মানুষ দীর্ঘ অভ্যেসে কি না পারে? জীবনের অনেকটা সময় কাশ্মীরের পাহাড়ে জঙ্গলে কনকনে শীতে অতন্দ্র প্রহরায় রাতের পর রাত কেটেছে। তাই সাধারণ সিভিলিয়ানদের চেয়ে মানসিক জোর, শরীরের রিফ্লেক্স কিংবা পরিস্থিতি আগাম বুঝতে পারার ক্ষমতার মতোই আচমকা আলো থেকে অন্ধকারে এলে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরুষোত্তমের আন্দাজ ফিরে আসে। বেশি আলোতে আপনাআপনি আমাদের চোখের মণির মধ্যের লেন্স অ্যাপারচার কমিয়ে রেটিনার ভিতরে কম আলো যাবার ব্যবস্থা করে। কিন্তু আলোর থেকে অন্ধকারে গেলে উল্টোটা আপনাআপনি ঘটে না।
তাই সাধারণভাবে চোখ কিছু দেখতে পায় না। কিন্তু এই অন্ধকারে নিঃশব্দে চলাফেরায় যারা দিনের পর অভ্যস্ত হয়ে যায়, তারা সাধারণের থেকে একটু আলাদা। আর পুরুষোত্তম আর তার সঙ্গীরা আলোয় চোখ বুজে রেখে অন্ধকারে গিয়ে চোখ খুলতো। এতে নাকি অন্ধকারে আরও তাড়াতাড়ি চোখ সড়গড় হয়ে ওঠে। এটা অবশ্য তাদের নিজস্ব টিপস! অন্ধকারের জন্যে হয়ত আরও খানিকটা বাড়তি মানসিক প্রস্তুতি। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না থাকলেও এই টোটকায় কাজ হোত। আজও সেটাই মেনে চোখ বুজিয়ে ছিল পুরুষোত্তম।
তাই সাধারণভাবে চোখ কিছু দেখতে পায় না। কিন্তু এই অন্ধকারে নিঃশব্দে চলাফেরায় যারা দিনের পর অভ্যস্ত হয়ে যায়, তারা সাধারণের থেকে একটু আলাদা। আর পুরুষোত্তম আর তার সঙ্গীরা আলোয় চোখ বুজে রেখে অন্ধকারে গিয়ে চোখ খুলতো। এতে নাকি অন্ধকারে আরও তাড়াতাড়ি চোখ সড়গড় হয়ে ওঠে। এটা অবশ্য তাদের নিজস্ব টিপস! অন্ধকারের জন্যে হয়ত আরও খানিকটা বাড়তি মানসিক প্রস্তুতি। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না থাকলেও এই টোটকায় কাজ হোত। আজও সেটাই মেনে চোখ বুজিয়ে ছিল পুরুষোত্তম।
নাইট ভিশন গগলসের কথা শোনা গিয়েছিল অনেক আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। বিদেশে আর্মিতে এর ব্যবহার হয়ে এসেছে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সেনারা আরও আধুনিক রাতচশমা ব্যবহার করেছে। কিন্তু ভারত সরকার এর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন অনেক পরে।
খুব হিসেব করে গুণে গুণে মোট ষোলোটার দশটা বুলেট ব্যবহার করতে হল ছ’ জনের জন্যে। মেয়ে দুটো কোনওক্রমে পালালো। গুলির শব্দ শুনে আগের জ্ঞান হারানো দু’জন ছুটে অন্ধকার থেকে ছুটে আসা গুলিতে শেষ হয়ে গেল। আলো জ্বালিয়ে দিল পু্রুষোত্তম। দুজন পাণ্ডার ছিপছিপে গুন্ডা বোম্বের মারকাটারি ছবির নাছোড়বান্দা ভিলেনের মতো একটু বুকে ঘষটে তার হাত থেকে ছিটকে পড়া বন্দুকটা তুলতে এগোবার চেষ্টা করতেই সরাসরি মাথায় গুলি করে পুরুষোত্তম। একমূহুর্ত থেমে ঠিক বিয়েবাড়ির শেষপাতে সন্দেশ দেবার মতো করে বাকি পাঁচটা মৃতদেহে পাঁচটা বুলেট পুঁতে দিল।
নদীর পাড় ধরে গেলে থানাটা কাছে পড়ে। পুরুষোত্তম ওই রাস্তাতেই গেল। পাণ্ডা দুটোকে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে গেল থানা পর্যন্ত। তখনও অন্ধকার। শুধু পদ্মা আর তার দুই মেয়ে ছাড়া গোটা বার্ণপুর ঘুমোচ্ছে। গতকাল পুরুষোত্তম পদ্মাকে বলে শুধু বলে এসেছিল সে একটা জরুরি কাজে যাচ্ছে। রাতে ফিরতে পারবে না। কাজটা হয়ে গেলে অবশ্য বাইরে যেতে হতে পারে। এখুনি নয় পরে সবকিছু খুলে বলব। পদ্মা মানুষটাকে চেনে তাই সে ঘুমোতে পারছে না। আর তার দু’মেয়ে – মা জেগে আছে তাই ঘুমোতে পারছে না।
