত হলেও আপনি গুরুজন।
—ওসব ধানাই-পানাই ছাড়ো। এখানে কী মনে করে সেটি ঝেড়ে কাশো!!
—আঁজ্ঞে! এসব কথা নিজে মুখে বলাটা শোভনীয় নয়। গুরুজনেরাই এসব… কিন্তু আপনি তো জানেন বাবা গত হয়েছেন আর মা খুব একটা বেরোন না।
—কথাটা কী।

গোয়ালের আড়াল থেকে পাঁচি মানে চম্পা উঁকি মেরে দেখছিল। চাইছিল পাঁচু একবারটি তাকালে, সে ইশারায় বলে দেবে কথা না বাড়িয়ে কেটে পড়তে। কিন্তু পাঁচুর কোনওদিকে হুঁশ নেই। সে-ভাবী শ্বশুরমশাইয়ের মন পেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
—আঁজ্ঞে! আপনি তো জানেন, কথাটা আপনার মেয়ের বিয়ের বিষয়ে।
—আমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে তোমার এত চিন্তা কেন?
—আঁজ্ঞে! আমি যে…
—ও বুজিচি! পুরুতগিরির সঙ্গে ঘটকালিও করা হয়।

কানাই পাত্রের সন্ধান পেয়ে পাঁচুর কাছাকাছি গিয়ে একটু গলা নামিয়ে বলে,
—তো পাত্রটি কোথাকার!! রোজগারপাতি কেমন?
পাত্রের খোঁজ নিতে নিতে কানাই হাতের পাত্রটা দাওয়ায় রাখতে যাচ্ছিল,
—আঁজ্ঞে! আমি ঘটক নই।

ঝুঁকে পড়ে থমকে গেল কানাই কবিরাজ,
—তবে?
চোখটা বুজে পাঁচু একনিশ্বাসে বলে ফেলল,
—আঁজ্ঞে! পাত্র আমি, কথা দিচ্ছি আপনার মেয়েকে আমি সুখে রাখব।
কথাটা কানাই কোবরেজের কানে পৌঁছতেই – রাগে কানাইলাল থরথর করে কাঁপতে লাগল। আচমকা ঘুরে তাকাতে যেতেই কেলেঙ্কারি। নিজের হাতে-ধরা কালচে টলটলে পাঁচন-গোলা টাল খেয়ে চলকে গিয়ে ছলাৎ নিজেরই নাকে-মুখে-মাথায় এমনকি গোটা শরীরে গিয়ে পড়ল। আর ছিটকে যাওয়া ছিটেতে চিত্রবিচিত্র হল পাঁচুর ধবধবে সাদা টেরিকটের শার্ট প্যান্ট।

কানাইলাল ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছে। খুব চটে গেলে তার হাইস্কুলের বিভূতিবাবুর মতো ইংরিজিতে মুখ খারাপ করার অভ্যেস। তবে বহুকাল আগে কানে শোনা তো রাগের মাথায় বলার সময় উনিশ-বিশ হয়ে যায়। ফরসা কানাইয়ের মুখটা যেন রসালো বাতাবি লেবুর মতো লালচে থেকে গোলাপি তাতে গড়িয়ে পড়ছে কালো পাঁচন, চোখের চাঁদির ফ্রেমের গোলচশমা কাঁপুনির ঝটকায় হেলে গিয়েছে। একটা কাচ সাদা অন্য কাচটা কালো। রাগের তোড়ে মুখ থেকে ইংরিজি আর থুথু আর গাল বেয়ে নেমে আসা পাঁচন একই সঙ্গে বের হচ্ছে।
—রাস্কেল ইডিয়ট স্ক্যান্ডেল। তুই দূর হয়ে যা, গেট আউট ইউ!! বাউন্ডুলে আহাম্মক- চালাচুলো নেই। নিজেদেরই দুবেলা ভাত জোটে না!! তুই কিনা কানাই কোবরেজের মেয়েকে বিয়ে করবি – বের হ! পুরুতগিরি না করে কুলিগিরি করলে দু’বেলা দুমুঠো ভাত জুটতো!! গাধা কোথাকার!!