খুব হিসেব করে গুণে গুণে মোট ষোলোটার দশটা বুলেট ব্যবহার করতে হল ছ’ জনের জন্যে। মেয়ে দুটো কোনওক্রমে পালালো। গুলির শব্দ শুনে আগের জ্ঞান হারানো দু’জন ছুটে অন্ধকার থেকে ছুটে আসা গুলিতে শেষ হয়ে গেল। আলো জ্বালিয়ে দিল পু্রুষোত্তম। দুজন পাণ্ডার ছিপছিপে গুন্ডা বোম্বের মারকাটারি ছবির নাছোড়বান্দা ভিলেনের মতো একটু বুকে ঘষটে তার হাত থেকে ছিটকে পড়া বন্দুকটা তুলতে এগোবার চেষ্টা করতেই সরাসরি মাথায় গুলি করে পুরুষোত্তম। একমূহুর্ত থেমে ঠিক বিয়েবাড়ির শেষপাতে সন্দেশ দেবার মতো করে বাকি পাঁচটা মৃতদেহে পাঁচটা বুলেট পুঁতে দিল।
নদীর পাড় ধরে গেলে থানাটা কাছে পড়ে। পুরুষোত্তম ওই রাস্তাতেই গেল। পাণ্ডা দুটোকে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে গেল থানা পর্যন্ত। তখনও অন্ধকার। শুধু পদ্মা আর তার দুই মেয়ে ছাড়া গোটা বার্ণপুর ঘুমোচ্ছে। গতকাল পুরুষোত্তম পদ্মাকে বলে শুধু বলে এসেছিল সে একটা জরুরি কাজে যাচ্ছে। রাতে ফিরতে পারবে না। কাজটা হয়ে গেলে অবশ্য বাইরে যেতে হতে পারে। এখুনি নয় পরে সবকিছু খুলে বলব। পদ্মা মানুষটাকে চেনে তাই সে ঘুমোতে পারছে না। আর তার দু’মেয়ে – মা জেগে আছে তাই ঘুমোতে পারছে না।
আরও পড়ুন:
শারদীয়ার গল্প-১: পুরুষোত্তম/৪
শারদীয়ার গল্প-৩: আঁশ/২
ভোর রাতে একটু ঠান্ডা বাড়ে। রাত ডিউটির কনস্টেবল চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল। মেজবাবুর হাওয়া আটকে আসা নাকডাকার শব্দ বড়বাবুর ঘর থেকে শোনা যাচ্ছে। এমন সময় ঘেমে নেয়ে হাঁফাতে থাকা পুরুষোত্তম ধপ ধপ করে দুটো লাশ এনে সামনে ফেলল। কাঁধটা ঝাঁকি মেরে কাঁচা ঘুমটা ভাঙ্গালো পুরুষোত্তম। রাগে মেজবাবুর গা-পিত্তি জ্বলে গিয়েছিল। কিন্তু তেড়েফুঁড়ে ওঠার আগেই আতঙ্কিত হয়ে চোয়াল ঝুলে পড়লো কাঁচারক্তে ধুয়ে যাওয়া দু-দুটো লাশ দেখে।
পরে পৌঁছনো থানার হতবুদ্ধি বড়বাবুকে বলছিল তিনি সবসময় এভিডেন্স চান তাই পুরুষোত্তম আজ এভিডেন্স সঙ্গে নিয়ে থানায় এসেছে। এরাই মূল পাণ্ডা যাদের বড়বাবু আরেস্ট করতে ভয় পেয়েছেন। আরও দু’জোড়া শাকরেদের লাশ স্পটে পড়ে আছে। বড়বাবু যেন লোক পাঠাতে দেরি না করেন। একই সঙ্গে সে জানিয়েছে সবকটা বন্দুক এবং গুলির মালিক যারা, মারা গেছে তারাই। আর একটা আর্মসেও পুরুষোত্তমের ফিংগারপ্রিন্ট নেই। কেউ পুরুষোত্তমকে স্পটে যেতে বা আসেনি দেখেনি।
সুতরাং আইন অনুসারে এভিডেন্স অনুযায়ী এটা একেবারেই গুন্ডাদের মদ খেয়ে মাতলামো আর নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি মারামারি। কিন্তু আসলে তা নয়, আসলে কী ঘটেছে তা সে একমাত্র ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বয়ান দেবে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে কিন্তু জবানবন্দী সে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই দেবে।
পরে পৌঁছনো থানার হতবুদ্ধি বড়বাবুকে বলছিল তিনি সবসময় এভিডেন্স চান তাই পুরুষোত্তম আজ এভিডেন্স সঙ্গে নিয়ে থানায় এসেছে। এরাই মূল পাণ্ডা যাদের বড়বাবু আরেস্ট করতে ভয় পেয়েছেন। আরও দু’জোড়া শাকরেদের লাশ স্পটে পড়ে আছে। বড়বাবু যেন লোক পাঠাতে দেরি না করেন। একই সঙ্গে সে জানিয়েছে সবকটা বন্দুক এবং গুলির মালিক যারা, মারা গেছে তারাই। আর একটা আর্মসেও পুরুষোত্তমের ফিংগারপ্রিন্ট নেই। কেউ পুরুষোত্তমকে স্পটে যেতে বা আসেনি দেখেনি।
সুতরাং আইন অনুসারে এভিডেন্স অনুযায়ী এটা একেবারেই গুন্ডাদের মদ খেয়ে মাতলামো আর নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি মারামারি। কিন্তু আসলে তা নয়, আসলে কী ঘটেছে তা সে একমাত্র ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বয়ান দেবে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে কিন্তু জবানবন্দী সে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই দেবে।
পদ্মা বা তার কাকার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও কোন উকিল নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও চেষ্টা করতে চায়নি পুরুষোত্তম। সারা টাউনে হই হই! অনেক অ্যাডভোকেট এগিয়ে এসেছিলেন বিনা খরচে আইনী সহায়তা দিতে কিন্তু পুরুষোত্তম চায়নি। উল্টে সে জজসাহেবকে জানিয়ে ছিলো সে রাগের মাথায় কিছু করেনি। ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি খাটিয়ে এই ধর্ষণকারীদের চরম শাস্তি দিয়েছে। তবে হ্যাঁ! পুলিশ যদি অভিযোগ নিয়ে ঠিকঠাক তদন্ত করতো এই দোষীদের গ্রেপ্তার করতো… অবশ্য তাহলেও পুরুষোত্তমকে এই কাজটাই করতে হতো। হয়তো আরও কিছুদিন পরে। কারণ আইনের ম্যারপ্যাঁচে এই দোষীরা ছাড়া পেয়ে যেতো ।
একইভাবে দৌরাত্ম্য করে বেড়াত আবারও কারও মেয়েকে… সুতরাং যেহেতু নানা ওজরের আড়ালে আইনের নোংরা বাঁকের আবডালে আমাদের দেশের বেশিরভাগ ধর্ষণকারীরা সাজা পায় না। তাই তাদের সাজা দিয়ে নিজে সাজা পাওয়া অনেক গৌরবের। শুধু এ বিচার করার সময় জজসাহেব সরকারপক্ষের উকিল এই আদালতে উপস্থিত মুহুরী পুলিশের কর্মচারীরা যেন মনে রাখেন প্রতি পরিবারেরই মেয়েরা আছে মেয়েরা থাকবে। কিন্তু এখনও আমাদের আইনব্যবস্থা মেয়েদের সুরক্ষা দিতে পুরোপুরি সক্ষম নয়।
পুরুষোত্তমের ফাঁসি দেওয়া যায়নি। প্রেস মিডিয়ায় বড় বড় আইনজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। বিস্তর আলোচনা হয়েছে। নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে কয়েকটি দূর্বল রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষ ধরণায় গিয়ে পোস্টার হাতে বসেছেন। মানবাধিকার নিয়ে যারা খুব বলেন-টলেন তারা জল মেপে মেপে অপেক্ষা করেছেন। পুরুষোত্তমের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। পুরুষোত্তমকে উচ্চ আদালতে অ্যাপীল করতে পরামর্শ দিলেন অনেক শুভানুধ্যায়ী পুলিশের সিনিয়র অফিসিয়াল এমনকি সরকারপক্ষের উকিলও বলেছিলেন। পুরুষোত্তম রাজী হয়নি। মানুষ ‘ভুলনশীল’ জাতি মানে চট করে- দাঁতে দাঁত চেপে আন্দোলন চোয়াল শক্তকরা লড়াই সব ভুলে শীতকালে নতুন-ওঠা সব্জিতে মন দিতে পারে। তাই সকলে পুরুষোত্তমকে সহজেই ভুলে গিয়েছে।