কানাই কোবরেজ গাধা বলায় পাঁচুর যত দুঃখ হয়নি তার চেয়ে সে বেশি কষ্ট পেয়েছি সাধের একমাত্র টেরিকটের সাদা শার্ট-প্যান্টখানা পাঁচনের কালিতে কালিমালিপ্ত হতে দেখে।

এদিকে কানাইলালের কিন্তু মেয়ের মতিগতি তার ভালো ঠেকছে না। সেদিনের সেই ঘটনার পর সে ঘরে খিল দিয়ে বসে আছে। মা’র মানে কানাইয়ের পরিবারের কথা তো কানেই তুলছে না। কানাইয়ের মা, মানে পাঁচির ঠাকমা নিভাননী অনেক সাধ্যসাধনা করে তাকে খাওয়াচ্ছে। না-হলে মেয়ে হয়তো অন্নজল ত্যাগ করত। কানাই ভেবেছিল বামুনের ছেলেকে গালমন্দ করে কুকুর-ছাগলের মতো বের করে দেওয়াতে মেয়ের গোঁসা হয়েছে। হাজার হোক ছেলেবেলার বন্ধু। কিন্তু পরিবারের কাছে সব শুনে কানাই গুম হয়ে গেল। ওই পাঁচু বামুনকে তার মেয়েও বিয়ে করতে চায়… তাহলে যে অনর্থ হয়ে যাবে। কিন্তু আজকালকার ছেলেমেয়ে। পালিয়ে বিয়ে-থা করে ফেললে তো কেলেঙ্কারি!! অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক করলে, তারা এ সব জানতে পারলে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে। গোটা রাত পায়চারি করতে করতে মাথায় নানা কথা ঘুরছে।
আরও পড়ুন:

কিম্ভূতকাণ্ড, পর্ব-১: পোড়া গাছের ডাল থেকে নেমে এল সে! ভাটার মতো সবজে চোখ, ধোঁয়াটে শরীর…

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৪৬: বসুন্ধরা এবং…

বেশ ধাঁধায় ফেলছে প্লেটলেট, কমলেই সতর্ক হোন, কাউন্ট কত নামলে প্রয়োজন হয় প্লেটলেটের?

শীত মানেই লেদার জ্যাকেট পরা শুরু! এ ভাবে যত্ন নিচ্ছেন তো?

গ্রামের চালের আড়তদার ধানকলের মালিক নটবর মুকুজ্জে বিপত্নীক। নটবর প্রায় পাঁচির জ্যাঠার বয়সী কিন্তু কানাইয়ের মেয়েকে তার বড্ড পছন্দ। আজ প্রায় বছর দশেক পরিবার ছাড়া মনমরা হয়ে আছে। তার আগেরপক্ষের কোনও ছেলেপিলে নেই। একটা বংশধরের ইচ্ছেয় সে দ্বিতীয়পক্ষ করতে চায়। বিয়েটা যার সঙ্গেই হোক তার কপাল খুলে যাবে। নটবর মোষের মতো কালো আর জলহস্তীর মতো মোটাসোটা। যেন ঠিক মোটা খসখসে চামড়ার প্যাকেটে ঠেসে ভরা চর্বির থাক। কুতকুতে দুটি চোখ। কিন্তু তার মুখের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল থ্যাবড়া নাককে ছাপিয়ে যাওয়া দুটি জলের ফেরুলের মত নাকের ফুটো। কথা বলতে গেলেই অনবরত সেখান দিয়ে হাওয়া যাতায়াত করছে। কোন কথা মন দিয়ে শুনলে হাতির নিচের ঠোঁটের মতো নটবরের মোটা পুরু ঠোঁটটা থলথলে গাল আর চিবুকের ভারেই একটু একটু করে স্লো মোশানে নেমে যায়। খানিক পরে মুখ থেকে লালা টস করে পড়ব পড়ব হলেই নটবর উলটো হাতে মুখটা মুছে নেয়। সেই হাতের ছোঁয়ায় পাশের তাকিয়াটা সাদা থেকে হলুদ হতে হতে ক্রমশ বাদামি হয়ে যাবে। কালো হলে তবে কাচা হবে। কানাই কবিরাজ খুব পিটপিটে। যদিও রেগে গেলে কানাইয়ের মুখ থেকে থুতু ছিটকোয় তবুও সে নটবরের গদিতে এসে কক্ষনও ওই তক্তপোশে বসে না। হাতলভাঙ্গা কাঠের চেয়ারটা টেনে নেয়। আপনচক্ষে নিজের বদগুণ আর কে কবে দেখতে পায়?