ভুলতে পারেনি পদ্মা আর তার দুই অভাগী মেয়ে।
একইভাবে দৌরাত্ম্য করে বেড়াত আবারও কারও মেয়েকে… সুতরাং যেহেতু নানা ওজরের আড়ালে আইনের নোংরা বাঁকের আবডালে আমাদের দেশের বেশিরভাগ ধর্ষণকারীরা সাজা পায় না। তাই তাদের সাজা দিয়ে নিজে সাজা পাওয়া অনেক গৌরবের। শুধু এ বিচার করার সময় জজসাহেব সরকারপক্ষের উকিল এই আদালতে উপস্থিত মুহুরী পুলিশের কর্মচারীরা যেন মনে রাখেন প্রতি পরিবারেরই মেয়েরা আছে মেয়েরা থাকবে। কিন্তু এখনও আমাদের আইনব্যবস্থা মেয়েদের সুরক্ষা দিতে পুরোপুরি সক্ষম নয়।
পুরুষোত্তমের ফাঁসি দেওয়া যায়নি। প্রেস মিডিয়ায় বড় বড় আইনজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। বিস্তর আলোচনা হয়েছে। নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে কয়েকটি দূর্বল রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষ ধরণায় গিয়ে পোস্টার হাতে বসেছেন। মানবাধিকার নিয়ে যারা খুব বলেন-টলেন তারা জল মেপে মেপে অপেক্ষা করেছেন। পুরুষোত্তমের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। পুরুষোত্তমকে উচ্চ আদালতে অ্যাপীল করতে পরামর্শ দিলেন অনেক শুভানুধ্যায়ী পুলিশের সিনিয়র অফিসিয়াল এমনকি সরকারপক্ষের উকিলও বলেছিলেন। পুরুষোত্তম রাজী হয়নি। মানুষ ‘ভুলনশীল’ জাতি মানে চট করে- দাঁতে দাঁত চেপে আন্দোলন চোয়াল শক্তকরা লড়াই সব ভুলে শীতকালে নতুন-ওঠা সব্জিতে মন দিতে পারে। তাই সকলে পুরুষোত্তমকে সহজেই ভুলে গিয়েছে।
ভুলতে পারেনি পদ্মা আর তার দুই অভাগী মেয়ে।
আরও পড়ুন:
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১০: রাজ ও স্প্যানিশ
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩৪: আরডি-র গানে সারা পৃথিবীর মিউজিক উঠে এসেছিল
কীভাবে বাঁচবে তারা? সম্বল শুধু আর্মির পেনশন। হাল আমলের মতো তখন সেটা বাড়েনি। মেয়েরা স্কুল যাওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু একটা সময় সমাজের ক্ষেতে মনুষ্যত্ব, সততার আদর্শের ফলনে পোকা লাগলো। ক্ষমতার পোকা, অনায়াস অর্থ- প্রতিপত্তি রোজগার আর বাহুল্যের পোকা, সস্তায় বাজিমাৎ করার পোকা। এ ভাবেই কোন এক পিছিয়ে পড়া খবরের কাগজ সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে কিস্তিতে রগরগে কেচ্ছা ছাপতে শুরু করলো। এক পূর্বতন জওয়ান ও তার দুই কন্যার ধর্ষণের বর্ণনা একটা ছোট্ট শহর থেকে সারা দেশের কোণে কোণে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। কাগজে কেচ্ছা ছাপা শুরু হবার পর মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আবার বন্ধ হল। আত্মীয়স্বজন দূরত্ব বাড়াতে শুরু করলো। এমনকী, কাকা-কাকিমাও তাঁদের মেয়েজামাইদের পরামর্শ মতো যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেন।
এ সব যখন হয়নি তখন পদ্মা গিয়েছিল দেখা করতে। পুরুষোত্তম প্রথমে কদিন রঘুনাথপুর সাবডিভিশনাল জেলে ছিল। কাকার সঙ্গে দুই মেয়েকে নিয়ে পদ্মা গিয়েছিল। বাসে দু-সোয়া দু’ ঘণ্টার রাস্তা।
পুরুষোত্তম ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে ছিল মেয়েদের দিকে। পদ্মাকে বলেছিল ‘বুঝতে পারছি তোমাদের খুব অসুবিধে করেছি। কিন্তু এছাড়া আমার আর উপায় ছিল না- সাবধানে থেক’।
মেয়েদের নিয়ে মুখ বুজেই ছিল। পদ্মা কিন্তু এরপর বোধহয় আর থাকতে পারবে না। কাগজে লেখালেখির পর পদ্মারও বাইরে বেরোনো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ আর্মির পেনসন আসা বন্ধ হয়ে গেল। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কোথায় যাবে পদ্মা? কার কাছে আর্জি জানাবে। যে ব্যাঙ্কে পেনশন আসত সেই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার এসে জানালেন, আর্মির থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে ৩০২ ধারায় মামলার অভিযুক্ত হিসেবে আর্মি থেকে পেনশন বন্ধ করা হয়েছে। এ ভাবে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সচরাচর পেনশনভোগীর বাড়ি যান না। কিন্তু স্থানীয় শিক্ষিত ভদ্রলোক হবার সুবাদে তিনি পুরুষোত্তমের বিষয়ে সবটুকু জানতেন। সঠিক তথ্যটুকু জানতেন। তাই বাড়িতে এসেছিলেন।
এ সব যখন হয়নি তখন পদ্মা গিয়েছিল দেখা করতে। পুরুষোত্তম প্রথমে কদিন রঘুনাথপুর সাবডিভিশনাল জেলে ছিল। কাকার সঙ্গে দুই মেয়েকে নিয়ে পদ্মা গিয়েছিল। বাসে দু-সোয়া দু’ ঘণ্টার রাস্তা।
পুরুষোত্তম ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে ছিল মেয়েদের দিকে। পদ্মাকে বলেছিল ‘বুঝতে পারছি তোমাদের খুব অসুবিধে করেছি। কিন্তু এছাড়া আমার আর উপায় ছিল না- সাবধানে থেক’।
মেয়েদের নিয়ে মুখ বুজেই ছিল। পদ্মা কিন্তু এরপর বোধহয় আর থাকতে পারবে না। কাগজে লেখালেখির পর পদ্মারও বাইরে বেরোনো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ আর্মির পেনসন আসা বন্ধ হয়ে গেল। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কোথায় যাবে পদ্মা? কার কাছে আর্জি জানাবে। যে ব্যাঙ্কে পেনশন আসত সেই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার এসে জানালেন, আর্মির থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে ৩০২ ধারায় মামলার অভিযুক্ত হিসেবে আর্মি থেকে পেনশন বন্ধ করা হয়েছে। এ ভাবে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সচরাচর পেনশনভোগীর বাড়ি যান না। কিন্তু স্থানীয় শিক্ষিত ভদ্রলোক হবার সুবাদে তিনি পুরুষোত্তমের বিষয়ে সবটুকু জানতেন। সঠিক তথ্যটুকু জানতেন। তাই বাড়িতে এসেছিলেন।
পদ্মা স্থানুর মতো তাকিয়ে ছিল। প্রৌঢ় ম্যানেজার সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাননি। নিঃশব্দে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এই ঘটনাটা ভুলতে পারেননি। তার বিবেক তাঁকে বারবার বলছিল কোথাও একটা বড়ো অন্যায় হচ্ছে। তিনি স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ নিয়ে তার পরিচিত এক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বললেন। ব্যস্ত আইনজীবী জানালেন তিনি বইপত্র ঘেঁটে পরে জানাবেন। প্রৌঢ় ম্যানেজার এও জানিয়ে এলেন এই জওয়ান কোন খরচাপাতি করতে পারবে না। তবে তিনি ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে চাঁদা তুলে কিছুটা খরচ মেটানোর চেষ্টা নিশ্চয়ই করবেন। আইনজীবী ভদ্রলোক জানতে চাইলেন প্রৌঢ়ের এই ব্যক্তিগৎ উদ্দ্যোগের কারণ কী? প্রৌঢ় জানালেন— ‘আমারও যে দুটো মেয়ে আছে’।