নটবরের চালের গুদাম আছে। ধানকল আছে। পয়সাকড়ি প্রচুর। তার রাজনীতি করার খুব সখ। কিন্তু নটবর তোতলা। গোটা একটা লম্বা কথাই গুছিয়ে বলতে পারে না। আর নেতা হতে গেলে তো ভাল বক্তা হতেই হবে। হোক না তার তিন ভাগ জল এক ভাগ মাটি। বুক ঠুকে নির্জলা মিথ্যেটা বলতে তো হবেই। তাই নটবর সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কানাই কোবরেজকে দাঁড় করাবে। খরচ-খরচা সব নটবরের। বদলে তার চম্পাকলিকে বিয়ে করার সখ। কচি মেয়ের মন পেতে যা খরচখরচা লাগে নটবর করবে। কথাটা পাড়ার পর দিন দু’য়েক কানাই হ্যাঁ-না কিছু বলেনি। কিন্তু কথাটা বলার পর থেকে নটবরের যেন আর ত্বর সইছে না। উঠতে বসতে চম্পাকে সে আশেপাশে স্বপ্নে দেখছে। সেদিন কানাই একবার বলেছিল,
—এই বয়েসে বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে?

বর্ষা মেঠোকাদায় টাল সামলাতে সামলাতে গাঁয়ের লোকে যেমন হেঁটে যায়। সেভাবেই তোতলা নটবর বলে গেল।
আরও পড়ুন:

প্রায়শই ব্যায়াম করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন? শরীরচর্চার পরে এই সব খাবার খেতে পারেন

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৪: আশা-নিরাশা ও ভরসার সে এক অন্য ‘মনের ময়ূর’

দশভুজা: ‘ওগো তুমি যে আমার…’— আজও তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেনি/২

ইংলিশ টিংলিশ: আজকে এসো দেখি Prefix আর Suffix কাকে বলে

—পুরুষমানুষের আবার বয়েস। দেকো একদিকে তুমি আমার কোবরেজ অপরদিকে চম্পার বাপ সম্পক্কে গুরুজন! কোবরেজ তুমি খরচার জন্যে ভেবো নাকো। শেকড়বাকড় লতাপাতা গণ্ডারের শিং বাঘের নখ যা দিয়ে হোক শরীরের বয়সটা কমিয়ে দাও। মনে মনে কিন্তু আমি এখনও বেশ কচিটি আচি।
আর চম্পার কথা বলার সময় মনের ফুর্তিতে কথা যেন কম আটকায়। কিন্তু তাতেও কানাইয়ের মত হল না দেখে শেষমেশ পঞ্চায়েতে কানাইকে দাঁড় করানোর টোপটা দিল। আগে থেকেই ‘চালের বস্তা’-কে প্রতীক ভেবেছিল নটবর। কানাইয়ের কথা মেনে ঠিক করলো প্রতীক হবে ‘ওষুধের শিশি’।

দ’য়ে পড়ে কানাই বঁড়শি গিলল। তড়িঘড়ি মেয়ের বিয়ে বিপত্নীক নটবর মুকুজ্জের সঙ্গেই ঠিক করে ফেলল।

এদিকে আমাদের চম্পা মানে পাঁচির জেদ ভয়ানক। সে সাফ জানালো পাঁচুকে ছাড়া সে আর কাউকে বিয়ে করবে না। কানাই কোবরেজ সেই শুনে পাঁচুকে আবার গাধা গরু ছাগল আকাট মুখ্যু এসব বলতে লাগল। পাঁচি প্রতিবাদ করল। তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে কানাইলাল মেয়েকে গোয়ালঘরে বেঁধে রাখলো।
—একেবারে বিয়ের দিন গোয়ালঘর থেকে ছাঁদনাতলায় যাবে পাঁচি। নটবর মুকুজ্জের বৌ হতে।

এদিকে কানাঘুষো পাঁচুর কানে এল কানাই কোবরেজ জোর করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে দোজবরে। পাত্র জ্যাঠার বয়সী কেলো নটবর। কানাই মেয়েকে গোয়ালঘরে আটকে রেখেছে। পাঁচু বুঝতে পারল সব দোষ তার। তার না আছে নিজের মা-বেটার সংসার চালানোর ক্ষমতা সে আর-একটা মেয়ের দ্বায়িত্ব নেবে কী করে? মনের দুঃখে সে ঠিক করলো পুরুতগিরি না করে কুলিগিরি করবে। সত্যিই তো পুজোপাঠ করে তো তাদের ঠিকমতো খাবার জুটত না। বাবার সময়ে তবু লোকের পুজোপাঠে মতি ছিল। তখন কষ্টেসৃষ্টে কোনোক্রমে হলেও সংসারটা চলত। কিন্তু এখন তো… কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আর এক।
আরও পড়ুন:

বাইরে দূরে: পর্ব-৮ ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৮: এখানে এসে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা…আবার সূর্য ডুবলে বাড়ি ফিরে যাই

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৬: ‘সত্যেরে লও সহজে’—রাজসুখ ছেড়ে কি তবে বনবাসী মন?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি: পর্ব-৪২: নিজেকে যিনি আড়ালে রেখেছিলেন

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৫: পরশুরামের আশ্রমে এসে পৌঁছলেন পাণ্ডবেরা

গড়াগাছি থেকে ঠাসাঠাসি করে বাস যায়। ধুতি আর বাবার ফতুয়া পরে কাঁধে গামছা নিয়ে কুলি সেজে পাঁচু সেই বাসে চেপে তিন-সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে ধুলো-ধোঁয়া মেখে পৌঁছল পুরোনো কাটোয়া রেলস্টেশনে। তখনও কাটোয়া-বর্ধমানের মধ্যে ম্যাক্লিওড কোম্পানির ছোট ট্রেন চলত। কয়লার ইঞ্জিন। সাতটা বগি। চারচাকার ওপর এক-একটা কামরা। কাঠের পাল্লাওলা জানলা। কোনও গরাদ বা জাল নেই। জানলা দিয়ে মাল বা মানুষ ঢুকে যেত। কুলিগিরি করলে চেনা জায়গায় নয় দূরে গিয়ে করতে হবে। পেয়ে গেল এক বয়স্ক দাদু-দিদাকে। দামের রফা করে যেই না বাক্স-প্যাঁটরা মাথায় তুলতে যাবে ফতুয়ার আড়াল থেকে পাঁচুর গলার কাছে উঁকি দিল ধবধবে সাদা পৈতে। বয়স্ক স্বামী-স্ত্রী ‘হাঁহাঁ’ করে উঠল।
—বাবা!! তুমি যে বামুনের ছেলে-ছি ছি ছি! মাল নাবাও। বৈকুণ্ঠে যাবার বয়েসে আমাদের আর পাপ বাড়িও না বাছা।

পাঁচু যতো বলে এই পৈতের জোর বাপ-ঠাকুর্দার আমলে হয়তো ছিল আজকাল কিস্যু নেই। এ এখন বোঝা। তারা কোন কথাই শুনলো না।

কুলিগিরির মতলব ভেস্তে গেল। গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে বাসে চেপে পাঁচু গড়াগাছি ফিরে এল। সকাল থেকে একপয়সা রোজগার নেই। খামোকা খরচার কপাল। বাড়ি না ফিরে গড়াগাছি বটতলার মুখে নেমে গাছতলায় বসেই একটু জিরোতে লাগল পাঁচু। বসে আছে বসে আছে… মাথায় কিছুই আসছে না। চাম্পুর বিয়ে নটবরের সঙ্গেই দেবে কানাই খুড়ো। চম্পা বা পাঁচিকে সে মাঝেমধ্যে ‘চাম্পু’ বলে ডাকে। ঠিকই তো! কোন বাপ আর এমন চালচুলোহীন পুরুত ঠাকুরের হাতে মেয়েকে তুলে দেবে। কিন্তু খুড়ো এটা কী ঠিক করছে? নটবর চালকলের মালিক বলে অমন একটা কালো মোষের চেহারার বুড়োহাবড়া দোজবরের সঙ্গে চাম্পুর!! হঠাৎ খড়খড় শব্দ হতে সাপখোপ ভেবে চমকে উঠেছিল পাঁচু- তারপর দেখল একটা গাধা! ঘাস খাচ্ছে আর বড়বড় কালো চোখ তুলে যেন তাকে দেখছে।—চলবে
* কিম্ভূতকাণ্ড (Kimbhoot kanda – Horror Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।

Skip to content