এ দিকে পুরুষোত্তম এসব কিছু জানে না, এখন সে রঘুনাথপুর থেকে চলে এসেছে আসানসোল জেলে। পদ্মা আর পারছে না। সোনাদানা বেচে যা হাতে ছিল তাও শেষ, নানা লোক নানা নোংরা ইঙ্গিত করে। পদ্মা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। একটা চিঠিতে অনুমতি চেয়ে পাঠাল পুরুষোত্তমের কাছে রঘুনাথপুরে। কিন্তু সেতো আসানসোলে। চিঠি পড়ে থাকল জেলারের অফিসে।
ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে তার পরিচিত আইনজীবী জানালেন সরকার পেনশন বন্ধ করতে পারেন না। ৩১শে অক্টোবর ১৯৯৬ রিটায়ার্ড সুবেদার মেজর নসিব সিং বনাম ভারত সরকারের মামলার রায়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩০০এ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে আর্মি পেনশন আবেদনকারী জওয়ানের অর্জিত সম্পদ। তা রদ করার অধিকার সংবিধান দেয় না এবং আর অনুচ্ছেদ ২০(২) অনুযায়ী একটি অপরাধের জন্য একবারের বেশি শাস্তি হতে পারে না। তবে এতে একটু সময় লাগবে। আদালতে হলফনামা জমা দিয়ে কোর্টঅর্ডার বের করে আবার পেনশন অফিস থেকে বন্ধ হওয়া পেনশন চালু করতে খুব তাড়াতাড়ি হলেও অন্তত মাস ছয়েক।
এ দিকে পুরুষোত্তম এসব কিছু জানে না, এখন সে রঘুনাথপুর থেকে চলে এসেছে আসানসোল জেলে। পদ্মা আর পারছে না। সোনাদানা বেচে যা হাতে ছিল তাও শেষ, নানা লোক নানা নোংরা ইঙ্গিত করে। পদ্মা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। একটা চিঠিতে অনুমতি চেয়ে পাঠাল পুরুষোত্তমের কাছে রঘুনাথপুরে। কিন্তু সেতো আসানসোলে। চিঠি পড়ে থাকল জেলারের অফিসে।
ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে তার পরিচিত আইনজীবী জানালেন সরকার পেনশন বন্ধ করতে পারেন না। ৩১শে অক্টোবর ১৯৯৬ রিটায়ার্ড সুবেদার মেজর নসিব সিং বনাম ভারত সরকারের মামলার রায়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩০০এ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে আর্মি পেনশন আবেদনকারী জওয়ানের অর্জিত সম্পদ। তা রদ করার অধিকার সংবিধান দেয় না এবং আর অনুচ্ছেদ ২০(২) অনুযায়ী একটি অপরাধের জন্য একবারের বেশি শাস্তি হতে পারে না। তবে এতে একটু সময় লাগবে। আদালতে হলফনামা জমা দিয়ে কোর্টঅর্ডার বের করে আবার পেনশন অফিস থেকে বন্ধ হওয়া পেনশন চালু করতে খুব তাড়াতাড়ি হলেও অন্তত মাস ছয়েক।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৯: সুন্দরবনের জঙ্গল-জননী বিশালাক্ষী
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২০: তোমরা যা বলো, তাই বলো…
প্রৌঢ় মানুষটি ছুটলেন রঘুনাথপুর জেলে। পদ্মা বলেছিল তার স্বামী সেখানেই আছেন। আগে পুরুষোত্তমকে দিয়ে হলফনামায় সই করে জমা দিতে হবে। সেখান থেকে খবর পেলেন পুরুষোত্তম আসানসোল জেলে।
পেনশন বন্ধ শুনে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল পুরুষোত্তম। সইসাবুদ সেরে অজানা-অচেনা সেই প্রৌঢ় মানুষটিকে সবিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুরোধ করলো তিনি যেন একটু কষ্ট করে একবার বাড়িতে গিয়ে পদ্মাকে এই সুখবরটা দিয়ে আসেন। তারা নিশ্চয়ই খুব কষ্টে আছে।
এ দিকে রঘুনাথপুর জেলার অফিসে পুরুষোত্তমের খোঁজ পড়তে খেয়াল হল অনেকদিন আগে তার একটা চিঠি এসে পড়ে আছে। এতদিন পর সে চিঠি আসানসোল জেলে পাঠানো হল।
পদ্মা যুদ্ধে হার মানতে জানে না। কিন্তু সে আর যুদ্ধের উৎসাহ পায় না। স্বামী যাবজ্জীবন জেলে কাটাবে। কলঙ্কের আগুনে সারাটা জীবন তার দুই মেয়ে জ্বলে পুড়ে যাবে। তবে আর কার সম্মানের জন্য যুদ্ধ! কেন প্রতিবাদ? কিসের প্রতিবাদ? এরপরেও মেয়েরাই ভোগ্য, মেয়েরাই উচ্ছিষ্ট। তাই অনেক ভেবেচিন্তে এই কঠিন সিদ্ধান্ত। পদ্মার আর কোন দ্বিধা নেই। দ্বন্দ্ব নেই। পুরুষোত্তমের অনুমতি নিয়েই তো সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বহুদিন আগে পাঠিয়েছে সে চিঠি। এর কোন উত্তর হয় না তাই আর তিনি কোনও উত্তর দেননি। নিঃশব্দ সম্মতি পেয়েছে পদ্মা।
পুরুষোত্তমের হলফনামা জমা পড়ে গেছে সম্পূর্ণ নিখরচায়। নিজের পারিশ্রমিক তো বটেই কোর্টের সামান্য খরচটুকুও নিলেন না আইনজীবী। পুরুষোত্তমের অনুরোধ মতো সেই প্রৌঢ় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রওনা দিলেন তার পরিবারের কাছে সুখবর পৌঁছে দিতে। আর এমনই ভাগ্যের পরিহাস যে, এতদিনে নানা হাত ঘুরে পদ্মার লেখা সে চিঠি পৌঁছল পুরুষোত্তম এর কাছে।—চলবে।
পেনশন বন্ধ শুনে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল পুরুষোত্তম। সইসাবুদ সেরে অজানা-অচেনা সেই প্রৌঢ় মানুষটিকে সবিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুরোধ করলো তিনি যেন একটু কষ্ট করে একবার বাড়িতে গিয়ে পদ্মাকে এই সুখবরটা দিয়ে আসেন। তারা নিশ্চয়ই খুব কষ্টে আছে।
এ দিকে রঘুনাথপুর জেলার অফিসে পুরুষোত্তমের খোঁজ পড়তে খেয়াল হল অনেকদিন আগে তার একটা চিঠি এসে পড়ে আছে। এতদিন পর সে চিঠি আসানসোল জেলে পাঠানো হল।
পদ্মা যুদ্ধে হার মানতে জানে না। কিন্তু সে আর যুদ্ধের উৎসাহ পায় না। স্বামী যাবজ্জীবন জেলে কাটাবে। কলঙ্কের আগুনে সারাটা জীবন তার দুই মেয়ে জ্বলে পুড়ে যাবে। তবে আর কার সম্মানের জন্য যুদ্ধ! কেন প্রতিবাদ? কিসের প্রতিবাদ? এরপরেও মেয়েরাই ভোগ্য, মেয়েরাই উচ্ছিষ্ট। তাই অনেক ভেবেচিন্তে এই কঠিন সিদ্ধান্ত। পদ্মার আর কোন দ্বিধা নেই। দ্বন্দ্ব নেই। পুরুষোত্তমের অনুমতি নিয়েই তো সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বহুদিন আগে পাঠিয়েছে সে চিঠি। এর কোন উত্তর হয় না তাই আর তিনি কোনও উত্তর দেননি। নিঃশব্দ সম্মতি পেয়েছে পদ্মা।
পুরুষোত্তমের হলফনামা জমা পড়ে গেছে সম্পূর্ণ নিখরচায়। নিজের পারিশ্রমিক তো বটেই কোর্টের সামান্য খরচটুকুও নিলেন না আইনজীবী। পুরুষোত্তমের অনুরোধ মতো সেই প্রৌঢ় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রওনা দিলেন তার পরিবারের কাছে সুখবর পৌঁছে দিতে। আর এমনই ভাগ্যের পরিহাস যে, এতদিনে নানা হাত ঘুরে পদ্মার লেখা সে চিঠি পৌঁছল পুরুষোত্তম এর কাছে।—চলবে।
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।